শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

 

অডিয়ো ক্লিপ, পর্ব-৪

মিস্টার সরখেলের কথা শোনার পর নীলাঞ্জনের কান মাথা ভোঁভোঁ করছে। প্রতিবার প্লেন থেকে নামার পর নীলাঞ্জনের এই সমস্যাটা হয়। কী অদ্ভুত সুচেতা কখনওই এরকম অসুবিধের মুখোমুখি হয় না। অনেকেরই হয় না কারও কারও হয়। একে এরোপ্লেন ইয়ার বা ব্যারোট্রমা বলে। ঠিক ধরেছেন এই ব্যারো শব্দটা ব্যারোমিটার থেকেই এসেছে। প্লেন ওড়ার সময় বা নামার সময় অনেকটা উঁচুতে যাওয়া কিংবা হঠাৎ উঁচু থেকে নিচে আসার সময় কানের ভিতরের বায়ুর চাপের সঙ্গে বাইরের কমতে বা বাড়তে থাকা বায়ুর চাপের তফাতটা খুব বেড়ে গেলেই এই সমস্যা শুরু হয়। কারও কারও শরীরের গড়ন এমন হয় যাতে তারা দ্রুত এই সমস্যার সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে নীলাঞ্জনের মতো যারা, তারা পারে না। কানে ব্যথা করে কান বন্ধ হয়ে যায়। হাই তোলার চেষ্টা চুইংগাম চিবোনো কিছুতেই কোন লাভ নেই।

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে বেশ খানিকক্ষণ যাওয়ার পর একটা একটা করে কান খুলে যায়। কিন্তু এখন সেটা হচ্ছে না। মার্ডার অ্যাটেম্পটটা কার ওপর? সুচেতার ড্রাইভার না সুচেতা নিজে। সুচেতার শত্রু কে হতে পারে? ওতো ব্যক্তিগতভাবে কারও বিরুদ্ধে কোনও অনুষ্ঠান করত না। সামাজিক অন্যায়ের প্রতিবাদ করত। সিস্টেমের বিরুদ্ধে বলতো। হ্যাঁ, সরকার বা শাসক দল তাতে ক্ষুন্ন হতেন ঠিকই, কিন্তু সে রকম ক্ষেত্রে তো নানা রকমের দাওয়াই দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপনে বয়কট করা, সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা ইত্যাদি।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৩৭: এই দুর্ঘটনাটি ‘অ্যাটেম্পট টু মার্ডার’ও হতে পারে!

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫৪: লোকশিক্ষক মা সারদা

কিন্তু মাফিয়া গাং-এর বিরুদ্ধে সুচেতা যখন কিছু বলেনি তার ওপর মাফিয়া আক্রমণ এ ধরনের খুনের চেষ্টা কেন? কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছে না নীলাঞ্জন। এখন নিচে অপেক্ষা করা ছাড়া কোনও বিশেষ কাজ নেই। সুচেতাকে দেখতে পাবার মতো অবস্থায় এখন সে নেই। আরও ঘন্টাখানেক বাদে ডাক্তার বলেছেন একবার দূর থেকে দেখানো যেতে পারে। তাই নীলাঞ্জন বালি থানার মিস্টার সরখেলের কাছে আরও বিশদে জানতে চাইল।
—আচ্ছা আপনাদের এই ধরনের সন্দেহের কারণটা কী?
—সিসিটিভি ফুটেজ।
—আপনাদের কাছে অ্যাক্সিডেন্টের ফুটেজ আছে?
—ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলটা এমন ছিল যেখান থেকে ঠিক গাড়িটাকে দেখা
যাচ্ছে না। কিন্তু লরি দুটোর মুভমেন্ট দেখলে মনে হচ্ছে এটা
একটা প্ল্যানড অ্যাক্সিডেন্ট।
—লরি? আর দুটো লরি মানে?
—আগের সিগনালে সিসিটিভিতে আমরা পরপর দুটো লরিকে ডানলপ
থেকে বালিঘাট স্টেশনের দিকে যেতে দেখেছি। এই গাড়িটা ব্রিজের
কোনও একটা জায়গায় পিছনের লরিটাকে টপকে যায়।
—তারপর?
—ব্রিজের ঠিক মাঝামাঝি জায়গায় এই গাড়িটা দুটো লরির মাঝে
ছিল। সম্ভবত আগের লরিটা আচমকা ব্রেক কষে দাঁড়ায় আর পিছনের লরিটা এসে মাঝের গাড়িটাকে সজোরে ধাক্কা মারে।
—সম্ভবত মানে?
—মানে এখন যেটা বললাম এটা পুরোটাই আন্দাজ। কারণ ওই যে বললাম ক্যামেরা অ্যাঙ্গেলটা এমন তাতে আমরা দুটো লরিকে পরপর
দেখতে পাচ্ছিকিন্তু মাঝের গাড়িটাকে দেখতে পাচ্ছি না।
—দুটো নম্বর পেয়েছেন!
—ব্রিজের ক্যামেরায় নম্বর বোঝা যাচ্ছে না।
—কেন?
—দুটো লরির নম্বর প্লেট-এর ওপর কাপড় জাতীয় কিছু ঝোলানো
ছিল?
—কাপড় ?
—হ্যাঁ কাপড়। নম্বর প্লেট বদলানো ৭০ সালের হিন্দি সিনেমায়
হতো। মানুষের মাথা শয়তানের কারখানা মশাই। যেখানটা আপনি
ক্যামেরায় গণ্ডগোল স্পট করবেনসেখানে যদি নম্বর প্লেটের ছবিই না আসে, পরের কোন সিগনালে তো আর আপনি গাড়িটাকে স্পট
করতে পারবেন না কাজ হয়ে যাবার পর নম্বর প্লেটের কাপড়টা
খুলে নেবে আর গাড়ির গায়ে লেখা ওকে টাটা বা মেরা ভারত মহান
বা শিব দুর্গার ছবি দেখে তো আপনি গাড়ি চিনতে পারবেন না।
—তাহলে তো গাড়ির কোনও ট্রেসই নেই?
—আছে? আরএফআইডি। গাড়িতে লাগানো রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি
আইডেন্টিফিকেশন! ফাস্ট ট্যাগ।
—লরিতে থাকে? ওরা তো সবাই ক্যাশে টোল পেমেন্ট করে!
—লাকিলি প্রথম লরিতে ছিল, সারভিলেন্স ক্লিপিং লালবাজারে
সাইবারক্রাইম ডিপার্টমেন্ট চেক করছেন।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৩০: নলিনী দাশ— গণ্ডালুর সৃজনশিল্পী

