পঞ্চম।
‘লিবাস’ ছবির গানগুলি আপামর শ্রোতার মন ছুঁয়ে গিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু যথারীতি এবারও কোনও প্রাতিষ্ঠানিক সম্মান ভাগ্যে জুটল না পঞ্চমের। আবারও উপেক্ষিতই থেকে গেলেন। অবশ্য এতদিনে এই আক্ষেপগুলি লোকচক্ষুর আড়ালে রাখার ক্ষেত্রে সুদক্ষ হয়ে উঠেছিলেন তিনি। কারণ বিষয়টি তাঁর কাছে নতুন নয়। এ ক্ষেত্রে তাঁর প্রধান অস্ত্র ছিল তার সদাহাস্যময় মুখ। কিছুই যেন হয়নি। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর এই কষ্টের কথা অকপটে স্বীকার করেছেন পঞ্চম। একবার নয়, একাধিকবার।
১৯৯১ সালে ‘লিবাস’ ছাড়াও আরও কয়েকটি ছবিতে কাজের সুযোগ পান তিনি। ফেলে আসা দশকগুলির তুলনায় সে প্রায় না পাওয়ারই মতো। যদি ধরা যায় ‘ইন্দ্রজিৎ’ ছবির ‘আব তো হামকো এক দুজে কা হর পল সাথ নিভানা হ্যায়’ গানটি। নায়ক কুমার গৌরবের কণ্ঠ হিসেবে অমিত কুমারকে বেছে নেওয়া হয়। নায়িকা নিলমের জন্য আশাকে। অসাধারণ মেলোডি। সেটির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে ইনস্ট্রুমেন্টগুলির ব্যবহার। সব মিলিয়ে গানটি এক কথায় অনবদ্য। একবার শুনে দেখতেই পারেন, ভালো লাগবে। তবুও এই গানটি তেমন ভাবে প্রচার পায়নি।
১৯৯১ সালে ‘লিবাস’ ছাড়াও আরও কয়েকটি ছবিতে কাজের সুযোগ পান তিনি। ফেলে আসা দশকগুলির তুলনায় সে প্রায় না পাওয়ারই মতো। যদি ধরা যায় ‘ইন্দ্রজিৎ’ ছবির ‘আব তো হামকো এক দুজে কা হর পল সাথ নিভানা হ্যায়’ গানটি। নায়ক কুমার গৌরবের কণ্ঠ হিসেবে অমিত কুমারকে বেছে নেওয়া হয়। নায়িকা নিলমের জন্য আশাকে। অসাধারণ মেলোডি। সেটির সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে ইনস্ট্রুমেন্টগুলির ব্যবহার। সব মিলিয়ে গানটি এক কথায় অনবদ্য। একবার শুনে দেখতেই পারেন, ভালো লাগবে। তবুও এই গানটি তেমন ভাবে প্রচার পায়নি।
একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে এই ছবিরই ‘ম্যায় খুলে আম ক্যাহে দু তু মেরা ইয়ার হ্যায়’ গানটির ক্ষেত্রে। এ বার গায়ক-গায়িকা অমিত কুমার এবং আশা ভোঁসলে। ছন্দটি অনেকটাই পঞ্চমের গাওয়া ‘দিল লেনা খেল হ্যায় দিলদার কা’ গানটির মতো। বেশ চটকদার গান। তবু শ্রোতাদের খুশি করতে পারেনি গানটি।
‘ঝুঠি শান’ ছবির ‘রিমঝিম রিমঝিম সাওয়ান বরসে’ গানটি কিন্তু ভালোলাগার মতোই একটি গান। গীতিকার কারা? যোগেশ এবং জাভেদ আখতার জুটি! সুতরাং পঞ্চম, যোগেশ, জাভেদ ত্রয়ীর জন্ম দেওয়া গান কেমন হতে পারে তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা থাকে না। এই ক্ষেত্রেও গায়ক কিশোর পুত্র অমিত এবং আশা। মেলোডি, ভেরিয়েশন, বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার সবকিছুই শ্রুতিমধুর। তৎসত্ত্বেও গানটি মন কাড়তে পারেনি শ্রোতাদের। গানটিকে নিয়ে চর্চা হয়নি কোনোদিন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার কয়েকদিন পরেই সেটি চলে গিয়েছে বিস্মৃতির অতলে।
‘ঝুঠি শান’ ছবির ‘রিমঝিম রিমঝিম সাওয়ান বরসে’ গানটি কিন্তু ভালোলাগার মতোই একটি গান। গীতিকার কারা? যোগেশ এবং জাভেদ আখতার জুটি! সুতরাং পঞ্চম, যোগেশ, জাভেদ ত্রয়ীর জন্ম দেওয়া গান কেমন হতে পারে তা আর আলাদা করে বলার অপেক্ষা থাকে না। এই ক্ষেত্রেও গায়ক কিশোর পুত্র অমিত এবং আশা। মেলোডি, ভেরিয়েশন, বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার সবকিছুই শ্রুতিমধুর। তৎসত্ত্বেও গানটি মন কাড়তে পারেনি শ্রোতাদের। গানটিকে নিয়ে চর্চা হয়নি কোনোদিন। ভূমিষ্ঠ হওয়ার কয়েকদিন পরেই সেটি চলে গিয়েছে বিস্মৃতির অতলে।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৬৬: সিলি হাওয়া ছুঁ গয়ি, সিলা বদন…
