রবিবার ২৪ নভেম্বর, ২০২৪


সকলের নাকে কাপড় বেঁধে দুই মেয়েকে নিয়ে প্রায় অন্ধকার রান্না ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করল পদ্মা। শখ করে বানানো গ্রিল জানলার কাচটাও বন্ধ। পিছনে কাচ পেরিয়ে আসা পড়ন্ত সূর্যের আলোয় তিনজনকে অন্যরকম লাগছে। দুই মেয়েকে দুহাতে কাছে টেনে ধরে থাকা পদ্মার চোখের সামনে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে পুরনো স্মৃতিরা…সুখস্মৃতিরা।

সতীর চোখে চোখ রাখল পদ্মা। সতী তাকাল তার ছোটবোন সাবিত্রীর দিকে, পদ্মা হাত রাখল দু-মেয়ের মাথায়। সতীর হাত কাঁপছে! প্রথমবারের চেষ্টায় দেশলাই জ্বলল না যে, পদ্মা তাকাল। দ্বিতীয়বারের চেষ্টাও ব্যর্থ হল। ছোট বোন সাবিত্রী হাত বাড়িয়ে দেশলাই বাক্সটা নিল।

পুরুষোত্তম পাগলের মত পদ্মার চিঠিটা পড়ছে। নিজের চোখকে যেন বিশ্বাস করতে পারে না সে। ‘না পদ্মা না’ নিজের চিৎকার নিজেই শুনতে পেল কি?
একটা ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে রান্নাঘরের পিছনের অংশ উড়ে গেল।

প্রৌঢ় ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে গেল, পদ্মা ও মেয়েদের ঝলসানো মৃতদেহের সামনে দাঁড়িয়ে মনে মনে বললেন—‘একটু তর সইলো না মা!’ মৃতদেহ ময়না তদন্তে নিয়ে গেল পুলিশ। প্রৌঢ় ঠিক করলেন একবার পুরুষোত্তম-এর কাছে যাবেন। ভাগ্যের কী অদ্ভুত পরিহাস! চেনা কেউ নয় আর ভালো করে পরিচয়ও নেই অথচ এদের সঙ্গে কী এক অদ্ভুত বাঁধনে জড়িয়ে গেলেন এই প্রৌঢ়।
পুরুষোত্তম যে সব জানে এটা তিনি ভাবতে পারেননি, শেষকৃত্যের জন্য কাস্টডি প্যারোলে আধবেলা মুক্তি পেল পুরুষোত্তম। ধর্ষণের কুৎসিত অপবাদে ঝলসানো স্ত্রী-কন্যাদের নদীর ধারে শ্মশানঘাটে পবিত্র আগুনে আহুতি দিল পুরুষোত্তম। পাশেই দাঁড়ানো প্রৌঢ়কে বলল ‘একটা খুন একটা জীবন নেয়, কিন্তু একটা ধর্ষণ একটা গোটা পরিবারের জীবন নিয়ে নেয়’।

এরপরে আরও কয়েক বছর কাটলো পুরুষোত্তম এখন দমদম সেন্ট্রাল জেলে। সেই ব্যাংক ম্যানেজারের চেষ্টায় তার প্রাপ্য আর্মি পেনশন এখন তার ব্যাংক একাউন্টে জমা হয়। কিন্তু পদ্মা আর মেয়েদের এভাবে হারানোর পর পুরুষোত্তমের কিছু মানসিক সমস্যা দেখা দিয়েছিল। ডাক্তার যোশি নামকরা মনোরোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি কলকাতা দেখতে গিয়েছিলেন। ভাল করে দেখেশুনে পুরুষোত্তমের ঠিকঠাক চিকিৎসার জন্য তাকে কলকাতায় স্থানান্তরের কথা বলেছিলেন। পুরুষোত্তম হ্যাল্যুসিনেশনে ভুগছে। মৃতা স্ত্রী, মেয়েদের সঙ্গে কথা বলছে। এটা বাইপোলার ডিস-অর্ডার-এর উপসর্গ। কলকাতায় নিয়মিত চিকিৎসাসূত্রে ডাক্তার যোশি জানলেন পুরুষোত্তমের জীবনকাহিনি। একটা মানুষের জীবনে এত ঝড় জমে থাকে?

