বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

মা, রানি কৈকেয়ীর প্রতি, কুমার ভরতের, ভর্ৎসনা ও অভিযোগের যেন শেষ নেই। তিনি, জননীকে তিরস্কারের পর তিরস্কার করে চললেন। ক্রোধান্বিত ভরত, তিক্ত ভাষায় বললেন, এ রাজ্য থেকে দূর হও রে, নির্মম, দুরাচারিণী কৈকেয়ি, ধর্ম তোমার সাহচর্য ত্যাগ করেছে, ওই মিথ্যে চোখের জল আর ফেল না। রাজ্যাদ্ ভ্রংশস্ব কৈকেয়ি নৃশংসে দুষ্টচারিণি। পরিত্যক্তাসি ধর্ম্মেণ মানৃতং রুদতী ভব।। রাম ও ধর্মানুগত রাজা দশরথ, দু’জনে, রানির কাছে কী এমন অপরাধ করেছেন? যে কারণে রানি তাঁদের যথাক্রমে নির্বাসন ও মৃত্যুরূপ দণ্ড দিলেন? ভরতের কণ্ঠে যেন অভিশাপ দাতার বজ্রনির্ঘোষ, এই বংশ, ধ্বংসের কারণে, রানি, ভ্রূণহত্যাজনিত পাপে লিপ্ত হয়েছেন। অধর্মাচারিণীর স্থান হোক পিতৃলোকে নয়, নরকে। ভ্রূণহত্যামসি প্রাপ্তা কুলস্যাস্য বিনাশনাৎ।কৈকেয়ি নরকং গচ্ছ মা চ তাতসলোকতাম্।।

কৈকেয়ী এমন ভয়ঙ্কর কাজ করে মহাপাপভাগিনী হয়েছেন। সকলের প্রিয় কাজটি না করে তিনি ভরতেরও ভীতি উৎপাদন করেছেন। ভরত, তীব্র প্রতিবাদী কণ্ঠে বলে উঠলেন, তোমার জন্যেই পিতা আজ প্রয়াত হয়েছেন, অরণ্যে আশ্রয় নিয়েছেন রাম। জগতে, তুমিই আমার সুখ্যাতি নষ্ট করেছ। তৎকৃতে মে পিতা বৃত্তো রামশ্চারণ্যমাশ্রিত:। অযশো জীবলোকে চ ত্বয়াহং প্রতিপাদিতঃ।। রাজ্য লোলুপ, নিষ্ঠুর এই মহিলা,মায়ের রূপে তাঁর শত্রু। এই দুর্বৃত্ত পাপিষ্ঠার সঙ্গে আর কোন কথা হবে না। কুলের কলঙ্ক এই রানির সংশ্রবে এসে কৌশল্যা, সুমিত্রা ও অন্য মায়েরা আজ গভীর দুঃখে নিমগ্ন হয়েছেন। ধার্মিক ও প্রজ্ঞাবান রাজা অশ্বপতির কন্যা ইনি নন নিশ্চয়ই। রাক্ষসরূপিণী এই নারী, পিতার বংশ-মর্যাদা নষ্ট করেছেন। কারণ তিনি ধর্মপরায়ণ, সত্যনিষ্ঠ রামকে পাঠিয়েছেন বনে এবং রাজাকে স্বর্গগমনে বাধ্য করেছেন। পাপ কৈকেয়ীর মধ্যে প্রধান, তিনি,সেই পাপের বোঝা, পিতৃহীন, ভ্রাতৃপরিত্যক্ত, সকলের অপ্রিয়, পুত্রের ওপরে, চাপিয়েছেন। নিশ্চিতরূপে নীচাশয়া কৈকেয়ী, ধর্মনিষ্ঠা কৌশল্যাকে,স্বজন হতে বিচ্ছিন্না করে কোন নরকে যাবেন? সেটি অনিশ্চিত।

