রবিবার ১৭ নভেম্বর, ২০২৪


আগের দিন ছিল শ্রাবণ-পূর্ণিমা। সে জ্যোৎস্না-রাত ছিল উৎকণ্ঠার, দুশ্চিন্তার। কবির পুত্রবধূ প্রতিমা দেবীর লেখায় আছে সেই ঘনঘোর দুর্যোগময় রাতের বর্ণনা। চাঁদের আলোও তাঁর‌ কাছে ‘ম্লান’ মনে হয়েছিল। কবি বড় স্নেহ করতেন প্রতিমাকে। বলতেন, ‘মামণি’। সেবায় শুশ্রূষায় ‘বাবামশায়’কে তিনি ভালো রেখেছিলেন। প্রতিমার শুধু নয়, সকলের কাছেই সে-রাত ছিল আতঙ্কের। মৃত্যুর পদধ্বনি ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে উঠছিল। প্রতিমা দেবী তাঁর ‘নির্বাণ’ বইতে লিখেছেন, ‘সন্ধ্যা থেকেই সকলে জানত আজকে তাঁর জীবন-সংশয়, বারাণ্ডায় মাঝে-মাঝে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি, ডাক্তারদের অনেকগুলো গাড়ি নিঝুম দাঁড়িয়ে আছে উঠনে, রুগীর ঘরে আলো জ্বলছে, বুঝছি অবস্থা ভালো নয়, ভালো বোধ করলে আলো নিবনো থাকে। কিছু খবর নিতেও সাহস হচ্ছে না, কী জানি, কী শুনব। লোকজন পা টিপে-টিপে যাতায়াত করছে, যেন একটা থমথমে ছায়া পড়েছে বাড়ির চারিদিক ঘিরে।’

রাতের অন্ধকার এক সময় মুছে যায়। দিনের আলো ফোটে। অসুস্থতার দিনগুলিতে কবি সকাল হলেই বলতেন, পূর্বদিকে মুখ ঘুরিয়ে দিতে। বালিশের উপর বালিশ দিয়ে উঁচু করে, সেই বালিশ-স্তূপে হেলান দিয়ে তাঁকে বসাতে হতো। না, সেদিন আর তেমন ভাবে খাটে বসিয়ে দিতে বললেন না। খাটের কাছে দাঁড়িয়ে ছিলেন চিনা ভবনের এক অধ্যাপক। হাতে জপমালা। ইষ্টদেবতার নাম জপছিলেন তিনি। মহর্ষিদেবের প্রপৌত্র অজীন্দ্রনাথের পত্নী, কবির পরম স্নেহভাজন অমিতা খাটের পাশে দাঁড়িয়ে ঠোঁটে একটু একটু করে জল দিচ্ছিলেন। খুব সতর্কতার সঙ্গে দেওয়া, বিষম খেলে ঘোরতর বিপদ হতে পারে। কানের কাছে মুখ নিয়ে শোনাচ্ছিলেন কবির প্রতিদিনের ধ্যানের মন্ত্র, ‘শান্তম্ শিবম্ অদ্বৈতম্।’

Skip to content