ছবি: সংগৃহীত।
সিন্নি: পর্ব-২
চক্রবর্তী সাহেব নিজে খুব একটা ক্রাইমসিনে যান না। কিন্তু বেহালার ঘোষ পরিবারে এই নৃশংস খুন রাজ্য রাজনীতির পারদ চড়িয়েছে। সরকার বিরোধী নেতানেত্রীরা গত রাত থেকেই সরাসরি সরকারপক্ষকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। তাঁরা বলেছেন, রাজ্যে পুলিশ সঠিকভাবে কাজ করতে পারছে না তাই চুরিডাকাতি খুন রাহাজানি ধর্ষণ সব বেড়ে চলেছে। স্বাভাবিকভাবে লালবাজার থেকে দ্রুত রহস্যসমাধানের বিশেষ নির্দেশ এসেছে।
ডায়মন্ডহারবার রোডের উপর অজন্তা সিনেমার উল্টোদিক থেকে শুরু হয়ে জেমস লং সরণি টপকে সাহাপুর অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে গিয়ে বুড়োশিবতলা বাজার টপকে এসএন রায় রোড নামের লম্বা রাস্তা নিউ আলিপুরের হিন্দুস্তান সুইটসের গা ঘেঁষে গিয়ে মিশেছে টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা টপকে আসার জন্যই এসএন রায় রোড বাটা মাছের শিরদাঁড়ায় ছড়ানো অসংখ্য কাঁটার মতোই অজস্র গলিতে জোড়া। তারই একটা হল বাঁশতলা লেন। অফিসটাইমে জেমস লং সরণিতে বেশ ভিড় হয়।
শ্রেয়া বাসু আগেই পৌঁছে গিয়েছেন। তার পাঠানো গুগল ম্যাপ অনুযায়ী রেল কোয়ার্টার থেকে ২৯ এর পল্লীর মুখে এসে বাঁদিক ঘুরে আমরা এসএন রায় রোড ধরে ফেললাম। দু’ পাশে প্রচুর দোকান, অনেক বাড়ি-ফ্ল্যাট। একটা ন্যূনতম টাকা রোজগার না করলে ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয় না। সেই মাত্রার নিচের রোজগারকারীরা ট্যাক্স রিবেট উপভোগ করেন। স্কুটার মোটরবাইক আরোহীরা তেমনি পার্কিং রিবেট উপভোগ করেন। গলির যে কোনও জায়গায় যে কোনওভাবে স্কুটার মোটরবাইক পার্ক করাকে কোনও গর্হিত অপরাধ বলে গণ্য করা হয় না। অটোরিক্সা তিনটি চাকা সত্ত্বেও ইউনিয়নের জোরে এই সুবিধাটা পেয়ে থাকেন। তবে চারটি চাকা হলেই সাড়ে সর্বনাশ। কিন্তু এসএন রায় রোডে চারচাকারও বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই।
ডায়মন্ডহারবার রোডের উপর অজন্তা সিনেমার উল্টোদিক থেকে শুরু হয়ে জেমস লং সরণি টপকে সাহাপুর অঞ্চলের মধ্যে দিয়ে গিয়ে বুড়োশিবতলা বাজার টপকে এসএন রায় রোড নামের লম্বা রাস্তা নিউ আলিপুরের হিন্দুস্তান সুইটসের গা ঘেঁষে গিয়ে মিশেছে টালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা টপকে আসার জন্যই এসএন রায় রোড বাটা মাছের শিরদাঁড়ায় ছড়ানো অসংখ্য কাঁটার মতোই অজস্র গলিতে জোড়া। তারই একটা হল বাঁশতলা লেন। অফিসটাইমে জেমস লং সরণিতে বেশ ভিড় হয়।
শ্রেয়া বাসু আগেই পৌঁছে গিয়েছেন। তার পাঠানো গুগল ম্যাপ অনুযায়ী রেল কোয়ার্টার থেকে ২৯ এর পল্লীর মুখে এসে বাঁদিক ঘুরে আমরা এসএন রায় রোড ধরে ফেললাম। দু’ পাশে প্রচুর দোকান, অনেক বাড়ি-ফ্ল্যাট। একটা ন্যূনতম টাকা রোজগার না করলে ইনকাম ট্যাক্স দিতে হয় না। সেই মাত্রার নিচের রোজগারকারীরা ট্যাক্স রিবেট উপভোগ করেন। স্কুটার মোটরবাইক আরোহীরা তেমনি পার্কিং রিবেট উপভোগ করেন। গলির যে কোনও জায়গায় যে কোনওভাবে স্কুটার মোটরবাইক পার্ক করাকে কোনও গর্হিত অপরাধ বলে গণ্য করা হয় না। অটোরিক্সা তিনটি চাকা সত্ত্বেও ইউনিয়নের জোরে এই সুবিধাটা পেয়ে থাকেন। তবে চারটি চাকা হলেই সাড়ে সর্বনাশ। কিন্তু এসএন রায় রোডে চারচাকারও বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই।
খুব স্বাভাবিকভাবেই ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টের বড়কর্তাকে নিয়ে এই প্রথমবার ধৃতিমান গোঁত্তা খেতে খেতে ঘোষ ভিলায় পৌঁছল। ১৫৩/১সি/২ বাঁশতলা লেন। গলির মুখে শ্রেয়া নিজে অপেক্ষা করছিলেন।
—স্যর! ভীষণ ন্যারো লেন, গাড়ি ঘোরাবার জায়গা নেই।
ভৈরব চক্রবর্তী ও ধৃতিমানকে শ্রেয়া পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন। লোকাল থানা থেকে যথেষ্ট পুলিশ পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। তারা স্থানীয় মানুষ এবং মিডিয়ার লোকজনকে একটু দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
—ফরেন্সিক!
