ছবির একটি বিশেষ দৃশ্যে।
প্রযোজক-পরিচালক চিত্রগ্রাহক দীনেন গুপ্তের বহুদিনের সাধ ছিল সুচিত্রা সেনকে নিয়ে ছবি করার। কিন্তু চিত্রনাট্য পছন্দ না হলে সুচিত্রা সেন সেই ছবিতে কাজ করেন না, এই কথাও তিনি জানতেন। ফলে বঙ্কিমচন্দ্রের একাধিক উপন্যাসের চিত্রনাট্য তৈরি করে সুচিত্রা সেনের কাছে পেশ করা হলেও, সেগুলি মিসেস সেনের পছন্দ না হওয়ায়, সেই সব ছবিতে তিনি কাজ করেননি। অবশেষে তিনি সম্মত হলেন ‘দেবী চৌধুরাণী’র চিত্রনাট্যে। মূল চিত্রনাট্যকার প্রখ্যাত নট শেখর চট্টোপাধ্যায়।
অথচ এই ‘দেবী চৌধুরাণী’ উপন্যাসের চিত্ররূপ দিতে একবার উদ্যোগী হয়েছিলেন স্বয়ং সত্যজিৎ রায়। নাম ভূমিকায় সুচিত্রা সেনের কথা ভেবেই। প্রযোজক প্রেম আঢ্যি এই ব্যাপারে খুবই উৎসাহিত ছিলেন। তিনি অ্যাপয়েন্টমেন্ট করলেন সুচিত্রা সেনের বাড়িতে সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে যাওয়ার জন্য। সবই ঠিক ছিল। কিন্তু শুটিংয়ের ডেট নিয়ে পরিচালকের শর্ত নায়িকা মানতে না পারায় ওই ছবি আর নির্মিত হয়নি। সুচিত্রা-সত্যজিৎ জুটির ছবি দেখা থেকে দর্শকেরা বঞ্চিত হলেন।
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫৩: সত্যজিতের চলচ্চিত্র জীবনের প্রথম রহস্য রোমাঞ্চকর ছবি ‘চিড়িয়াখানা’
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬৩: বাবু ডাক্তার ও ‘ডাক্তারবাবু’
ফলে দীনেন গুপ্তের ভাবনার ভারটা বেশ ভারী হল। নায়িকা তো সুচিত্রা সেন। কে করবেন ব্রজেশ্বর? নেওয়া হল রঞ্জিত মল্লিককে। নিন্দুকেরা দুই শিল্পীর বয়সের ফারাকের উপর তির্যক মন্তব্য করতে লাগলেন। কিন্তু দীনেন গুপ্ত নিজে ক্যামেরাম্যান, তিনি জানেন ম্যাডামকে কোন কোন অ্যাঙ্গেল থেকে ধরলে সুন্দর লাগবে।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৮: সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভ ও লৌকিক চিকিৎসা: কাঁকড়া, গরান ও গেঁওয়া
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪৬: শ্রীমায়ের দুই ভ্রাতৃবধূর কথা
ছবিতে বিরাট স্টার কাস্টিং। বসন্ত চৌধুরী (ভবানী পাঠক), শেখর চট্টোপাধ্যায় (রঙ্গরাজ), সুমিত্রা মুখোপাধ্যায় (সাগর), কালী বন্দোপাধ্যায় (ব্রজেশ্বরের বাবা) ছায়া দেবী (ব্রজেশ্বরের মা), পদ্মা দেবী (প্রফুল্লের মা), জহর রায় (অন্ধ ভিখারী), কাজল গুপ্ত (নিশি) প্রমুখ। এছাড়াও এই ছবিতে ছিলেন মলিনা দেবী, ভারতী দেবী, হারাধন বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, মঞ্জু ভট্টাচার্য প্রমুখ শিল্পী।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৮: ছবি আঁকতে আঁকতে অবনীন্দ্রনাথ টান দিতেন গড়গড়ায়, চিবোতেন পান
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২৩: তরু দত্ত— এক আনন্দ বিষাদের তরুলতা
মানবেন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের সুরে গান গাইলেন সুরকার স্বয়ং এবং গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়। যথাসময়ে ছবিটি মুক্তি পেল। রঞ্জিত পিকচারসে ব্যানারে নির্মিত ছবি ভালো ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছিল।
শেখর চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীনেন গুপ্তের সখ্যতা বহুদিনের। তাই দীনেন গুপ্তের বহু ছবিতেই তিনি কাজ করেছেন। সেই তালিকায় আছে প্রথম প্রতিশ্রুতি, মর্জিনা আব্দুল্লা, শ্রাবণ সন্ধ্যা, সঙ্গিনী, রাগ অনুরাগ, নিশিমৃগয়া, রজনী, শঠে শাঠ্যং প্রভৃতি। সেই শেখর চট্টোপাধ্যায়ের জন্মের শতবর্ষ চলছে। তিনি ১৯২৪ সালের ৫ মে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। জন্মের শতবর্ষে এই বরেণ্য নটকে এই প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানাচ্ছি আমার আন্তরিক শ্রদ্ধা।—চলবে।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।