রবিবার ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


‘চন্দু চ্যাম্পিয়ন’ ছবির একটি দৃশ্যে কার্তিক আরিয়ান।

 

চন্দু চ্যাম্পিয়ন

কাহিনি বৈশিষ্ট্য: স্পোর্টস বায়োপিক (২০২৪)
ভাষা: হিন্দি
প্রযোজনা: নাদিয়াদওয়ালা গ্র্যান্ডসন এন্টারটেইনমেন্ট, কবীর খান ফিল্মস
কাহিনি চিত্রনাট্য সংলাপ: কবীর খান, সুমিত অরোরা, সুদীপ্ত সরকার
নির্দেশনা: কবীর খান
অভিনয়ে: কার্তিক আরিয়ান, বিজয়রাজ, ভুবন অরোরা, রাজপাল যাদব, সোনালি কুলকার্নি প্রমুখ
সময়সীমা: ১৪২মিনিট
রেটিং: ৭/১০
ওটিটি রিলিজ: অ্যামাজন প্রাইম ভিডিয়ো

২০২১ সালে কবীর খানের পরিচালিত বিগত ছবি প্রথমবার ক্রিকেট বিশ্বকাপ জয় নিয়ে ৮৩ ছিল অনবদ্য। ছবি প্রশংসিত হলেও বক্স অফিস সে ভাবে উজ্জ্বল ছিল না। বরং তাঁর নির্দেশনায় এক থা টাইগার, বজরঙ্গি ভাইজান ছিল অনেক অনেক বক্স অফিস সফল ছবি। ২০২৪ সালের নির্মিত চন্দু চ্যাম্পিয়ন একইভাবে একটি মনে রাখার মতো চলচ্চিত্র হওয়া সত্ত্বেও বক্স অফিসে সেভাবে সফলতা পায়নি। ভারতীয় ক্রিকেট বা ইদানীং কিছুটা ফুটবল নিয়ে জনতার যত মাতামাতি বা মাতামাতি অলিম্পিক পদকপ্রাপ্তিতে। কিন্তু প্যারা-অলিম্পিক দুয়োরানি তাই উপেক্ষিত। তেমনি উপেক্ষিত ছিলেন মুরলিকান্ত পেটকর। তাঁরই জীবনসংগ্রামের দলিল চন্দু চ্যাম্পিয়ন।
নাট্যশাস্ত্রে অভিনয় হল, ‘পরকায়া প্রবেশম’ আর চরিত্রসৃষ্টি কাহিনি রচনা বা চিত্রনাট্য হল ‘পরচিত্ত প্রবেশম’। অভিনেতা-অভিনেত্রীকে অন্যশরীরে প্রবেশ করতে হয়। ঠিক যেভাবে সাম্প্রতিক অত্যন্ত বক্স অফিস সফল হরর কমেডি ‘স্ত্রী-২’ ছবিতে নায়িকা শ্রদ্ধা কাপুরের শরীরে ছবির নায়ক রাজকুমার রাও প্রবেশ করেন। বাইরে তিনি শ্রদ্ধা কাপুরই কিন্তু ভিতরে রাজকুমার রাও। আগামী শনিবার সেই মজার ছবি প্রতিবেদন লিখব।
আরও পড়ুন:

মুভি রিভিউ: মামুটির মাল্টিস্টারার ছবি ‘সিবিআই ৫: দ্য ব্রেন’ গতানুগতিক থ্রিলার

সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৬: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—ছাগল ক্ষুরি ও ধানি ঘাস

কার্তিক আরিয়ান এই চরিত্রের জন্য জুলাই ২০২২-এ ছবি ঘোষণার আগে থেকেই নিজেকে ভাঙতে শুরু করেছেন। ২০২৩ এর জুলাইয়ে ছবির চিত্রগ্রহণ শুরু হবার সময় নিজেকে পুরোপুরি দুমড়ে মুচড়ে ভারতের প্রথম প্যারালিম্পিকস স্বর্ণপদকবিজয়ী মুরলিকান্ত পেটকর-এর পরকায়া বা শরীরে প্রবেশ করেছেন। এই ছবির পোস্টার বা স্টিলস দেখলে কোথাও আপনি কার্তিক আরিয়ানকে খুঁজে পাবেন না। ছবি চিত্রনাট্য পরিপূর্ণভাবে আপনার চিত্তহরণ করবে এবং আপনাকে স্তব্ধ হয়ে ছবিটি দেখতে বাধ্য করবে।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৯: শাসক বেকায়দায় পড়লেই প্রতিপক্ষকে সন্ধির প্রতিশ্রুতি দেয়, যদিও রাজনীতিতে সে সব মানা হয় না

