শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


 

অডিয়ো ক্লিপ (পর্ব-৮)

ফোনটা রেখে খানিকক্ষণ চুপ করে বসে থাকল ধৃতিমান। শ্রেয়াকে নিয়ে একদিন নীলাঞ্জনদের গোলপার্কের বাড়িতে যাওয়ার কথা ছিল। তার আগেই নীলাঞ্জন তাকে এভাবে আসতে অনুরোধ করলেন। কিন্তু তিনি তাকে একাই যেতে বলেছেন, শ্রেয়ার কথা বলেননি। এই অবস্থায় কি শ্রেয়াকে বলবে? না প্রথমদিন সে কথা বলে আসুক পরে না হয় শ্রেয়াকে নিয়ে আর একবার যাওয়া যাবে।
এইসব ভাবতে ভাবতেই আবার নীলাঞ্জনের ফোন। ওপ্রান্ত থেকে নীলাঞ্জন কথা শুরু করার আগেই ধৃতিমান বলে উঠল—
—বলুন। তদন্তের স্বার্থে আপনি কিছু একটা বলছিলেন, আমরা অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলাম।
—আশ্চর্য এটা আপনি কী করে বুঝলেন?
—আন্দাজ! বলুন।
—না, আসলে দুবেজি এসেছিলেন! দুবেজি হলেন
—নিউজ টিভির ইস্টার্ন রিজিওনের কর্তা ববি সিং ধীলোঁর প্রাইভেট সেক্রেটারি নিউজ টিভি একটা টাকা দিতে চায়,কম্পেনশেন। সুচেতা মুখোপাধ্যায়ের অকালমৃত্যুর জন্য!
—কী আশ্চর্য আমি তো ডিটেলে আপনাকে কিছু বলিইনি।
—এটা খানিকটা ইনপুট খানিকটা অ্যাজাম্পশন।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৪১: সুচেতার গাড়িটা ডানলপ থেকে বালিঘাট স্টেশনের দিকেই যাচ্ছিল

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৫: আজি এ কোন গান নিখিল প্লাবিয়া

—কিন্তু উনি আমাদের বাড়িতে এসে যে এই কথাগুলো
—বললাম যে সেটুকু আন্দাজ। কিন্তু হাসপাতালে যেদিন উনি আপনাকে বলছিলেন নিউজ টিভি সবরকম সাহায্য করবে সেটা জেনেছি। ওই অ্যাক্সিডেন্টের স্পটডেড ড্রাইভার রাখাল দাসের স্ত্রীকে অফিস ক্যান্টিনে চাকরি দেওয়ার ব্যাপারে বলেছেন সংসারের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেওয়ার কথাও বলেছেন সেদিন।
—হ্যাঁ, কিন্তু আপনি তো তখন চলে গিয়েছেন।
—শেখরবাবু বলেছেন। শেখর সরখেল। এরকম সহৃদয় মালিকপক্ষ তো সকলের ভাগ্যে জোটে না। আর ড্রাইভার রাখাল দাসের জন্য তাঁরা এতকিছু করলে সুচেতা মুখোপাধ্যায়ের জন্য তো করবেনই!
—ও।
—এটা জানিয়ে ভালো করেছেন, তবে টাকাটা না নিয়ে আপনি ঠিক করেননি।
—আমি যে টাকাটা রিফিউজ করেছি এটাই বা আপনি জানলেন কি করে?
—আবার আন্দাজ! আগেরবার কথাটা বলবার আগেই আপনি বলছিলেন যে কথাটা শুনে যেন আমি না ভেবে বসি যে আপনি আপনার উদারতা প্রকাশ করতে কথাটা আমাকে জানাচ্ছেন। মনে পড়ছে।
—হ্যাঁ হ্যাঁ বলেছিলাম।
—এটাই সূত্র।
—কিন্তু টাকাটা রিফিউজ করে আমি ভুল করেছি সেটা কেন বলছেন সুচেতার বিনিময়ে আমি হাত পেতে টাকা নেব? দেখুন টাকার অংকটা আমি জানি না, জানতে চাইও না!
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৪: রাজা দশরথ, রাম, লক্ষ্মণ, সীতা সকলেই কি এক একটি জীবনবোধের প্রতীক?

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫৩: রাজনীতিতে উন্নতির জন্য নিন্দা বা প্রশংসা ব্যক্তিগত পরিসরে করাই শ্রেয়, সভায় নয়