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৫: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— আমুর ও গোশিঙা

কলকাতা পুলিশের আধুনিকিকরণ এবং তৎপরতা দেখে নীলাঞ্জন অবাক হয়ে গেল! এটা সত্যি যে প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করতে পারলে কলকাতা পুলিশ এখনও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের সমকক্ষ। তবে প্রভাব এ ক্ষেত্রেও ছিল। তাই এই ভিআইপি তৎপরতা! ব্যাপারটা জানতে পেরে নীলাঞ্জন চমকে উঠল। নিউজ টিভি দেশের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা নিউজ নেটওয়ার্কের অংশ। নিউজ টিভির কলকাতার সর্বময় কর্তা ববি সিং ধীলোঁ খুব কড়া প্রকৃতির মানুষ।
আরও পড়ুন:

বিখ্যাতদের বিবাহ-বিচিত্রা, পর্ব-২: যতই দেখি তারে, ততই দহি…

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯৫: প্রথম ভারতীয় সিভিলিয়ান সত্যেন্দ্রনাথ ভেবেছিলেন পরীক্ষায় পাশই করবেন না

সুচেতা এবং সুচেতার অনুষ্ঠান নিউজ টিভির টিআরপির মূল কান্ডারি। তিনি সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে এই দুর্ঘটনা বিশেষ উদ্দেশ্যে ঘটানো হয়েছে। রাজ্যের একজন সফল ব্যবসায়ী হিসেবে তার সঙ্গে সরকার এবং পুলিশের বড় কর্তাদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। গোয়েন্দা শাখার প্রধান ভৈরব চক্রবর্তীর কাছে ওপর মহলের থেকে ফোন এসে গিয়েছে। সেই নির্দেশ বলেই গোয়েন্দা শাখা এই ঘটনার তদন্ত হাতে নিয়েছেন। তাই এই অভূতপূর্ব তৎপরতা। সরখেল জানালেন—
—গোয়েন্দা শাখার অফিসার শ্রেয়া বসু আপনার সঙ্গে কথা বলতে এখানে আসছেন!
আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫৬: প্রথমে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির বিজ্ঞাপনে উত্তম কুমারকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি

গীতা: সম্ভবামি যুগে যুগে, পর্ব-১: ভাঙনের জয়গান গাও

হাসপাতালে আসা থেকে একটার পর একটা ঘটনায় নীলাঞ্জন যেন হতভম্ব হয়ে যাচ্ছিল। আর এখন মনে হচ্ছে সুচেতা হয়তো কোনও গভীর ষড়যন্ত্রের শিকার।

একেবারে সিনেমার মতো জিপটা ড্রাইভ করে চায়ের দোকানের ঠিক পাশে এসে দাঁড়ালেন শ্রেয়া বসু। সাদা শার্ট, ফেডেড জিন্সের প্যান্ট, গলায় ঝুলোনো আইকার্ডটা শার্টের বামপকেটে গুঁজে রাখা। পায়ের স্নিকার। রাত বলে বোধহয় চোখে অ্যাভিয়েটর সানগ্লাসটা নেই।

সঙ্গে ছিপছিপে চেহারার এক যুবক গালে দাড়ি তাকে দেখলেও পুলিশ বলে মনে হয় না।
—নীলাঞ্জন রায়?
—হ্যাঁ।
—আমি শ্রেয়া, শ্রেয়া বসু। ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট।
কানে শুনতে শুনতে মনে হল “অ্যাম বন্ড ! জেমস বন্ড”
—আর ইনি ধৃতিমান চৌধুরী!—চলবে।
 

সুচেতা মুখোপাধ্যায় হত্যারহস্য পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ১৮ জুলাই, ২০২৪।

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content