সতত বন্ধুবৎসল, দেবী কৌশল্যার আত্মজ, জ্যেষ্ঠ রাম, যিনি, ভরতের পিতার সমান—নিষ্ঠুর মায়ের কী এটি জানা নেই? বন্ধুরা প্রিয়।কিন্তু অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে জাত পুত্র, হৃদয় দিয়ে গড়া। তাই পুত্র, মায়ের প্রিয়তর। প্রসঙ্গক্রমে, ভরত, স্বর্গের গোমাতা সুরভির পুত্রস্নেহবিষয়ক উপাখ্যান বর্ণনা করলেন।একদা দেবগাভী সুরভি, পৃথিবীতে কাজের ভারবাহী তার দুই পুত্রকে হতচেতন অবস্থায় দেখলেন। দিবসার্দ্ধে ভারবহনে ক্লান্ত পুত্রদুটিরর দুর্দশায় মায়ের অশ্রুপূর্ণ দুচোখে দিয়ে অঝোরে ধারাবর্ষণ শুরু হল। সেই জায়গাটির নীচে দিয়ে যাচ্ছিলেন দেবরাজ ইন্দ্র। তাঁর গায়ে ঝরে পড়ল, সুরভির গন্ধযুক্ত সূক্ষ্ম অশ্রুবিন্দু। শক্র ইন্দ্র, ঊর্দ্ধাকাশে দুঃখিনী, বিলাপরতা সুরভিকে দেখতে পেলেন।
শোকাকুলা যশস্বিনী সুরভিকে দেখে, উদ্বিগ্ন দেবরাজ, কৃতাঞ্জলিপুটে বললেন, হে সর্বলোকের শুভাকাঙ্খিনী,আমাদের তো কোথাও কোন ভয়ের কারণ নেই। কেন আপনার এই শোক? ভয়ং কচ্চিন্ন চাস্মাসু কুতশ্চিদ্বিদ্যতে মহৎ। কুতো নিমিত্তঃ শোকস্তে ব্রূহি সর্ব্বহিতৈষিণি।। বিশদভাবে বলুন। ধীমান দেবরাজের প্রশ্নের উত্তরে শান্তস্বভাবা বাক্যপ্রয়োগবিষয়ে অভিজ্ঞা সুরভি সুরেন্দ্রকে জানালেন, দেবতাদের কোথাও কোন ভয় নেই। তিনি নিজে, অসমান ভূমিস্থিত, পুত্র দুটিকে শীর্ণ, দীর্ণ, প্রখর সূর্যকিরণে দগ্ধ এবং বদ্ধ অবস্থায় দুষ্ট কর্ষকের দ্বারা তাড়িত দেখে শোকার্ত হয়েছেন। শরীর থেকে জাত, ভারের বোঝা বহনকারী, আর্ত পুত্রদ্বয়কে দেখে, সুরভি বেদনার্ত হলেন। তাঁর উপলব্ধি, পুত্রসম প্রিয় আর কেউ নয়। যাঁর হাজার হাজার পুত্র পৃথিবী জুড়ে বিরাজমান সেই রোরুদ্যমানা সুরভিকে দেখে ইন্দ্র বুঝতে পারলেন, পুত্র থেকে অধিক প্রিয় কেউ নন। ইন্দ্র নিজের শরীরে, সুরভির পুণ্যগন্ধযুক্ত অশ্রুবিন্দু ঝরে পরছে, দেখে, তাঁর সন্তানস্নেহ আরও বেশি অনুভব করলেন। যিনি লোকসাধারণকে রক্ষার জন্যে সকলের প্রতি সমদর্শিনী, তিনি স্বভাবতই গুণবতী, সেই হাজার পুত্রের জননী, ইচ্ছানুসারে কামনাপূরণে সক্ষম, দেবী সুরভিও পুত্রশোকে ভেঙ্গে পড়েন, তবে রাম-বিহনে দেবী কৌশল্যা বাঁচবেন কীভাবে?

মায়ের প্রতি ভরতের অনুযোগ, কৈকেয়ী একমাত্র পুত্রের জননীকে সাধ্বী কৌশল্যাকে পুত্রহীনা করেছেন। সেই কারণেই তিনি ইহলোকে ও পরলোকে সর্বত্র দুঃখ ভোগ করবেন। পিতা ও ভ্রাতার কাছে আত্মপ্রত্যয়ী ভরতের সিদ্ধান্ত-নিঃসংশয়ে, এই সমস্ত দোষ অপসারিত করে,তিনি যশ বৃদ্ধি করবেন। ভরতের স্থির বিশ্বাস, তিনি কোশলাধিপতি মহাশক্তিমান, মহাবাহু রামকে ফিরিয়ে আনবেন। ভরত নিজে, মুনিগণসেবিত অরণ্যে প্রবেশ করবেন। পুরবাসীরা অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠে তাঁর দিকেই চেয়ে আছেন। ভরত, পাপাচরণকারিণী মায়ের পাপের দায়ভার, বহন করতে অক্ষম।