ইন্ডিপেন্ডেন্স ডে’তে বন্দিমুক্তির একটা ট্রাডিশন আছে। যে বন্দিরা কুড়ি বছর বা তার বেশি সময় বন্দিজীবন কাটাচ্ছেন তাদের মধ্যে থেকেই জেল কর্তৃপক্ষ নাম রেকমেন্ড করে পাঠান। সরকারি দপ্তর তার মধ্যে থেকে গোটা রাজ্যের জন্য যতজন বন্দিমুক্তির বরাদ্দ আছে তাদের বেছে নেন। সিদ্ধান্ত নেবার সময় বন্দীর বয়স, তার অতীত, বন্দিজীবনের কন্ডাক্ট বা আচরণ আর ডিসিপ্লিন বা নিয়মানুবর্তিতা বিশেষ গুরুত্ব পেয়ে থাকে এখানেই পুরুষোত্তম বাড়তি সুবিধে পেয়ে গেল।
আরও পড়ুন:

শারদীয়ার গল্প-১: পুরুষোত্তম/৫

শারদীয়ার গল্প-৩: আঁশ/৩

পুরুষোত্তম যখন যে সংশোধনাগারে গেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষ তার কেস-হিষ্ট্রি পড়ে, অবাক হয়ে মানুষটাকে অন্য চোখে দেখেছে। তাই প্রতিবার জেল বদলির সময় আগের সমস্ত জেল কর্তৃপক্ষ পুরুষোত্তম সম্পর্কে উচ্চ প্রশংসা করেছে। শুধু তাই নয়- প্রতিবার আলাদা করে তার সৎ মার্জিত সহানুভূতিশীল ব্যবহারের জন্য পুরুষোত্তমের বন্দিমুক্তির সুপারিশ পাঠিয়েছে। তখনও তার বরাদ্দ সময় হয়নি তবুও স্পেশাল রেকমেন্ডেশনস গিয়েছে। সেই সব পুরনো নথি সংযুক্ত করে দমদম জেল কর্তৃপক্ষ এবার বিশেষ সুপারিশ পাঠিয়েছিল।

খুব স্বাভাবিকভাবে ডাক্তার যোশির থেকে জেলার সাহেব সকলেই আশা করেছিলেন পুরুষোত্তম এর নাম বন্দিমুক্তি তালিকায় থাকবে। হলও তাই। বাইশ বছর বন্দী থেকে স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে মুক্তি পেল পুরুষোত্তম নরোত্তম ঝা।

কিন্তু সে যাবে কোথায়? বার্ণপুরে তার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়াবার মতো মনের জোর আর নেই। বেঁচে থাকার মত টাকা-পয়সা আছে কিন্তু সে স্বজনহীন। জেল খাটার পর দাদাদের সংসারে গিয়ে তাদের বিড়ম্বনা বাড়াতে চায় না পুরুষোত্তম। আবার এগিয়ে আসেন ডাক্তার যোশি। তার মানসিক হাসপাতালে কাজ করতে গিয়ে অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হল।
বয়স্ক মানুষ আছেন কিন্তু বেশিরভাগই মহিলা, নানা বয়সের নির্যাতিতা মহিলা— কমবয়সি মেয়েরা যাদের ওপর যৌন নির্যাতন হয়েছে। কিছু কম বয়সী ছেলেরা আছে, জীবনে ইঁদুর দৌড়ে হেরে গিয়ে যাদের আত্মবিশ্বাস তলানিতে পৌঁছে গিয়েছে ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন দেখতে ভুলে গিয়েছে। তাদের মধ্যেই সতী সাবিত্রী পদ্মাদের খুঁজে পেল পুরুষোত্তম।