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৬২: সত্যজিৎ রায় রুপটান শিল্পীকে বলেছিলেন, উত্তমকুমারের কোনও মেকআপ করার

এত পরিশ্রমের পরেও বক্স অফিসে আশানুরূপ সাফল্য পায় না চান্দু চ্যাম্পিয়ন বা অজয় দেবগন অভিনীত অমিত রবিন্দরনাথ শর্মা নির্দেশিত আরেক স্পোর্টস বায়োপিক ‘ময়দান’। তাই সম্ভবত সত্যিকারের ভালো ছবি সংখ্যায় কম তৈরি হয়। আর গুরুদেব রবীন্দ্রনাথের অনবদ্য চরিত্র অমিত রায়ের ফর্মুলা মেনে বলতে হয় ভালো জিনিস কম হয় বলেই তা ভালো, অসংখ্য তাজমহল তৈরি হলে, তাজমহল অসাধারণ না হয়ে মাঝারি হয়ে যেত।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮৪: ঝোপে-ঝাড়ে হায়েনা

ছবি শুরুতে একজন অচেনা বয়স্ক মানুষ এলাকার থানায় পৌঁছে একটি অদ্ভুত অভিযোগ দায়ের করতে চান। অভিযোগ ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছে। এই বয়স্ক মানুষটির নাম মুরলিকান্ত পেটকর। সমস্ত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেন তার নাম অর্জুন পুরস্কারের জন্য মনোনীত হয়নি অভিযোগ সেটাই। এতদিন বাদে নিজের জন্য নয়, তিনি এই পুরস্কার জিতলে তা তাঁর গ্রামে রাস্তা তৈরির উন্নয়নে সহায়ক হবে। খুব স্বাভাবিকভাবে থানায় কেউ তাঁকে চেনেন না। তাঁর নামও শোনেননি। তাই থানার অফিসার তাঁর যোগ্যতা সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন।

শুরু হল মহারাষ্ট্রের ছোট্ট গ্রাম পেট ইসলামপুরে বড় হয়ে ওঠা এক গ্রাম্যকিশোরের কাহিনি। যাঁর মনের অসম্ভব আকাঙ্ক্ষা সে অলিম্পিকে গোল্ড মেডেলিস্ট হবে। এই নিয়ে সারা গ্রামের কাছে এবং নিজের পরিবারেও উপহাসের পাত্র মুরলীকে বিদ্রূপ করে বল হতো ‘চন্দু চ্যাম্পিয়ন’!
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮১: তথাকথিত পরিচয়হীন প্রতিভার মূল্যায়ন কী শুধুই সাফল্যের নিরিখে সম্ভব?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ

১৯৫২ থেকে সেই স্বপ্ন নিয়ে সেনাবাহিনীতে সুযোগ পাওয়া, ১৯৬৫-তে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে মেরুদণ্ডে বুলেটের আঘাতে শারীরিকভাবে অক্ষম হয়ে যাওয়া, আত্মহত্যার চেষ্টা। আবার সেনাবাহিনীতে তাঁর প্রাক্তনপ্রশিক্ষক টাইগার আলির অনুপ্রেরণায় নানান বাধাবিঘ্ন ঘাতপ্রতিঘাতের পর প্যারা অলিম্পিকে স্বর্ণপদক প্রাপ্তি। কিন্তু দেশের প্রশাসন তাঁর এই বিরল কৃতিত্বের কথা ১৯৭২ থেকে প্রায় ৪৫ বছর বেমালুম ভুলে গিয়েছিল। ২০১৭ সালে এক সাংবাদিক তাঁকে নিয়ে একটি নিবন্ধ লেখার পর পেটকারের অর্জুন পুরস্কারের জন্য আবেদন গৃহীত হয়।

এদিকে কেন্দ্রীয় সরকারের ঊর্ধ্বতন আধিকারিক তাঁর গ্রামে পৌঁছে তাঁকে জানান, অর্জুন নয়, সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী পুরস্কার দেবার জন্য মনোনীত করেছেন। ২০১৮ সালের বিশে মার্চ ভারতের রাষ্ট্রপতির হাত থেকে পদ্মশ্রী গ্রহণ করেন মুরলীকান্ত পেটকার।
যা জানালাম তা মূলকাহিনির পাত্রটুকু মাত্র! একজন মানুষের জীবনযুদ্ধের অবিস্মরণীয় টলটলে কান্না-ঘাম-রক্তঝরানো কাহিনিটা জানতে দেখতে বুঝতে কার্তিক আরিয়ানের এ পর্যন্ত করা এই শ্রেষ্ঠ ছবিটি দেখতে হবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। ‘বুমেরাং’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content