ছবি: লেখক।
কবি বলেছেন, “সহে না যাতনা, দিবস গণিয়া গণিয়া বিরলে”… সোনার খাঁচায় ভরা একেকটা দিন একেকরকম। কোনওটা রঙিন, কোনওটা মলিন, কোনওটা বিষণ্ণ কিংবা বিপন্ন, কোনওটা ভাবগম্ভীর, তীক্ষ্ণ, অন্তর্ভেদী, কোনওটা খাঁচার বাইরে এসে ডানা ঝাপটায়।
কবি বলেছিলেন, “এমনি করেই যায় যদি দিন যাক না”, এই যেমন সেপ্টেম্বর মাসেই উল্লেখযোগ্য আন্তর্জাতিক দিবসের তালিকায় এগারোই সেপ্টেম্বরের বিশ্ব ফার্স্ট এইড দিবস যেমন আছে, তেমনই আছে একুশে সেপ্টেম্বরে পালনীয় বিশ্ব শান্তিদিবস, কিংবা তেরোই সেপ্টেম্বরের ওয়ার্ল্ড চকোলেট ডে আর আঠারো তারিখে বিশ্ব ব্যাম্বু দিবস। চোখ রাখা যায় একুশে সেপ্টেম্বরের বিশ্ব অ্যালঝাইমার্স ডে, ঊনত্রিশে আন্তর্জাতিক হৃদয় দিবস কিংবা ত্রিশে সেপ্টেম্বরের অনুবাদ দিবসে। একেকটি দিন যে যার তাত্পর্যে ভাস্বর।
আরও পড়ুন:
মুভি রিভিউ: মামুটির মাল্টিস্টারার ছবি ‘সিবিআই ৫: দ্য ব্রেন’ গতানুগতিক থ্রিলার
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৭: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— রামবাণ ও পানি তাঙ্কি
শরীরের দুর্বিপাকেই প্রাথমিক চিকিৎসা শেষ হয় এমনটা নয় বোধহয়। প্রাথমিক চিকিৎসায় জীবনের ক্ষত বৃহত্তর বিপদ থেকে রক্ষা পায় যেমন, তেমনই সেই পরিচর্যা সকল ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত বটে। রুগ্ন পৃথিবীর বুকে বিপন্ন মানুষের কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে বা ব্যাম্বু নয়, দরকার পরিচর্যার। জীবনের সবটা চকোলেটের মতো মোলায়েম ও রোমাঞ্চকর মধুর নয়, তবুও জীবন শান্তি চায়, তিক্ততা ভুলে, বিপন্নতাকে ভুলে। তা বলে ভুলে ভরা এ জীবনে আত্মভোলা ভুলো রোগের বশীভূত হতে চায় কে? ভুলের মূলে ফার্স্ট এইড লাগুক, ভোলা দিনের কান্না হাসির ভাষাগুলো ঠিকঠাক অনুবাদ করে করেই হৃদয়ে হৃদয়ে জোড়া লেগে যাক। ব্যাস! পৃথিবীকে তখন মায়াবীর নদীর পারের দেশ মনে হবে।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৯: শাসক বেকায়দায় পড়লেই প্রতিপক্ষকে সন্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদিও রাজনীতিতে সে সব মানা হয় না
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার
মনে হবেই, কারণ, সেপ্টেম্বরের চতুর্থ রবিবার বিশ্ব নদীদিবস। সেই কবে আমাদের ছোটনদী আঁকে বাঁকে চলতো। নদদীজপমালাধৃত প্রান্তরে দাঁড়িয়েই মানুষ নদীকে মাতৃরূপে দেখতে চেয়েছে। গঙ্গা-পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-সিন্ধু-শতদ্রু-গোদাবরী-কালিন্দী অথবা টাইগ্রিস-ইউফ্রেটিস-হোয়াং হো-রাইন-টেমস আসলে ধরিত্রীর দুই চোখে দুই জলের ধারা, কখনও আনন্দাশ্রু, কখনও বা শোকগম্ভীর। আপন বেগে পাগলপারা নদী কখনও মহাদেবের জটা থেকে নেমে আসে, কখনও ফল্গুধারা হয়ে অন্তঃসলিলা হয়। নদী নদ হয়ে দুঃখ দেয়। নারী হয়ে চঞ্চলা, স্ফীতা, মধুমতী হয়ে বয়ে চলে। নদীর জলেই সভ্যতার বিকাশ, নদীর জলেই তার অস্তিত্ব আর সংকট।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৪: ঝোপে-ঝাড়ে হায়েনা
সংকটে নদীও। সরস্বতী হয়ে কখনও পথ হারায়, ক্লিষ্টা গঙ্গা হয়েও পতিতোদ্ধারিণী, অসংখ্য শাখাবিশাখা আর উপনদী বিশীর্ণ, জীর্ণ, ধ্বস্ত। রেবা, মহানদী, বিশীর্ণা কিংবা সুবর্ণসিকতা, পলাশিনী ইত্যাদি অজস্র চেনা-অজানা-বদলে চলা নদীর বাঁকে বাঁকেই সভ্যতার নানা বাঁকবদলের ইতঃবৃত্ত, জীবনের ইতিকথা, যুগসঞ্চিত প্রেম-বিরহ-বর্ষণের চুপকথা।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮১: তথাকথিত পরিচয়হীন প্রতিভার মূল্যায়ন কী শুধুই সাফল্যের নিরিখে সম্ভব?
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ
রূপকথার গল্পে ঘোড়া ছুটিয়ে তেরোনদীর গন্ধ আর হাওয়া নিয়ে ছুটে আসা রাজকুমারের যাত্রা আজও গান, কবিতার মধ্য দিয়ে ছুটে চলেছে মহাসাগরের দিকে, শৈশব কৈশোরের ঘ্রাণ নিয়ে অনন্তের পানে। নদী আসলে একটা কনসেপ্ট, আইডিয়া। বুকের মধ্যে বয়ে যেতে তার বাধা নেই। শরীর কিংবা মন হয়ে সে ধাবমান হয়, চলনে কখনও তার নুপূরনিক্বণ, কখনও কালের চরণধ্বনি। নদী গতির, সজীব প্রাণসত্তার অনুপ্রেরণা। সেই নদী কখনও যদি থেমে যায়? পৃথিবী থেকে মুছে যায়? বুকের মধ্যের নদীটা তখনও কি চলবে একইভাবে?
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।