অলঙ্করণ : সৌমি দাসমণ্ডল।
কাপাডিয়া তাঁর কর্মচারীদের একে একে পাঠিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করেছিলেন। তাদের সঙ্গে কথোপকথন অবশ্য খুব দীর্ঘায়িত হল না। প্রথম এল কুক জগন্নাথ বেসরা। আদি বাড়ি ওড়িশার গঞ্জাম জেলায়। তবে অনেকদিন এখানে আছে। আগে সদরের একটা হোটেলে কাজ করত। এখানে বেশি বেতন পাওয়ায় সেই কাজ সেরে এখানে আছে। ম্যানেজারবাবু একটু কড়া, তবে মানুষ ভালো। মাইনেপত্তর আটকে রাখেন না। মাসে মাসে তাদের সবার অ্যাকাউন্টে যথাসময়ে টাকা জমা পড়ে যায়। মাসের দশ তারিখের ভিতর সবার অ্যাকাউন্টেই টাকা জমা পড়ে বলে সকলেই খুব খুশি। অনিলবাবুকে সে চেনে না। তার কাজ কিচেনে। সরাসরি বাবুদের সঙ্গে তার কথাবার্তা কমই হয়। সার্ভ সে করে না। হেল্পার যতীন আছে, সে-ই টেবিলে সার্ভ করে। সকাল-সন্ধে জগন্নথাকে কিচেনে ব্যস্ত থাকতে হয়, বাকিদের সঙ্গে গল্পগুজব করার তেমন সুযোগ হয় না। কাজের শেষে খাবার পরে সে ঘুমের দেশে চলে যায়। কেবল রাতে একবার বউ বাচ্চার সঙ্গে কথা বলে, তাও ওই ন’টা-সাড়ে ন’টার মধ্যে। অনিলবাবুকে সে চেনে না, তাঁরা পরশু এসেছিলেন, সেদিন রাতে ডিনার করেছেন। পরের দিন খাবার প্যাক করে বাইরে খেয়েছিলেন, কাল পার্টি ছিল রাতে। তারপর তো আজ ভরে এই কাণ্ড! অতএব তার পক্ষে অনিলবাবুর সম্পর্কে কিছু বলা সম্ভব নয়।
তবে সুবলকে সে চেনে। গ্রাম্ভারি ভাব ভালো লাগত না বলে কথাবার্তা বিশেষ বলত না। তবে টিপস ইত্যাদি যা পেত, এখানকার নিয়মমতো সকলের সঙ্গে সমানভাবে ভাগ করে নিত বলে তার মনে হয় না। সম্ভবত যা পেত, তার থেকে একতা অংশ ছোট হলেও সরিয়ে রেখে সুবল বাকি টাকা যৌথ ফান্ডে জমা দিত বলেই তার বিশ্বাস। তবে তাকে প্রমাণ দেখাতে বললে সে পারবে না। কেউ তো প্রমাণ রেখে এ সব কাজ করে না! বউয়ের সঙ্গে সুবলের বনিবনা ছিল কি না সে জানে না, তবে সুবল কারুর সঙ্গে কথা বলত সুযোগ পেলেই, সে দেখেছে। তবে এত আস্তে আস্তে কথা বলত যে পাশে কেউ দাঁড়িয়ে থাকলেও সে শুনতে পাবে না। কোন গোপন সম্পর্ক ছিল তার। ‘মেয়েছেলে’ কেস বলেই তার বিশ্বাস। হতে পারে এই পাপেই কালাদেও তাকে মেরে গিয়েছে। কালাদেওর কথা সে শুনেছে, ভয় করে, ভক্তিও। আগে জগন্নাথ ছাড়া আর কাউকে ভক্তি করত না, ভয়ও না, এখন কালাদেওকেও করে ভক্তি। না করলে রক্ষ্যে আছে? কোনওদিন কালাদেও সেই অপরাধেই হয়তো ধড় থেকে মুণ্ড ছিঁড়ে নেবে। তবে এখানে সে আর কাজ করবে কি না জানে না, তার বউ যা বলবে তা-ই হবে।
