সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


লেমিং।

জীববিজ্ঞানীদের মতে, ইঁদুর গোত্রীয় এক খুদে প্রাণী প্রতি চার বছর অন্তর, দলে দলে সমুদ্র বা নদী জলে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করে। উত্তর-পূর্ব আমেরিকা, প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলবর্তী অঞ্চল এবং আলাস্কার তৃণভূমিতে বসবাসকারী ‘নরওয়েজিয়ান লেমিং’ নামক এই প্রাণীগুলির জীবনযাত্রা রীতিমতো বৈচিত্রপূর্ণ।
একটি সদ্যজাত শিশুর ওজন হয় মাত্র চার গ্রাম। জন্মের ৩১ দিনের মাথায় এদের শৈশব-কৈশোর শেষ হয়ে এরা যৌবনপ্রাপ্ত হয়। তখন চলে এদের মনের মানুষ খোঁজার পালা। উপযুক্ত সঙ্গী বা সঙ্গিনী পেলে এরা প্রজননের লিপ্ত হয়। মিলনের কুড়ি দিন পর ভূমিষ্ঠ হয় জুনিয়র লেমিং। শিশু লেমিংয়ের জন্মের ১৯ দিনের মাথায় মা লেমিং আবার গর্ভবতী হয়। ফলে আন্দাজ করে নেওয়া খুব সহজ, কীভাবে তিন থেকে চার বছরের মধ্যে লেমিংয়ের ছানাপোনায় ভরে যায় তাদের বাসস্থান।
আরও পড়ুন:

শব্দদূষণ প্রতিরোধ করবে এই গ্রিন মাফলার, জানতেন?

মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-৭: ফলনাপুর মদনমোহন মন্দির কোচ স্থাপত্যের দ্বিতল পঞ্চরত্ন মন্দিরের একমাত্র নিদর্শন

এই অত্যধিক দ্রুতগতির বংশবিস্তারের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে তাদের আত্মহত্যার রহস্য। ঝড়ের গতিতে বংশ বিস্তারের ফলে লেমিংয়ের কলোনিতে একটা সময়ের পর (সাধারণত তিন থেকে চার বছর) সেখানে খাদ্যাভাব ও স্থানাভাব দেখা দিতে শুরু করে। ততদিনে পূর্ণবয়স্ক লেমিংয়ের মধ্যে দেখা দিতে শুরু করেছে বার্ধক্য। ফলে শুরু হয় জুনিয়ার লেমিংদের জায়গা ছেড়ে দেওয়ার পালা।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৪: সুন্দরবনের মৎস্যদেবতা মাকাল

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-৫: ‘আপনজন’ Chronicles

রীতিমতো সাংগঠনিকভাবে এরা নিজেদের মধ্যে কিছু একটা আলোচনা পর্ব সেরে নেয়। তারপর শুরু হয় এদের শেষ যাত্রার প্রস্তুতি। সাজো সাজো রবে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা লেমিংরা যাত্রা শুরু করে মৃত্যুর পথে। তারা দলবেঁধে ছোট ছোট পায়ে বেরিয়ে পড়ে কাছাকাছি কোনও নদী বা সমুদ্রের সন্ধানে।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৪: মুহূর্ত মিলায়ে যায় তবু ইচ্ছা করে, আপন স্বাক্ষর রবে যুগে যুগান্তরে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৩: কোন কাননের ফুল ‘শ্যামলী’

এই সময় তাদের চলার গতিবেগ হয় ঘণ্টায় প্রায় ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার। ওই অঞ্চলে তখন রাজপথ থেকে গলি প্রত্যেকটা রাস্তাই প্রায় লেমিংয়ে পরিপূর্ণ থাকে। সহৃদয় মানুষরা তাদের গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখে। অবশেষে নদী বা সমুদ্রের কাছে এলে, তারা ওই জলে দেয় মরণঝাঁপ। এমনকি, উঁচু স্থান থেকেও সমুদ্র বা নদী জলে ঝাঁপ দিয়ে তারা মৃত্যুবরণ করে। এই ঘটনা প্রাণিজগতের একটি বিরলতম ঘটনা।
* ড. উৎপল অধিকারী, সহ-শিক্ষক, আঝাপুর হাই স্কুল, আঝাপুর, জামালপুর, পূর্ব বর্ধমান।

Skip to content