এত মহিলার জীবন শেষ করে দিয়েছে যৌন নির্যাতন? ডাক্তার যোশির কাছে জানতে চাইলো পুরুষোত্তম। কেন কেন আজও এমন কোনও আইন নেই যা অপরাধীদের মনে এই ধরনের জঘন্য অপরাধ করার আগে এক মুহূর্তের জন্যেও শাস্তি পাবার ভয় দেখাতে পারে? ইনকাম ট্যাক্স ফাঁকি দিলে সাজা পাবার ভয় আছে। মোটা টাকার ক্ষতিপূরণের ভয়। খুন করলে বা খুনের চেষ্টা করলে শাস্তির ভয় আছে। ড্রাগ বেচতে গিয়ে ধরা পড়লে কঠিন সাজা। দেশদ্রোহিতার সাজা ভয়ংকর।

কিন্তু ধর্ষণের মামলার নিষ্পত্তিই হয় না, সাজা তো দূরের কথা। ডাক্তার যোশি জানিয়েছিলেন কারণটা খুব পরিষ্কার– ক্ষমতাশালী উচ্চবিত্ত পরিবারে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে না বা সে ধরনের ঘটনা ঘটলেও তা সাধারণ সামাজিক মেলামেশা হিসেবে ধরা হয়। ধর্ষণ হিসেবে গণ্য হয় না। যেখানে ধর্ষণের মারাত্মক প্রতিক্রিয়া হয় তারা হলেন খেটেখাওয়া নিম্নবিত্ত বা শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজের সাধারণ মানুষ. যাদের শারীরিক ক্ষতের সঙ্গে সঙ্গে পারিবারিক ও ব্যক্তিগত মর্যাদার নিপীড়ন-নির্যাতন-ধর্ষণও ঘটে যায়। ক্ষমতাশালী যারা, তাদের নিকট আত্মীয়দের খুন হয় অপহরণ হয়। তাই সেখানে সাজা আছে। কিন্তু ধর্ষণ খুব একটা ঘটে না। তাই না আছে প্রমাণ, না আছে সাজা।
আরও পড়ুন:

শারদীয়ার গল্প-২: আর্তি

লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৮: ইতালিয়ান নিওরিয়ালিজম এবং ডি সিকার বাইসাইকেল থিভস

পুরুষোত্তম জানতে চেয়েছিল তার মানে এই অবিচার এই প্রহসন চলতেই থাকবে?
—হ্যাঁ, যতদিন না সারা ভারতজুড়ে শিক্ষিত সাধারণ মধ্যবিত্ত মানুষ রাস্তায় নেমে এসে এর প্রতিবাদে সোচ্চার না হচ্ছে ততদিন এই ক্ষয়রোগের শেষ হবে না। হাতে মোমবাতি নিয়ে, মুখে কালো কাপড় বেঁধে শৌখিন প্রতিবাদে কোন লাভ নেই। হাজার হাজার পাবলিক লিটিগেশন কেস করতে হবে দেশজুড়ে। রাষ্ট্রপতির কাছে হাজার হাজার সাধারণ মানুষের আবেদন পৌঁছে দিতে হবে।

— কিন্তু কে বা কারা এ সব করবেন?

—জানি না হয়তো তোমার আমার মত কেউ। হয়তো আমাদের চেয়েও নিঃস্বার্থ জেদি কোন নির্ভীক পাগল!

সেই ডাক্তার যোশি হঠাৎ হার্ট অ্যাটাকে মারা গেলেন। পুরুষোত্তম তার জ্বলন্ত চিতার সামনে দাঁড়িয়ে প্রতিজ্ঞা করল। সেই নেবে এ দুরূহ দায়িত্ব।