আরও পড়ুন:
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৫৩: কাপাডিয়ার বয়ান
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১২: সুখলতা রাও— ছোটদের পরী
যতীন শাসমল। বাড়ি এগরাতে। এখানে সে এসেছে কাপাডিয়ার সূত্রে। আগে কাপাডিয়া যে হোটেলে ছিল, সেই হোটেলে সে কাজ করত। রান্নাবান্না টুকটাক পারে। জগন্নাথদার শরীর খারাপ হলে সেই সামলায়। হ্যাঁ, টেবিলে সার্ভ করার দায়িত্ব সে-ই সামলাতো। জগন্নাথদা ঠায় ওভেনের সামনে এটা-ওটা ফরমায়েশ মতো তৈরি করত। জগন্নাথদার রান্নার হাত ভালো, তবে খুব হিংসুটে, তাকে ভালো ভালো রান্নাগুলি শেখাতেই চায় না। সে-ও কম সেয়ানা নয়, মোবাইলে একটা সাইটে নানা ভিডিও দেখে রান্না শিখে রাখছে মনে মনে। তার ইচ্ছা কলকাতা কিংবা দিল্লি কিংবা মুম্বইয়ের মতো জায়গায় গিয়ে ফাইভ স্টার হোটেলে কাজ করা। সে শুনেছে, ফাইভ স্টার হোটেলে অনেক ফিল্মস্টারেরা আসা-যাওয়া করে। সুবলদাই বলেছে। অনেক গোপন কাজকারবারও চলে। সেসব কাছ থেকে দেখতেও পাবে সেখানে কাজ করলে।
শাক্য বলল, “সুবলদার সঙ্গে তোমার খুব বন্ধুত্ব ছিল?”
যতীন বলল, “বন্ধুত্ব ঠিক নয়। তবে আমি সুবলদাকে পছন্দ করতাম, সুবলদাও আমাকে প্রশ্রয় দিত। অনেকসময় পা… “বলেই সে চুপ করে গেল, যেন কেউ তার গলা টিপে ধরেছে!
শাক্য বলল, “কী হল, থামলে কেন? অনেক সময় কী?”
যতীন থতমত খেয়ে বলল, “কিছু না স্যার। বেখেয়ালে কী বলতে কী বলে ফেলছিলাম…”
শাক্য বলল, “পুলিশের কাছে মিথ্যে বললে কী হয় জানা আছে?”
যতীন ঢোঁক গিলল। কিছু বলল না মুখে।
শাক্য বলল, “মিথ্যে বলছ বুঝতে পারছি। এক্ষুনি তোমাকে থানায় চালান করে দিলে পাক্কা তিন মাস জেলের ঘানি তোমার কপালে!”
যতীনের জেলকে খুব ভয়। পুলিশকে তো বটেই, কারণ পুলিশই তো জেলে পাঠায়। সে বলল, “নোংরা কথা স্যার। ওই জন্য…”
শাক্য বলল, “সুবলদার সঙ্গে তোমার খুব বন্ধুত্ব ছিল?”
যতীন বলল, “বন্ধুত্ব ঠিক নয়। তবে আমি সুবলদাকে পছন্দ করতাম, সুবলদাও আমাকে প্রশ্রয় দিত। অনেকসময় পা… “বলেই সে চুপ করে গেল, যেন কেউ তার গলা টিপে ধরেছে!
শাক্য বলল, “কী হল, থামলে কেন? অনেক সময় কী?”
যতীন থতমত খেয়ে বলল, “কিছু না স্যার। বেখেয়ালে কী বলতে কী বলে ফেলছিলাম…”
শাক্য বলল, “পুলিশের কাছে মিথ্যে বললে কী হয় জানা আছে?”
