শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

উত্তর বাংলা থেকে ফিরে গৌরব বসুন্ধরা ভিলায় এসেছিল। সঙ্গে আভেরি এসেছিল। বাচ্চারা আসেনি। প্রথমেই গৌরব আর আভেরি বাবার কাছে লাইব্রেরি ঘরে ঢুকে গেল। খানিকক্ষণ কথা বলার পর ওপর থেকে নেমে মা লাইব্রেরি ঘরে গেলেন। বাবা নিশ্চয়ই ইন্টারকমে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। এ বাড়িতে সেজোমামা আর সেজোমামি সৌরভ গৌরব দু’জনেরই খুব প্রিয়। গৌরব যখন বম্বেতে বিয়ে করতে গেল, আভরির বাড়ি থেকে জানতে চেয়েছিলেন গৌরবের কলকাতার আত্মীয়-স্বজন কে বা কারা আসবেন? এক মুহূর্ত না ভেবে বাড়িতে কারোও সঙ্গে কথা না বলেই গৌরব বলেছিল আমার মা তো আসবেন আর সেজ মামা সেজো মামি।
খানিক পরে কথাবার্তা শেষে লাইব্রেরি ঘর ছেড়ে সকলে বেরিয়ে এল। সেদিন ঠিক কী কথা হয়েছিল সেটা জেনেছি আরও অনেক পরে। তবে এসব ঘটনা অনেকটা আগে তখন ঠাম্মি বা দাদু বেঁচে। আসলে বসুন্ধরা ভিলার গল্প বলতে গেলে দিনক্ষণ সন তারিখ মিলিয়ে ক্রোনোলজিকালি বলা যায় না। স্মৃতি তো। ইতিহাসের মতো সূচিপত্র ধরে অধ্যায়ের পর অধ্যায়ে মাথায় আসে না।

মোটামুটি ১৯০০ সাল থেকে কাহিনির শুরু, চলতে চলতে আজ ২০২৪। এই ১২৪ বছরের কথা লিখতে লিখতে দুটি অধ্যায় শেষ করে এটি তৃতীয় অধ্যায়। মানুষ পড়ছেন তাই লেখা চলছে। আজকের যুগ তাই ডিজিটাল মিডিয়াতে ইচ্ছে করলেই পুরোনো ঘটনায় চোখ বুলিয়ে নেওয়া যায়। সুবর্ণ নিজেও মাঝেমধ্যে ঘটনাক্রমের ধন্ধে পড়ে যায়। শ্রীতমার সাহায্য চায়। তার স্মৃতি সাহায্য না করলে, তখন ল্যাপটপের সাহায্য লাগে।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ৩য় খণ্ড, পর্ব-৭: আমি দাদুর কাছে মাইনে চাইলে এক টাকাই চাইতাম

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩৯: সুন্দরবনের ব্যাঘ্র-ইতিহাস

গৌরব একটা কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে স্বপরিবারে কলকাতা ছাড়ছে। দেশ ছাড়ছে। সুতরাং অবশ্যই বসুন্ধরা গ্রুপ অফ কোম্পানিজ ছেড়ে দিচ্ছে। সিটি গ্রুপ প্রাইভেট লিমিটেড অস্ট্রেলিয়াতে ব্যবসার অনুমতি পেয়েছে সিটি ব্যাংক অস্ট্রেলিয়া নামে। সেখানে এক গুরুত্বপূর্ণ পদে আমন্ত্রণ পেয়েছে আমাদের গৌরব। গোটা অস্ট্রেলিয়ায় সিটি ব্যাংক অস্ট্রেলিয়াকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার। মার্ক লিউয়েটের নেতৃত্বে যে কোর টিম তার একজন সক্রিয় সদস্য হিসেবে অবিলম্বে সিডনিতে যাবার আমন্ত্রণ পেয়েছে গৌরব। অফিসে প্রথামতো রেজিগনেশন জমা দেবার আগে সে বসুন্ধরা ভিলায় এসেছে সকলের সঙ্গে দেখা করতে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৬: সারদা মায়ের ছোটকাকা ও পুত্রপ্রতিম স্বামীজির জীবনাবসান

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮২: রবীন্দ্রনাথ সাহেব-শিক্ষকদের কাছেও পড়েছেন

