শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


 

সিন্নি: পর্ব-১০

চক্রবর্তী সাহেব এবং শ্রেয়া বাসুকে নিয়ে দফায় দফায় ধৃতিমানের বৈঠক হল। পারিবারিক যোগাযোগ সূত্রে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে আনা যেতেই পারে। বিদ্যুৎ আরও জানিয়েছে, ঘটনার এক সপ্তাহ আগে বিদ্যুৎ নতুন করে ঘোষভিলাতে ওয়ারিং-এর কাজ করেছে। রীনা ও তৃণার ঘরে এসি লাগানোর জন্য ইলেকট্রিকের সুইচ সকেট তার বাটাম সব প্রলয়ের দোকান থেকে আনা হয়েছিল। প্রাথমিক তদন্তে যে সব কাগজপত্র উদ্ধার করা হয়েছে তার মধ্যে প্রলয়ের দোকানের হাতে লেখা একটা কাঁচা রসিদ পাওয়া গিয়েছিল। তার সঙ্গে ম্যাচ করে যাচ্ছে রেলওয়ে টিকিটের এম২৫। প্রলয়ের বয়স আন্দাজ ২৪-২৫ বছরই হবে।

কল্যাণবাবুর বাড়িতে তালা দেওয়া অফিস থেকে খবর পাওয়া গেল তিনি লম্বা ছুটিতে গিয়েছেন। চন্দননগরে লোক পৌঁছল। জানা গেল স্ত্রী দীপিকাকে নিয়ে হাওয়াবদল করতে পুরীর সমুদ্রসৈকতে গিয়েছেন কল্যাণবাবু। এত বছর পর এই প্রথমবার। সেখানেও আবার পুরীর যোগাযোগ।
মানুষের চরিত্র বিশ্লেষণে দেবতাও অক্ষম। সংস্কৃত শ্লোকটা নারীদের সম্পর্কে হলেও এই বিষয়ে নারী এবং পুরুষ দু’জনেই সমান পারঙ্গম। কারও সম্বন্ধে হয়তো শুনলেন যে তারা ‘মুক্ত দাম্পত্য’ উপভোগ করছে। পুরনো লোকজনের কাছে ইলেকট্রিক শক্ লাগার মতো ঝটকা হলেও অতি আধুনিক জীবনযাত্রা এ সব নাকি জলভাত। মানে দু’জনেই দু’জনের উদ্দেশ্যে সুর করে অনুপম রায়ের গান গাইছে—
আমাকে আমার মতো থাকতে দাও,
আমি নিজে নিজেকে নিজের মতো গুছিয়ে নিয়েছি…
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-৩০: তাহলে ট্রেন টিকিটের সেই এম-২৫ কে?

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৯: ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা—ওড়া, কেওড়া, চাক কেওড়া ও কৃপাল

আমি আমার যাকে যখন ভালো লাগবে তাকে নিয়ে থাকবো। তুমিও সঙ্গী পাল্টে পাল্টে অন্যদের সঙ্গে বেঁধো ঘর। সন্দেহ নেই, অভিযোগ নেই অনুযোগ নেই, ঝগড়া চেঁচামেচি মারামারি নেই। দু’জনের সম্মতিতে দু’জনের দাম্পত্য-মুক্তি। একেবারে বেল্লেলাপনার শেষ-স্টেশন। পাশবিক লীলা খেলা।

বিদ্যুতের বলা পুরনো ইতিহাস থেকে দীপিকা না হলেও কল্যাণের চরিত্র খানিকটা এমন বোধ হয়। তবে ভয় পেলে রাস্তা পাল্টানোর একটা প্যাটার্ন আগেও পাওয়া গিয়েছে। যে বন্ধুর সঙ্গে কোচিং ক্লাসের ব্যবসায় জড়িয়ে ছিল কল্যাণ সেখানে প্রশ্ন কেনাবেচার ঝঞ্ঝাট এ বন্ধু জড়িয়ে পড়তে এক মুহূর্ত তার সঙ্গে থাকেনি কল্যাণ ভট্টাচার্য। নিমেষে অচেনা হয়ে বন্ধুর থেকে দূরত্ব বাড়িয়ে নিয়েছে। আর কখনও ওই রাস্তায় পা বাড়ায়নি। তাই কি বৌকে নিয়ে পুরীতে পগার পার? ঠিক তাই। এই খুনটা না হলে, যা চলছিল তেমনি চলত। এ বারও কল্যাণ ঘটনার থেকে দূরে চলে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৬৩: মহাভারতে উল্লিখিত মিথ্যাশ্রয়ের প্রাসঙ্গিকতা কী আজও আছে?

