কিশোর, আশা ও রাহুল।
আশির দশকে মুক্তি পাওয়া ‘ত্রয়ী’ ছবিটির কথা মনে পড়ে? স্বনামধন্য এই বাংলা ছবির গানগুলি আজও স্বমহিমায় বেঁচে আছে আমাদের সবার হৃদয়ে। কিশোর কুমার এবং আশা ভোঁসলের গাওয়া ‘আরও কাছাকাছি আরও কাছে এসো’ গানটির আবেদন আজকের যুগেও একইরকম। এই গানে রিদম যেন কথা বলে। দ্রুত এই ছন্দের ব্যবহার এবং তার সঙ্গে কিশোর এবং আশার কণ্ঠ গানটিকে চিরস্মরণীয় করে রেখেছে। বঙ্গের সঙ্গে বিশেষ কিছু জায়গায় মাদলের ব্যবহার গানটিকে করে তুলেছে শ্রুতিমধুর। শ্রোতাদের মন হারিয়ে যেতে বাধ্য।
‘কবে যে কোথায় কী যে হল ভুল’। ভূপিন্দর সিংহের গাওয়া এই গানটিতে যে প্যাথস সঞ্চারিত হয়েছে, সেটি আপনার মনকে বেদনাতুর করে তুলবেই। ১২ স্ট্রিং গিটারে শুরু হওয়া প্রেলুড এবং তারপর তবলা, গিটার এবং রেসো-রেসোকে আশ্রয় করে ছন্দের বিস্তার আপনাকে মুগ্ধ করবেই করবে। ভুপিন্দরের কণ্ঠ যেন এই গানটির ক্ষেত্রে সবদিক থেকে উপযুক্ত। মেলোডির কথা নতুন করে কিছু বলার নেই।
আশার গাওয়া ‘কথা হয়েছিল, তবু কথা হল না’ গানটিতে যে সুর ব্যবহার করা হয়েছে, সেটির মতো দ্বিতীয় একটি সুর হয়তো সহস্র বছর অপেক্ষার পরেও খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। এই সুরের আবেদন এতটাই। এই সুর এক এবং অদ্বিতীয়। সেই সুরের মহিমাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে গায়িকার মায়াময়ী কণ্ঠ। সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি সঞ্চারিত হয়।
আশার গাওয়া ‘কথা হয়েছিল, তবু কথা হল না’ গানটিতে যে সুর ব্যবহার করা হয়েছে, সেটির মতো দ্বিতীয় একটি সুর হয়তো সহস্র বছর অপেক্ষার পরেও খুঁজে পাওয়া অসম্ভব। এই সুরের আবেদন এতটাই। এই সুর এক এবং অদ্বিতীয়। সেই সুরের মহিমাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে গায়িকার মায়াময়ী কণ্ঠ। সব মিলিয়ে এক অদ্ভুত অনুভূতি সঞ্চারিত হয়।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৫৯: আমার স্বপ্ন যে সত্যি হল আজ…
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৫২: সোনার কেল্লা’র শুটিংয়ে খাটের মধ্যে কাঁকড়াবিছে নিয়ে সে কি হুলস্থুল কাণ্ড!
‘একটু বসো চলে যেও না’ গানটি পঞ্চম আশাকে দিয়ে গাইয়ে আবার প্রমাণ করে দিয়েছেন গায়িকা হিসেবে তাঁর বহুমুখিতা। নায়িকা হেলেন নায়ক মিঠুন চক্রবর্তীকে প্রলোভনের জালে আবদ্ধরত অবস্থায় লিপ দিচ্ছেন আশাকে। এবং দৃশ্যের দাবি অনুযায়ী আশা নিজেকে যথারীতি দিয়েছেন উজাড় করে। এই ক্ষেত্রে হেলেন এবং আশা, অর্থাৎ, নায়িকা এবং গায়িকা যেন একই মানুষ। তাঁদের আলাদা করে দেখা আক্ষরিক অর্থেই অসম্ভব।
‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ ছবিটিতেই বা পঞ্চমের অবদান কম কিসে? কিশোর এবং আশার গাওয়া ‘আধো আলো ছায়াতে কিছু ভালবাসাতে’ গানটির বয়স কি আজও বেড়েছে? সোজাসাপ্টা উত্তর হচ্ছে—না। কারণ তিনটি। প্রথম কারণ মেলোডি, দ্বিতীয় কারণ গানের কথা, এবং তৃতীয় কারণ কিশোর কুমার এবং আশা ভোঁসলে। এই গানটির সম্মোহনী শক্তি এতটাই যে এটি পুরোনো এবং নতুন, দুই প্রজন্মকেই একইভাবে আকৃষ্ট করার অপরিসীম ক্ষমতা রাখে। তবলা, বাঁশি, মাদল,
ভায়োলিন সবকিছুকে উজাড় করে দিয়ে মেলোডির বিস্তার, এবং তার সঙ্গে কিশোর-আশার কণ্ঠের ইন্দ্রজাল। প্রশংসা করতে গিয়ে কথা হারিয়ে যায়। কোনও বিশেষণই যথেষ্ট বলে মনে হয় না।
‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ ছবিটিতেই বা পঞ্চমের অবদান কম কিসে? কিশোর এবং আশার গাওয়া ‘আধো আলো ছায়াতে কিছু ভালবাসাতে’ গানটির বয়স কি আজও বেড়েছে? সোজাসাপ্টা উত্তর হচ্ছে—না। কারণ তিনটি। প্রথম কারণ মেলোডি, দ্বিতীয় কারণ গানের কথা, এবং তৃতীয় কারণ কিশোর কুমার এবং আশা ভোঁসলে। এই গানটির সম্মোহনী শক্তি এতটাই যে এটি পুরোনো এবং নতুন, দুই প্রজন্মকেই একইভাবে আকৃষ্ট করার অপরিসীম ক্ষমতা রাখে। তবলা, বাঁশি, মাদল,
ভায়োলিন সবকিছুকে উজাড় করে দিয়ে মেলোডির বিস্তার, এবং তার সঙ্গে কিশোর-আশার কণ্ঠের ইন্দ্রজাল। প্রশংসা করতে গিয়ে কথা হারিয়ে যায়। কোনও বিশেষণই যথেষ্ট বলে মনে হয় না।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৩: কোন কাননের ফুল ‘শ্যামলী’
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২০: মানকুমারী বসু—সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল রত্ন!
