গত সোমবার, পয়লা এপ্রিল হাওড়া শরৎসদনে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ছোটদের এক অভিনব অনুষ্ঠান। হাওড়া বোট্যানিক্যাল গার্ডেন এলাকায় একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল ছোটদের মানসিক বিকাশের জন্য আয়োজন করেছে অভিনব কর্মকাণ্ড। সকালে ছোটদের লেখাপড়া ছাড়াও সন্ধেবেলা এই স্কুলের দ্বার উন্মুক্ত থাকে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের জন্য। আবৃত্তি, আঁকা এবং একটি আশ্চর্যসুন্দর সাহিত্যসভা— কিচিরমিচির।
কয়েকজন মা, যাঁরা বিভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত এবং তাঁদের সন্তানরা— এই নিয়েই কিচিরমিচির দল। বছর চারেক আগে ছোটদের বাংলা ভাষার প্রতি আগ্রহী করে তোলার জন্য এই দলটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ। সঙ্গে রয়েছে আনন্দী আর্ট ক্লাস। প্রতি মাসের দ্বিতীয় রবিবার ব্লজম স্কুলে বসছে ছোটদের বাংলা সাহিত্যের আড্ডা। বাংলা গল্পপাঠ, তাৎক্ষণিক বক্তৃতা, নাটক, সৃজনশীল লেখা, ছোটদের কাউন্সেলিং, প্রকৃতিপাঠের আসর— আরও হরেক মজা।
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪২: সুন্দরবনের বাঘের ভবিতব্য
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬২: ধনময়ী জ্ঞানময়ী-র পাশে ‘মানময়ী গার্লস স্কুল’
কিচিরমিচির দলের সভায় বাচ্চারা মনে মনে যা ভাবছে, কিছুক্ষণ পরেই আনন্দীর আর্ট ক্লাসে ওরা তা এঁকে ফেলছে। রঙিন এই আয়োজন শুধু ওদের জন্য। অনেকসময় বোট্যানিক্যাল গার্ডেন, ভিক্টোরিয়া, নেহেরু চিলড্রেন মিউজিয়ম, থিয়েটার, সিনেমায় ছোটরা যায় দলবেঁধে। প্রতিমাসে আয়োজন করা হয় কর্মশালার। কবি, সাহিত্যিক, নাটককার, শিল্পী, মনস্তত্ত্ববিদরা আসেন কিচিরমিচির দলের সঙ্গে সময় কাটাতে। উদ্দেশ্য শুধুই ছোটদের আনন্দ দেওয়া এবং একটি নির্মল শৈশব উদযাপন। কিচিরমিচির দলের ছোটরা নিজেদের চেষ্টায় প্রতি বছর প্রকাশ করছে ‘ডাংগুলি’ পত্রিকা।
পয়লা এপ্রিলের অনুষ্ঠানে কিচিরমিচির সুকুমার রায়ের ‘ভাঙা তারা’ গল্পটির নাট্যরূপ অভিনয় করল। পরিচালনায় ছিলেন হাওড়ার বিখ্যাত নাট্যদল কথক পারফর্মিং রেপোর্টিয়ারের প্রধান কৃতি মজুমদার। এছাড়াও কিচিরমিচির দল আবৃত্তি শোনালো, আনন্দী আর্ট ক্লাসের প্রধান রাখি জানা এবং তাঁর সহকারী সাগর সামন্তের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত হল এক অভিনব আর্ট শো।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৪: নোবেল পাওয়ায় বন্ধু দিয়েছিলেন লজ্জাবতীর চারা
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৪০: মা সারদার নিজবাটি
কিচিরমিচির দল আন্তরিকতায় ভর করে কাজ করে চলেছে। ব্লজম স্কুলের প্রধান এবং পেশায় শিক্ষক টুম্পা দাশগুপ্ত আর লেখক, শিক্ষক এবং টক থেরাপিস্ট মহুয়া দাশগুপ্ত এই কিচিরমিচির দলের দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়াও রয়েছেন কিচিরমিচির দলের ছোটদের মায়েরা। সকলের নিরন্তর উৎসাহে কখনও হুল্লোড় আর কখনও সাইলেন্ট রিডিং, একসঙ্গে খেলা, গান, কবিতা, গল্পে, নাটকে কিচিরমিচির দল যেন নতুন করে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করছে বাংলা ভাষার।