স্বর্ণময়ী খুব অসুস্থ। তাকে এসব নিয়ে কিছু জানানোর প্রয়োজন নেই। বিনয়কান্তির ঘরে গিয়ে তার পায়ের কাছে মাথা ছুঁয়ে অনেকক্ষণ বসে রইলো গৌরব। ওই যে বলেছিলেন তারকবাবু বিনয়কান্তির সাফল্যের মূল অস্ত্র হল মানুষের মন বুঝতে পারা। কালপুরুষ তারক নিয়োগী বিকেডিকে সবই জানিয়েছিল। আচমকা গৌরবের ছুটি নেওয়া, ইনক্রিমেন্ট বাদ দিয়ে স্যালারি নেবার সিদ্ধান্ত। এবং এসবের মূল পটভূমিকা সবকিছু। তাই গৌরবকে স্বপরিবারে আসতে দেখে তাঁর কিছু বোঝার বাকি ছিল না। গৌরবকে পায়ের থেকে দু’ হাত দিয়ে কাছে টেনে বুকে জড়িয়ে ধরলেন বিনয়কান্তি। ফিসফিস করে তার কানে কানে বললেন, জয়ী হও!
আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫৩: ক্রোধ ও ক্ষমা, কোনটির প্রভাব বেশি? হিংসা ও প্রতিহিংসার ফল কী সুদূরপ্রসারী?

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৪: শোভনাসুন্দরী—ঠাকুরবাড়ির এক সরস্বতী!

গৌরব সেদিন সকলের সঙ্গে দেখা করেছিল। রবিবার ছুটির দিন। যথারীতি সুজাতা এবং তার ছেলে প্রণয়কান্তি দত্ত বাড়িতে ছিলেন না। বাকিরা মোটামুটি সকলেই ছিলেন। চিনুদাদা খুব ইমোশনাল হয়ে পড়েছিলেন সৌরভের দুটো হাত ধরে বলেছিলেন—
—তুই আমার থেকে বয়সে ছোট কিন্তু আমি তোর কাছে মাপ চেয়ে নিচ্ছি গৌরব। আমার ভুলের জন্য সারা জীবন কষ্ট পেতে হবে। প্রায়শ্চিত্ত করার কোন সুযোগ পাবো না।
—দেখ চিনুদা! সেদিন তোর কথা শুনে খুব দুঃখ পেয়েছিলাম এ কথাটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই। সেদিন সারাটা রাত ঘুমোতে পারিনি এটাও সত্যি। কিন্তু তার সঙ্গে এটাও সত্যি যে সেটাই আমার লাইফের ডায়মেনশনটা বদলে দেওয়ার জন্য একটা মোমেন্টাম। দিদুর কাছে গল্প শুনেছি দাদুভাই ফড়েপুকুরের গুহবাড়ির ছেলেপুলেদের না পড়ালে জাহাজঘাটে পাটের রপ্তানির হিসেবের খাতা না লিখলে- তেলিপাড়া লেনের এজমালি বাড়ির একতলার অন্ধকার ঘরে, বড় দিদুকে নিয়ে থাকতে বাধ্য না হলে এই সাম্রাজ্য গড়তে পারতেন না। ওইগুলো ওঁর জীবনে প্রয়োজন ছিল, ওগুলোই ওর লাইফের গেমচেঞ্জিং মোমেন্টাম। চিনুদা তুই কথাগুলো বসুন্ধরা গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিজের ভালোর জন্যই বলেছিলি ভিতরের ভুল বোঝাবুঝি যাতে বাইরে এসে না পড়ে সেজন্য বলেছিলি। তোর কথার মধ্যে কোন ব্যাড ইনটেনশন ছিল না। কিন্তু এই কথাগুলোই বোধহয় আমার লাইফের মোমেন্টাম দেওয়ার জন্য একটা গেম চেঞ্জিং ইভেন্ট। আমার কাছে অনেকগুলো অফার ছিল। ইউকের অফার ছিল। কিন্তু সিটি ব্যাঙ্কের এই অফারের মধ্যে একটা আউট অফ দ্য ওয়ে গিয়ে কাজ করার স্কোপ পাবো মনে হলো। সব থেকে ডিফিকাল্ট কিন্তু চ্যালেঞ্জিং। এসব না ঘটলে তো আমি এই চ্যালেঞ্জটা নিতে পারতাম না।—চলবে।
* জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’। এখন লিখছেন বসুন্ধরা এবং…এর ৩য় খণ্ড।
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন। বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন। ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না। গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com

Skip to content