—কিন্তু টাকাটা নিয়ে আপনি দান করে দিতেন, সিএম বা পিএম-এর ফাণ্ডে দিয়ে দিতেন। কোন হাসপাতালে বেডের জন্য, বাচ্চাদের থ্যালাসেমিয়ার চিকিৎসার জন্য দিতেন। যাদের টাকা তারা তো এগুলো করবেন না।
—না, আসলে আমার মেন্টাল স্টেবিলিটি ডিস্টার্বড রয়েছে। অতগুলো টাকার কথা শুনে কি রকম অদ্ভুত লাগল, রাগও হল। সুচেতার জীবনের কোনও মূল্য হয় না, ১ কোটি টাকা হলেও।
—ওঁরা এক কোটি টাকা দিতে চেয়েছিলেন!
—হ্যাঁ, আমি বললাম আমি চাকরি ছেড়ে বাড়ি বিক্রি করে কলকাতা ছেড়ে চলে যাবো, তখন বললেন ওঁরা অফিসের তরফে আমায় দিতে টাকাটা চান!
কথাটা শুনেই ধৃতিমান বলল—
—আপনার সঙ্গে আমাদের বসতে হবে। আমি এবং সেদিন যে লেডি অফিসার হাসপাতালে এসেছিলেন শ্রেয়া বাসু! আজ শ্রাদ্ধের কাজ মেটার পর আমরা কি…
—আপনি বলেছিলেন সকালেই আসবেন।
—নানা আমি আসব তাহলে শ্রেয়াকে আমি বিকেলের দিকে ডাকি?
—বেশ।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭৭: কথা কিছু কিছু

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৪: প্রতিমাদেবী— এক দুঃখবতীর কথা

নীলাঞ্জনের বাড়িতে বইয়ের কালেকশন দারুণ। ছিমছাম আড়ম্বরহীন সাজসজ্জায় তারিফ করার মতো হলো বই। নীলাঞ্জন যতক্ষণ পুজোয় ব্যস্ত ছিল তার কাছে অনুমতি নিয়ে ধৃতিমান ততক্ষণ বই দেখছিল। এমন নয় যে অনেক অনেক বই কিন্তু বইয়ের কালেকশনটা নানা ধরনের। সুধীর কক্কর-এর মীরা অ্যান্ড দ্য মহাত্মা আছে, আছে কোনান ডয়েলের দ্য অ্যাডভেঞ্চার অফ শার্লক হোমস। রয়েছেও হেনরির সিলেক্টেড হান্ড্রেড স্টোরিস আবার রয়েছে দেবব্রত বিশ্বাসের ব্রাত্যজনের রুদ্ধসংগীত। আর পাশেই ইউভাল নোয়া হাতারির বিখ্যাত মানব-ইতিহাস স্যাপিয়েনস, চার্লস চ্যাপলিনের অটোবায়োগ্রাফি মাই অটোগ্রাফি, সত্যজিৎঘরণী শ্রীমতী বিজয়া রায়ের আমাদের কথা, শরত রচনাবলী সুকুমার সমগ্র রবীন্দ্ররচনাবলী ১৫টি খণ্ডের পাশেই উঁকি দিচ্ছে দেশ পত্রিকার সুবর্ণজয়ন্তী গল্পসংকলন, হুতোম প্যাঁচার নকশা বা কমলকুমার মজুমদারের গোলাপসুন্দরী-দেওয়ালজোড়া ওয়াল ক্যাবিনেটের মাঝে বিশালাকার টিভি সামান্য শো পিস, আর অজস্র বই একটা চৌকো অংশের সামনে সুচেতা-নীলাঞ্জনের ছবি আর পিছনে নানারঙের পেস্ট-ইট মেসেজ— “দুধ বাটিতে ফোটানো আছে ফ্রিজের নিচের তাকে। নতুন প্যাকেট খুলো না” “আগে ফিরলে রাজুর দোকানে চাল পাঠাতে বোলো, যেটা পাঠায়” “ওয়াশিং মেশিনে কাপড় ফেলো না, একবার ক্লিনার পাঊডার রান করে দিও” “লন্ড্রিতে কাপড় দেওয়া আছে, বাচ্চুকে ফোন করো” ইত্যাদি অনেক একতরফা নির্দেশাবলী।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-৬: বার্নার্ড শ ও শার্লটি —তবে কেন মিছে ভালোবাসা/২

এছাড়া কিছু অদ্ভুত হেঁয়ালি “থার্টি টু পার্লসে টাকা পাঠিয়ো” “অচ্ছুত ধারের খাতার ছুঁচ পাল্টেছে” সেখানে তাকে থমকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে পিছন থেকে নীলাঞ্জন বলে উঠল—
—থার্টি টু পার্লস হল ডেন্টাল ক্লিনিক। তার পাশে আমাদের স্টেট ব্যাঙ্কের ব্রাঞ্চ, সেই অ্যাকাউন্টে ফাণ্ড ট্রান্সফার করতে হবে। এসব সুচেতার কোড ল্যাঙ্গুয়েজ ইল্লজিকাল আন-প্রেডিক্টেবল কোড ইচ্ছে করে করা
শ্রাদ্ধের একটা ছোট্ট বিরতিতে নীলাঞ্জন এ ঘরে এসেছে। তাই বাবু মানে ধৃতিমান জিজ্ঞেস করল—
—আর অচ্ছুত ধারের খাতা?
—ওটা অ্যাক্সিস ব্যাঙ্ক ক্রেডিট কার্ড, তার ছুঁচ মানে পিন পালটেছে –
—পিনটা কী এসএমএস- এ আসতো
—নেভার !
—কনফিডেন্সিয়াল ইনফরমেশন সব জুতোর র্যা কে ?
—মানে!
—আসুন দেখাচ্ছি।—চলবে।
 

সুচেতা মুখোপাধ্যায় হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১৫ আগস্ট, ২০২৪

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content