শনিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

“প্রখর দারুণ অতি দীর্ঘ দগ্ধ দিন, যত দূরে চাই নাই শুধু নাই’’ —সত্যি চৈত্রের মাঝামাঝি থেকেই পুরো দক্ষিণবঙ্গ যেন সূর্যের প্রখর তাপে জ্বলছে। নেই, বৃষ্টি নেই। এমন শুষ্ক তীব্র গরমের তাপ সহ্য করতে না পারায় অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। বাড়ছে সানস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন, সর্দিগর্মি, বদহজম এবং ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনের মতো সমস্যা। কোভিডকালের দুঃস্বপ্নের দিনগুলো ভুলতে চাইলেও আবার নতুন করে উঁকিঝুঁকি দেওয়া শুরু হতেই বাড়ছে গলায় ও কানে সংক্রমণ, জ্বর, কাশি ইত্যাদি নানা সমস্যা। অগত্যা ভালো থাকার উপায় কি? এই সময়ে খাবারদাবারের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া প্রয়োজন।
 

গরমকালে কী কী খাবেন

এই তীব্র গরমের সঙ্গে মোকাবিলা করে দেহকে স্নিগ্ধ শীতল ও রোগমুক্ত রাখার জন্য চাই গরমের উপযুক্ত ব্যালেন্সড ডায়েট। খেয়াল রাখতে হবে যাতে শরীরের জল ও ইলেকট্রোলাইটের সাম্যবস্থা বজায় থাকে এবং স্বাভাবিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। অন্যান্য সংক্রমণজনিত অসুস্থতার মোকাবিলাও করা যায়। এ সময় ডায়েট হবে পুষ্টিকর, হালকা ও সহজপাচ্য।

 

পানীয়

পানীয় হিসেবে বিশুদ্ধ, পরিশ্রুত, জীবাণুমুক্ত পানীয় জলই সর্বশ্রেষ্ঠ। এছাড়া এই সময় ডাবের জল, নিম্বু পানি, দইয়ের ঘোল, লস্যি, কাঁচা আম পোড়ার শরবত, বেলপানা, ছাতুর শরবত, ছানার জল, শসা, পুদিনা আর লেবুর ইনফিউজড ওয়াটার, ফলের রস, বার্লি ওয়াটার, ওআরএস, ডালের জল, সব্জির জুস-সহ বিভিন্ন ধরনের পানীয় শরীরে ওয়াটার ইলেক্ট্রোলাইটস ব্যালেন্স ঠিক রাখে। পাশাপাশি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানেরও যোগান দেয়। শরীরকে স্নিগ্ধ ও সতেজ রাখতে এবং হিটস্ট্রোক বা ডিহাইড্রেশনের আশঙ্কা কমাতে সাহায্য করে এই ধরনের পানীয়।
 

নানা রকম ফল

বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসের তীব্র গরমে আমরা যতই হাঁসফাঁস করি না কেন, এই সময় প্রকৃতিক ভান্ডার পূর্ণ থাকে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, সবেদা, বেল, পেঁপে, ফুটি, আঙুর, মুসাম্বি, পেয়ারা, জামরুল ইত্যাদি রসালো ফলে। এই সব ফলের ৮০ থেকে ৯০ শতাংশই জল হওয়ায় আমাদের দেহকে শীতল ও সতেজ রাখে। উপরন্তু এইসব ফলে ক্যারোটিনয়েডস, ভিটামিন সি, পটাশিয়াম, ভিটামিন কে, ডায়েটারি ফাইবার, বি ভিটামিন এবং বিভিন্ন ধরনের পলিফেনলিক কম্পাউন্ডস থাকায় নিয়মিত খেলে বদহজম, হিটস্ট্রোক, সানবার্ন, কনস্টিপেশন, গ্যাসস্ট্রাইটিস, স্ট্রেস, মুড-ডিজঅর্ডার, ক্লান্তি, পিপাসা, ইউনিনারি ট্র্যাক ইনফেকশন ইত্যাদি গরমের সমস্যা এড়ানো যায়।

শুধু গ্রীষ্মকালীন অসুখ-বিসুখ নয়, উচ্চ রক্তচাপ, অ্যানিমিয়া বা রক্তাল্পতা, হার্টের অসুখ, আর্থ্রাইটিস, লিভারের অসুখ, চোখের সমস্যা ইত্যাদি দীর্ঘমেয়াদী অসুখ-বিসুখেও বিভিন্ন ধরনের ফল অত্যন্ত উপকারী। তবে কোন অসুখে কোন ফল অত্যন্ত উপকারী বা কোন অসুখে কোন ফল একেবারেই চলবে না সে বিষয়ে জেনে নিন আপনার ডায়েটিশিয়ানের কাছ থেকে।

আরও পড়ুন:

ডায়েট ফটাফট: গ্রিন টি খেলেও কোনও সুফল মিলছে না? ভুল সময়ে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন না তো?

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৬: বুকে ব্যথা মানেই কি গ্যাসের ব্যথা? হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ না কি গ্যাসের ব্যথা, বুঝবেন কী ভাবে?

