কিশোর কুমার।
হিন্দি ছবির সাম্রাজ্যে, এমনকি বাংলা ছবির ক্ষেত্রেও অসাধারণ গায়ক ছিলেন কিশোর কুমার। তাঁর গানে মুগ্ধ সারা বিশ্ববাসী। তিনি কিন্তু পাশাপাশি ভালো অভিনেতাও ছিলেন। বাংলা এবং হিন্দি বেশ কিছু ছবিতে তিনি অভিনয়ও করেছিলেন। সেই কিশোর কুমার মানুষটি ব্যক্তিগত জীবনে যে খুব মজাদার রসিক মানুষ ছিলেন, সেই পরিচয়ের একখণ্ড তুলে ধরছি।
এ তথ্য আমাকে জানিয়েছিলেন প্রখ্যাত পরিচালক অসিত সেন যখন তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম কলকাতা দূরদর্শনের ‘ক্লোজআপ’ অনুষ্ঠানে, তখন তিনি বলেছিলেন। বোম্বেতে অসিত সেন পা রেখেছিলেন তখন। জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তাঁর পরিচালিত বাংলা হিট ‘উত্তর ফাল্গুনী’ তিনি হিন্দিতে রিমেক করলেন। নাম দিলেন ‘মমতা’। সুচিত্রা সেন, ধর্মেন্দ্র, অশোক কুমার অভিনীত সেই ছবি সারা ভারতে আলোড়ন তুলেছিল। পরে তিনি ‘দীপ জ্বেলে যাই’ হিন্দিতে রিমেক করলেন। নাম দিলেন ‘খামোশী’। সেটিও সমাদৃত হয়েছিল। ‘সরাফত’, ‘মা ঔর মমতা’ প্রভৃতি ছবিও তাঁকে জনপ্রিয় করে তুলেছিল।
আরও পড়ুন:
পর্ব-৫৮: কালীর হাতে পাঁচ হাজার টাকা দিয়ে মহানায়ক বলেছিলেন, ‘কাউকে বলো না’
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’
এরপর তিনি আবারও সুযোগ পেলেন আরেকটি বাংলা হিট হিন্দিতে করার জন্য। তাঁরই পরিচালিত ‘চলাচল’ ছবি হিন্দিতে তিনি করলেন। নাম দিলেন ‘সফর’। ১৯৭০ সালে এ ছবি মুক্তি পেয়েছিল। ‘চলাচল’ ছবিতে অভিনয় করেছিলেন অসিত বরণ, অরুন্ধতী দেবী এবং নির্মল কুমার। হিন্দিতে সেই চরিত্রগুলিতে অভিনয় করলেন ফিরোজ খান, শর্মিলা ঠাকুর এবং রাজেশ খান্না। রাজেশ খান্নার লিপে কিশোর কুমারের একটি অত্যন্ত মর্মস্পর্শী গান ছিল ছবিটিতে “জিন্দেগি কা সফর হ্যায় এ ক্যায়সা সফর”।
আরও পড়ুন:
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৪: রাজা দশরথ, রাম, লক্ষ্মণ, সীতা সকলেই কি এক একটি জীবনবোধের প্রতীক?
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৩: রাজনীতিতে উন্নতির জন্য নিন্দা বা প্রশংসা ব্যক্তিগত পরিসরে করাই শ্রেয়, সভায় নয়
গানটির রেকর্ডিংয়ের দিন স্টুডিওতে রেকর্ডিং রুমে পরিচালক অসিত সেন, সুরকার কল্যাণজি আনন্দজি এবং সকল মিউজিসিয়ানরা আগ্রহে অপেক্ষা করছেন কিশোর কুমারের জন্য। কিন্তু কিশোর কুমারের আসার নাম গন্ধ নেই। তখন তো মোবাইল ফোন ছিল না। তাই তাঁকে ধরাও যাচ্ছিল না। বাড়িতে ফোন করে জানা গেল যে, তিনি বাড়ি থেকে অনেকক্ষণ আগেই বেরিয়ে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭৭: কথা কিছু কিছু
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৪: প্রতিমাদেবী— এক দুঃখবতীর কথা
সময় হয়ে যাচ্ছে দেখে ডেট ক্যানসেল করার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন সবাই। এমন সময় তড়িঘড়ি ছুটতে ছুটতে এলেন কিশোর কুমার। এসেই জানালেন তাঁর এই দেরির মূল কারণ হল দর্জিওয়ালা। সবাই তো অবাক হয়ে গেলেন। দর্জিওয়ালার সঙ্গে এখানে কি সম্পর্ক? তখন কিশোর কুমার জানালেন এই যে, একটা দুঃখ বেদনার গান তিনি গাইবেন তার জন্য তিনি একটি পাঞ্জাবি বানাতে দিয়েছিলেন হলুদ রঙের। কিন্তু সেটি হয়ে গিয়েছিল তাঁর দাদা অশোককুমারের সাইজের। সেটা পরেতো আসা যায় না। সেটা কাটিয়ে ছোট করে পরে আসতে তাঁর এত সময় লেগে গেল। হাসির ধূম পড়ে গেল স্কোরিং রুমে। বোঝাই গেল এর মধ্যে সত্যতাটা কমই আছে। কিন্তু তিনি যে এসে গিয়েছেন, সুন্দর করে গান রেকর্ডিং হয়েছে, তাই সেটা নিয়ে আর কোন উচ্চবাচ্য হয়নি।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার
দশভুজা, পর্ব-৩৪: প্রতিমাদেবী— এক দুঃখবতীর কথা
এমনই মজাদার রসিক মানুষ ছিলেন কিশোর কুমার। গত ৪ আগস্ট রবিবার ছিল তাঁর জন্মদিন। এই লেখার মধ্য দিয়ে প্রয়াত সংগীতশিল্পীর উদ্দেশে জানাই আমার সশ্রদ্ধ প্রণাম।—চলবে।
*পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।