শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

শীতের এক অপরাহ্নে পার্কে বসে দুই সিনিয়র সিটিজেনের কথোপকথন। বিষয়বস্তু হল, প্রতিদিন বিকেলবেলা এক ঘণ্টা করে হাঁটাহাঁটি করেও তাদের সুগার কমছে না কেন! আলোচনা শেষে তাঁরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছলেন, যেহেতু শীতকাল বলে ভোরবেলা হাঁটার পরিবর্তে তাঁরা বিকেলে হাঁটছেন, সেজন্যই তাদের সুগার কমছে না। শুধু ওই দু’জনের নয়, অনেকেরই ধারণা ভোরবেলা হাঁটাহাঁটি করলে শরীরের যা যা উপকার হবে, দিনের অন্য সময় হাঁটলে তা হবে না! সত্যিই কি তাই! চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলে।
হাঁটা ছাড়া যে সুস্থ থাকার কোনও শর্টকাট ওয়ে নেই, এটা এখন সবাই জানেন। কিন্তু কোন সময় হাঁটাটা শরীরের পক্ষে বেশি উপকারি, এটা জিজ্ঞাস্য অনেকেরই। সকালের হাঁটা অর্থাৎ মর্নিংওয়াক বেশিরভাগ মানুষের পছন্দ। কারণ এই সময় রাস্তাঘাট ফাঁকা থাকে, বায়ুতে দূষণ কম থাকে, সারারাত বিশ্রামের পর মন থাকে সতেজ এবং ফুরফুরে, কিন্তু শরীরবিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, ছয়-সাত ঘণ্টা ঘুমের পর রক্তচাপ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি কিংবা কম থাকে, নাড়ির গতি কম থাকে, দেহের সমস্ত মাংসপেশি শিথিল থাকে, তাই এই সময় বেশি স্ট্রেন না করাই ভালো। তবে ঘুম থেকে উঠে চা খেয়ে ঘরে একটু ঘোরাঘুরি বা পায়চারি করে বেরোলে, চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু শীত বা বর্ষায় বিকেলে রোদ কমলে হাঁটাহাঁটি করাই ভালো, বিশেষ করে বৃদ্ধ বৃদ্ধাদের।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব ৪৭: শীতকালে দই খেতে নেই?

দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১: চন্দ্রাবতী—বাংলা সাহিত্যে প্রথম ছন্দের আড়ালে প্রতিবাদী কবি

ঋতু পরিবর্তনের সময় সকালে হালকা ঠান্ডায় বয়স্করা যদি মর্নিং ওয়ার্ক করতে চান, গরম পোশাক পরেই বেরোবেন। পায়ে থাকবে জুতো মোজা। বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম থাকে। হঠাৎ করে এই সময় ঠান্ডা লেগে ফুসফুসে সংক্রমণ হতে পারে। হেঁটে এসে বাড়িতে ঢুকে অনেকে ফুল স্পিডে ফ্যান চালিয়ে দেন ঘাম শুকোতে। করবেন না। গরম জামা কাপড় খুলে চেয়ারে বসে বিশ্রাম করুন। এই সময় গায়ে রাখবেন সাধারণ জামা কাপড়। বিকেল চারটে থেকে পাঁচটা হলো ইভিনিং ওয়াকের সেরা সময়। হালকা গরম জামা পরেই শীতকালে কাছাকাছি রাস্তায় বা পার্কে হাঁটাহাঁটি করতে পারেন।

আজকাল বিভিন্ন আবাসনের মধ্যেই হাঁটার জায়গা থাকে। অনেক সময় খোলা ছাদেও হাঁটতে পারেন। এত প্ল্যান না করে দিনের যে কোনও সময় হাঁটাহাঁটি করলেও একই উপকার পাবেন। শুধু দুটো ব্যাপার মাথায় রাখবেন।রোদে হাঁটবেন না। একান্তই বেরোতে হলে ছাতা ব্যবহার করবেন। হাঁটার জায়গায় যেন দূষণ কম থাকে। পার্ক বা মাঠ না পেলে অলিগলিতে হাঁটতে পারেন, কিন্তু কখনওই বড় রাস্তায় হাঁটবেন না, দুর্ঘটনার সম্ভাবনা থাকে।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২৩: চল্ রে চল্ সবে…

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২২: ঠাকুর ও মা সারদার সংসার

এ বার প্রশ্ন হল, কতক্ষণ হাঁটবেন? সুস্থ ব্যক্তিরা দিনে তিন চার কিলোমিটার করে হাঁটবেন এক ঘণ্টায়। এতে ৩০০ থেকে ৫৫০ ক্যালোরি শক্তিক্ষয় হবে। একদিনে এতটা পারবেন না। ধীরে ধীরে বাড়ান। প্রথম কদিন ১৫ মিনিট, এরপর ৩০ মিনিট, শেষে ৬০ থেকে ৯০ মিনিট। হেলে দুলে হাঁটবেন না। হাঁটবেন পা চালিয়ে অর্থাৎ একটু জোরে। প্রকৃতি দেখতে দেখতে হাঁটবেন না, হাঁটতে হাঁটতে এর-তার সঙ্গে গল্প করবেন না। যদি ক্লান্তি বোধ করেন বা অস্বস্তি হয়, ঘাম হয়, পায়ে খিল ধরে, সঙ্গে সঙ্গে হাঁটা বন্ধ করে কোথাও বসে জিরিয়ে নেবেন। মিনিটে ১০০ পা হাঁটার চেষ্টা করুন।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৩: ‘সুরের পরশে’ তুমি-ই যে শুকতারা

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১৬: মোমো চিত্তে!

একেবারে খালি পেটে হাঁটবেন না। একটা বিস্কুট বা দু’গাল মুড়ি খেয়ে হাঁটতে বেরোবেন। হেঁটে ফিরলেই অনেকের তীব্র খিদে পায়। সাবধান! গন্ডে পিন্ডে খাবেন না, হালকা খাবার খান। খালি পায়ে হাঁটবেন না। পকেটে রেস্ত থাকলে ওয়াকিং শ্যু পরে আপনি হাঁটতেই পারেন। অন্যথায় যে কোনও ফ্ল্যাট জুতো বা চটি, যাতে আপনি সচ্ছন্দ বোধ করেন, সেটা পরেই হাঁটুন। নিয়মিত হাঁটলে শরীরে এনডরফিন নামক একটি রাসায়নিক তৈরি হয়। আরও বেশি বেশি হাঁটতে ইচ্ছে করে। শরীর বুঝে হাঁটুন। যদি আপনার হার্টের অসুখ বা অন্য কোনও বড় অসুখ থাকে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ মত হাঁটুন।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।

Skip to content