জননীকে তিরস্কারে বিদ্ধ করলেন ভরত, কৈকেয়ী হয় স্বয়ং অগ্নিতে বা দণ্ডকারণ্যে প্রবেশ করুন, না হয় কণ্ঠের রজ্জুবন্ধনে প্রাণ ত্যাগ করুন, এ ছাড়া তাঁর আর কোন গতি নেই। সত্যনিষ্ঠ রাম, এই পৃথিবীতে রাজ্য লাভ করলে, আমার কর্তব্য সম্পন্ন হবে,আমি কলঙ্কমুক্ত হবে। অহমপ্যবনীং প্রাপ্তে রামে সত্যপরাক্রমে। কৃতকৃত্যো ভবিষ্যামি বিপ্রবাসিতকল্মষঃ।। এমন কঠোর বাক্য উচ্চারণ করে ভরত, সক্রোধে সাপের মতো ঘন ঘন নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে করতে, তোমর ও অঙ্কুশাহত অরণ্যচারী হাতির মতো ভূপতিত হলেন। ভরতের আরক্তনয়ন, শিথিল হয়েছে পরণের বসন, খুলে ফেলেছেন অঙ্গাভরণ, তিনি। যেন উৎসবাবসানে ভূপতিত পতাকা, এই অবস্থায় রাজপুত্র লুটিয়ে পড়লেন মাটিতে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৯: সমাজে বিতর্কিত বিষয়ের মীমাংসায় দৈব উদাহরণেই কি সমাধানসূত্র নিহিত?

অভিজ্ঞান-শকুন্তলের নাট্যকার কালিদাস/১

দীর্ঘসময় পরে জ্ঞান ফিরে পেয়ে বীর্যবান ভরত, অশ্রুপূর্ণ চোখে, দীনহীন জননীকে দেখে, অমাত্যগণের সম্মুখে মায়ের নিন্দা করে বললেন, ভরত নিজে রাজ্যপ্রত্যাশী নন, মাকে, এ বিষয়ে মন্ত্রণা দিতেও আগ্রহী নন তিনি। রাজার, অভীপ্সিত অভিষেক বিষয়ে তিনি অবগত নন। কারণ তখন তিনি শত্রুঘ্নের সঙ্গে দূরদেশে অবস্থান করছিলেন। সৌমিত্র লক্ষ্মণ ও সীতাসহ মহান রামের বনবাস যে কারণে হল, সেই বৃত্তান্ত তিনি জানতেন না। মহাত্মা ভরতের কণ্ঠস্বর শুনে, দেবী কৌশল্যা, কনিষ্ঠা রানি সুমিত্রাকে খবর দিলেন, নির্মম কাজের কর্ত্রী কৈকেয়ীর পুত্র এসেছেন, তিনি সেই দূরভবিষ্যৎদ্রষ্টা পুত্রের দর্শনার্থিনী। দেবী সুমিত্রাকে, এই কথা বলে, বিবর্ণ মুখে, শীর্ণা, হতচৈতন্য প্রায়, কৌশল্যা কাঁপতে কাঁপতে ভরতের উদ্দেশে রওনা দিলেন।

রাজপুত্র ভরত,তখন সশত্রুঘ্ন কৌশল্যার ভবনাভিমুখে প্রস্থান করেছেন। ভূপতিতা, দুঃখিনী, প্রায় হতচৈতন্যা দেবী কৌশল্যাকে দেখে, বেদনার্ত শত্রুঘ্ন ও ভরত, তাঁকে জড়িয়ে ধরলেন। মনস্বিনী কৌশল্যা,শোকাশ্রু বিসর্জন করতে করতে ক্রন্দনাকুল ভরতকে বললেন, রাজ্যাভিলাষী তুমি নিষ্কণ্টক রাজ্য লাভ করেছ। মায়ের নিষ্ঠুর কাজের ফলভোক্তা তুমি। নির্মমদর্শিনী কৈকেয়ী, কৌশল্যাপুত্র রামকে, চীর বসন পড়িয়ে, বনবাসে প্রেরণ করে, কী ফল লাভ করেছেন?যেখানে মহাকীর্ত্তিমান, কৌশল্যাপুত্র রয়েছেন সেখানে তিনি দেবী কৌশল্যাকেও প্রেরণ করতে পারেন। অথবা যে পথ ধরে রাম প্রস্থান করেছেন, সেই একই পথ ধরে, সুমিত্রাকে সঙ্গে নিয়ে, অগ্নিহোত্রকে সম্মুখে রেখে, যাবেন। ইচ্ছে হলে, ভরত, যেখানে তপস্যারত পুরুষোত্তম রাম আছেন, সেখানে তাঁকে নিয়ে যেতে পারেন। ধনধান্যপূর্ণ, সুবিস্তীর্ণ, হস্তী অশ্ব রথ ও পদাতিকযুক্ত এই রাজ্য, তুমিই এর অধীশ্বর। কৌশল্যামায়ের বহু কঠোর কথায় অতীব তিরস্কৃত হয়ে, ব্যথিত ভরতের দশা হল, ঠিক সূচীবিদ্ধ ব্রণের মতো। জননীর চরণে পতিত, বিলাপরত ভরত, সংজ্ঞা হারালেন।

