(বাঁদিকে) রামবাণ ফল। (মাঝখানে) রামবান গাছ। (ডান দিকে) রামবান গাছ ফল-সহ। ছবি: সংগৃহীত।
রামবাণ (Wissadula periplocifolia)
প্রায় আটত্রিশ বছর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদবিদ্যা নিয়ে পড়ার সুবাদে একবার এই গাছের কাণ্ডের কিছুটা অংশ আমার শ্রদ্ধেয় স্যার প্রফেসর গৌরগোপাল মাইতি মহাশয়কে দেখালাম। উনি দেখে বেশ বিস্মিত হলেন। বললেন, কোথায় পেলে এ গাছ? বললাম, আমাদের বাড়িতে আশেপাশে প্রচুর জন্মায়, ঝোপ হয়ে থাকে। স্যার জানতে চাইলেন, আমার বাড়ি কোথায়। বললাম, সুন্দরবন অঞ্চলের মধ্যে কাকদ্বীপে। সব শুনে স্যার বললেন, ওই অঞ্চলে এই গাছ পাওয়া যায়। এ হল একপ্রকার ম্যানগ্রোভ সহযোগী গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। গাছটি ভারত ও বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলে কোথাও কোথাও পাওয়া যায়। আর এটি সম্ভবত শ্রীলঙ্কা থেকে ভারতবর্ষে এসেছে। এই গাছটি আদৌ ভারত বা এশিয়ার স্বাভাবিক উদ্ভিদ নয়। এর আদি বাসভূমি ক্রান্তীয় আমেরিকা।
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৬: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—ছাগল ক্ষুরি ও ধানি ঘাস
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬৩: বেলুড়মঠে শ্রীমায়ের অভিনন্দন
সুন্দরবনের যে সব অঞ্চলে জোয়ারের জল পৌঁছোয় সেখানে রামবাণ দেখা যায় না। সাধারণত উঁচু জমি ও রাস্তার পাশে এই গাছ বেশি দেখা যায়। রামবাণ গাছ আমাদের গ্রামের বাড়ির বাস্তুজমিতে প্রচুর পরিমাণে রয়েছে। সুন্দরবনের বসতি এলাকার অন্যত্রও দেখেছি। তাহলে কি প্রাচীন সুন্দরবনের মানুষ এই গাছ থেকে তন্তু নিষ্কাশন করে তা থেকে সুতো বা দড়ি বানাত? প্রাচীনকালে সুন্দরবনের মানুষের কাছে কি তন্তুর উৎস ছিল এই গাছ? সুন্দরবনের লবণাক্ত এলাকায় পাট চাষ ভালোভাবে সম্ভব নয়। পাট চাষের জন্য প্রয়োজন পলি মাটি ও মিষ্টি জল। সুন্দরবনে মিষ্টি জলের অভাব। তাছাড়া পাট চাষের জন্য একটু উঁচু জমি চাই। সুন্দরবনের বেশিরভাগ জমিই নিচু। তাই আমার মনে হয় প্রাচীনকাল থেকে সুন্দরবনে তন্তুর জন্য এই বিদেশাগত প্রজাতি রামবাণ চাষ করা হত।