—এসে গিয়েছে স্যর।
—মফিজুল এসেছে।
—স্যর।
—গুড! আমি বলেছিলাম, একটু ক্রিটিক্যাল কেস হতে পারে তুমি নিজে এসো।
একটা দোতলা বাড়ি। তিনতলার একটা প্রচেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু সফল হয়নি। ঢাকা ড্রেনের গা ঘেঁষেই পাঁচিল, ভিতরে একটা মারুতি অল্টো গাড়ি। এই সরু গলি থেকে ডানদিক ঘুরিয়ে গাড়ি গেটের মধ্যে পার্ক করা প্রায় অসম্ভব। তা সত্ত্বেও গাড়ির পিছনের বামদিকের টেল লাইটের পাশটায় দেওয়ালের ঘষটানো রংচটা দাগ বাবুর নজর এড়ালো না। নিশ্চয়ই ড্রাইভারের সাইডে ডানদিকে জায়গা একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। ফলে ভিতরে টার্ন নেবার সময় বামদিকে টেললাইটের পাশের অংশটা দেওয়ালে লেগে যায়। গাড়িটা টপকে যাবার সময় ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখে নিল, গেটের ভিতরের দেয়ালে ঠিক একই উচ্চতায় ঘষটানি দাগ। মানে তার অনুমান সত্যি।
—স্যর! ভীষণ ন্যারো লেন, গাড়ি ঘোরাবার জায়গা নেই।
ভৈরব চক্রবর্তী ও ধৃতিমানকে শ্রেয়া পথ দেখিয়ে নিয়ে গেলেন। লোকাল থানা থেকে যথেষ্ট পুলিশ পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। তারা স্থানীয় মানুষ এবং মিডিয়ার লোকজনকে একটু দূরে সরিয়ে রেখেছেন।
—ফরেন্সিক!
—এসে গিয়েছে স্যর।
—মফিজুল এসেছে।
—স্যর।
—গুড! আমি বলেছিলাম, একটু ক্রিটিক্যাল কেস হতে পারে তুমি নিজে এসো।
একটা দোতলা বাড়ি। তিনতলার একটা প্রচেষ্টা করা হয়েছিল কিন্তু সফল হয়নি। ঢাকা ড্রেনের গা ঘেঁষেই পাঁচিল, ভিতরে একটা মারুতি অল্টো গাড়ি। এই সরু গলি থেকে ডানদিক ঘুরিয়ে গাড়ি গেটের মধ্যে পার্ক করা প্রায় অসম্ভব। তা সত্ত্বেও গাড়ির পিছনের বামদিকের টেল লাইটের পাশটায় দেওয়ালের ঘষটানো রংচটা দাগ বাবুর নজর এড়ালো না। নিশ্চয়ই ড্রাইভারের সাইডে ডানদিকে জায়গা একটু বেশি হয়ে গিয়েছিল। ফলে ভিতরে টার্ন নেবার সময় বামদিকে টেললাইটের পাশের অংশটা দেওয়ালে লেগে যায়। গাড়িটা টপকে যাবার সময় ঘাড় ঘুরিয়ে একবার দেখে নিল, গেটের ভিতরের দেয়ালে ঠিক একই উচ্চতায় ঘষটানি দাগ। মানে তার অনুমান সত্যি।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: হ্যালো বাবু!, পর্ব-২২: একই পরিবারে চারজনের মৃত্যু ভাবাচ্ছে গোয়েন্দাদের
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪১: সুন্দরবনে বাঘে-মানুষে সংঘাত
সদর দরজা দিয়ে ঢুকেই ডান হাতে মিটার বক্স, বাঁ দিক দিয়ে দোতলায় যাবার সিঁড়ি। নিচে দুটো ঘর, রান্নাঘর, টয়লেট। ঘটনাটা ঘটেছে দোতলায়। তাই শ্রেয়া উপরে যাওয়ার সিঁড়ির দিকে দেখালো।
নিচের তলাটা সাধারণ সাদাকালো ছিটছাটের মোজাইক। সিঁড়িটাও তাই। দোতলায় পৌঁছেই একেবারে মার্বেল। এটা বোঝা যাচ্ছে, ঘোষবাবু নিচেরতলাটা বেশ কষ্ট করে করেছিলেন। তারপর ধীরে ধীরে লক্ষ্মীদেবীর আশীর্বাদে অর্থাগম যথেষ্ট বাড়ে। তাই সেই বৈভব দোতলায় স্পষ্ট।
নিচের তলাটা সাধারণ সাদাকালো ছিটছাটের মোজাইক। সিঁড়িটাও তাই। দোতলায় পৌঁছেই একেবারে মার্বেল। এটা বোঝা যাচ্ছে, ঘোষবাবু নিচেরতলাটা বেশ কষ্ট করে করেছিলেন। তারপর ধীরে ধীরে লক্ষ্মীদেবীর আশীর্বাদে অর্থাগম যথেষ্ট বাড়ে। তাই সেই বৈভব দোতলায় স্পষ্ট।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৯: পথের প্রান্তে রয়ে গিয়েছে সে হাজার তারার ‘লক্ষহীরা’
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৭: তিনটি মেয়ের তিনটি কলম!
