বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর।
ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কসয়ের মূল চত্বরটি একটি ছোট পাহাড়ের ঢাল বরাবর উঠে গিয়েছে নীচ থেকে ওপরে। ভূগোলের পরিভাষায় এইরকম সরু ছোট পাহাড়কে বলা হয় ‘রিজ’। আর এই রিজটির নাম ট্রথইয়েদ্ধা। আর সেই সূত্রে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এই পরিসরটিকে বলা হয়, ইউনিভার্সিটি অফ আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস (সংক্ষেপে ইউএএফ), ট্রথইয়েদ্ধা ক্যাম্পাস।
ফেয়ারব্যাঙ্কস অঞ্চলের পুরোনো উপজাতিদের ভাষায় ‘ট্রথ’ শব্দের অর্থ ‘পটেটো’ বা ‘আলু’। আর ‘ইয়েদ্ধা’ শব্দের অর্থ হল ‘রিজ’ বা ‘সরু ছোট পাহাড়’। অর্থাৎ কিনা ‘পটেটো-রিজ’। সম্ভবত আদিকালে কখনও হয়তো এখানে গ্রীষ্মকালে আলুর চাষ হতো। সেই থেকেই এই নাম হয়েছে।
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৩৫: ডিন জানালেন, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঘুরতে ঘুরতেই আমার সঙ্গে ইন্টারভিউ পর্ব শেষ করবেন!
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৩: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—খলসি ও করঞ্জা
ট্রথইয়েদ্ধা পাহাড়ের একদম নিচে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচর্যা ও রক্ষণাবেক্ষনের দফতর। সেখান থেকে উঠে পাহাড়ের মাঝামাঝি গেলে সমস্ত প্রকৌশল (ইঞ্জিনিয়ারিং) এবং প্রযুক্তিগত (টেকনোলজি) পড়াশোনার বিভাগ। আমি কম্পিউটার সায়েন্স-এর অধ্যাপক। আমার কাজকর্ম প্রায় সবটাই এই বিভাগেই। এই প্রকৌশল এবং প্রযুক্তি বিভাগের সঙ্গে লাগোয়া পূর্ত বিভাগ (পাবলিক অ্যাফেয়ার্স), বাণিজ্য-বিভাগ (বিজনেস ডিপার্টমেন্ট), শিক্ষা-বিভাগ (এডুকেশন ডিপার্টমেন্ট) এবং কলা-বিভাগ (আর্টস ডিপার্টমেন্ট)। সব কিছু ছাড়িয়ে আরও ওপরে চলে গেলে প্রাকৃতিক বিজ্ঞান বিভাগ এবং তার সঙ্গেই লাগোয়া মিশ্র-সংস্কৃতি-বিভাগ (ক্রস কালচারাল স্টাডি)। আর তাকে ছাড়িয়ে আরও উপরে উঠে গেলে সবার উপরে একদম পাহাড়ের চূড়ায় ভূ-তাত্ত্বিক (জিওসায়েন্স) বিভাগ।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৭১: সাইকেল ও জীবন
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫১: জয়রামবাটির যথার্থ রক্ষয়িত্রী
ভূ-তাত্ত্বিক বিভাগ ছাড়িয়ে পাহাড়ের ওই চূড়া থেকে পাহাড়ের উল্টো দিকে নেমে গিয়েছে বেশ কয়েকটা স্কি করার ট্রেইল। ভূ-তাত্বিক বিভাগের দিকে হাঁটতে হাঁটতে একটি ভবন বা বিল্ডিংয়ের ওপরে দেখি এক বিশাল বড় গোল মতো অ্যান্টেনা। সেটা আবার স্বয়ংক্রিয় ভাবে এদিক-ওদিক নড়ছে। সেটাকে দেখতে একদম সেই হলিউডি কল্পবিজ্ঞান বা সাই-ফাই চলচ্চিত্রে দেখা অত্যাধুনিক অ্যান্টেনাগুলোর মতো দেখতে যেগুলোকে বড় পর্দায় দেখতাম পৃথিবীর বাইরে কোনও গ্রহের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করছে।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪৭: মূর্খকে উপদেশ দিলে সেটা তার রাগের কারণ হয়
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩৫: কী যে করি করি ভেবে মরি মরি
সত্যি কথা বলতে কি, ওরকম অ্যান্টেনা আমি শুধু আমি ওই ছায়াছবির পর্দাতেই চিরকাল দেখেছি। পরে ডিনের থেকে জানলাম যে ওটা সত্যিই মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের জন্য ব্যবহার করা হয়। আমি তো দেখেই অবাক। সেখান থেকে পাহাড়ের নিচের দিকে আমাদের প্রযুক্তি বিভাগে ফেরার সময় দেখতে পেলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত ‘মিউজিয়াম অফ নর্থ’। বাংলা করলে বলা যায় উত্তরের জাদুঘর। —চলবে।
* রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা (Mysterious Alaska) : ড. অর্ঘ্যকুসুম দাস (Arghya Kusum Das) অধ্যাপক ও গবেষক, কম্পিউটার সায়েন্স, ইউনিভার্সিটি অব আলাস্কা ফেয়ারব্যাঙ্কস।