যতীন ঢোঁক গিলল। কিছু বলল না মুখে।
শাক্য বলল, “মিথ্যে বলছ বুঝতে পারছি। এক্ষুনি তোমাকে থানায় চালান করে দিলে পাক্কা তিন মাস জেলের ঘানি তোমার কপালে!”
যতীনের জেলকে খুব ভয়। পুলিশকে তো বটেই, কারণ পুলিশই তো জেলে পাঠায়। সে বলল, “নোংরা কথা স্যার। ওই জন্য…”
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৫: সুর হারানো হারানো সুর
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪১: চোখ ঠিক রাখতে মাছের মুড়ো?
শাক্য এক মুহূর্ত থমকালো। তারপর বলল, “সুবল আর তুমি পর্ন ছবি আদানপ্রদান করতে? তাই তো? তুমি বলতে চেয়েছিলে, সুবল তোমাকে পানু সাপ্লাই দিত। তাই না?”
যতীন চোখ নামিয়ে বলল, “হ্যাঁ স্যার। সুবলদার সেক্স খুব বেশি ছিল। রোজ দেখত আর ওই কাজ করত মানে ছেলেরা যা করে!”
“তাই না কি?”
“হ্যাঁ স্যার। তবে সুবলদা কিন্তু সব পানু দেখতে না। তার আলাদা পছন্দ ছিল।”
“কী রকম ?”
“ওই যে সব পানু লুকিয়ে তোলা হয়, সেইসব পানু দেখত কেবল। বলত, বাকি পানু তো সব সাজানো, অ্যাক্টিং করা। ও দেখে মজা নেই। যে সব পানু একেবারে গোপনে তোলা হয়, সত্যি সত্যি ঘটেছে, সাজানো নয়, তা দেখলেই না কি ওর সেক্স ওঠে ভালো!”
“ওর কাছে তাহলে এই ধরণের ভিডিও এন্তার ছিল বল। আজকাল অবশ্য অনেক ওয়েবসাইট হয়েছে… সেখানে এ সব পাওয়া যায়। ছেলেমেয়েরা এ সব দেখেই বিভ্রান্ত হয় এবং ভুল করে বসে।”
“স্যার, ওয়েবসাইটে তো আমরা দেখি। সুবলদা অন্য কোথাও থেকে জোগাড় করত বা পেত। সব দেশি ভিডিও স্যার…! মাঝেমাঝেই বাজারে যেত, সেখানে কোন দোকান থেকে পেত। কারণ, বাজারে যেদিন যেদিন যেত, সেদিন সেদিন সুবলদার মোবাইল ভর্তি থাকত ওই সব ভিডিয়োতে!”
“এই সব ভিডিয়োতে যারা থাকতো, তাদের তুমি চেনো? মানে, দেখেছ কখনও?”
“নাহ্ স্যার। সুবলদা তো আমাকে সব দিত না। মাঝেমাঝে মন হলে এক-আধটা দিত। বলল, ঘোল খেয়ে খেয়ে তো জীবন কাটালি, একবার আসলি দুধের স্বাদ নিয়ে দেখ!”
“বাঃ! সুবলের ক্যারেক্টার কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি। আচ্ছা সুদীপ্ত, সুবলের ফোনটা নিশ্চয়ই সিজ করেছেন?”
সুদীপ্ত বলল, “করেছি স্যার!”
যতীন বলল, “কোন ফোনটা স্যার? সুবলদার তিনটে ফোন ছিল। সব কটাতে কিন্তু সুবলদা এ সব জমাত না। কালো রঙের ফোনটায় কেবল এই সব থাকত?”
সুদীপ্ত বেকুবের মতো বলল, “কালো রঙের ফোন? আমরা তো দুটি ফোন পেয়েছি—একটা নীল রঙের সাধারণ কিপ্যাড ফোন, আর একটা ক্রিম কালারের স্মার্ট ফোন। অন্য কোন ফোন তো পাইনি!”
শাক্য চমকে উঠল। বলল, “ভালো করে খুঁজেছেন?”