বিবিধ শোকোক্তিপূর্ণ বিলাপরতা কৌশল্যা। কিছুক্ষণ পরে, সংজ্ঞা লাভ করে, ভরত, দেবী কৌশল্যার উদ্দেশে কৃতাঞ্জলি হয়ে প্রত্যুত্তর দিলেন, মহাশয়া, আমার অজ্ঞাতসারে যা কিছু ঘটেছে তার জন্য কেন নিষ্পাপ আমায় দোষারোপ করছেন? আপনি তো জানেন রাঘব রামের প্রতি আমার অগাধ অবিচল প্রীতি। আর্য্যে কস্মাদজানন্তং গর্হসে মামকিল্বিষম্। বিপুলাঞ্চ মম প্রীতিং স্থিতাং জানাসি রাঘবে।। ভরতের মতে, সত্যপ্রতিজ্ঞ শ্রেষ্ঠ সজ্জন রাম, যাঁর অনুমতিক্রমে প্রস্থান করেছেন, তাঁর বুদ্ধি যেন কোনমতেই শাস্ত্রানুমোদিত না হয়। যাঁর সম্মতি অনুসারে রাম বনে গমন করেছেন, তিনি যেন পাপীদের কৃতদাস হন, সূর্যের অভিমুখে শরীরের বর্জ্য পরিত্যাগ করেন, তিনি যেন ঘুমন্ত গাভীকে পদাঘাত করেন। ভরণকর্ত্তা প্রভু, ভৃত্যকে দিয়ে মহৎ কাজ করিয়ে যদি প্রাপ্য অর্থ না দেন তবে যে অধর্ম হয়, তেমনই অধর্ম হোক, বনবাসী রামের অনুমোদনকর্তার। পুত্রবৎ পালনকারী রাজার বিরুদ্ধাচারীর পাপ, যেন স্পর্শ করে তাঁকে, যার অনুমতিক্রমে রাম বনে গিয়েছেন। প্রাপ্য ছয় ভাগ কর গ্রহণ করে, যে রাজা প্রজারক্ষা করেন না, সেই রাজার তুল্য অধর্মাচরণজনিত পাপ হোক রামের বনবাসের সম্মতিদাতার। বনবাস অনুমোদনকর্ত্তা সেই পাপ ভোগ করুন, যেমন পাপের ভাগী হয়েছেন যজ্ঞে তপস্বীদের দক্ষিণাদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়েও প্রতিজ্ঞারক্ষায় অপারগ ব্যক্তি। আরও কত ক্ষোভ, ঘৃণা, অভিসম্পাত ভিড় করেছে ভরতের মনে।

ভরতের, জ্যেষ্ঠভ্রাতা রামের বনবাসে যিনি সম্মতি প্রদান করেছেন, একে একে যত প্রতিকূলতার শিকার হন তিনি। হস্তী-অশ্ব-রথ ও অস্ত্রে সমাকীর্ণ রণক্ষেত্রে তিনি যেন সজ্জনের আচরিত ধর্ম পালনে ব্যর্থ হন। তিনি যেন গুরূপদিষ্ট ধর্মের সূক্ষ্ম তত্ত্ব বিস্মৃত হন। যিনি রামের বনবাস অনুমোদন করেছেন, তাঁর ভাগ্যে, সেই স্থূলবাহুবিশিষ্ট, সুঠাম স্কন্ধ, শশীসূর্যবৎ তেজস্বী, রাজ্যাভিষিক্ত রামদর্শন যেন না ঘটে। সেই নির্মম ব্যক্তির কপালে জোটে যেন অবৈধভাবে সংগৃহীত পায়েস, কৃশর, ছাগ। তিনি যেন গুরুজনদের অসম্মান করেন। রামের বনে গমনে অনুমতিদাতা সেই ব্যক্তিকে, যত চারিত্রিক ত্রুটি সম্ভব সে সব দোষযুক্ত ভূষণে সাজিয়েছেন ভরত।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৯: ভ্রমণে বেরিয়ে মহর্ষি পেয়েছিলেন পুত্রের মৃত্যু-সংবাদ

দশভুজা, দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪৪: আনন্দী—এক লড়াইয়ের নাম