এখন হিন্দমোটর স্টেশনের কাছে একটা ঘর নিয়ে ভাড়া থাকে। আরও কয়েক ঘর ভাড়াটে আছে। তারা পুরুষোত্তম সম্বন্ধে বিশেষ কিছু জানেনা । এটুকু জানে ঝা’জি নির্বিরোধী মানুষ। পারতপক্ষে কারো সঙ্গে কথা বলেন না। মেলামেশা তো দূরের কথা… হাতে একটা থলেতে তার জিনিসপত্র আর অন্য হাতে খাবার কৌটো নিয়ে সোম থেকে রবি সকালে বের হন সন্ধেবেলা ফেরেন। রাতে নিজেই সামান্য রান্না করে খাওয়া দাওয়া করেন। মৃদুস্বরে দু’বেলা হনুমান চালিশা পাঠ করেন।
ঝাজি এখনো বেঁচে আছেন শুধু তার প্রতিজ্ঞা সফল করার জন্যে। এ শহরের আনাচে-কানাচে তাকে দেখা যায়। এমনিতে কথা বলেন না। কিন্তু কেউ কোন বিষয়ে জানতে চাইলে তখন পুরুষোত্তম মুখ খোলেন । বুঝিয়ে বলেন কেন অত্যাচারিতা মেয়েদের অপমান বিড়ম্বনা এড়াতে থানায় থানায় মহিলা ইনভেস্টিগেটর কোর্টে মহিলা ল’ইয়ার এবং মহিলা জজ থাকা উচিত। অভিযোগ প্রমাণ হলে কেন ধর্ষণ এবং গণ ধর্ষণের সাজা কেবলমাত্র মৃত্যুদণ্ডই হওয়া উচিত। আইন করে ধর্ষণ মামলায় সর্বাধিক সময়সীমা বেঁধে দেওয়া উচিত।

ড্রাগ বা জঙ্গি দমনে যেমন কঠোর আইন আছে ধর্ষণের ক্ষেত্রে সেরকম তার চেয়েও কঠিন আইন প্রয়োজন। সিগারেট পানমশলা প্যাকেটে যেভাবে ভয়াবহ ক্যান্সারের সতর্কীকরণ প্রচার করা হয় ধর্ষণের ক্ষেত্রেও একই ভাবে মৃত্যুভয় প্রচার করা প্রয়োজন। গণধর্ষণে অভিযুক্তদের অভিযোগ প্রমাণ হলে তাদের সঙ্গে সঙ্গে তাদের পরিবারকেও সবরকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত করা উচিত। আর ধর্ষণের ক্ষেত্রেও দেশদ্রোহিতা বা জঙ্গি কার্যকলাপের মতোই মানবাধিকারের নামে আইনি দাক্ষিণ্যের সুযোগ বন্ধ হওয়া উচিত।

কারণ অমানুষের কোনও মানবাধিকার থাকতে পারে না। তেমনই ধর্ষণের অভিযোগ প্রমাণ হওয়ার পর কোনওভাবে দোষীর “বয়স কম” এই অজুহাতে জুভেনাইল কোর্টের বিশেষ সুযোগ যেন না পায়। কারণ তার অন্যায় দিয়েই সে প্রমাণ করেছে যে সে কোনভাবেই কৈশোর বয়সের অপরাধ করেনি। সে মানসিকভাবে একজন পূর্ণবয়স্ক অপরাধী এবং তার পূর্ণবয়স্কদের মতই শাস্তি পাবার যোগ্যতা আছে। আর এই কঠিন আইনকে হাতিয়ার করে যে বা যারা মিথ্যে অভিযোগ আনবে তাদের ক্ষেত্রেও সশ্রম কারাবাসের উল্লেখ থাকবে আইনে।