কিন্তু প্রলয় আগের মতোই দোকান করছে। তার মানে সন্দেহটা কল্যাণের দিকেই যাচ্ছে। কিন্তু সন্দেহের প্রবণতা তৈরি করাটাও অপরাধ তত্ত্বের আর একটা দিক। সেটা মাথায় রেখেই পুরীতে লোক পাঠিয়ে কল্যাণকে কলকাতা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা করার দিনেই প্রলয়কে তুলে আনা হল ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের সদর দপ্তরে।

কল্যাণের জেরায় খুব একটা অসুবিধা হয়নি। যেকোনও কারণেই হোক তার পুলিশের ভয়টা মারাত্মক। তাছাড়া সরকারি চাকরি করে, তাই সেখানেও একটা ভয় আছে। ইন্টারোগেশনে বসার দিনেই শ্রেয়া বাসু বলে দিলেন—

—এই লোকটা এটা ভীতু ছোঁচা পুরুষ মানুষ। মহিলাদের দেখার জন্য আড়াল আর আবডাল থেকে উঁকিঝুঁকি মারতে পারে। কিন্তু গলার নলি কাটার মতো বুকের পাটা বা কব্জির জোর কোনওটাই এই লোকটার নেই।
আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৯: বাইনাচ-গানেরও কদর ছিল ঠাকুরবাড়িতে

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৩: তরু দত্ত— এক আনন্দ বিষাদের তরুলতা

একবেলা একটু গাঁইগুঁই করার পর পোস্ট লাঞ্চ সেশনে কল্যাণ ভট্টাচার্য শ্রেয়া বাসুর ঘুর্নি বোলিংয়ের সামনাসামনি দাঁড়াতেই পারলেন না। গলগল করে সবকিছু স্বীকার করে হাউমাউ করে কাঁদতে শুরু করলেন—
—আমি খুনটুন করিনি ম্যাডাম। অন্য কোনও বাড়িতেই পুজোর কাজ করি না। কিন্তু ঘোষভিলাতে প্রায় আট বছর ধরে যাতায়াত। তাই অফিসে যাবার আগে পুজোটা সেরে দিতে রাজি হয়েছিলাম। পুজো শেষ হবার পর শান্তির জল দিয়ে আমি উঠে আসি। আশপাশের ফ্ল্যাটে খোঁজ নিয়ে দেখবেন যদি কেউ আমাকে দেখেন তারা সত্যি বলতে পারবেন। তারপর ওখানে কি ঘটেছে আমি জানি না।
আরও পড়ুন:

বদলে দিয়েছিলেন স্বাধীনতা-উত্তর নাটক এবং চলচ্চিত্রের ভাষা

ভোটস্য পরিবেদনা

লাঞ্চের সময়টাতে কল্যাণকে একা ঘরে বসিয়ে রেখে বাইরে থেকে আমরা লক্ষ্য করছিলাম। শ্রেয়া কল্যাণকে ভালো করে দেখে বলল, “এখনও লোকটার কিছু বলবার আছে যেটা ও চেপে রেখেছে।”

ছোট্ট জলপানের বিরতির পর শ্রেয়া বাসু টেবিল থাবড়ে শুরু করলেন—
—এতক্ষণ আপনি কী জানেন আপনি বলেছেন। এ বার আমি বলব আমি কী কী জানি। ঠিক আছে? রীনাকে বিয়ে প্রস্তাব দিয়েছিলেন?
ছিপছিপে সুন্দরীর যে এমন দাপুটে মেজাজ যে না দেখেছে বিশ্বাস করবে না।—চলবে।
 

ঘোষ পরিবার হত্যা রহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার ৩০ মে ২০২৪

* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।

Skip to content