“ইন্টারোগেশনের আগেই তো ছানবিন করলাম। আপনি তখন অনিলবাবুর মার্ডারের জায়গাটা ছানবিন করছিলেন ! ঘরে বেশি কিছু তো ছিল না। একটা ট্রলি ব্যাগ ছিল, সেটা অবশ্য দেখা হয়নি এখনও!”
“দেখবেন। যদি পাওয়া যায় ভালো কথা। তা না হলে বুঝতে হবে, আততায়ী আর যেই হোক কালাদেও নয়। কালাদেও পানু দেখার লোভে কালো রঙের ফোন হাতিয়ে চম্পট দিয়েছে, এ-কথা শুনলে বাচ্চারাও হাসবে!”
“হ্যাঁ স্যার। আপনি বললে, আমি এক্ষুনি একবার যেতে পারি। দেরি করতে চাইছি না। মনে হচ্ছে ফোনটা পাওয় গেলে এই কেসে গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স হয়ে উঠবে!’
“হ্যাঁ, এক্ষুনি যান। দরকার পড়লে আমাকেও ডাকবেন। আপনি আছেন বলে আমি সুবলের মার্ডার স্পটটায় আর যাইনি। আমার যাওয়া উচিত ছিল।”
যতীন চোখ নামিয়ে বলল, “হ্যাঁ স্যার। সুবলদার সেক্স খুব বেশি ছিল। রোজ দেখত আর ওই কাজ করত মানে ছেলেরা যা করে!”
“তাই না কি?”
“হ্যাঁ স্যার। তবে সুবলদা কিন্তু সব পানু দেখতে না। তার আলাদা পছন্দ ছিল।”
“কী রকম ?”
“ওই যে সব পানু লুকিয়ে তোলা হয়, সেইসব পানু দেখত কেবল। বলত, বাকি পানু তো সব সাজানো, অ্যাক্টিং করা। ও দেখে মজা নেই। যে সব পানু একেবারে গোপনে তোলা হয়, সত্যি সত্যি ঘটেছে, সাজানো নয়, তা দেখলেই না কি ওর সেক্স ওঠে ভালো!”
“ওর কাছে তাহলে এই ধরণের ভিডিও এন্তার ছিল বল। আজকাল অবশ্য অনেক ওয়েবসাইট হয়েছে… সেখানে এ সব পাওয়া যায়। ছেলেমেয়েরা এ সব দেখেই বিভ্রান্ত হয় এবং ভুল করে বসে।”
“স্যার, ওয়েবসাইটে তো আমরা দেখি। সুবলদা অন্য কোথাও থেকে জোগাড় করত বা পেত। সব দেশি ভিডিও স্যার…! মাঝেমাঝেই বাজারে যেত, সেখানে কোন দোকান থেকে পেত। কারণ, বাজারে যেদিন যেদিন যেত, সেদিন সেদিন সুবলদার মোবাইল ভর্তি থাকত ওই সব ভিডিয়োতে!”
“এই সব ভিডিয়োতে যারা থাকতো, তাদের তুমি চেনো? মানে, দেখেছ কখনও?”
“নাহ্ স্যার। সুবলদা তো আমাকে সব দিত না। মাঝেমাঝে মন হলে এক-আধটা দিত। বলল, ঘোল খেয়ে খেয়ে তো জীবন কাটালি, একবার আসলি দুধের স্বাদ নিয়ে দেখ!”
“বাঃ! সুবলের ক্যারেক্টার কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি। আচ্ছা সুদীপ্ত, সুবলের ফোনটা নিশ্চয়ই সিজ করেছেন?”
সুদীপ্ত বলল, “করেছি স্যার!”
যতীন বলল, “কোন ফোনটা স্যার? সুবলদার তিনটে ফোন ছিল। সব কটাতে কিন্তু সুবলদা এ সব জমাত না। কালো রঙের ফোনটায় কেবল এই সব থাকত?”
