বুধবার ৪ ডিসেম্বর, ২০২৪


মূহুর্তের মধ্যে গোটা ঠাকুরদালান যেন স্তম্ভিত, বাড়িতে বিকেডি’র জন্য একটা মেডিকেল টিম তৈরি থাকতো। পুজোর সময় অনেক নামী ডাক্তারবাবু শহরে থাকেন না। অনেকেই দেশের বাড়ির পুজোয় কলকাতা ছেড়ে যান। অনেকে দেশের অন্যত্র আত্মীয়স্বজনের কাছে বা দেশের বাইরে ছুটি কাটাতে কিংবা নিছক বিশ্রাম নিতে যান। তাঁরাও মানুষ তাঁদেরও ঘরসংসার পরিবারপরিজন আছেন। মাস পর মাস চিকিৎসাশাস্ত্রের মত, একটি জটিল এবং একই সঙ্গে শারীরিক ও মানসিক ধকলের পেশায় পরিশ্রম করার পর শরীর এবং মন দুজনেই ছুটি চাইবে। তাঁরা নিজেদের যোগ্যতায় উপার্জিত অর্থে বিদেশভ্রমণ করলে করতেই পারেন। কিন্তু এরফলে পুজোর কটা দিন বিশেষ করে সপ্তমী অষ্টমী নবমী দশমী কলকাতার চিকিৎসা পরিষেবা প্রায় ন্যূনতম মাত্রায় গিয়ে পৌঁছয়। এই সময়ে যাঁদের আত্মীয়-স্বজন অসুস্থ হন। যাঁদের হাসপাতাল নার্সিংহোমে ছোটাছুটি করতে হয় তাঁরা জানেন যে কি ভয়ংকর দুর্ভোগের মধ্যে দিয়ে তাঁদের যেতে হয়। কিন্তু বসুন্ধরা ভিলার কথা স্বতন্ত্র।

পুজোর সময়ে মোটামুটি একটা মিনি হাসপাতাল তৈরি রাখা হয়। তাদের তৎপরতায় কয়েকমুহূর্তের মধ্যেই বিকেডিকে ঠাকুরদালান থেকে একতলার গেস্ট রুমে তৈরি রাখা মেডিকেল ইউনিটে নিয়ে যাওয়া হল। অত্যন্ত দ্রুততার সঙ্গে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ওষুধপত্র পড়ে গেল, যা জানা গেল সেটা সুখকর নয়। বসুন্ধরা ভিলার প্রাণপুরুষ বিনয়কান্তি দত্তের সেরিব্রাল অ্যাটাক হয়েছে।
লক্ষ্মীপুজো কোনওগতিকে নমোনমো করে সম্পন্ন হল বিনয়কান্তি বসুন্ধরা ভিলাতেই আছেন। তবে এর মধ্যে তাঁর কয়েকবার কম্প্যুটেড টোমোগ্রাফি বা চালু কথায় সিটি স্ক্যান করা হয়েছে। চাকালাগানো পোর্টেবল ম্যাগনেটিক রেসোন্যান্স ইমেজিং বা এম আর আই তাঁর বিছানার পাশে রাখা আছে প্রায় পাঁচদিনের মাথায় তাঁর জ্ঞান ফিরল। কিন্তু এখন শারীরিক বা মানসিক ক্ষতির ব্যাপারে ডাক্তারেরা কিছুই বলতে চাইছেন না। ফুলকাকা ও কীরা কাকীমা বাবার সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে জানালেন আপত্তি না থাকলে তাঁরা দাদুকে লন্ডনে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে চান। কিন্তু এই মূহুর্তে দাদুর যা শারীরিক অবস্থা তাতে তাঁকে নিয়ে বিদেশ পাড়ি দেওয়াটা বড়ো ঝুঁকি হয়ে যাবে। আপাতত তাঁকে শারীরিকভাবে স্থিতিশীল করতে হবে।
আরও পড়ুন:

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭০: সুন্দরবনের পাখি: লাল কাঁক

বসুন্ধরা এবং…, ৩য় খণ্ড, পর্ব-৩৯: বিজয়া দশমী

সেরিব্রাল অ্যাটাক হলে মস্তিষ্কে রক্তকণিকার ছোবলে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম শিরা উপশিরার মধ্যে রক্তজমাট বাঁধে, ভিতরের নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে যায় বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে ক্রমশ তা হারিয়ে যেতে থাকে। ফুলকাকার ছোটমেয়ে শ্যানন নিউরোলজি নিয়ে স্পেশালাইজেশন করেছে। দাদুর শরীর খারাপের আগে বোধহয় ঠাকুমার কাজের সময় একবার কথাপ্রসঙ্গে ওর কাছেই জেনেছিলাম যে মদের আধিক্য আমাদের শরীরের সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেমকে খুব ধীরে ধীরে একইভাবে অকেজো করে দেয়। ব্রেনসেল শুকিয়ে দেয়। মস্তিষ্কের সেরাটোনিন লেভেল কমিয়ে দেয়। এর ফলে যে ডিপ্রেশন ভুলতে মানুষ মদ খায় মদ সেই ডিপ্রেশনকে আরও বাড়িয়ে দেয়। ব্রেনের মোটরকন্ট্রোল ক্ষতিগ্রস্ত হবার ফলে ধীরে ধীরে চলাফেরা মানসিক স্থিতি, স্মৃতি বিচারবুদ্ধি সবকিছু মানুষ হারিয়ে ফেলে। এসব জেনেও মানুষ মদ খায়, অন্যন্য নেশায় ডুবে থাকে, ক্রমশ নেশাই মানুষকে গিলে খেয়ে ফেলে। হয়ত যেভাবে বাবলির চোখের সামনে প্রণয়কে গিলে খাচ্ছে মদ আর জুয়ার নেশা।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৫: সাফল্য কি বংশগত উত্তরাধিকার? না কি ব্যক্তিগত কৃতিত্বের প্রমাণ?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬০: নতুন পথে রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত

