রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


 

বাথটাব (পর্ব-২)

মূহুর্তের মধ্যে দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়লো সন্ধ্যের মুখে এই খবর। কৌশিকী দত্তগুপ্ত সুন্দরী। জনপ্রিয় টেলিভিশন নায়িকা। তারপর এই পুজোতে তার প্রথম সিনেমা মুক্তি পাবে। তার আত্মহত্যা মানে নিশ্চয়ই মানসিক টানাপোড়েন। তাহলে সেই অস্থিরতার পিছনে কে বা কারা? একদিকে নিউটাউনের সেই হোটেল থেকে ঘটনার লাইভ সম্প্রচার, আর একঘেয়েমি কাটাতে স্টুডিয়োতে বসে ঘটনার চুলচেরা বিশ্লেষণ। সেখানে রয়েছেন কৌশিকীর পুরনো এক জনপ্রিয় টেলিভিশন ধারাবাহিকের পরিচালক, এক মহিলা মনোবিদ আর আগামী ছবি ‘ওহ লাভলি’-এর প্রযোজক এবং পরিচালক ছবির ব্যস্ত নায়ক ইতালিতে একটি বাংলা ছবির গানের শুটিংয়ে ব্যস্ত। তিনি সেখান থেকে তাঁর সহানুভূতি জানিয়ে সহনায়িকার রেস্ট-ইন-পিস-এর কামনা করলেন।

এরই মধ্যে টেলিভিশনে এক হোটেল কর্মীর সাক্ষাৎকার নেওয়া হল। যিনি জানালেন যে ম্যাডামের রুমের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করা ছিল। ম্যাডামের টিমের একজন নিচের লবি থেকে দু-তিনবার ফোন করে না পেয়ে রিসেপশনের সাহায্য চান। তারাও ফোনে চেষ্টা করেন। হয়তো অভিনেত্রী বিশ্রাম করছেন ভেবে তাঁরা আরও ঘণ্টা দু’য়েক অপেক্ষা করেন, যিনি যোগাযোগের চেষ্টা করছিলেন তিনি জানিয়েছিলেন যে পরদিন সকালে ফটোশুট রয়েছে। আর তার কস্টিউম নিয়ে অভিনেত্রীর সঙ্গে আলোচনা করার কথা।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৪৯: হোটেলের বাথটাবে হাতের শিরা কেটে আত্মহত্যা করেন অভিনেত্রী কৌশিকী

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— রামবাণ ও পানি তাঙ্কি

তাছাড়া উনি এখনও ডিনারের জন্য কোনও ফোন করেননি। ঘরের ফোনেও কোনও সাড়া দেননি। ওর ঘরে এবং টয়লেটেও ফোন রয়েছে। তার আশঙ্কাকাতেই মূলত হোটেল রিসেপশন থেকে ডুপ্লিকেট কার্ড দিয়ে রুমের দরজার ডিজিটাল লক খুলে ঘরে ঢোকার পর দেখা যায় অভিনেত্রী কৌশিকী দত্তগুপ্ত বাথটবে পড়ে আছেন। বাথটবে জল একেবারে রক্তাক্ত। সঙ্গে সঙ্গে হোটেলের সঙ্গে যুক্ত ডাক্তার আসেন। পুলিশ এসে পড়ে হোটেল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশের সামনেই সংশ্লিষ্ট ডাক্তার পরীক্ষা করে জানান যে অভিনেত্রী আর বেঁচে নেই।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৯: শাসক বেকায়দায় পড়লেই প্রতিপক্ষকে সন্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদিও রাজনীতিতে সে সব মানা হয় না

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার

এই মুহূর্তে ফরেনসিক বিভাগের কর্মীরা হোটেল রুমের নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন তাদের কাজ শেষ হলে তবে মৃতদেহ হোটেল রুম থেকে পোস্টমর্টেমের জন্য নিয়ে যাওয়া হবে।

