চিত্তরঞ্জন দাশ, যুবক-বয়সে।
রবীন্দ্রনাথ দেশবন্ধুকে নিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকায় লিখেছিলেন, ‘স্বদেশের যে ধূলিরে শেষ স্পর্শ দিয়ে গেলে তুমি/ বক্ষের অঞ্চল পাতে সেথায় তোমার জন্মভূমি।/ দেশের বন্দনা আজ শব্দহীন পাষাণের গীতে —/ এসো দেহহীন স্মৃতি মৃত্যহীন প্রেমের বেদীতে।’ দেশবন্ধুর মৃত্যুতে রবীন্দ্রনাথ আলোড়িত হয়েছিলেন। শোকস্তব্ধ হয়ে লিখেছিলেন দুটি ছোটো কবিতা। তারই একটি এই কবিতাটি। রবীন্দ্রনাথ দেশবন্ধুর মৃত্যুতে কতখানি মর্মাহত হয়েছিল, দুঃখ পেয়েছিলাম, তা ধারা আছে এই কবিতায়।
শুধু রবীন্দ্রনাথ নন, দেশের সাধারণ মানুষও দেশবন্ধুর মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছিলেন। তিনি ছিলেন দেশের শ্রেষ্ঠ ব্যারিস্টার। খ্যাতি, প্রভাব-প্রতিপত্তি আর অগাধ অর্থ। সব ছেড়েছুড়ে চিত্তরঞ্জন ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন অসহযোগ আন্দোলনে। তাঁর সেই অসামান্য ত্যাগের সংবাদ নিমেষে ছড়িয়ে পড়েছিল দিগ্বিদিকে। দেশের মানুষ তাঁকে ‘দেশবন্ধু’ হিসেবে বরণ করে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯২: মহর্ষিদেব নাতজামাইকে দিয়েছিলেন সোনার কলম
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৫১: জয়রামবাটির যথার্থ রক্ষয়িত্রী
দেশবন্ধুর প্রয়াণের পর মূল্যবান একটি সংখ্যা প্রকাশ করেছিল ‘বঙ্গবাণী’। পত্রিকাটি প্রকাশিত হত কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আশুতোষ মুখোপাধ্যায়ের দুই পুত্রের পরিচালনায়। দুষ্প্রাপ্য সংখ্যাটি একালের পাঠকের হাতে তুলে দেওয়া হল ‘সূত্রধর’-এর ব্যবস্থাপনায়। দুর্লভ সংখ্যাটি হাতে পেয়ে আজকের পাঠকও যে আনন্দে আপ্লুত হবেন, তা বলার অপেক্ষায় রাখে না।
(বাঁদিকে) প্রকাশিতব্য বইয়ের প্রচ্ছদ। (ডান দিকে) বঙ্গবাণী-র প্রথম সংখ্যা।
প্রায় একশো বছর আগে প্রকাশিত মহামূল্যবান এই সংখ্যাটি এখন প্রকৃত অর্থেই দুর্লভ। বাঙালির ইতিহাস, ভারতবর্ষের ইতিহাস সেই সঙ্গে দেশবন্ধুকে জানার জন্য সংখ্যাটি অত্যন্ত জরুরি। দুষ্প্রাপ্য সংখ্যাটি পুনরুদ্ধার করেছেন একালে বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। এমন সম্পদ তিনি আজকের ক্ষয়ে-যাওয়া বাঙালিকে পড়াতে চান। অতীব যত্নে সংখ্যাটি গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হচ্ছে, উপযুক্ত সম্পাদনায়।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫৪: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা— উকড়ি বেগুন, মধুফল ও নিশিন্দা
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩৪: পুণ্য আষাঢ়ের প্রথম দিবসে
‘বঙ্গবাণী’র দুর্লভ এই সংখ্যাটি ‘সূত্রধর’ প্রকাশন-সংস্থা থেকে থেকে আগামী ২৫ জুন সন্ধে সাড়ে ছ-টায় ভবানীপুরের ঐতিহ্যবহ ‘আশুতোষ মুখার্জি মেমোরিয়াল হল’-এ প্রকাশিত হবে। প্রকাশন-সংস্থার প্রাণপুরুষ সুমন ভৌমিক আয়োজন-আপ্যায়নের কোনও ত্রুটি রাখছেন না। মননশীল পাঠক আসুক, যোগ্যজনের উপস্থিতিতে প্রেক্ষাগৃহ পূর্ণ হয়ে উঠুক, ভালো বইয়ের প্রকাশক এই মানুষটি এইটুকু প্রত্যাশা করছেন।
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫৬: প্রথমে ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবির বিজ্ঞাপনে উত্তম কুমারকে খুঁজেই পাওয়া যায়নি
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৭: মোক্ষদায়িনী— প্রথম মহিলা সম্পাদক
সুমন ভৌমিক জানালেন, গ্ৰন্থ-প্রকাশ উপলক্ষে একটি প্রয়োজনীয় আলোচনা সভারও ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আলোচনার শিরোনাম ‘বাঙালির স্বতন্ত্রধর্মী ব্যক্তিসত্তা ও দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ’। আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম নরেন্দ্রপুরের সম্পাদক স্বামী শাস্ত্রজ্ঞানন্দ, ড. মইনুল হাসান এবং ড. পার্থজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়।
চিত্তরঞ্জন দাশ।
‘সূত্রধর’-কর্ণধার সুমনবাবু আরও জানালেন, এই অনুষ্ঠান দেশবন্ধুর গানের একটি সিডিও প্রকাশিত হবে। গানগুলির সুর দিয়েছেন হেমন্ত মুখোপাধ্যায়। থাকবে দেশবন্ধুর গান ও সাহিত্য পরিবেশন। গায়ক শৌভিক দত্ত ও বাচিকশিল্পী শম্পা দত্ত এই পর্যায়ক্রমে অংশগ্রহণ করবেন। গ্রন্থাকারে প্রকাশিত মূল্যবান সংখ্যাটি হাতে পেয়ে পড়ুয়াজন যে খুশি হবেন, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।