মদের নেশাকে উপভোগ করার কোনও পূর্বঅভিজ্ঞতা সূবর্ণকান্তির নেই। তাই এই সব প্রশ্নের উত্তর সে জানে না। লেখা থামিয়ে ভাবতে বসে সূবর্ণ মদ ক’বার খেয়েছে? প্রথম বিয়ার খেয়েছিল যাদবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের এক বন্ধুর হোস্টেলরুমে তিনচারজন মিলে ভীষণ হাহা ঝাল চিলিচিকেন সহযোগে জলের বদলে জিভ ও গলার জ্বালা মেটাতে বিয়ার খেয়েছিল কিন্তু তিতকুটে তরলে কোনও আকর্ষণ বোধ করেনি। এরপর গ্লাসগোতে সেপ্টেম্বরে মাস্টার্স করতে যাবার পরেই ডিসেম্বরের রাতে পারদ এক ডিগ্রি পৌঁছতে কয়েকদফা পোশাক পরে বন্ধুদের সঙ্গে জীবনে প্রথমবার বরফে ভিজতে বেরিয়েছিল। খানিক পরে বরফের সঙ্গে শুরু হলো উদ্দাম হাওয়া, ঠান্ডার শাণিত ছুরি শরীর যেন ফালা ফালা করে দিচ্ছিল। হস্টেলে ফিরেও শরীরের ভেতরের কাঁপুনি যাচ্ছিল না।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

একবন্ধু গরমজলে মিশিয়ে দিয়েছিল তরল আগুন, শরীরের ওম ফিরে এসেছিল। নিশ্চিন্তে নিঃসাড়ে ঘুম হলো বটে, কিন্তু পরের দু-তিন দিন যেন একটা ঘোরলাগা মাথাধরা ছিল। এটা নাকি নেশার হ্যাংওভার।

নেশা মানুষকে অমানুষ করে দেয়। ক্রমাগত মদ্যপানে আসক্ত মানুষের মনে স্থায়ী মানসিক দূর্বলতার সৃষ্টি করে। ফলে যখন সে মদ খায়নি মানে দিনের অন্যসময়ে কাজের সময়ে তাঁর কথায় ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ থাকে না, সে বিরোধিতা সহ্য করতে পারে না, সংযত প্রতিবাদ করতে পারে না, চিৎকার করে ফেলে। অসংলগ্ন বা অন্যায় কথাও বলে ফেলে। মোটের ওপর এঁদের ব্যক্তিত্বের সমস্যা তৈরি হয়! চরিত্রের দূর্বলতা এইসব মানুষকে ঘিরে ফেলে। প্রণয়কান্তির একই সমস্যা!
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪২: যোগমায়া দেবী—এক প্রতিবাদী নারী

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬৮: লক্ষ্মীস্বরূপিনী মা সারদা

অরুণাভ পুজোর মধ্যে বাবলিকে একদিন লাঞ্চে ডাকতে চেয়েছিলো। বাবলি জানিয়েছিল বাড়িতে পুজো তাই ব্যস্ততা থাকবে। অরুণাভ চেয়েছিল বিজয়াদশমীর দিন। কিন্তু সেদিন দুপুরে বাড়িতে নানান কাজ থাকে অথচ অরুণাভ’র যাতে খারাপ না লাগে তাই বাবলি বলে বালিগঞ্জের কাছাকাছি কোথাও সকালে ব্রেকফাস্ট করবে। পুজোর দিন সকালবেলা বেশী লোক থাকার কথা নয়, ভিড় সেরকম ছিলও না। কিন্তু অরুণাভ বা বাবলির অজান্তেই অরুণাভকে চিনে ফেলা কোন একটি পরিবার অরুণাভ সমেত নিজেদের সেলফি তুলেছিল। বাবলি জানতো ছোট পর্দার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা ঘরে ঘরে জনপ্রিয়। সেই জনপ্রিয়তা ঠিক সিনেমার স্টারডম নয়, মানুষ এই শিল্পীদের অনেকটা পারিবারিকভাবে কাছেরজন ভেবে নেয়। তাই মাঝেমাঝে যখন সামনাসামনি অরুণাভ’র সঙ্গে ছবি তুলতে চেয়েছে কেউ কেউ বাবলি নিরাপদ দূরত্বে সরে থেকেছে যাতে সে কোনওভাবে গসিপের অংশ না হয়ে ওঠে। কিন্তু এই ঘটনাটা তারা খেয়ালই করেনি। সেই পরিবার তাদের ফেসবুকে ইন্সটাগ্রামে এ ছবি দেয় ভাইরাল হবার কারণ নেই, হয়ওনি। কিন্তু দূর্ভাগ্যক্রমে সেই ছবি প্রণয়কে দেখায় তার সেই কুচক্রী বন্ধু আগরয়াল, যে বাবলির হাতে ক্লাবের দিওয়ালী পার্টিতে থাপ্পড় খেয়েছিল। আগরওয়াল শুধু মধুর প্রতিশোধ নিল তাই নয়, প্রণয়কে অপমানের তীব্র দংশনে পুরোপুরি বিষিয়ে দিল। —চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content