অথচ দেখুন, ‘না না না কাছে এসো না, যাও যাও দূরে থাকো’ গানটির জন্য কিন্তু পঞ্চমের পছন্দ লতা মঙ্গেশকর। এরকম একটি সেমি-ক্লাসিক্যাল গানের জন্য লতা কন্ঠই হয়তো আদর্শ বলে মনে করেছিলেন তিনি। মূলত তবলা, সেতার এবং সারেঙ্গি ব্যবহার করা হয়েছে ঠিকই। কিন্তু সিংহভাগ ক্ষেত্রেই গায়িকাকে শুধু তবলার আশ্রয়ে গাইতে শোনা যায়। এখানেই লুকিয়ে রয়েছে সুরকার এবং গায়িকার স্বার্থকতা।
পারভিন সুলতানার গাওয়া এই ছবির ‘বেঁধেছি বীণা গান শোনাবো তোমায়’ গানটির সুর পঞ্চম ব্যবহার করেছেন বেমিসাল ছবির ‘এরি পবন ঢুন্ডে কিসে তেরা মন’ গানটির থেকে। সেটি গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। বলা বাহুল্য, গানটির উপস্থাপনাও ছিল সেই রকমই। কিন্তু তাতে কী? বাংলা গানটির ক্ষেত্রে পারভিন সুলতানাই বা পিছিয়ে কোথায়? তাঁর উপস্থাপনায়ও তো কোনও খামতি আমাদের কানে ধরা দেয় না! কি অসাধারণ গেয়েছেন তিনি! পঞ্চমের গায়িকা-চয়ন সত্যিই অনবদ্য।
পারভিন সুলতানার গাওয়া এই ছবির ‘বেঁধেছি বীণা গান শোনাবো তোমায়’ গানটির সুর পঞ্চম ব্যবহার করেছেন বেমিসাল ছবির ‘এরি পবন ঢুন্ডে কিসে তেরা মন’ গানটির থেকে। সেটি গেয়েছিলেন লতা মঙ্গেশকর। বলা বাহুল্য, গানটির উপস্থাপনাও ছিল সেই রকমই। কিন্তু তাতে কী? বাংলা গানটির ক্ষেত্রে পারভিন সুলতানাই বা পিছিয়ে কোথায়? তাঁর উপস্থাপনায়ও তো কোনও খামতি আমাদের কানে ধরা দেয় না! কি অসাধারণ গেয়েছেন তিনি! পঞ্চমের গায়িকা-চয়ন সত্যিই অনবদ্য।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪২: শ্রীমার ভাইপো খুদি
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৯: মহাভারতের বিচিত্র কাহিনিগুলিতে আছে মৃত্যুজয়ের অভয়বাণী
উপরোক্ত গানগুলি এবং সেই গানগুলির জনপ্রিয়তা বারংবার একটি সত্যকেই আমাদের চোখের সামনে মেলে ধরে। সেটি হল, একের পর এক মন কেড়ে নেওয়া সুরের জন্ম কাকতালীয়ভাবে দেওয়া একজন সুরকারের পক্ষে অসম্ভব। সেটি তখনই সম্ভব যখন সেই সৃষ্টিগুলির নেপথ্যে রয়েছে স্রষ্টার সুরের প্রতি সুগভীর দখল, অগাধ জ্ঞান, চরম অধ্যাবসায়, প্রতিনিয়ত চালিয়ে যাওয়া গবেষণা এবং সহজসরল সুরের মায়াজাল বিস্তার করে আপামর জনসাধারণের মনে জায়গা করে নেওয়ার অদম্য ইচ্ছাশক্তি। যতদিন সংগীত বেঁচে থাকবে, ততদিন পঞ্চম এর নাম দিকে দিকে উচ্চারিত হবে। তাঁর সুরগুলি প্রতিধ্বনিত হবে প্রতিটি সংগীতপ্রেমীর হৃদয়ে।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।