রামের এই দুরবস্থার কারণ, যত নষ্টের গোড়া যিনি তিনি গোধন পা দিয়ে স্পর্শ করুন, গুরুরা হন তাঁর নিন্দার পাত্র, মিত্রদের বিরুদ্ধাচরণ হোক তাঁর স্বভাব। তিনি, মিত্রকথিত গোপন পরনিন্দা প্রকাশ করে বিশ্বাসভঙ্গের কাজ করুন। সেই কর্মহীন, অকৃতজ্ঞ, সমাজ-পরিত্যক্ত, নির্লজ্জের জীবনে, তিনি যেন সকলের বিদ্বেষভাজন হন। পুত্র, পত্নী, ভৃত্য পরিবৃত পারিবারিক জীবন থাকা সত্ত্বেও তিনি একাকী উত্তমান্ন ভোজন করুন। তিনি, নিজের সদৃশ ভার্যা লাভ না করায় অপুত্রক অবস্থায় উপনীত হন এবং ধর্মসম্মত যাগাদিকার্যে অংশগ্রহণে অক্ষম হন। ধর্মপত্নীর গর্ভজাত আত্মজের মুখ না দেখে, দুঃখের আতিশয্যবশত তাঁর নির্ধারিত আয়ুষ্কাল অসম্পূর্ণ থেকে যাক্।তাঁর পাপের বোঝা কেমন?ভরতের মতে, রাজা, স্ত্রীলোক, শিশু ও বৃদ্ধের হত্যা এবং ভৃত্যত্যাগে যে পাপ, তার তুল্য পাপের ভাগী হন রামের বনবাস অনুমোদনকর্ত্তা।সেই পাপী সর্বদাই যেন লাক্ষা,মধু,মাংস,লৌহ ও বিষ-বিক্রয়লব্ধ অর্থ দিয়ে,নিজের ভৃত্যদের পালন করুন।যুদ্ধে,শত্রুপক্ষ অপ্রতিরোধ্য প্রবল হয়ে উঠলে পলায়নপর অবস্থায় যেন নিহত হন তিনি।

রামের বনবাস-অনুমোদনকারী যেন নরকরোটি হাতে নিয়ে,বল্কলবাসাচ্ছাদিত-দেহে পৃথিবীতে ভিক্ষা করে বেড়ান। নারী ও অক্ষক্রীড়ায় নিত্য আসক্তি সম্বল করে, মদ্যপ হয়েই থাকুন তিনি। তিনি যেন, কাম ও ক্রোধে অভিভূত হন। তাঁর যেন ধর্মে মতি না হয়, অপাত্রে দান ও অধর্মে তাঁর আসক্তি হোক।তাঁর সঞ্চিত হাজার হাজার বিবিধ ধন দস্যুরা লুঠে নিয়ে যাক। সকাল সন্ধ্যায় শায়িত থাকলে যে পাপ হয় সেই পাপ স্পর্শ করুক তাঁকে। আরও কত পাপ অপেক্ষা করে আছে ভরতকৃত পাপের তালিকায়। সেই পাপী, পাপের বোঝা বহন করবেন‌, যে পাপ হয়, গৃহদহনকারীর, গুরুপত্নী-গামীর ও মিত্রের বিরুদ্ধাচরণকারীর। তিনি, যেন দেবতা, পিতৃপুরুষদের, মাতাপিতার সেবা-শুশ্রূষা না করেন। তিনি, যেন আজই, সজ্জনদের কাঙ্খিত লোক, সদ্ব্যক্তিদের কীর্তি এবং সৎকর্ম হতে দ্রুত বিচ্যুত হন। সেই দীর্ঘবাহু, বিশালবক্ষ, রামের বনবাসে যিনি সম্মতি দিয়েছেন তিনি মায়ের শুশ্রূষা ছেড়ে নিরর্থক কাজে ব্যস্ত থাকুন।

বহু ভৃত্য পরিবৃত, অথচ দরিদ্রদশা, এমন অবস্থায়, তিনি যেন,জ্বররোগে ক্লিষ্ট হয়ে সর্বদা বহু কষ্ট ভোগ করেন। তাঁর কাছে, ঊর্দ্ধনেত্র দীনমুখ যাচকদের আশা যেন অপূর্ণ থেকে যায়। সেই খল, অপবিত্র, অধার্মিক, রাজভয়ে ভীত, রামের বনবাসের অনুমতিদাতা, যেন ছলনার আশ্রয় নিয়ে জীবন অতিবাহিত করেন। আর্য রামের বনবাস যাঁর সম্মতিক্রমে হয়েছে, সেই ব্যক্তি যেন ঋতুস্নাতা সতী স্ত্রীর ঋতুকালীন অনুরোধ রক্ষা না করেন। পুত্রহীন ব্রাহ্মণের পাপে তিনি যেন লিপ্ত হন। সেই পাপে আসক্ত ব্যক্তি যেন ব্রাহ্মণদের জন্য প্রদেয় পূজায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেন এবং গোবৎসযুক্তা গাভীর দোহনে প্রবৃত্ত হন।
আরও পড়ুন:

ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব ৩৮: পুত্র বীরেন্দ্রর বিয়েতে রবীন্দ্রনাথকে আমন্ত্রণ জানান মহারাজ রাধাকিশোর

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’