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫১: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—পশুর, ধুধুল ও হাবল
যেমন ‘অ্যায়সে হামে দেখো নেহি’ গানটি। ‘দ্রোহি’ ছবির এই গানটিকে ঢেলে সাজিয়েছিলেন পঞ্চম। পরতে পরতে বৈচিত্র্যের ছোঁয়া। ছন্দগুলি বদলেছে বেশ কয়েকবার। অত্যন্ত যত্ন সহকারে গড়ে তোলা হয়েছে প্রেলুড এবং ইন্টারলুড। মনমাতানো কোরাসের ব্যবহার। আশা গেয়েছেনও তেমনই। নির্ভুল উপস্থাপনা। গানটির কোথাও একটিও লালকালির দাগ দেওয়ার বিন্দুমাত্র অবকাশ নেই। তবুও কেনো যেনো হিসেব মেলেনি। কোথাও যেনো গরমিল থেকে গিয়েছে। যার ফলস্বরূপ, সেদিনও, এমনকি আজও, একরাশ অভিমান বুকে লুকিয়ে রেখে গানটি পিছনের সারিতেই রয়ে গিয়েছে।
‘জয় শিবশঙ্কর’ ছবির আনন্দ বকশির লেখা ‘তু অন্দর ক্যায়সে আয়া চোর দরওয়াজে সে’ গানটি শুনেছেন কখনও? একবার শুনে দেখতে পারেন। অসাধারণ অ্যারেঞ্জমেন্ট! এ যেন ঠিক সেই পুরোনো দিনের পঞ্চম। রিদম প্যাটার্ন, অবাক করে দেওয়া ভেরিয়েশন, অসামান্য কিছু সাউন্ড ইফেক্ট, এবং আশা অমিত কুমার জুটির মজার আবহে করা অসামান্য একটি উপস্থাপনা। কিন্তু এই গানটিও কোন এক অজানা কারণে সে-ভাবে দাগ কাটতে পারেনি মানুষের হৃদয়ে।
‘জয় শিবশঙ্কর’ ছবির আনন্দ বকশির লেখা ‘তু অন্দর ক্যায়সে আয়া চোর দরওয়াজে সে’ গানটি শুনেছেন কখনও? একবার শুনে দেখতে পারেন। অসাধারণ অ্যারেঞ্জমেন্ট! এ যেন ঠিক সেই পুরোনো দিনের পঞ্চম। রিদম প্যাটার্ন, অবাক করে দেওয়া ভেরিয়েশন, অসামান্য কিছু সাউন্ড ইফেক্ট, এবং আশা অমিত কুমার জুটির মজার আবহে করা অসামান্য একটি উপস্থাপনা। কিন্তু এই গানটিও কোন এক অজানা কারণে সে-ভাবে দাগ কাটতে পারেনি মানুষের হৃদয়ে।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৫: সুর হারানো হারানো সুর
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫৫: বসু পরিবার-এ উত্তমকুমার দিনভর একটি শব্দই রিহার্সাল করেছিলেন, কোনটি?
এতদিন ধরে যিনি ছিলেন নির্দেশক এবং প্রযোজকদের প্রথম পছন্দ, তাঁর পক্ষে কি এই উপেক্ষা মেনে নেওয়া সম্ভব? কিন্তু তবু হাল ছাড়তে যেনো নারাজ পঞ্চম। দাঁতে দাঁত চেপে এবং নিজের অসীম আত্মবিশ্বাস এবং ক্ষমতার ওপর ভরসা করে চলত দিন গোনা। বছরে মেরেকেটে চার থেকে পাঁচটি ছবি। মেনে নেওয়া যায়? বিভিন্ন সূত্রে অনেক কথাই কানে আসতো তাঁর। এক এক দিন নিজের মিউজিক রুমে পেতে রাখা দুধ সাদা গদিটির উপর বসে সামনে তাঁর সাধের হারমোনিয়ামটি রেখে নিজের মনে ভেবে চলতেন নানান কথা।
কোথায় ভুল হচ্ছে? ঠিক কোন কোন জায়গায় খামতি থেকে যাচ্ছে? কেন ছবির নির্মাতারা ক্রমাগত মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন? কেন সুরকার হিসেবে আরডি বর্মণকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ প্রযোজক সোজাসুজি বারণ করছেন নির্দেশকদের? একই সিদ্ধান্ত প্রথম সারির মিউজিক কোম্পানিগুলিরো। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে বক্সঅফিসের ভরাডুবির কথা।
কোথায় ভুল হচ্ছে? ঠিক কোন কোন জায়গায় খামতি থেকে যাচ্ছে? কেন ছবির নির্মাতারা ক্রমাগত মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন? কেন সুরকার হিসেবে আরডি বর্মণকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ প্রযোজক সোজাসুজি বারণ করছেন নির্দেশকদের? একই সিদ্ধান্ত প্রথম সারির মিউজিক কোম্পানিগুলিরো। কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে বক্সঅফিসের ভরাডুবির কথা।
আরও পড়ুন:
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪৬: রাজার নিয়ন্ত্রণহীন অনুচরেদের কুকর্মের দায় রাজাকেই নিতে হয়
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৩: এক্সপায়ারি ডেটের ওষুধ খাবেন?