সুদীপ্ত বেকুবের মতো বলল, “কালো রঙের ফোন? আমরা তো দুটি ফোন পেয়েছি—একটা নীল রঙের সাধারণ কিপ্যাড ফোন, আর একটা ক্রিম কালারের স্মার্ট ফোন। অন্য কোন ফোন তো পাইনি!”
শাক্য চমকে উঠল। বলল, “ভালো করে খুঁজেছেন?”
“ইন্টারোগেশনের আগেই তো ছানবিন করলাম। আপনি তখন অনিলবাবুর মার্ডারের জায়গাটা ছানবিন করছিলেন ! ঘরে বেশি কিছু তো ছিল না। একটা ট্রলি ব্যাগ ছিল, সেটা অবশ্য দেখা হয়নি এখনও!”
“দেখবেন। যদি পাওয়া যায় ভালো কথা। তা না হলে বুঝতে হবে, আততায়ী আর যেই হোক কালাদেও নয়। কালাদেও পানু দেখার লোভে কালো রঙের ফোন হাতিয়ে চম্পট দিয়েছে, এ-কথা শুনলে বাচ্চারাও হাসবে!”
“হ্যাঁ স্যার। আপনি বললে, আমি এক্ষুনি একবার যেতে পারি। দেরি করতে চাইছি না। মনে হচ্ছে ফোনটা পাওয় গেলে এই কেসে গুরুত্বপূর্ণ এভিডেন্স হয়ে উঠবে!’
“হ্যাঁ, এক্ষুনি যান। দরকার পড়লে আমাকেও ডাকবেন। আপনি আছেন বলে আমি সুবলের মার্ডার স্পটটায় আর যাইনি। আমার যাওয়া উচিত ছিল।”
আরও পড়ুন:
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৮: কে আবার বাজায় বাঁশি
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮০: ঠাকুরবাড়ির ফরাসি-পাচক
সুদীপ্ত তাড়াতাড়ি বলল, “আমার উপর ভরসা রাখতে পারেন স্যার। দেখুন না আর একবার!”
“বেশ। যান, দেখুন গিয়ে!”
সুদীপ্ত চলে গেল।
শাক্য যতীনকে বলল, “যতীন, অনিলবাবুকে দেখেছ তো?”
“আজ্ঞে দেখেছি। সামান্য কথা হয়েছিল পরশুদিন রাত্রে!”
“কী ব্যাপারে?”
“তেমন কিছু না। মর্নিংয়ে ব্রেকফাস্টে কী পাওয়া যায়। দুপুরের লাঞ্চ প্যাক করে দিতে বললে পারব কি না এই সব!”
“তুমি সেই রাতে খাবার সময়ে সবসময় ওই পার্টির কাছাকাছি ছিলে?”
“মোটামুটি ছিলাম স্যার !”
“অনিলবাবু কার সঙ্গে বেশি কথা বলছিলেন? বাকিরা?”
“অনিলবাবু আলাদা করে কারুর সঙ্গেই বেশি কথা বলছিলেন না। সকলের সঙ্গেই টুকটাক কথা বলছিলেন। তবে যে বাবুটি নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে বলে শুনছি, তার সঙ্গেই বেশি কথা বলছিলেন বলে মনে হয়!”
“আর বাকিরা ?”
“অল্পবিস্তর সকলেই কথা বলছিলেন। কেবল সুন্দরী দিদি ছাড়া!”
“সুন্দরী দিদি মানে উন্মেষা?”
“নাম তো জানি না স্যার। উনিই হবেন। চুপচাপ খাচ্ছিলেন। অনিলবাবু একবার বোধহয় জিজ্ঞাসা করেছিলেন তা বললেন, ওনার মাথা ধরেছে। ঘুম দরকার!”
“হতেই পারে। এতটা রাস্তা বাইকে এসেছেন। আর কিছু?”
“নাহ্ স্যার। তবে…”
“তবে… ?”
“বেশ। যান, দেখুন গিয়ে!”
সুদীপ্ত চলে গেল।
শাক্য যতীনকে বলল, “যতীন, অনিলবাবুকে দেখেছ তো?”