নিজের ধর্মপত্নীকে পরিত্যাগ করে তিনি যেন পরস্ত্রীর সেবা করেন, ধর্মত্যাগী অতি মূর্খ সেই ব্যক্তি, রামের বনবাসে সম্মত হয়েছিলেন যিনি।পানীয় জল দূষিত করে যে, বিষ প্রদান করে যে, তাঁর তুল্য পাপভোক্তা হবেন তিনি, যিনি আর্য রামের বনবাস অনুমোদন করেছেন।যিনি,পানীয় জল থাকা সত্ত্বেও পিপাসার্ত ব্যক্তিকে বঞ্চনা করেছেন, তাঁর পাপ হবে সেই রকম। পথে বিবাদমান দুজনের কলহ যিনি ভক্তিভরে দেখেই যান (নিষ্পত্তির চিন্তা বর্জন করে) তিনি পাপের ভাগী হন যেমন, তেমনই পাপী প্রতিপন্ন হবেন আর্য রামের বনগমনের অনুমোদনকারী। শোকার্ত ভরত, পতিপুত্রহীনা দেবী কৌশল্যাকে আশ্বস্ত করতে করতে ভূলুণ্ঠিত হলেন। বহু প্রতিজ্ঞাকারী, প্রায় হতচেতন, শোকাকুল ভরতের উদ্দেশে দেবী কৌশল্যা বললেন, তাঁর নিজের আরও দুঃখ হল, পুত্রসম ভরত এমন বহু শপথবাক্য উচ্চারণ করে শুধু তাঁর প্রাণে আঘাত করেছেন মাত্র। দেবী কৌশল্যা ভারতকে আশ্বস্ত করলেন, সৌভাগ্যক্রমে সুলক্ষণান্বিত, তোমার সত্তা ধর্ম হতে বিচ্যুত হয়নি। বাছা, সত্যপ্রতিজ্ঞ, তুমি সাধুজনের জন্য নির্দিষ্ট লোকেই গমন করবে। দিষ্ট্যা ন চলিতো ধর্ম্মাদাত্মা তে সহলক্ষণঃ। বৎস সত্যপ্রতিজ্ঞো হি সতাং লোকানবাপ্স্যসি।।

দেবী কৌশল্যা ভ্রাতৃবৎসল ভরতকে কোলে টেনে নিলেন। অতিদুঃখে, মহাবাহু ভারতকে জড়িয়ে ধরে, কেঁদে উঠলেন। শোকার্ত মহান ভরতের মনটিও শোকে, মোহে ব্যাকুল হয়ে উঠল। ভূলুণ্ঠিত, বিনষ্টপ্রায় তাঁর বুদ্ধি, অর্দ্ধচেতন, ভরত, ঘন ঘন দীর্ঘশ্বাস ফেলছেন, এমন অবস্থায় সেই রাত্রি অতিবাহিত হল।

যোগ্যকে বঞ্চিত হতে দেখলে বিবেকবানের কণ্ঠ সোচ্চার হয়, তাঁর আকাশছোঁয়া ক্ষোভ দেশ কাল পরিস্থিতি মানে না, প্রবঞ্চক যদি পিতামাতা হন তাহলেও নয়। জননীর কুম্ভীরাশ্রুর মহিমা কতটা ভয়ঙ্কর সেটি উপলব্ধি করে তিনিও তাঁর আভিজাত্য, মহত্ত্বের সীমা লঙ্ঘন করে, ভয়ানক কঠোর হয়ে উঠেছেন। মায়ের প্রতি তাঁর নির্মম তিরস্কার হয়তো শালীনতাবোধের মাত্রা অতিক্রম করেছে। সম্বোধনে জননীর স্বীকৃতিটুকুও দেননি। ক্রুদ্ধ ভরত, মা ও ছেলের কোমল আত্মিক শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক নস্যাৎ করে দিয়েছেন। জননীর নাম উল্লেখ করে, তার সঙ্গে, ‘নৃশংসে’, (নির্মম) ‘দুষ্টাচারিণি’ (দুরাচারিণী), ‘রাজ্যকামুকে’ (রাজ্যলোভী), ‘কুলদূষিণী (বংশের দূষণকারিনী), ‘পাপসঙ্কল্পে’ (পাপেই যাঁর যত প্রতিজ্ঞা) প্রভৃতি বাছাই করা নেতিবাচক বিশেষণে আখ্যায়িত করেছেন জননীকে। মানবিকতার অবক্ষয়, নিজের জননীর মধ্যে প্রকট—এ অনুভব, ভরতকে, শোকে দুঃখে, ক্ষোভে হতাশায় ভেঙে খান খান করেছে। চরম নৈরাশ্য, হিতাহিতজ্ঞানশূন্য করে তোলে মনুষ্যত্ববোধের আধার ব্যক্তিত্বকে, যখন নিজের একান্ত বিশ্বস্ত জনের কাছে নৈতিকতার প্রত্যাশা তলানিতে পৌঁছয় ঠিক তখন। এমন ভরতের অস্তিত্ব হয়তো এ যুগেও বিরল নয়, যাঁরা নৈতিকতার মানদণ্ডে বাবা মায়ের গর্হিত অবিবেচনাপ্রসূত সিদ্ধান্তের মূল্য দেন নিজের জীবন দিয়ে।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৯: মাথার কান

