ছবি: প্রতীকী।
বাথটাব (পর্ব-৭)
মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে সেই ৭ মিনিট ২৭ সেকেন্ড ক্যামেরা বন্ধ হল কি করে? না গ্যাস বেলুন দিয়ে ক্যামেরার মুখটা বন্ধ করা হয়েছিল এটা তো পরিষ্কার! কিন্তু খুনি মানে ওই টুপিতে মুখ ঢাকা দেওয়া বেয়ারার ছদ্মবেশের আড়ালে সেই লোকটি ক্যামেরায় বেলুন লাগালো কখন? হোটেল থেকে ট্যাক্সিতে ওঠার আগেই সঙ্গে আরো একজন সহকারী থাকার সম্ভাবনাটা বাবু বাতিল করে দিয়েছে। খুনিকে এতধরনের প্ল্যান করতে হয়েছে তাতে এতগুলো খুঁটিনাটি অপারেশন সেখানে আরও একজনকে সঙ্গে নেওয়াটা বোকামো। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মাথার মধ্যে এল লোকটিকে হোটেল রুমের দরজার থেকে বের হতে দেখেছে ক্যামেরা। তার পরেই ৭ মিনিট ২৭ সেকেন্ডের জন্যে করিডরের দুটি ক্যামেরার কর্মবিরতি।
হোটেলের যে কর্মী অজ্ঞান অবস্থায় পড়েছিলেন তার চেহারা বেশ মোটাসোটা। খুব স্বাভাবিকভাবে জামার সাইজও বড় যে, লোকটি এই ঘটনা ঘটিয়েছে সে যদি পাতলা হয় গ্যাস বেলুন যদি শরীরের মধ্যে লুকানো থাকে তাহলে তা বোঝার উপায় থাকে না। ঘর থেকে বেরিয়ে বেলুন গুলোকে সে টুকটুক করে ক্যামেরায় লাগিয়ে দিয়েছে। একটু অপেক্ষা করে আবার অ্যাক্সেস কার্ড দিয়ে ঘরের দরজা খুলে ভিতরে গিয়েছে। সম্ভবত কৌশিকী তখন বাথটাবেই ছিল অর্ডার দেওয়া ওয়াইন বাইরে রাখতে বলেছিল। প্রতিদিন কাজের শেষে সন্ধেবেলায় নিয়মিত কৌশিকী ওয়াইন অর্ডার করেছে একটা নির্দিষ্ট সময়ে। হোটেলের সিস্টেম থেকে এই তথ্য পাওয়া গিয়েছে। তার মানে যে খুনি সে এই তিন চারদিন ধরে কৌশিকীর নানা হ্যাবিট নিখুঁতভাবে ফলো করেছে।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৫৪: আততায়ী এক, নাকি দুই?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৮: মংপুর কমলালেবু পেয়ে অসুস্থ কবি খুব আনন্দ পেয়েছিলেন
কৌশিকী যখন বাথটাবে খুনি তখন তার হ্যান্ড ব্যাগ ঘেঁটে পার্স থেকে ক্রেডিট কার্ড নিয়ে অ্যাক্সেস কার্ড বদলে দিয়েছে। সব হোটেলেই অ্যাক্সেস কার্ড খুলে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আলো বন্ধ হয়ে যায় না একটা ডিলে টাইম থাকে। তাই কৌশিকী বুঝতে পারেনি তার রুমের অ্যাক্সেস কার্ড খুলে নেওয়া হয়েছে। এখন প্রশ্ন হল কৌশিকী কি সত্যি সত্যি ওয়াইনটা নিয়েছিল নাকি কৌশিকীকে মারার পর ওয়াইন বটল এবং গ্লাসটা ওখানে রাখা হয়েছে। খুনটা হয়ে যাবার পর ওয়াইন বটল আর গ্লাস সাজিয়ে রাখলে তাতে কৌশিকীর হাতের ছাপ পাওয়া যাবে না। সে ক্ষেত্রে ওয়াইন গ্লাস কৌশিকির ঠোঁটে ছুঁয়ে লিপস্টিকের দাগ লাগিয়ে খুনি একটা ধন্দ তৈরি করবার চেষ্টা করতে পারে। কারণ গ্লাসে লিপস্টিকের দাগ ছিল।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬৪ : অকারণে কেউ অন্যের ভালো করতে যায় না
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭০: ভানুপিসি ও শ্রীমার ভক্ত
পাঁজি মতে পুজো এখনও শুরু হয়নি কিন্তু বিজ্ঞাপনদাতাদের চাপে উদ্যোক্তাদের পুজো শুরু করতে হয়েছে। আসলে এই ভোগবাদী জীবনে মানুষের সমাজের সব কিছু প্রতিটি ক্ষেত্রে একটা দাম ধার্য করা আছে। আজকের যুগে সবকিছু বেশি বেশি বার বার করে মানুষের সামনে নিয়ে না এলে হাজারো ইনফরমেশনের মধ্যে মানুষ বেমালুম ভুলে যাবে। অবশ্য এটা ধ্রুবসত্যি কিনা জানি না! বিজ্ঞাপন জগতের ডিগ্রিধারী তাত্ত্বিকরা সেটাই মনে করেন।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-১০: ভার্জিনিয়া ও লিওনার্ড উলফ—উন্মাদনা ও সৃষ্টি /২
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
মানুষ যেটা মনে রাখার সেটা চিরকাল মনে রাখে আর যেটা ভুলে যাবার সেটা ৫ মিনিটে ইচ্ছে করে মন থেকে সরিয়ে দেয়। টিভিতে সিনেমা হলে একই বিজ্ঞাপন বারবার একই কথা বলে যায়। পরপর বলে যায়। আমার তো মনে হয় একটা সময় পর মানুষ চোখ কান সব বুঝিয়ে ফেলে। রাস্তায় ঘাটে গাছপালা আকাশঢাকা বিজ্ঞাপনের হোর্ডিং নিয়ন আলোয় চিৎকৃত প্রচারের ঢক্কানিনাদ। চিত্র জগতের লোকজন প্রতি মুহূর্তে ডিজিটাল মিডিয়া এবং ইউটিউবারদের মাধ্যমে অবিরাম অবিরত নিজেদের প্রচার করছেন। অথচ ১৯৬৬ মানে ৫৮ বছর আগে অরিন্দম মুখার্জি রেস্টুরেন্ট কারে যেতে যেতে অদিতি সেনগুপ্তকে বলেছিলেন, “…আমাদের খুব বেশি কথা বলতে নেই। আমরা ছায়ার জগতে বিচরণ করি তো তাই আমাদের রক্তমাংসের শরীরটা খুব বেশি করে জনসাধারণের সামনে তুলে না ধরাই ভালো!”
আরও পড়ুন:
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭৩: সুন্দরবনের পাখি—কোঁচ বক
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৭: যুগধর্মের সমর্থনহীন ধর্মচিন্তার স্থান কোথায়?
কে অরিন্দম কে অদিতি এসবের উল্লেখ আর করবো না! চারদিকে এত বাজে কথাবার্তা আর ইনফরমেশনের ভিড়ে যদি এই কাজের জিনিসগুলো ভুলে গিয়ে থাকেন তাহলে ভুলেই থাকুন! সেটা ছিল প্রায় তিন যুগ আগের কথা। এখন আমরা আধুনিক। যুগের চাহিদা মেনে নেওয়াটাই এখন দস্তুর।—চলবে।
কৌশিকি দত্তগুপ্ত হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪
* ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।