মা দুর্গা।
পুজোয় জনতার উন্মাদনা আর ব্যক্তিগত উদযাপনের দর্শন বদলেছে। এককালের পুজোর গান, পুজোসংখ্যার শারদীয়া প্রাক ডিজিটাল যুগে কিশোরমনে, যুবক-যুবতীর পুজো পুজো গন্ধকে যেভাবে প্রাণিত করতো, আজকের পুজোয় তার বিকল্প অনেক। জীবনের আরও বেশি কিছু চাওয়ার অনিবার্য আকাঙ্ক্ষার পণ্যায়ন, মূল্যবোধ, সামাজিক আবেগ, স্বপ্ন ও প্রত্যাশায় মোড়া নতুন “মাইন্ডসেট” কিছু প্রশ্ন, কিছু হতাশা, কিছু জেনারেশন গ্যাপ, কিছু কিছু বিস্ময়, আশা ও কৌতূহল ও সঙ্কট রেখে যাবে। এগিয়ে চলা ও পিছিয়ে পড়ার সেকাল-একালের এই থিওরি ও যাপনের মধ্যেই পুজোর সবটা ধরা থাকছে।
পাড়ার মোড়ে কিশোর-মান্না, আশা-লতা, সলিল, শ্যামল, হেমন্ত, বীরেন্দ্রকৃষ্ণের মহালয়া বাজছে, জীবনমুখী, কালীকীর্তন, সেমিক্লাসিক্যাল, রিমেক, অরিজিনাল, কণ্ঠী, আধুনিক, মর্ডার্ণ, অত্যাধুনিক, উত্তরাধুনিক এবং তাদের প্রো, আলট্রা ইত্যাদি বিভিন্ন ভার্সন মজুত আছে। আছে উত্সবোত্তর ফাঁকা পাড়ায় চতুষ্পদের সদ্য শেখা সঙ্গীতলীলা।
আরও পড়ুন:
শারদীয়ার গল্প: গৌরী এল দেখে যা লো /১
শারদীয়ার গল্প: তখন বিকেল/৪
পুজোর আলো নিবে গেলে মনখারাপের ভাবাটাও এখন তেমন থাকে না, সামনে নানা ব্যস্ততা থাকে, সকলেই ছুটছে, ছুটছে সময়, দেশ, বিশ্ব, আর পরের পুজোও মাত্র তিনশো পঁয়ষট্টি দিন বাদেই তো, কিংবা আরও আগেই।
প্রতিযোগী, প্রতিযোগিতা, বাজার, বিপণন এবং পণ্য যেভাবে আজ দুনিয়া ও জীবনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে শিউলির গন্ধের পাশে ডিওড্রেণ্টের, আনন্দের পাশে মুহূর্তসুখের, উপলব্ধির পাশেই অনিশ্চিতের মাঝে বেঁচে নেওয়ার উদ্দাম অবাধ উল্লাসের উদাত্ত আহ্বান। গিরিসুতা, শিবজায়া, গণেশজননী উমা, দুর্গা পার্বতী, ভগবতীর আশ্বিন মাসে বাপের বাড়ি বত্সরান্তে আসার তত্ত্ব কিংবা ধারণা নানা থিওরি কনসেপ্টে জীর্ণ, ক্লিষ্ট।
প্রতিযোগী, প্রতিযোগিতা, বাজার, বিপণন এবং পণ্য যেভাবে আজ দুনিয়া ও জীবনের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে সেখানে শিউলির গন্ধের পাশে ডিওড্রেণ্টের, আনন্দের পাশে মুহূর্তসুখের, উপলব্ধির পাশেই অনিশ্চিতের মাঝে বেঁচে নেওয়ার উদ্দাম অবাধ উল্লাসের উদাত্ত আহ্বান। গিরিসুতা, শিবজায়া, গণেশজননী উমা, দুর্গা পার্বতী, ভগবতীর আশ্বিন মাসে বাপের বাড়ি বত্সরান্তে আসার তত্ত্ব কিংবা ধারণা নানা থিওরি কনসেপ্টে জীর্ণ, ক্লিষ্ট।
আরও পড়ুন:
বসুন্ধরা এবং…, ৩য় খণ্ড, পর্ব-৩৯: বিজয়া দশমী
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার
ভবের ভবানীর ভুবন আর ভবন আলো করার ধরণটাও কবে যেন বদলে গিয়েছে। কার্ত্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী, সরস্বতী, বাহন কিংবা অসুরদের ম্লানমুখে চড়া আলোয় যাত্রার সঙ হয়ে সব আলো কাড়ার দিন শেষ। জনতা এখন দুচোখের বদলে ক্যামেরার চোখে অন্যকে দেখার সুযোগ করে দিতে দিতে এদের দেখে, কিংবা সেলফি তোলে। সেলফি উইথ অসুর অ্যাণ্ড আদার্সের জাঁতাকলে মর্ত্যের মামারবাড়ি এখন অন্যরকম। সেখানে এরা নেহাত আদার ব্যাপারী।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৭০: সুন্দরবনের পাখি: লাল কাঁক
শুকনো মুখের কার্ত্তিক, ক্যাবলা মুখে ধুপগোঁজা অসুর, আর নির্বাক সিনেমার চরিত্রের মতো বাকিদের মামার দেশের লোকেরা নেচেকুঁদে জলে ফেলে দিয়ে আসে, ছাড়ার আগে কলামুলোটা কেড়ে নেয়, ত্রিশূল, গদা, খড়্গ, মালা সব কেড়ে নিয়ে ঘটের ফুলডাবে গলা ভিজিয়ে মাতৃকুল বৎসরের মতো বিদায় দিয়ে জয়ধ্বনি করে টালমাটাল পায়ে বাড়ি ফিরে যায়। ফাটা কপাল, ভাঙা আঙুল আর মর্ত্যে প্রতিষ্ঠিত পৈতৃক প্রাণ নিয়ে দেবতা মানে মানে সরে পড়েন।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮৪: অরাজকতার ফল ও একটি দুঃস্বপ্ন
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ
শরৎ আলোর আঁচল টুটে কীসের ঝলক নেচে ওঠে কে জানে, ওই চরণমূলে মরণের নাচের তালে তালে হাহারবে নিখিল অশ্রুসাগরের কূলে পূজা সাঙ্গ হয়, প্রতিবার।—শেষ।
* ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।