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭১: মা সারদার নলিনীর মানভঞ্জন

রামায়ণের ভরতকেও মা কৈকেয়ীর ভুল সিদ্ধান্তের মাসুল দিতে হয়েছে। পদে পদে সন্দেহের বেড়াজাল আষ্টেপিষ্টে বেঁধেছে তাঁর অপ্রতিম সরল সোজা ধর্মবোধের ঔজ্জ্বল্যে ভাস্বর সত্তাকে। তবে এ সব কিছুই ঘটেছে তাঁর অগোচরে। জ্যেষ্ঠ রাম, যিনি ভরতের পিতৃসম শ্রদ্ধার পাত্র, তিনিই পত্নী সীতাকে বনবাসগমনের সিদ্ধান্ত জানিয়ে বলেছেন,রামের অনুপস্থিতিতে সীতা যেন ভরতসমীপে রামের গুণকীর্তন না করেন। কারণ উন্নতির সময়ে কোন পুরুষ অপরের গুণ সহ্য করতে পারেন না। ঋদ্ধি যুক্তা হি পুরুষা ন সহন্তে পরস্তবম্। তস্মান্ন তে গুণাঃ কথ্যা ভরতস্যাগ্রতো মম।।

রামের এই মূল্যায়ন অবশ্য সর্বসাধারণের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, হয়তো প্রসঙ্গক্রমে, ব্যক্তি ভরতের উল্লেখ করেছেন মাত্র। কিন্তু লক্ষ্মণভাই তিনি কী ভেবেছিলেন ভরত সম্বন্ধে? রামের অনুপস্থিতিতে, ভরত রাজ্য লাভ করে, দুঃখিনী জননী কৈকেয়ীর মতানুসারেই চলবেন। বিমাতা কৌশল্যা ও সুমিত্রার কোন খবরই রাখবেন না। ঁন স্মরিষ্যতি কৌসল্যাং সুমিত্রাঞ্চ সুদুঃখিতাম্। ভরতো রাজ্যমাসাদ্য কৈকেয্যাং পর্য্যবস্থিতঃ।। প্রজাদের অভিমত কী? তাঁরা মনে করেন ভরতের শাসনাধীন রাজত্বে প্রজারা যেন পশুহত্যাকারী নৃশংস ব্যাধের কবলে পড়েছেন। ভরতে সন্নিবদ্ধাঃ স্ম সৌনিকে পশবো যথা। রাজমাতা কৌশল্যা, শোকার্ত ভরতকে ভুল বুঝেছেন। তিনি ভেবেছেন, রাজ্যলোভী ভরতের পথের কাঁটা দূর হয়েছে এবং মা কৈকেয়ীর কুটিল নিষ্ঠুর কাজ সেই রাজ্যলাভ ত্বরান্বিত করেছে। ইদং তে রাজ্যকামস্য রাজ্যং প্রাপ্তমকণ্টকম্। সম্প্রাপ্তং বত কৈকেয্যাঃ শীঘ্রং ক্রূরেণ কর্মক্ষমতা।।

সেই অনুমিত খলনায়ক ভরত যিনি কোনও অকাজ বা নিন্দনীয় কাজ না করেও, কদর্য সমালোচনার পাত্র হয়েছেন বার বার। পারিবারিক গণ্ডীতে ভরতের এই অজানা, অচেনা, দৃঢ়, বজ্রকঠিন, সত্যনিষ্ঠ, ধার্মিক সত্তার বিচ্ছুরণ ‘মা’কে দীপ্তিময়ী করে তুলতে পারেনি। পদে পদে, অযোধ্যার রাজপ্রাসাদের অলিন্দে, এমন কি অযোধ্যার অলিগলিতে তাঁর নিন্দায় সোচ্চার হয়েছেন আত্মীয় স্বজন এমন কি প্রজারা পর্যন্ত। প্রজারা, নির্মম ভরতের শাসনাধীন হওয়ার সম্ভাবনায় আতঙ্কিত হয়েছেন। এই মানসিক-সংযোগ-বিচ্ছিন্নতার কারণ কী দূরত্ব? ধার্মিক মাতামহ অশ্বপতির ছত্রছায়ায়, প্রতিপালিত ভরত কী অধার্মিক হতে পারেন? ভরতের কিন্তু সন্দেহ, কৈকেয়ী ধার্মিক, প্রাজ্ঞ, রাজা অশ্বপতির কন্যা হতে পারেন না,তিনি নিশ্চয়ই পিতার কুলগৌরব বিনষ্টকারিণী কোন রাক্ষসী। ন ত্বমশ্বপতেঃ কন্যা ধর্ম্মরাজস্য ধীমতঃ। রাক্ষসী তত্র জাতাসি কুলপ্রধ্বংসিনী পিতুঃ।।