 

শাকসব্জির

কুমড়ো, ঝিঙে, পটল, বেগুন, ঢেঁড়স, লাউ, চাল কুমড়ো, পেঁপে, উচ্ছে, ডাঁটা এবং বিভিন্ন ধরনের সবুজ পাতা জাতীয় শাকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন, মিনারেল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ডায়েটারি ফাইবার থাকে। গ্রীষ্মকালীন প্রায় সব ধরনের শাকসব্জিতেই ক্যালরির পরিমাণ বেশ কম থাকে। কনস্টিপেশন, বদহজম, ওবেসিটি ইত্যাদি সমস্যা কমাতে সাহায্য করে বিভিন্ন ধরনের শাকসব্জি। তবে এ প্রসঙ্গে বিশেষ কিছু সব্জির গুণকণা উল্লেখ না করলেই নয়। যেমন উচ্ছে বা করোলা ন্যাচারাল ইনসুলিন বুস্টার হিসাবে কাজ করে। এমনকি, ফোঁড়া ও চুলকানি ইত্যাদি ত্বকের সমস্যা দূর করে। লাউ, কুমড়ো, চাল কুমড়ো, পটল ইত্যাদি সব্জি অ্যাসিডিটি, বদহজম উচ্চ রক্তচাপ, হাই ব্লাড সুগার এবং ডিহাইড্রেশন কমায়। রক্তের খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে বেগুন। ইউরিনারি ট্র্যাক ইনফেকশনে শশা ও লাউ বেশ উপকারী। ডায়াবিটিসে মেথিশাক এবং অ্যানিমিয়ায় নটেশাকের শাকের উপকারিতা অনেকেই জানেন।

আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪৪: সুন্দরবনের সুন্দরী গাছ

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-২০: মানকুমারী বসু—সাহিত্য জগতের উজ্জ্বল রত্ন!

 

দুধ ও দুধ যত খাবার

যাঁদের ল্যাকটোজ ইনটলারেন্স আছে তাঁরা গরুর দুধের বদলে আমন্ড মিল্ক, ওটস মিল্ক, রাইস মিল্ক, সয়া মিল্ক ইত্যাদি খেতে পারেন। অন্যান্য ক্ষেত্রে দুধের বদলে দই, ছানা, ঘোল, লো-ফ্যাট পনির ইত্যাদি দিনে অন্তত কিছু পরিমাণ খেতে পারলে প্রোটিন, ভিটামিন-ডি এবং ক্যালশিয়ামের চাহিদা পূরণ হয়।
 

মাছ-মাংস-ডিম

গরমকালে রেডমিট বা খুব বড় তৈলাক্ত মাছের বদলে ডায়েটে রাখুন চিকেন বা লিন ফিশ। এই সময় পুকুর বা নদীর তাজা মাছের পাতলা ঝোল, ফিশ বা চিকেন স্ট্যু, স্টিমড ফিশ, চিকেন স্যুপ, ডিম সেদ্ধ বা পোচ, কাঁচা আম বা ঝিঙে, পটল, ডাঁটা ইত্যাদি দিয়ে রাঁধা পাতলা মাছের ঝোল অত্যন্ত সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর। ডিম সম্পর্কে একটা ভ্রান্ত ধারণা আছে যে, ডিম শরীর গরম করে, কিন্তু এটা একেবারেই ভুল ধারণা।

আরও পড়ুন:

হে নূতন…

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪২: শ্রীমার ভাইপো খুদি

 

ডাল ও ডাল জাতীয় খাবার

গরমকালে মুগ, মসুর, অড়হর, ছোলা, বিউলি ইত্যাদি ধরনের ডাল কম তেল-মশলা সহকারে রান্না করে নিয়মিত খাওয়া উচিত। এতে প্রোটিন, ক্যালশিয়াম, আয়রন বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন ও ডায়েটারি ফাইবার থাকায় বিভিন্ন অসুখ-বিসুখ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এ সময় স্কুল, কলেজ, অফিসের টিফিন বা স্ন্যাকস হিসেবে স্প্রাউটস বা কল বের করা ছোলা, মটর, মুগ, রাজমা ইত্যাদি বেশ ভালো। নিরামিষাশীদের ডায়েটে বিভিন্ন ধরনের ডাল ও সয়াবিন প্রোটিনের বেশ ভালো উৎস।

ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

 

গরমে ভালো থাকার কিছু হট টিপস

এ সময় পর্যাপ্ত পরিমাণে জল ও জল জলীয় খাবার খান।
রাস্তার ধারের কাঁটা ফল ও ফলের রস, আখের রস, রঙিন পানীয় ইত্যাদি বর্জন করুন।
কম ক্যালরির খাবার খান। দিনে চার-পাঁচবার আহার করুন।
তাজা ফল ও গরমের শাকসব্জি পর্যাপ্ত পরিমাণে ডায়েটি রাখার চেষ্টা করুন।
চিনি ও চিনি জাতীয় খাবার, বেকারির নানান রকম মুখরোচক খাবার, স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও ট্রান্স ফ্যাটি অ্যাসিডযুক্ত খাবার, অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত খাবার ভাজাভুজি ও অতিরিক্ত প্রসেস খাবার এড়িয়ে চলুন।
চলবে না অতিরিক্ত চা, কফি, কোল্ডড্রিংস, আইসক্রিম ও ক্যান্ড জুস।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৪৯৭১

* ডায়েট ফটাফট (Healthy Diet tips): শম্পা চক্রবর্তী (Shampa Chakrabarty), ডায়েট কনসালটেন্ট।

Skip to content