রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


আইয়ারি ছবিতে মনোজ-সিদ্ধার্থ।

 

আইয়ারি

কাহিনি বৈশিষ্ট্য: পলিটিক্যাল থ্রিলার (২০১৮)
ভাষা: হিন্দি
পরিবেশনা: রিলায়েন্স এন্টারটেইনমেন্ট
কাহিনি ও চিত্রনাট্য: নির্দেশনা: নীরজ পাণ্ডে
অভিনয়ে: সিদ্ধার্থ মালহোত্র, মনোজ বাজপায়ী, রাকুল প্রীত সিং, পূজা চোপড়া, আদিল হোসেন, কুমুদ মিশ্র, নাসিরুদ্দিন শাহ, অনুপম খের প্রমুখ
প্রযোজনা: শীতল ভাটিয়া, ধবল জয়ন্তিলাল গাডা, অক্ষয় জয়ন্তিলাল গাডা প্রমুখ
সময়সীমা: ১৬০মিনিট
দেখা যাবে: ডিজনি হটস্টার
রেটিং: ৮.৫/১০

নীরজ পাণ্ডে আমার খুব প্রিয় পরিচালক। তাঁর প্রযোজিত পরিচালিত ছবি বা ওয়েব সিরিজ বহু মানুষের মতো আমাকেও ভীষণ আকর্ষণ করে। ‘আইয়ারি’ ২০১৮-র ছবি। আইয়ারি আরবি শব্দ আইয়ার থেকে এসেছে। আইয়ার মানে চালাক। আইয়ারি ভালো অর্থে ম্যাজিক বা জাদু, আর খারাপ অর্থে চালাকি বা ছল। ২০০৮ সালে নীরজ আত্মপ্রকাশ করেন ‘আ ওয়েডনেসডে’ ছবিটি দিয়ে। নাসিরুদ্দিন শাহ এবং অনুপম খের অভিনীত একেবারে চমকে দেওয়া ছবি। এরপর কখনও কাহিনিকার, কাহিনিকার-পরিচালক বা প্রযোজক হিসেবে একের পর এক সাড়া জাগানো সফল ছবি ‘স্পেশাল ২৬’, ‘টোটাল সিয়াপা’, ‘বেবি’, ‘রুস্তম’, ‘সাত উচাক্কে’, ‘এমএস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ ‘নাম শাবানা’, ‘টয়লেট এক প্রেম কথা’ প্রমুখ।
আমার অত্যন্ত প্রিয় বাংলা ছবি ‘দ্য রয়েল বেঙ্গল টাইগার’ (২০১৪)। পুরনো ছবি হলেও জনপ্রিয় অভিনেতা জুটি আবির চট্টোপাধ্যায় এবং জিৎ অভিনীত এই দুর্দান্ত ছবিটি নিয়ে আলাদা প্রতিবেদন লেখার ইচ্ছে রয়েছে। আর আছে গত ২০২৩ এ মুক্তিপ্রাপ্ত বাংলা হিন্দি ডবল ভার্সন ছবি জিৎ-এর চেঙ্গিস। রয়েছে দ্য ফ্রিলান্সার, খাকি-দ্য বিহার চ্যাপ্টার এর টানটান উত্তেজনায় ভরা ওয়েব সিরিজ। নির্মীয়মান ওয়েব সিরিজ খাকি, দ্য বেঙ্গল চ্যাপ্টার নিয়েও উত্তেজনা তুঙ্গে।
আরও পড়ুন:

মুক্তি পেল জিৎ-রুক্মিণী জুটির প্রথম ছবি বুমেরাং

মুভি রিভিউ: মহাভারতের প্রেক্ষাপটে তৈরি টানটান ক্রাইম সিরিজ মৎস্যকাণ্ড

কিন্তু ‘আইয়ারি’ নিয়ে প্রতিবেদনের প্রথম কয়েকটা লাইন লেখার পর নীরজ পাণ্ডের সূত্র ধরেই আজ একটা অদ্ভুত যোগসূত্র আবিষ্কার করলাম। নীরজের দুটি ছবিতে প্রধান ভূমিকায় ছিলেন বাংলার জনপ্রিয় নায়ক জিৎ। নীরজের প্রায় সব কটি সফল ছবির মূল সুর গড়ে তোলেন দেশের প্রসিদ্ধ আবহসংগীত রচয়িতা সঞ্জয় চৌধুরী। ভারতীয় সংগীতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ সুরস্রষ্টা সলিল চৌধুরীর সুযোগ্য পুত্রের সঙ্গে আমার একত্রে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছিল বাংলার প্রথম যুগের টেলিসিরিয়াল ইনফোকম প্রযোজিত নিশীথ বন্দ্যোপাধ্যায় পরিচালিত ‘সোনার সংসার’ তৈরির সময়। আমার লেখা প্রথম চিত্রনাট্য। ১৯৮৫-৮৬। মাঝখানে ৩৯ বছর কেটে গিয়েছে। আজ ৭ জুন আমার লেখা গল্পে প্রথম বাংলা সাই-ফাই কমেডি সৌরভ কুণ্ডু নির্দেশিত ‘বুমেরাং’ মুক্তি পেয়েছে। সে ছবিতে প্রথমবার একসঙ্গে জিৎ ও রুক্মিণী মৈত্র। আর এ ছবির আবহসংগীত রচনা করেছেন সঞ্জয় চৌধুরী। এ এক আশ্চর্য সমাপতন। এই ছবির প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জানার জন্য এই প্রতিবেদন লিখতে লিখতেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৫: সুর হারানো হারানো সুর