পুরুষোত্তমকে নিয়ে এরমধ্যে টিভিতে এক-দুবার প্রতিবেদন দেখিয়েছে– সেখানে পুরুষোত্তম তার নাম ঠিকানা কিছুই জানায়নি। সে জানিয়েছে, আমি ভারতের কোটি কোটি মানুষের একজন। নেতা-নেত্রীরা নানা বিষয়ে ব্যস্ত, এই জ্বলন্ত সমস্যার দিকে নজর দিতে পারেন না। তাই তিনি এ বিষয়ে জনসচেতনতার কাজ করছেন তার ব্যক্তিগত প্রচার-এর কোনো প্রয়োজন নেই। কিন্তু বিষয়ের গুরুত্ব প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি মিডিয়াতে কথা বলছেন। কিন্তু কী আশ্চর্য এত বছরেও তার মাত্র দশ হাজার স্বাক্ষরের লক্ষ্যে এখনও পুরুষোত্তম পৌঁছতে পারেনি। তাই এখনও শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা সপ্তাহের সাত দিন তাকে ছুটে বেড়াতে হয়। রেল স্টেশনে বাস টার্মিনালে মলে বা সিনেমা হল চত্বরে।সেদিন এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল।
আরও পড়ুন:

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৭: ফুটবলের শিল্পী: বিশ্বের দশজনের একজন

মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-১২: শতাব্দী প্রাচীন কোচবিহারের মদনমোহন ঠাকুর মহারাজাদের কূলদেবতা

বিকেলবেলা ময়দান চত্বরে কিছু হিন্দিভাষী মানুষকে পুরুষোত্তম হিন্দিতে বুঝিয়ে বলছিল কী লেখা আছে তার পোস্টারে। কেন সে সই সংগ্রহ করছে। হঠাৎ একজন পুলিশ অফিসার এসে তার সঙ্গে কথা বলতে চাইলেন। পুরুষোত্তম বুঝল তাকে হয়তো দেশের আইনকানুন নিয়ে কথা বলতে দেখে সরকার অসন্তুষ্ট হয়েছেন তাই এই পুলিশি সতর্কীকরণ। পুরুষোত্তম এসে জানতে চাইল তার বিরুদ্ধে অভিযোগটা ঠিক কি? কারণ সে সজ্ঞানে কোনও আইন ভাঙেনি। শান্তিপূর্ণভাবে এই সামাজিক অসুখের বিরুদ্ধে জনসচেতনতার কাজ করে চলেছে প্রায় পাঁচ -ছ’বছর ধরে। প্রস্তাব এসেছে কিন্তু কোন রাজনৈতিক দলের সাহায্য নেয়নি। কারণ এটা তার একার সংগ্রাম। তবু যদি থানায় যেতে হয় তিনি যাবেন।

অফিসার সবটা মন দিয়ে শুনলেন, তারপর জানালেন থানায় নয় অফিসার পুরুষোত্তমকে রাজভবনে নিয়ে যেতে এসেছেন। রাজভবন সেক্রেটারিয়েট থেকে তাকে পাঠানো হয়েছে। তারা টেলিভিশনের প্রতিবেদন দেখেই সব জেনেছেন। রাজভবন থেকেই এ বিষয়ে সব রকমের সাহায্য করা হবে।

পুরুষোত্তম কৃতজ্ঞতা জানিয়ে সবিনয়ে বলে, স্যার রাজভবন হল গণতন্ত্রের মন্দির সেখানে পা রাখার যোগ্যতা আমার নেই। যেদিন রাস্তা থেকে দশ হাজার সই পাব তার পরদিন নিজে দিল্লি গিয়ে রাষ্ট্রপতি ভবনে চিঠি জমা করে আসবো। আর যেদিন এমন কঠিন আইন পাশ হবে যে ধর্ষণ নয়, ঘুষ নিতেও বুক কাঁপবে, সেদিন রাজভবনের বাইরে থেকে গিয়ে একটা প্রণাম করে আসবো।’

অফিসার আর একটা কথা না বলে মাথার টুপিটা খুলে টেবিলে রাখা আবেদনে সই করে দিলেন। তারপর মাথায় টুপি পরে স্যালুট করলেন পুরুষোত্তমকে। জনতা করতালি দিতে লাগলো, তারাও লাইন করে এসে সই দিচ্ছে। গঙ্গার দিকে দ্বিতীয় হুগলি সেতুটাকে রাঙিয়ে সূর্য ডুবছে। কেউ দেখছে না পুরুষোত্তমের দু চোখ বেয়ে জল এসেছে।
 

সমাপ্ত

* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।

Skip to content