গোয়েন্দাকর্তা ডিসি ডিডিবিভূতি চক্রবর্তী সস্ত্রীক মেয়ের কাছে জার্মানি গিয়েছেন। এখন তার কাজ দেখছেন স্বয়ং জয়েন্ট সিপি ক্রাইম। যদিও শ্রেয়া রয়েছে কিন্তু ভৈরব চক্রবর্তী যেভাবে ধৃতিমানের কাজের ওপর ভরসা করেন জয়েন্ট সিপি তো তা করবেন না, আর শ্রেয়াও ফট করে সরাসরি জয়েন্ট সিপির পারমিশান না নিয়ে তাকে ডাকতে পারবে না। এখনও গোয়েন্দা বিভাগ বা শ্রেয়ার কোনও ফোন না আসায় ধৃতিমান ভাবল এই ঘটনার তদন্তভার গোয়েন্দাবিভাগ নয়তো লোকাল থানাই করবে। তা করুন কিন্তু একজন সত্যানুসন্ধানী হিসেবে রহস্যের গতিপ্রকৃতি অনুধাবন করাটা জরুরি, হতেই পারে তদন্তভার অন্য কারও কিন্তু ধৃতিমান নিজে কি করে এই কেসকে দেখতো সেটা জানতে স্টাডি করা দরকার।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

মুভি রিভিউ: মামুটির মাল্টিস্টারার ছবি ‘সিবিআই ৫: দ্য ব্রেন’ গতানুগতিক থ্রিলার

কিন্তু এর মধ্যেই গোয়েন্দাকর্তা ভৈরব চক্রবর্তীর হোয়াটসঅ্যাপ কল দেখে ধৃতিমান বুঝল তিনি জার্মানি থেকেই কথা বলছেন।
—হ্যাঁ স্যার বলুন! আপনি তো ছুটিতে।
—হ্যাঁ। আসলে শ্রেয়াকে ওর মায়ের চোখের একটা পোস্ট অপারেটিভ
কমপ্লিকেশনের জন্যে হঠাৎ আজই চেন্নাই যেতে হয়েছে। পরশু ফিরে আসবে। আমি ছুটিতে জয়েন্ট সিপি বললেন, তোমায় একটু… ঘটনাটা জানো নিশ্চয়ই।
—হ্যাঁ, স্যার কৌশিকী দত্তগুপ্ত।
—অ্যাসিন্টাণ্ট কমিশনার (ডিডি) রণজয় রায় থাকবেন চেনো তো?
—হ্যাঁ মানে মুখ চিনি।
—ফরেনসিকের মফিজুল ওখানেই আছে! আসলে শ্রেয়া থাকলে কোন অসুবিধে হতো না।
—স্যার, আপনি চিন্তা করবেন না, আমি চলে যাচ্ছি।
—না, আমি জয়েন্ট সিপি সাহেবের সঙ্গে ক্লিয়ার কথা বলে নিয়েছি, তোমার কাজে কোন অসুবিধা হবে না। শ্রেয়া নেই। আমি চাই তুমি নিজে একবার ক্রাইম সিন ভিজিট করো!
—ওকে স্যার।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮১: তথাকথিত পরিচয়হীন প্রতিভার মূল্যায়ন কী শুধুই সাফল্যের নিরিখে সম্ভব?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

—এক মিনিট! প্রাইমারিলি টেলিভিশন শুনে কিছু মনে হচ্ছে? এনি হাঞ্চ?
ধৃতিমানের মুখে হাসি ফুটল। তারা দু’জনেই কি একিই কথা ভাবছে?
—আপনার যেটা মনে হয়েছে আমি বোধহয়
—ডোরলক?
—ইয়েস স্যার। ডিজিটাল লক বাইরে থেকে দরজা টেনে দিলেও লক হয়ে যায়। খুলতে গেলে কার্ড লাগে বন্ধ করতে লাগে না।
—তার মানে ভিকটিম নিজে দরজা বন্ধ করেছিল এমনটা নাও হতে পারে তাই তো?
—এক্সাক্টলি! আর সম্ভবত ভিতরের পাওয়ার অন রাখার জন্য মেইন সুইচে অ্যাক্সেস কার্ডের বদলে অন্য কিছু রাখা আছে। আমি গিয়ে দেখে আপনাকে জানাবো।—চলবে।
 

কৌশিকী দত্তগুপ্ত হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১০ অক্টোবর ২০২৪

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content