মৃতদেহগুলো দোতলার একটা ঘরেই রাখা ছিল। খবরের কাগজওয়ালা কাগজ গুঁজে চলে গিয়েছিল। কিন্তু প্যাকেট নয়, কাছের খাটাল থেকে গরুর দুধ নিতেন ঘোষবাবুরা। সেই দুধওলা যখন ডাকাডাকি করে পেলেন না, পাড়া প্রতিবেশী জড়ো হয়ে নানান মতামত দিচ্ছেন। পাশের আমগাছ বেয়ে দোতলার বন্ধ জানলা খোলার প্রস্তাব যখন প্রায় সর্বসম্মতিক্রমে পাশ হবার মুখে, তখন পাশের উঁচু ফ্ল্যাটবাড়ির বারান্দা থেকে এক প্রতিবেশী বাধা দিয়ে বললেন—
—থামুন আপনারা, যা করার লোকাল থানা করবেন।
—থামুন আপনারা, যা করার লোকাল থানা করবেন।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৯: ইন্দুমতী ও সুরবালা
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮৩: বিপর্যয়ের দিনে বন্ধু রবীন্দ্রনাথ
বাবা-মা প্রণব ও শিউলি ঘোষ আর দুই বোন রীনা আর তৃণা। রীনা বছর ২১, তৃণা ১৭-১৮ হবে। প্রণব বাবুর বয়স ৫০ এর মতো। ওঁর স্ত্রী শিউলিদেবী ৪২-৪৩। প্রণববাবু প্রথম জীবনে দমদমের কাছে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং ফার্মে কাজ করতেন। সেটি আচমকা বন্ধ হয়ে যায়। পৈতৃক কিছু জমিজায়গা ছিল ডায়মন্ডহারবারের দিকে। সেগুলি বিক্রি করে স্ন্যাকসবার খুলে ফেললেন। চাউমিন, মোগলাই, পরোটা, ফিস ফ্রাই, ফিস চপ ইত্যাদি। সৌভাগ্যের দরজা খুলে গেল, ঠিক দুর্গাপুজোর মুখে একটা স্টল দিয়েছিলেন, লক্ষ্মী পুজো পর্যন্ত এতো বিক্রি হল যে, লগ্নীর প্রায় আড়াইগুণ টাকা উঠে এল। প্রণববাবু পুজোকমিটিকে স্টলের টাকা, কারিগরদের মাইনে, বকশিস এইসব টাকা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত টাকায় স্থানীয় কাউন্সিলারকে ধরে একটা পাকাপাকি স্ন্যাকবার খুলে বসলেন। দুর্গাপুজোয় যে কারিগরদের নিয়ে এসেছিলেন তাদের সঙ্গে মাসমাইনের চুক্তিতে রমরম করে দোকান চালু হয়ে গেল। তিনবছরে বেহালার আশেপাশে তিনটে স্ন্যাকবার, গ্রাহকরা রাস্তায় দাঁড়িয়ে খায়। তবে বেশির ভাগ লোকেই বাড়িতে নিয়ে যেতেন। খাবারের স্বাদ নিয়ে কারও কোন অভিযোগ নেই।
লোকাল থানার এএসআই বিদ্যুৎ সাঁপুই প্রাথমিক তদন্তটুকু সেরে রেখেছিল। এ বার মৃতদেহ পরীক্ষার পালা।
লোকাল থানার এএসআই বিদ্যুৎ সাঁপুই প্রাথমিক তদন্তটুকু সেরে রেখেছিল। এ বার মৃতদেহ পরীক্ষার পালা।
ঘোষ পরিবার হত্যারহস্য: পরবর্তী পর্ব আগামী বৃহস্পতিবার
>* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।