কেন এমন হবে? তিনি তো নিজের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে সুরসৃষ্টি করে চলেছেন। তবু কেন এই উপেক্ষা? কেন বিপর্যয়? হিসেব কিছুতেই মিলতে চায় না। শুধু কি তাই? তাঁর মিউজিক টিমের অনেকেই তখন কাজের সন্ধানে তাঁর হাত ছেড়ে অন্যান্য সুরকারদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এটিই হয়তো রূঢ় বাস্তব। এই বাস্তবের মুখোমুখি কোনওদিন যে তাঁকে এইভাবে দাঁড়াতে হবে তা হয়তো দুঃস্বপ্নেও কোনওদিন ভাবেননি পঞ্চম।
এরই মধ্যে, হঠাৎই ডাক আসে বিনোদ মেহরা প্রযোজিত এবং নির্দেশিত ‘গুরুদেব’ ছবিতে সুরকার হিসেবে কাজ করার জন্য। কিছুটা আশার আলো দেখতে পান পঞ্চম। কিছু একটা তো করতেই হবে। সুর দেন ‘জয়পুর সে নিকলি গাড়ি দিল্লি চলে হল্লে হল্লে’ গানটিতে। তুমুল সাড়া ফেলে গানটি। নায়ক ঋষি কাপুরের লিপে শৈলেন্দ্র সিং এবং নায়িকা শ্রীদেবীর লিপে আশা ভোঁসলে। যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করে গানটি। কিন্তু এই ছবির বাকি গানগুলি তেমন ভাবে মানুষের মনে দাগ কাটতে পারল না।
এরই মধ্যে, হঠাৎই ডাক আসে বিনোদ মেহরা প্রযোজিত এবং নির্দেশিত ‘গুরুদেব’ ছবিতে সুরকার হিসেবে কাজ করার জন্য। কিছুটা আশার আলো দেখতে পান পঞ্চম। কিছু একটা তো করতেই হবে। সুর দেন ‘জয়পুর সে নিকলি গাড়ি দিল্লি চলে হল্লে হল্লে’ গানটিতে। তুমুল সাড়া ফেলে গানটি। নায়ক ঋষি কাপুরের লিপে শৈলেন্দ্র সিং এবং নায়িকা শ্রীদেবীর লিপে আশা ভোঁসলে। যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করে গানটি। কিন্তু এই ছবির বাকি গানগুলি তেমন ভাবে মানুষের মনে দাগ কাটতে পারল না।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৯: রসিক স্বভাব মা সারদা
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৯০: সাহেবের বেশ না-পরে ফিরেছিলেন সাহেবের দেশ থেকে
আবার হতাশা ঘিরে ফেলতে শুরু করে। ভিতরে ভিতরে দুমড়ে মুচড়ে যেতে থাকেন পঞ্চম। একাকিত্ব গ্রাস করতে থাকে। সবচেয়ে কষ্টের বিষয় হল, সেই বেদনাকে কারো সঙ্গে ভাগ করে নেওয়ার মতো তখন তাঁর পাশে কেউ ছিলেন না। এমন সময় গুলজার, জাভেদ আখতার, শক্তি সামন্তের মতো হাতেগোনা কয়েকজন খুব কাছের বন্ধু ব্যতীত আর কেউ পঞ্চমের সঙ্গে খুব একটি যোগাযোগ করার তাগিদ অনুভব করতেন না। হয়তো স্বার্থ ফুরিয়ে গিয়েছিল তাই। হয়তো নতুন করে তাঁদের আর কিছু পাওয়ার ছিল না পঞ্চমের থেকে। পরমেশ্বরের উৎকৃষ্টতম সৃষ্টি, অর্থাৎ মনুষ্য জাতি হয়তো এমনই স্বার্থপর। যে স্বার্থপরতা নগ্ন। যে স্বার্থপরতা চূড়ান্তভাবে নির্লজ্জ। যে স্বার্থপরতা একজন সদাশিব ক্ষণজন্মাকে ভুলে যেতে শেখায়। যাঁর অবদানগুলিকে সচেতন ভাবে বিস্মৃতির আড়ালে পাঠিয়ে দেওয়ার অনুপ্রেরণা যোগায়।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।