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৬: কুসুমকুমারী দাশ—লক্ষ্মী সরস্বতীর যুগ্ম মূর্তি

রিয়েল এস্টেটের স্বর্ণখনি মুম্বইয়ের কোলাবায় আদর্শ হাউসিং সোসাইটি তৈরি হয়েছিল। যুদ্ধে নিহত জওয়ানদের বিধবা স্ত্রী ও পরিবারের জন্য এই ৩১ তলা বাড়িটি তৈরি হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীকালে ২০১১ সিএজি রিপোর্টে এই বহুতল নিয়ে ভয়ংকর দুর্নীতির ইঙ্গিত ছিল। মন্ত্রী, রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতা, আমলা এবং সেনাবাহিনীর উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা এই দুর্নীতিতে জড়িয়ে ছিলেন বলে অভিযোগ। তবে আমাদের দেশের বহু অভিযোগের মতোই আজ ১৩ বছর কেটে গিয়েছে। এখনও আদালতে মামলা চলছে। আইয়ারি ছবির কাহিনির মধ্যে ওতপ্রোতভাবে এই আদর্শ হাউসিং জড়িয়ে রয়েছে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৯: রসিক স্বভাব মা সারদা

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৩: এক্সপায়ারি ডেটের ওষুধ খাবেন?

আইয়ারি ছবির সাংঘাতিক চমক হল এর কাহিনির বিন্যাস আর দুরন্ত গতি। সিদ্ধার্ত মালহোত্র ও মনোজ বাজপেয়ীর অনবদ্য অভিনয়ের সঙ্গে আর এক চমক নাসিরউদ্দিন শাহ। ছোট অথচ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি চরিত্রে ভারতীয় সিনেমার এই অবিস্মরণীয় অভিনেতা অসাধারণ নৈপুণ্যের পরিচয় দিয়েছেন।

যেকোনও চলচ্চিত্রের মধ্যে মিশে থাকে তার আবহসংগীত। তা আলাদা করে উপলব্ধি করা যায় না, কিন্তু তা গোটা সিনেমাকে সজীব করে রাখে। ‘এমএস ধোনি দ্য আনটোল্ড স্টোরি’ বা ‘আ ওয়েডনেসডে’ -এর মতোই এই ছবিতেও এক আশ্চর্য আবেশ এবং আবেগ তৈরি করে সঞ্জয় চৌধুরীর সুপরিকল্পিত এবং পরিমিত আবহের ব্যবহার।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৪৬: রাজার নিয়ন্ত্রণহীন অনুচরেদের কুকর্মের দায় রাজাকেই নিতে হয়

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩৩: এখনও সারেঙ্গিটা বাজছে

সিদ্ধার্থ মালহোত্র, মনোজ বাজপেয়ী, নাসিরউদ্দিন শাহ’র সঙ্গেই উজ্জ্বল উপস্থিতি রাকুল প্রীত সিং এর। ছবির কাহিনি বর্ণনা করার পক্ষপাতী আমি কখনই নই। দীর্ঘদিন ধরে ছবির সঙ্গে যুক্ত সকলে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যখন একটা চমক তৈরি করেছেন, তখন তার প্রতিবেদন লিখতে গিয়ে ছবির মূলভিত্তি তার কাহিনি, সেটা বলে দেওয়ার যে কি মানে আছে সেটা আমার আজও বোধগম্য হয় না। যে দর্শক মন দিয়ে ছবিটা দেখবেন তিনি প্রতিবেদন পড়েই যদি গল্প দেখে জেনে ফেলেন তাহলে ‘ফ্যাক্টর অফ সারপ্রাইজ’টা কোথায় থাকল? সুতরাং ডিজনি হটস্টারে এই ছবি দেখুন আর দারুণ আনন্দ পান। পর্দা থেকে চোখ সরাতে পারবেন না।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content