ছবি: প্রতীকী।
আগের সংখ্যায় জানিয়েছিলাম, মাছচাষের পুকুর কেমন হবে, জলের ভৌত ও রাসায়নিক গুণমান মাছচাষের পক্ষে অনুকূল, কী জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে এবং কখন ইত্যাদি বিষয়ে। ছোট পুকুর যেখানে জলের গভীরতা বেশি থাকবে না সেখানে ডিমপোনার চাষ করাই ভালো। ডিমপোনা ছাড়ার আগে জলজ কীটপতঙ্গের নিয়ন্ত্রণ একান্ত জরুরি।
ডিমপোনা ছাড়ার দু’ একদিন আগে চটজাল প্রয়োগ করে পোকামাকড় কিছুটা সরিয়ে দেওয়া যায়। তা সত্ত্বেও যদি জলজ পোকামাকড় থেকে যায় সেক্ষেত্রে মৎস্যজীবিদের একাংশের মধ্যে দেখেছি, আনুমানিক দশ শতক একটি পুকুরে দু’ লিটার ভোজ্য তেল ও পাঁচশ গ্রাম গুঁড়ো সাবানের মিশ্রণে ফল পেতে দেখেছি। তবে সেক্ষেত্রেও ডিমপোনা ছাড়ার আগে আরও একবার চটজাল টেনে বাড়তি তেলটুকু সরিয়ে দেওয়া দরকার।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৯৮: মাছচাষে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে খুবই সতর্কতা প্রয়োজন
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৭: সাধারণের প্রতি পাণ্ডবদের কৃতজ্ঞতার প্রকাশ কোন মহাভারতীয় শিক্ষা?
পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্যকণার ওপরে নির্ভর করে এক বিঘা বা তেত্রিস শতক একটি পুকুরে ছয় বাটি ডিমপোনা (এক বাটি=৩০,০০০) ছাড়া যেতে পারে। ডিমপোনা ছাড়ার যথাক্রমে পাঁচ ও দশদিন পরে জাল টানা দরকার। পরিপূরক খাবার হিসেবে মিহি করে গুঁড়ো করা ও পরে ছেঁকে নেওয়া বাদামখোল এবং চালের পালিশ কুঁড়োর সমপরিমাণ মিশ্রণ দিতে হবে।
আরও পড়ুন:
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৮: মোহিতকুমারী এক মহিলা আত্মজীবনীকার
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪০: মা সারদার নিজবাটি
আনুমানিক এক লক্ষ ডিমপোনার জন্যে প্রথম সপ্তাহে ৪০০ গ্রাম এবং পরের সপ্তাহে ৮০০ গ্রাম হিসেবে খাবার দেওয়া যেতে পারে। এ ভাবে পনের দিনেই ধানিপোনা বিক্রয়যোগ্য হয়ে যাবে। এক মরশুমে অন্তত তিনটি ফসল তোলা যায়। মনে রাখতে হবে ডিমপোনা সবসময়ে অতিপরিচিত হ্যাচারি থেকে সংগ্রহ করা উচিত। ডিমপোনা চাষে কিছু টোটকা বেশ কার্যকরী। যেমন ব্যাঙাচি নিয়ন্ত্রণে পুকুরের ভিতরের দিকে পাড়ে, তিন হাত বরাবর ছাই ছড়িয়ে দিতে পারলে ভালো হয়।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৪: নোবেল পাওয়ায় বন্ধু দিয়েছিলেন লজ্জাবতীর চারা
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৬: সুখের লাগিয়া
এ ছাড়া শামুক নিয়ন্ত্রণে, এক দেয় হাত জলে, শাখাপ্রশাখাযুক্ত ডালপালা ফেলে রাখতে হবে এবং মাঝে মাঝে তুলে শামুক ছাড়াতে হবে। কোনওভাবে জলের অম্লত্ব বেড়ে গেলে চটের ব্যাগের মধ্যে কলাগাছ কুচিকুচি করে ফেলে রাখলে অম্লত্ব কমে যায়। বিপরীতভাবে যদি ক্ষারত্ব কমানোর প্রশ্ন আসে তেঁতুল পাতা সমেত ডাল ফেলে রাখলে ক্ষারত্ব কমে। এগুলি কিন্তু চাষিদের পরম্পরাগত জ্ঞান থেকে নেওয়া।—চলবে।
* বাঙালির মৎস্যপুরাণ (Bangalir Matsya Purana – Fish) : ড. প্রতাপ মুখোপাধ্যায় (Pratap Mukhopadhyay) অবসরপ্রাপ্ত প্রধান মৎস্যবিজ্ঞানী, ভারতীয় কৃষি অনুসন্ধান পরিষদ, ভারত সরকার।