সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


চাঁদের মাটিতে অনুসন্ধানে ব্যস্ত প্রজ্ঞান। ছবি: ইসরো।

চন্দ্রযান-৩ চাঁদে অবতরণের পরে এই প্রথম বার বাধা পেল। একটি বড়সড় গর্তের সামনে চলে এসেছিল রোভার প্রজ্ঞান। ইসরো সূত্রে খবর, গর্তটি চওড়ায় ছিল চার মিটার। তবে প্রজ্ঞান সফল ভাবেই গর্তটি পাশ কাটাতে পেরেছে।

ইসরো এ নিয়ে একটি টুইট করে। সেই টুইটে তারা জানিয়েছে, প্রজ্ঞান যেখানে ছিল তার ছেয়ে তিন মিটার দূরে ওই গর্তটি ছিল। তৎক্ষণাৎ রোভারটিকে সেখান থেকে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এর জেরে সব ধরনের বিপদ এড়ানো গিয়েছে।
চাঁদের দক্ষিণ মেরুর যে জায়গায় চন্দ্রযান-৩ নেমেছে, সেখানে এর আগে বিশ্বের কোনও দেশই তাদের মহাকাশযান অবতরণ করতে সক্ষম হয়নি। তাই এত দিন চাঁদের দক্ষিণ মেরু অনাবিষ্কৃতই থেকে গিয়েছিল। ইসরো জানিয়েছে, ওই সব জায়গায় অনেক পাথর, গর্ত, ঢিবি রয়েছে। তার মধ্যেই তৃতীয় চন্দ্রযানের ল্যান্ডার বিক্রম তার ক্যামেরার সাহায্যে নিরাপদ জায়গা খুঁজে নিয়ে অবতরণ করেছে। গত ২৩ অগস্ট চন্দ্রযান অবতরণের পরই ইতিহাসে পাতায় নাম লিখে ফেলে ভারত।
আরও পড়ুন:

কম বয়সেই ডায়াবেটিসের আক্রান্ত? কাঠবাদামের মিলতে পারে সমাধান

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৪: গলায় মাছের কাঁটা ফুটলে ওষুধ খেলে গলে যায়?

প্রজ্ঞান এই মুহূর্তে চাঁদের মাটিতে জোরকদমে অনুসন্ধান চালাচ্ছে। রোভার প্রজ্ঞানের ছ’টি চাকা রয়েছে। প্রজ্ঞানের গতিবেগ প্রতি সেকেন্ডে এক সেন্টিমিটার। এই গতি নিয়েই চাঁদের মাটিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে রোভার। প্রজ্ঞানে বেশ কয়েকটি উচ্চ প্রযুক্তির দিকনির্দেশক স্বয়ংক্রিয় ক্যামেরা রয়েছে। রোভার প্রজ্ঞানকে আংশিক ভাবে বেঙ্গালুরুর ইসরো দফতর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। এর আগে রবিবারও ইসরো একটি টুইট করে। সেখানে তারা জানায়, রোভার চাঁদের মাটির তাপমাত্রা মেপেছে। বোঝার চেষ্টা করা হচ্ছে দক্ষিণ মেরুর উষ্ণতাও। চাঁদের গভীরে এখন হিমের পরশ’, বাইরে গনগনে তাপ, উষ্ণতার গ্রাফ পাঠাল বিক্রম।
আরও পড়ুন:

১৭ বছর পর আবার একসঙ্গে অমিতাভ-শাহরুখ? বাদশার মন্তব্যে শুরু জল্পনা

মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-৪: ধ্বংসের মুখে দাঁড়িয়ে কোচস্থাপত্যের অন্যতম কীর্তি দেওতাপাড়া শিব মন্দির

ইসরোর দাবি, এই প্রথম চাঁদের দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রার এতটা স্পষ্ট একটি গ্রাফ পাওয়া গেল। বিক্রমের পাঠানো গ্রাফ অনুযায়ী, দক্ষিণ মেরুতে দিনের বেলায় চাঁদের পৃষ্ঠে প্রায় ৫০ ডিগ্রির সমান তাপমাত্রা। চাঁদের কুমেরুতে যখন রাত নামে তখন চন্দ্রপৃষ্ঠে মাইনাস ৩০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত নামে তাপমাত্রা।

তবে সূর্য আকাশে থাকলে এই অংশের মাত্র ৩০ মিলিমিটার গভীরে গেলেও তাপমাত্রা থাকে ওই ৩০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের ঘরেই থাকে। বিক্রমের পাঠানো গ্রাফ এও বলছে, আরও নীচে অর্থাৎ ৭০ মিলিমিটার গভীরে চাঁদের তাপমাত্রা হিমাঙ্ক ছুঁয়ে ফেলে। আরও ১০ মিলিমিটার গভীরে গেলে মাইনাস ১০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেড হয় তাপমাত্রা। চাঁদের মাটির নীচে মাত্র ২০ মিলিমিটার গভীরে পৌঁছলেই বাংলার শরৎকালের মতো তাপমাত্রা। সেখানে ৩০ থেকে ৩৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের মধ্যে ওঠানামা করে পারদ।
রোভার প্রজ্ঞান ধীরে ধীরে চাঁদের মাটিতে এগিয়ে চলেছে। শুক্রবার সকাল পর্যন্ত প্রজ্ঞান ৮ মিটার পথ অতিক্রম করেছে। বিক্রমের ভিতরে থাকা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ যন্ত্রও কাজ শুরু করে দিয়েছে। এই সব যন্ত্রের মধ্যে অন্যতম হল চাস্তে। এই যন্ত্রের চাঁদের মাটির গভীরে ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত পৌঁছনোর ক্ষমতা আছে। পাশাপাশি চাঁদের মাটির উপরের এবং গভীরের তাপমাত্রাও মাপবে চাস্তে। ইতিমধ্যেই চাঁদের মাটির ৮০ মিলিমিটার গভীরে পৌঁছে গিয়েছে যন্ত্রটি।

ইসরো জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত চাঁদে তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ীই সব কর্মকাণ্ড চলছে। সিস্টেম ঠিক মতো কাজ করছে। প্রজ্ঞান এবং বিক্রম ১৪ দিন অর্থাৎ এক চন্দ্রদিবস পর্যন্ত কাজ করবে চাঁদে। সূর্যের আলোর শক্তিতেই প্রজ্ঞান এবং বিক্রম কাজ করছে। সূর্য ডুবে গেলে চন্দ্রযান-৩ তার কর্মক্ষমতাও হারাবে।

Skip to content