বাংলায় জীবনীমূলক ছবি নির্মাণের ক্ষেত্রে কালীপ্রসাদ ঘোষ এক স্মরণীয় নাম। এমন দুটি অসাধারণ জীবনী মূলক ছবি তিনি করেছেন যা বাংলা ছবির সম্পদ বিশেষ। প্রথমটি ‘বিদ্যাসাগর’ এবং দ্বিতীয়টি ‘রানী রাসমণি’। দুটি ছবি বাণিজ্যিকভাবে সফল।
যখন তিনি ‘বিদ্যাসাগর’ ছবি করছেন তখন প্রধান প্রধান শিল্পী নির্বাচন শেষ করেছেন। বিদ্যাসাগরের চরিত্রে পাহাড়ি সান্যাল, তাঁর বাবা ও মায়ের চরিত্রে অহীন্দ্র চৌধুরী ও মলিনা দেবী। এ ছাড়াও বহু নামি শিল্পীর ভিড়। ছবির শেষ দৃশ্যে বিদ্যাসাগরের গড়পার এর বাড়িতে ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণ এসেছেন। বহুশ্রুত সংলাপ উচ্চারিত হয়েছে এই দু’জনের মধ্যে। কিন্তু সেই ঠাকুরের চরিত্রে কে অভিনয় করবেন?
আরও পড়ুন:
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৩: ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ ছবি দেখে মুগ্ধ সত্যজিৎ রায় পরিচালক নির্মল দে’র খুব প্রশংসা করেছিলেন
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫১: সেই ‘পৃথিবী আমারে চায়’
এমন ভাবনা চিন্তার মধ্যে যখন তিনি রয়েছেন তখন টেকনিশিয়ানদের মধ্যে কেউ জানালেন অধুনালুপ্ত কালিকা থিয়েটারে ‘যুগাবতার’ নাটকটিতে যিনি ঠাকুরের চরিত্রে অভিনয় করছেন, তিনি যেন চরিত্রের সঙ্গে মিলেমিশে গিয়েছেন।। খবর পাওয়া মাত্র কালীপ্রসাদ নিজে উদ্যোগী হয়ে দেখতে গেলেন সেই নাটক। দেখলেন। মুগ্ধ হলেন। পরিচিত হলেন শিল্পীর সঙ্গে। তিনি হলেন গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়।
ইতিপূর্বে গুরুদাস নরেশ মিত্র পরিচালিত ‘স্বয়ংসিদ্ধা’ ছবিতে নায়কও হয়েছিলেন। সুতরাং ক্যামেরার সামনে আড়ষ্ঠতার ব্যাপারটাও যে নেই তা বোঝাই গেল। কালীপ্রসাদ গুরুদাসকে ‘বিদ্যাসাগর’ ছবিতে রামকৃষ্ণের চরিত্রের জন্য নির্বাচন করলেন। গুরুদাস স্বাভাবিকভাবেই জমিয়ে অভিনয় করলেন। চরিত্রটিতে দর্শকেরা মুগ্ধ হলেন। কালীপ্রসাদ তাঁর পরের ছবি ‘রানী রাসমণি’ তেও ঠাকুরের চরিত্রে গুরুদাসকে নিলেন। আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়কে। পরবর্তী সময়ে ঠাকুরের চরিত্রে তিনি অবধারিত শিল্পী।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৫: কানে তালায় কানের ড্রপ?
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-২১: সুন্দরবনের সর্পদেবী মনসা
শুধু তাই নয় পৌরাণিক ছবিগুলিতে অপরিহার্য শিল্পী হয়ে উঠলেন গুরুদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। বিশেষ করে মাতৃ সাধকের চরিত্রগুলোতে তিনি হয়ে উঠলেন অনবদ্য। সেই চরিত্র গুলির মধ্যে রয়েছে রামপ্রসাদের চরিত্র, কমলাকান্তের চরিত্র, তৈলঙ্গস্বামীর চরিত্র, বামাক্ষ্যাপার চরিত্র।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৯: ইষ্টদেবী জগদ্ধাত্রী
ইতিহাস কথা কও, পর্ব-১৫: দেবদেউল কথা ও গোসানিমারি কামতেশ্বরী মন্দির
কালী পুজোর প্রাক্কালে এমন ধর্মপ্রাণ অভিনেতাকে স্মরণ করছি। দুঃখের বিষয় হলো এই যে তিনি হঠাৎ কাউকে না জানিয়ে ১৩ নম্বর বলরাম বসু ঘাট রোডের বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যান। কোথায় যান, বেঁচে আছেন কিনা এসব আর জানা যায় না। তবে যেখানেই তিনি থাকুন আনন্দে থাকুন, সুস্থ থাকুন এই কামনাই করছি।
* পর্দার আড়ালে (Behind the scenes) : ড. শঙ্কর ঘোষ (Shankar Ghosh) বিশিষ্ট অধ্যাপক ও অভিনেতা।