আলাস্কার প্রকৃতি।
এই সফেদ পর্বতমালা থেকেই উৎপন্ন হয়েছে চেনা নদী যাকে ঘিরে আমার আদিখ্যেতার সবটুকু। এখন উত্তরে সফেদ পর্বতমালা আর দক্ষিণে আলাস্কা পর্বতমালা পেরিয়ে দু’ দিক থেকেই ফেয়ারব্যাঙ্কস শহরের একদম কাছাকাছি চলে এলে দেখা যাবে যে এই শহর কয়েকটা ছোট ছোট পাহাড় দিয়ে ঘেরা। এই পাহাড়গুলোর তেমন কোনও নাম নেই। তবে এই পাহাড়ের পাদদেশে যে উপত্যকা অঞ্চলতায় শহরটা অবস্থিত, সেই উপত্যকাটিকে বলা হয় ট্যানানা ভ্যালি।
এই চারিদিকে পাহাড় পরিবেষ্টিত একটা উপত্যকায় অবস্থানের কারণে ফেয়ারব্যাঙ্কস শহরের পরিবেশ খুব শান্ত। প্রচলিত অর্থে যাকে আমরা ঝড় বলি, সেই উচ্চ গতি সম্পন্ন হওয়া এখানে নেই। সাধারণ ভাবেও খুব একটা বেশি জোরে এখানে হওয়া চলে না। সেটা একদিক থেকে বিরাট বড় পাওনা। কারণ শীতকালে ওই প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যে তার ওপরে যদি আবার জোরে হওয়া দিতো তাহলে জীবন আরও দুর্বিষহ হয়ে উঠতে পারতো। যেমন যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় বা উইসকনসিন রাজ্যের শহর গুলোতে অর্থায় আমি আগে যেখানে থাকতাম সেখানে এইটা খুব বাজে একটা সমস্যা ছিল।
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪২: মেরুজ্যোতির শহর ফেয়ারব্যাঙ্কস
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৮: নির্দোষ প্রাণীহত্যা কী সমর্থনযোগ্য?
ওই অঞ্চলের চারিদিকে বিশাল বিশাল হ্রদ রয়েছে। ছোট বেলার ভূগোল বইতে যুক্তরাষ্ট্রের ওই অঞ্চলটিকেই বলা হত পঞ্চহ্রদের এলাকা। অর্থাৎ পাঁচটি সমুদ্রের সমান মাপের হ্রদ (সুপিরিয়র, মিশিগান, হুরন, ইরি এবং অন্টারিও) এখানকার জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়াও এখানে আরো অগুনতি হ্রদ রয়েছে। অর্থাৎ কিনা এই অঞ্চলের চারিদিকই খোলা। আর তাই এসব জায়গায় অস্বাভাবিক রকমের হওয়া চলতো বছরে সবসময়ই।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৬৪: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—গিরা শাক ও যদু পালং
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৬:কোনও একটি দাবিতে বিরোধীরা জোট বাঁধুক কখনও চায় না শাসক
ওই বড় হ্রদের পাশে শহরগুলোতে তো কথাই নেই। শীতকালে যা না ঠান্ডা পড়তো তার চাইতে অনেক বেশি কষ্ট হতো এই হাওয়ার জন্য। ফেয়ারব্যাঙ্কসে এসে সেদিক থেকে বাঁচোয়া। এখানে শীতকালে তাপমাত্রা ওই সব এলাকার চাইতে অনেক গুন কমে গেলেও ঝোড়ো হাওয়া না দেওয়ার জন্য সেটা সহ্য সীমার মধ্যে থাকে। এতো গেলো ফেয়ারব্যাঙ্কসের আসে পাশে পাহাড় পর্বতের কথা।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৭: কী করে গল্প লিখতে হয়, ছোটদের শিখিয়েছিলেন অবনীন্দ্রনাথ
গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৮: যেথা আমি যাই নাকো / তুমি প্রকাশিত থাকো
এ বার আসি নদ নদীর কথায়। আগেই বলেছি, ফেয়ারব্যাঙ্কস শহর কে ঘিরে রেখেছে ছোট্ট চেনা নদী। উত্তরে সফেদ পর্বতমালা থেকে উৎপন্ন হয়ে আমাদের এই ছোট্ট শহরটাকে এঁকেবেঁকে একরাশ সোহাগের বাঁধনে জড়িয়ে এই চেনা নদী ফেয়ারব্যাঙ্কসের উত্তরে গিয়ে মিশেছে ট্যানানা নদীর সঙ্গে। এই ট্যানানা নদী আরও উত্তরে বয়ে গিয়ে মিশেছে ইউকন নদীর সঙ্গে। এখন এই ইউকন নদীটাই হলো এই অঞ্চলের মূল স্রোতস্বীনি। আমাদের দক্ষিণবঙ্গে যেমন গঙ্গা নদী, আর তাকে ঘিরে রয়েছে অজস্র উপনদী এবং শাখানদী ঠিক তেমনই এই অঞ্চলে ইউকন।
আরও পড়ুন:
বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৮: জোসেফ কনরাড ও জেসি কনরাড—আমি রূপে তোমায় ভোলাব না…/৩
দশভুজা, পর্ব-৩৬: মৃণালিনী— রবি ঠাকুরের স্ত্রী-র লেখকসত্তা
এই ইউকন নদীর উৎস হল ক্যানাডায় ব্রিটিশ কলম্বিয়া রাজ্যে লেওয়েলিন হিমবাহ। সেখান থেকে কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের আলাস্কার ওপর দিয়ে প্রায় ১৯৮০ মাইল (প্রায় ৩২০০ কিলোমিটার) বয়ে গিয়ে ইউকন মিশেছে উত্তর প্রশান্ত মহাসাগরের বেরিং প্রণালীতে বা বেরিং সাগরে। ইউকন নদীটি যে অঞ্চল গুলোর ওপর দিয়ে বয়ে গেছে, নদীর সঙ্গে মিলিয়েই তাদেরকেও বলা হয় ইউকন উপত্যকা বা ইউকন ভ্যালি। ফেয়ারব্যাঙ্কস শহর থেকে উত্তরে প্রায় ২০০ মাইল মতো চলে গেলে তবে দেখা মিলবে এই ইউকন নদীর।—চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।