ভরতের বিশ্বাসের মূলে কুঠারাঘাত করেছেন মা, কেকয়রাজকন্যা কৈকেয়ী। পারিবারিক স্থিতিশীলতা, ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে, দায়ী ভরত-জননী কৈকেয়ী। তাই ধার্মিক পুত্র তাঁকে অক্লেশে একটি সম্ভাবনার ভ্রূণ হত্যার দায়ে, পাপিষ্ঠা আখ্যায় ভূষিত করেছেন। পিতামাতার কলঙ্কের দায়ভার বহন করতে হয় পরবর্তী প্রজন্মকে। ভরত তার ব্যতিক্রম নন। তাই মায়ের উদ্দেশ্যে সোচ্চার, প্রতিবাদী ভরতের কর্কশ, রুক্ষ ভাষার প্রয়োগ ব্যথিত করে না। এটিই বোধ হয় কৈকেয়ীর চরম শাস্তি এবং পরম প্রাপ্তি। কৈকেয়ীর মতো মানসিকতা যাঁদের তাঁরা এ ভাবেই হয়তো তিরস্কৃত, ধিক্কৃত, সমালোচিত হন। স্বচ্ছচিন্তার অধিকারী আত্মজ যদি মনুষ্যত্ববোধের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হন তবে পিতামাতার অনৈকতার রেহাই নেই। অমাত্যদের সম্মুখে অপমানিতা লাঞ্ছিতা কৈকেয়ীর দশায় উপনীত হয় মাতৃত্ব, বিচারালয়ে প্রশ্ন চিহ্নের সম্মুখীন হয় তখন।

ভাগ্যবিড়ম্বিত ভরত, মায়ের অদূরদর্শী অনৈতিক সিদ্ধান্তের দায়ভার মাথায় নিয়ে, দীপ্ত কণ্ঠে ঘোষণা করেন, রাজ্যং ন কাময়ে জাতু মন্ত্রয়ে নাপি মাতরম্।। অভিষেকং ন জানামি যোঽভূদ্রাজ্ঞা সমীক্ষিতঃ। বিপ্রকৃষ্টে হ্যহং দেশে শত্রুঘ্নসহিতোঽভবম্।। রাজ্যাভিলাষ আমার নেই,আমি মায়ের সঙ্গে কোন পরামর্শ করিনি। রাজ্যাভিষেক বিষয়টি সম্বন্ধে আমি অবগত ছিলাম না, কারণ শত্রুঘ্নের সঙ্গে তখন আমি প্রবাসে ছিলাম। বনবাসং না জানামি রামস্যাহং মহাত্মনঃ। মহান রামের বনবাস বৃত্তান্ত জানতেই পারিনি। নিষ্পাপ ভরত কৌশল্যার তীব্র আক্রমনাত্মক তিরস্কার সহ্য করেছেন। ভরত যে সব ভয়ঙ্কর অভিশম্পাতে বিদ্ধ করেছেন রামের বনবাসের অনুমোদনকারীকে সেগুলি কী জননী কৈকেয়ী ও পিতা দশরথের প্রাপ্য নয়? ভরত, শেষ পর্যন্ত দেবী কৌশল্যার বিশ্বাস অর্জন করতে পেরেছেন হয়তো। রানি কৈকেয়ীর পুত্র-প্রীতি এবং ভোগসর্বস্ব বাৎসল্য, বঞ্চনার আধারে কলঙ্কিত এক অধ্যায় যাঁর পরিণতি, আধুনিক যুগের পিতামাতার এক শিক্ষণীয় দৃষ্টান্ত। সন্তানের প্রতি অনৈতিক স্নেহাতিশয্যের পরিণাম কত মারাত্মক হতে পারে, কৈকেয়ীর, নিজ পুত্রের অজ্ঞাতসারে রাজ্যপাট-দখলের কুটিল ষড়যন্ত্র, সেটাই প্রমাণ করে না কী? —চলবে।

* মহাকাব্যের কথকতা (Epics monologues of a layman): পাঞ্চালী মুখোপাধ্যায় (Panchali Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপিকা, সংস্কৃত বিভাগ, যোগমায়া দেবী কলেজে।

Skip to content