“আজ্ঞে দেখেছি। সামান্য কথা হয়েছিল পরশুদিন রাত্রে!”
“কী ব্যাপারে?”
“তেমন কিছু না। মর্নিংয়ে ব্রেকফাস্টে কী পাওয়া যায়। দুপুরের লাঞ্চ প্যাক করে দিতে বললে পারব কি না এই সব!”
“তুমি সেই রাতে খাবার সময়ে সবসময় ওই পার্টির কাছাকাছি ছিলে?”
“মোটামুটি ছিলাম স্যার !”
“অনিলবাবু কার সঙ্গে বেশি কথা বলছিলেন? বাকিরা?”
“অনিলবাবু আলাদা করে কারুর সঙ্গেই বেশি কথা বলছিলেন না। সকলের সঙ্গেই টুকটাক কথা বলছিলেন। তবে যে বাবুটি নিখোঁজ হয়ে গিয়েছে বলে শুনছি, তার সঙ্গেই বেশি কথা বলছিলেন বলে মনে হয়!”
“আর বাকিরা ?”
“অল্পবিস্তর সকলেই কথা বলছিলেন। কেবল সুন্দরী দিদি ছাড়া!”
“সুন্দরী দিদি মানে উন্মেষা?”
“নাম তো জানি না স্যার। উনিই হবেন। চুপচাপ খাচ্ছিলেন। অনিলবাবু একবার বোধহয় জিজ্ঞাসা করেছিলেন তা বললেন, ওনার মাথা ধরেছে। ঘুম দরকার!”
“হতেই পারে। এতটা রাস্তা বাইকে এসেছেন। আর কিছু?”
“নাহ্ স্যার। তবে…”
“তবে… ?”
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৪: মা সারদার সন্তানসম শিষ্যের দেহরক্ষা
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৫১: কচ, দেবযানী ও মহান শুক্রাচার্য— প্রেম, প্রতিহিংসা, উদারতায় অনন্য তিন দৃষ্টান্ত?
“অনিলবাবু খাবার পরে আমাকে ডেকেছিলেন, বলেছিলেন, ভাল মেয়ে পাওয়া যায় কি না এই রিসর্টে, বডি ম্যাসাজ করাবেন। আমি বললাম, সুবলদাকে বললে ব্যবস্থা করে দিতে পারে। তা বললেন, সুবলদাকে পাঠিয়ে দিতে। আমি সুবলদাকে বলেছিলাম। তারপর গিয়েছে কি না জানি না!”
শাক্য থমকালো। আঁধারে সে আশার আলো দেখতে পেয়েছে। সুবল নেই, জানা যাবে না, তার সঙ্গে কী ফাইনাল হয়েছিল, কিন্তু সম্ভাবনার দিকটা সে ধরতে পারছে এবার। মনে মনে সে ধন্যবাদ জানাল যতীনকে। সে জানেও না, দু-দুটো গুরুত্বপূর্ণ সূত্র সে ধরিয়ে দিয়ে গেল। অনেকসময় আমরা নিজেরাই জানি না যে, আমরা কী জানি!—চলবে।
শাক্য থমকালো। আঁধারে সে আশার আলো দেখতে পেয়েছে। সুবল নেই, জানা যাবে না, তার সঙ্গে কী ফাইনাল হয়েছিল, কিন্তু সম্ভাবনার দিকটা সে ধরতে পারছে এবার। মনে মনে সে ধন্যবাদ জানাল যতীনকে। সে জানেও না, দু-দুটো গুরুত্বপূর্ণ সূত্র সে ধরিয়ে দিয়ে গেল। অনেকসময় আমরা নিজেরাই জানি না যে, আমরা কী জানি!—চলবে।
* ধারাবাহিক উপন্যাস (novel): পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক (Pishach paharer atanka) : কিশলয় জানা (Kisalaya Jana) বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক, বারাসত গভর্নমেন্ট কলেজ।