শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

 

মাৎস্যর্য

তবে এটাও সত্যি যে ষড়রিপু মানবজীবনে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় উপকরণ রান্নায় যেমন তেল নুন পাঁচফোড়ন রসুন আদা কাঁচালঙ্কা হলুদবাটা কখনও দুধ কখনও চিনি, জীবনের রকমারি মশলা হল নানান মানসিক স্তর বা অবস্থা- এসব না থাকলে জীবন বড় আলুনেবিস্বাদ। ঈর্ষা থাকবে বিরোধিতা থাকবে সকলেই যে পছন্দ করবে সকলেই যে ভালো বলবে তা নয়। জীবনে এগোনোর জন্য এই খুঁত খুঁজে বেড়ানো, ল্যাং মারা, বাধার সৃষ্টি করা অকারণ সমালোচনা বা অপমান করার লোকগুলো অত্যন্ত জরুরি। তাদের হারিয়ে দিতে পিছনে ফেলে দিতেই তো সংগ্রাম করতে হয়। এগোতে হয়।

অবাককাণ্ড ২০০৯ সালের এক গবেষণায় দেখা গিয়েছে রক্তে ‘লাভ হরমোন’ বা অক্সিটোসিন-এর নিয়ন্ত্রিত ক্ষরণ যা আমাদের পারস্পরিক বিশ্বাস, অন্যের প্রতি সহানুভূতি বা মনের উদারতার মতো মানবিক আচরণের পিছনের রাসায়নিক কারণ, তেমনি এই অক্সিটোসিনের অনিয়ন্ত্রিত ক্ষরণই হিংসা এবং মাৎস্যর্যের মতো মানসিক অবস্থার সৃষ্টি করে।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., পর্ব-২৮: বুবু নিউ ইর্য়ক থেকে আর্টিস্ট তরুণকান্তির জন্য একটি কাজের জিনিস পাঠিয়েছে

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-৪: যাহা চাই তাহা ভুল করে চাই, যাহা পাই তাহা চাই না?

মাৎস্যর্য শব্দটা লিখে সূবর্ণকান্তি’র মনে হল তাঁর বাবা সাহিত্যিক অমলকান্তি বা মা বিশিষ্ট অভিনেত্রী সুরঙ্গমা না হলে তাঁর বাংলাকেও হয়ত আজকালকার মতো দুপাশে হিন্দি আর ইংরিজির একজোড়া স্ক্র্যাচ নিয়ে চলতে ফিরতে হতো। মাৎস্যর্যের বোধহয় অর্থ হয় না কারণ অপরের ভালো দেখতে না পারাটাই সব অর্থ স্পষ্ট করে না। তাই বোধহয় মাৎস্যর্যের টিকা দেওয়া দরকার। শুধুমাত্র নিজের সাফল্যের দুনিয়ায় বাস করা বা অন্যের সাফল্যকে ছোট করা, অন্যের পরাজয় বা দুর্ভাগ্যে পাশবিক আনন্দ পাওয়া এককথায় হল মাৎস্যর্য। খানিকটা নিজের অর্থ বা সাফল্যের ভাগ না দিতে চাওয়াটায় এরমধ্যে এসে যায়। তবে তার জন্য চলিত বাংলায় সঠিক শব্দ রয়েছে একাল সেঁড়ে।
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭৪: রাজা দশরথ, রাম, লক্ষ্মণ, সীতা সকলেই কি এক একটি জীবনবোধের প্রতীক?

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৫২: হিতকারী মূর্খ বন্ধুর থেকে একজন পণ্ডিত শত্রু থাকা ভালো

হিন্দি ভাষাটা কিন্তু সুবর্ণর বড্ড নড়বড়ে! তাই সে সঠিক জানে না ইংরিজিতে ‘Gloating’ শব্দের ঠিকঠাক হিন্দি কী? মাৎস্যর্যের অনুবাদ করলে গুগল বলে ইংরেজিতে সেটা ‘Fishing’ কিন্তু ফিশিং হল বাংলার চতুর। তবে ইংরেজি ভাষা ভীষণভাবে ব্যবহার নির্ভর।

নিজের লেখা পড়ার পর এতটুকু ভালো লাগে না সুবর্ণর সকাল থেকে যা লিখল সেটা পড়ে মনে হচ্ছে ছিঁড়ে ফেলে দেওয়া উচিত। লোকের কাছে বোধহয় কচকচি মনে হবে… কোনও কোনও অগাধ পণ্ডিতের আবার কোথাও এসব আলোচনা দেখলেই সুকুমার রায়ের উদো আর বুধোর মতো টাক চুলকোয় কিনা! থমকে গিয়ে পুরনো লেখা উল্টোতে গেল সুবর্ণ। নজরে এল, তারকবাবুর মুখে এসে ‘বিএনএস’ এর বলা কথা বসিয়েছে…।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭৭: কথা কিছু কিছু

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪৭: ও বন্ধু তুমি শুনতে কি পাও?

বিএনএস আপনিই বলেছিলেন, যখন তোমার কারও কাছে নিজেকে প্রমাণ করার তাগিদ আর থাকবে না, ঠিক সেদিন তোমার জীবনের নবজন্ম হবে।

শেষের কবিতায় নিজের সৃষ্ট অন্যতম সেরা আধুনিক চরিত্র অমিত রায়কে দিয়ে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং নিজের সমালোচনা করিয়েছেন বলেছেন, রবিঠাকুর এবং তাঁর মতো প্রবীণ কবিরা নিজেদের পুরনোলেখার থেকে নিজেরাই চুরি করেন অমিত একে বলেছেন রিসিভারস অফ দ্য স্টোলেন প্রপার্টি!
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩৩: মিলাডা—বিদেশিনীর হরফ

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৬: স্রোতস্বিনী পদ্মায় লাফিয়ে কবির কটকি চটি-উদ্ধার

কিন্তু বিএনএসের কথাটার মধ্যে জোর আছে সত্যিই কাউকে কোনও কিছু প্রমাণ দেবার জন্য তো সুবর্ণকান্তি কলম ধরেনি। বরং সময় খানিকটা তাকে এই দিকে ঠেলে দিয়েছে আর তারপর লিখতে লিখতে বাবার প্রতি একটা শ্রদ্ধার্ঘ্য হয়ে উঠেছে বসুন্ধরা এবং… তাই তার ল্যাপটপে আঙুলের ছোঁয়ায় যা প্রকাশিত হচ্ছে সেটাই সেই মুহূর্তে তার মনের অনুরণন ভাবনার প্রতিফলন।পড়তে গিয়ে কে কী ভাববেন সেটা একেবারেই তাঁর সেইমুহূর্তের মানসিক স্থিতির পরিচয়। কারও ভালো লাগবে কারও ভালো লাগবে না। কিন্তু ভালো লাগাবার দায় নিয়ে কখনো ভাবনাকে নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।

ন’কাকীমা সুজাতার মধ্যে আজ এতবছর পরেও কীরা কাকিমা এবং তার মেয়েদের প্রতি ঈর্ষা এতটুকু কমেনি। কিন্তু কীরা কাকিমা তো কোনওভাবে ফুলকাকাকে সুজাতার থেকে কেড়ে নেননি। ফুলকাকা উচ্চশিক্ষার তাগিদে সেই মুহূর্তে বিয়েটা করতে চাননি।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content