শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ক্রিসমাসেই কেন কেক কাটা হয়, কবে থেকে শুরু এই রীতি?

উত্তুরে হাওয়ায় খুশির আমেজ। দেখতে দেখতে চলে এল বড়দিন। বড়দিন মানেই কেক খাওয়া। যদিও আমরা সারা বছরই বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের কেক খাই, তবুও বড়দিনে কেক খাওয়ার মজাটাই আলাদা। কিন্তু বড়দিনেই কেন কেক খেতে হয়? কী কারণে এ দিনের উৎসবের একটা প্রধান অংশ কেক—আজ তারই দু-চার কথা বলব।

স্ক্যান্টিনেভিয়ান শব্দ ‘কাকা’ থেকে ‘কেক’ কথাটি এসেছে। ‘ক্রিসমাস কেক’ কেকের প্রচলন শুরু করে ইংরেজরা। প্রথমে কেক ছিল মূলত মধু মিশ্রিত মিষ্টি পাউরুটি। আবার কখনও কখনও স্বাদের জন্য এর মধ্যে কিসমিস, বাদাম, কারেন্টস, সিট্রনের মতো শুকনো ফলও দেওয়া হতো। বড়দিন মানেই নানা ধরনের কেকের সমাহার। বড়দিনের কেকের একটা আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে বহু যুগ থেকেই।
৩০৬ খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট কনস্ট্যানটাইনের আমলে প্রথম বড়দিন উৎসব পালন হয়। যদিও সে সময় ক্রিসমাস কেক খাওয়ার রীতি ছিল না। ছিল প্লামপরিজ। ক্রিসমাসের আগের দিন উপবাস রেখে পরের দিন উপবাস ভঙ্গ করতেন ইংরেজরা। দীর্ঘ সময় খালি পেটে থাকার পর কোনও ভারী খাবার খেলে শরীর খারাপ হতে পারে। কিন্তু পরিজ খেলে সে সম্ভাবনা থাকে না- এই ধারণা থেকেই পরিজের প্রচলন। কালক্রমে পরিজের সঙ্গে শুকনো ফল, মশলা, মধু ইত্যাদি মিশিয়ে তাকে ক্রিসমাস পুডিংয়ে রূপান্তরিত করা হয়।
আরও পড়ুন:

প্রথম আলো, পর্ব-১০: বিশ্বের প্রথম নাট্যকার কে, জানেন?

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৫০: কুষ্টি বিচার, না কি রক্ত বিচার! জরুরি কোনটা?

১৬ শতকে ক্রিসমাস পুডিংয়ে ওটমিলের স্থান দখল করে ডিম, ময়দা, মাখন। তৈরি হয় প্লাম কেক। যেসব পরিবারের ওভেন ছিল তারা আমন্ড সুগার পেস্ট ইত্যাদি ব্যবহার করে ফ্রুট কেক তৈরি শুরু করে ইস্টারের জন্য। এই কেকগুলিই পরবর্তীতে ক্রিসমাস কেক নামে পরিচিত হয়।

ইতালির প্যানটোম নামে এক বিশেষ ধরনের টক স্বাদের কেক বড়দিনের বিশেষত্ব। সাইপ্রাসের মানুষ বড়দিনে অতিথিদের খাওয়ান সাইপ্রিয়ট কেক। আমেরিকায় ফ্রুট কেক উপহার দেওয়া হয় বড়দিনে। স্ট্রবেরি, চকলেট আর ফলের মিশ্রণে জাপানের ক্রিসমাস কেক ফ্রস্টেড স্পঞ্জি।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, শক্তিরূপেন সংস্থিতা, পর্ব-৩: মালতীর কথা…

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৫: উদ্যানবাটিতে সারদা মায়ের ঠাকুরের শুশ্রূষা

প্রতিমার কাঠামো তৈরির মাধ্যমে যেমন মা দুর্গার পূজার প্রস্তুতি শুরু হয়, ঠিক তেমনি কলকাতাতেও আসন্ন বড়দিনের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হয় কেক মিক্সিং পর্বের মাধ্যমে। ক্রিসমাস কেক এবং পুডিংয়ের নানা রকম ফল মোরব্বা ইত্যাদিকে সংগ্রহ করে প্রচুর পরিমাণে স্তুপাকারে জমিয়ে শুরু হয়ে যায় খ্রিস্ট বরণের প্রস্তুতি। এই আয়োজন এবং তার ব্যস্ততা উৎসবের আগমন বার্তাকে যেমন ঘোষণা করে, তেমনি মুখরিত করে তোলে বড়দিনের মাহাত্ম্যকে।
আরও পড়ুন:

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৪: কৃষ্ণভাবিনী দাসী— প্রথম মহিলা ভ্রমণ কাহিনিকার

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২৮: সুন্দরবনের তিন গাজী—রক্তান গাজী, তাতাল গাজী ও শতর্ষা গাজী

বড়দিন মানেই তো শুধু একটা রীতি বা নিয়ম বা বিশেষ কোনও ধর্মের উৎসব নয়, এই দিনটা থেকেই আমরা যেমন মনে করি দিন একটু একটু করে বড় হতে শুরু করে, তেমনি খ্রিস্টের আগমন আমাদের জীবনের প্রত্যেকটা দিনকে বড় করে তোলে মানবতার ধর্মে, আদর্শে। তাই বড়দিন আমাদের সকলের উৎসব। মুদির দোকান থেকে শুরু করে কত শত কেকের দোকান পাড়ার মোড়ে রাস্তার দু’ধারে… যেখানে কোন ধর্ম-জাত-পাতের গন্ডী নেই।

আসুন না আজকের এই বড়দিনে আমরা সবাই আমাদের পৃথিবীর পরিক্রমণের প্রত্যেকটা দিনকে প্রকৃত অর্থেই বড় করে তুলি আমাদের সৌহার্দে সহযোগিতায় মানবিকতায়। আজকের বড়দিনে এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
* সোমা চক্রবর্তী (Soma Chakrabarti), শিক্ষিকা, নিমতা জীবনতোষ ঘোষ মেমোরিয়াল গার্লস হাইস্কুল (উচ্চ মাধ্যমিক)।

Skip to content