সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


অলঙ্করণ: লেখক।

ষোলোকলা পূর্ণ হল নাকি? চাঁদের হিসেবে প্রথমা, দ্বিতীয়া, কী তৃতীয়া চতুর্থী… চারদিকে ইভেন্টের ছড়াছড়ি। হাতে সময় কম, মণ্ডপে মণ্ডপে দৌড়োদৌড়ি, প্রতি ঘণ্টায় আপডেটস। দেখে ফেলা ঠাকুরের সংখ্যার গ্রাফ শেয়ার সূচকের মতো উঠছে, নামছে, যন্ত্রে যেমন ফুটে ওঠে হৃদাঘাতের মানচিত্র। সব পথ বুঝি দুটো জায়গায় শেষ হবে। হয় পুজো-মণ্ডপে কিংবা খাবারের সামনে। ষোলোই অক্টোবর আমরা ফেলে এলাম তো বিশ্ব খাদ্য দিবস।
খাই খাই না করে আহারে যোগ দিতে বলা হয়েছে, আবোল-তাবোল খাওয়ার কতো বিচিত্র বাহার, সুকুমার জানতেন কি, আজকাল লোক ক্রাশ খায়, ভাও খায়, ল্যাদ খায়, কেস খায়, ছুটি খায় এমনকী চাকরি খায়!! সুবিধাবাদী তার থিওরি খাওয়াতে চায় সামনের কাঁচা মাথাকে। মাথা খেয়ে দিব্যি খেয়েও যখন সুবিধা হয় না, তখন হাওয়া খাওয়া যায়। কিন্তু হাওয়া নিজের উদ্যোগে খেতে যদিও বা ভালো লাগে, নিমন্ত্রণ করে হাওয়া খাওয়ানোর চল এখনও ততটা হয়নি মনে হয়। জল তো পান না করে খাওয়া যায়, এমনকী পান-ও খাওয়া যায়। এতেও মন না ভরলে পান্তুয়া খেতে কে বারণ করেছে!! সেইসব “জ্যাঠা ছেলে বিড়ি খায়”—এর যুগ পার হয়ে এখন দিনকাল ভার্চুয়াল।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৯: হিমসিম খাও কেন এসো বোসো আহা রে! / খাওয়াব এমন খাওয়া এগ কয় যাহারে

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৮: সুন্দরবনে বিচিত্র অবয়বের দেবতা জ্বরাসুর

ভার্চুয়ালি যা খাওয়ানো যায়, যেমন স্তোক, কিংবা “দাদা আমি এখন দমদমে, পৌঁছতে পাক্কা একঘণ্টা, আপনি ততক্ষণ হাওয়া খেয়ে নিন”… এ সব মহাভোজ সামনে বসিয়ে পাত পেড়ে খাওয়ানো প্রায় অসম্ভব!! কেউ ভুক্তভোগী, কেউ “খোর”, কেউ বা কথা থেকে ছবি, বই থেকে ঝগড়া… গেলে। গিলে খাওয়া, চুষে খাওয়া, চিবিয়ে খাওয়া যে কেবল ভাত-মুড়ি-রোল-চাউমিনেই হতে হবে এমন কোনও কথাই নেই। তারস্বরে কান-মাথা খেয়ে নেওয়া যায়।
আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, পর্ব-১৪: মধুপুর ধাম, বাণেশ্বর মন্দির ও ধলুয়াবাড়ি সিদ্ধ নাথ শিবমন্দির

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১১: কার মন ভোলাতে এলে তুমি আজ…

হরিমটর, কচুপোড়া, ঘণ্টা, গাঁজা, ধোঁয়া কী আগুন… নানা খাওয়া শেষ করে এখন ট্রামে বাসে পুজো প্যাণ্ডেলে কিংবা বসের ঠেলা খাওয়া ধর্ম। যারা খাবি খায়, খিস্তি কিংবা আরাম খায়, আদর কিংবা গালি খায়, বকা খায়, “ধরা খায়” কিংবা ধাক্কা খেয়ে, কলা খেয়ে, ঠোক্কর খেয়ে খেয়ে ঠেকে শেখে, তাদের খাওয়ার পদে, কাজের ক্ষিদে, চোখের ক্ষিদে, মনের ক্ষিধে পার করে পদে পদেই যদি ঝলসানো পূর্ণিমার চাঁদের বারবিকিউ কিংবা “ঋণং কৃত্বা ঘৃতং পিবেত্” না থাকেও বা, এমন বিচিত্র সর্বগ্রাসী পাষাণ ক্ষুধার সুধাসংকেত আর ইনডেক্সে মাপার মতো হিসাববিদ্যা গুলে খাওয়া বিদ্বানের সিলেবাস, বুঝি এ জগতে আর পরস্পরের দেখা পেল না, আহা-রে!!
* হুঁকোমুখোর চিত্রকলা : লেখক: ড. অভিষেক ঘোষ (Abhishek Ghosh) সহকারী অধ্যাপক, বাগনান কলেজ। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগ থেকে স্নাতকস্তরে স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত। স্নাতকোত্তরের পর ইউজিসি নেট জুনিয়র এবং সিনিয়র রিসার্চ ফেলোশিপ পেয়ে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃত বিভাগে সাড়ে তিন বছর পূর্ণসময়ের গবেষক হিসাবে যুক্ত ছিলেন। সাম্বপুরাণের সূর্য-সৌরধর্ম নিয়ে গবেষণা করে পিএইচ. ডি ডিগ্রি লাভ করেন। আগ্রহের বিষয় ভারতবিদ্যা, পুরাণসাহিত্য, সৌরধর্ম, অভিলেখ, লিপিবিদ্যা, প্রাচ্যদর্শন, সাহিত্যতত্ত্ব, চিত্রকলা, বাংলার ধ্রুপদী ও আধুনিক সাহিত্যসম্ভার। মৌলিক রসসিক্ত লেখালেখি মূলত: ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে। গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়ে চলেছে বিভিন্ন জার্নাল ও সম্পাদিত গ্রন্থে। সাম্প্রতিক অতীতে ডিজিটাল আর্ট প্রদর্শিত হয়েছে আর্ট গ্যালারিতে, বিদেশেও নির্বাচিত হয়েছেন অনলাইন চিত্রপ্রদর্শনীতে। ফেসবুক পেজ, ইন্সটাগ্রামের মাধ্যমে নিয়মিত দর্শকের কাছে পৌঁছে দেন নিজের চিত্রকলা। এখানে একসঙ্গে হাতে তুলে নিয়েছেন কলম ও তুলি। লিখছেন রম্যরচনা, অলংকরণ করছেন একইসঙ্গে।

Skip to content