শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


শুরু হল পথ চলা। ছবি: সংগৃহীত।

একদিন, অনেক মানসিক প্রস্তুতির পর সেই গোপন কথাটি বলেই ফেলেন আশাকে। হয়তো এতদিনে আশার মনেও পঞ্চমের প্রতি কোনও এক দূর্বলতা জন্ম নিয়েছিল। তবু, তিনি পত্রপাঠ নাকচ করে দেন পঞ্চমের এই প্রস্তাব। পঞ্চম অত্যন্ত কাছের এবং নির্ভরযোগ্য একজন বন্ধু, যাকে প্রায় সব কিছুই নির্দ্বিধায় ব্যক্ত করা যায়। তাই বলে বিয়ে? কোথাও একটু ‘কিন্তু-বোধ’ কাজ করে আশার মনে। কিন্তু পঞ্চম তো হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন। তাই সুররচনা করার পাশাপাশি সময় অসময়ে চলতে থাকে আশাকে রাজি করানোর মতো কঠিন কাজটি।
দিন যায়, দিন আসে। কিন্তু পঞ্চমের নিরলস প্রচেষ্টার বিন্দুমাত্র ঘাটতি আশার চোখে পড়ে না। তিনি নিজেও বোধহয় এ বার ভাবতে শুরু করেন পঞ্চমের প্রস্তাব নিয়ে। অবশেষে আসে সেই বহুআকাঙ্খিত দিনটি। অনেক সাধ্যসাধনার পর পাওয়া যায় আশার সম্মতি। আনন্দের বাঁধ ভাঙ্গে পঞ্চমের। কিন্তু শুধু আশার সম্মতি পেলেই তো আর চলবে না। তাঁর মা, অর্থাৎ মীরা দেবীর সম্মতি না পেলে বিয়ে অবধি পঞ্চম-আশা পৌঁছবেন কী ভাবে? এমনিতেই পঞ্চমের প্রথম বিয়ে তাঁর নিজের পছন্দের পাত্রীর সঙ্গেই হয়েছিল। সেই বিয়ের পরিণতি তাঁকে তো বটেই, তাঁর বাবা এবং মাকেও যথেষ্টই ব্যাথিত করেছিল। তাই, আজ শচীন কর্তার অনুপস্থিতে মা মীরা দেব বর্মণকে রাজি করানোর কাজটি সেই মুহূর্তে সত্যিই অসম্ভব বলে মনে হয়েছিল পঞ্চমের।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২৫: পঞ্চম মনস্থির করেন, যাই হয়ে যাক না কেন—এ বার তিনি আশাকে প্রেম নিবেদন করবেনই

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-8: চলতি কা নাম কিশোর

সে এক অসহনীয় পরিস্থিতি। কিন্তু কথা তো এগিয়ে নিয়ে যেতেই হবে। তাই একদিন দুরু দুরু বুকে মায়ের সামনে এসে দাড়ান পঞ্চম। মনে কিছুটা সাহস সঞ্চয় করে মায়ের কাছে উগরে দেন সব কিছু। ছেলের সব কথা স্থির হয়ে শোনেন মীরাদেবী। আশার অতীত জীবনের কিছু ঘটনার ব্যাপারে মীরা আগে থেকেই অবগত ছিলেন। তিনি জানতেন গণপত রাও ভোঁসলের সঙ্গে আশার পূর্বের বিবাহের কথাটি। পরবর্তীকালে তাঁদের বিচ্ছেদের বিষয়টিও মীরাদেবীর অজানা ছিল না। যদিও এই বিচ্ছেদ ঘটে অনেক বছর আগে। সঠিক ভাবে বলতে গেলে ১৯৬০ সালে।

আশার তিন সন্তানের ব্যাপারেও মীরাদেবী জানতেন। তাই তিনি পঞ্চমের এহেন প্রস্তাবে স্বাভাবিক কারণেই বেঁকে বসেন। তিনি পরিষ্কার পঞ্চমকে জানিয়ে দেন, তাঁর এই বিয়েতে ঘোরতর আপত্তি রয়েছে। তাঁর বিন্দুমাত্র সম্মতি নেই এই প্রস্তাবে। শুনে পঞ্চমের তো মাথায় বাজ। তাহলে কি তাঁর এই স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে? মা কি কিছুতেই মেনে নেবেন না? ভেবে কুল পান না পঞ্চম।
আরও পড়ুন:

কলকাতার পথ-হেঁশেল: উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া—প্রাণের আশ-প্যান্থেরাস

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮: নহবতে সহধর্মিণী সারদা

তবে পঞ্চম চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকেন। আশার সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে গেলে যে মায়ের সম্মতি এবং আশীর্বাদ দুইয়েরই সমান প্রয়োজন। তাই মীরাদেবীকে বোঝানোর ক্ষেত্রে কোনও খামতি রাখছেন না। যত ভাবে সম্ভব বোঝাতে থাকেন। এমনকি এও বলেন যে, আশা তাঁর জীবনে এলে তিনি আরও বেশি মাত্রায় সাফল্য লাভ করবেন। কারণ দু’জনেরই পথের দিশা একই দিকে। দু’জনেরই সুর এবং সঙ্গীত ধ্যান-জ্ঞান। দু’জনেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত। কর্মক্ষেত্রে যৌথভাবে এতদিনে প্রচুর সাফল্য এসেছে দু’জনের। পারস্পরিক বোঝাপড়াও অপরিসীম। তাই মীরাদেবী যেন সব কিছু বিচার করে মেনে নেন তাঁর প্রস্তাব। দু’জনের একসঙ্গে পথ চলার ইচ্ছেকে যেন সম্মতি দেন তিনি।
আরও পড়ুন:

মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-৩: কোচ কামতেশ্বরী মন্দিরের স্থাপত্য এক অনন্যসাধারণ মিশ্রশৈলীর উদাহরণ

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৪: গলায় মাছের কাঁটা ফুটলে ওষুধ খেলে গলে যায়?

হাজার হলেও মায়ের মন। পুত্রের এহেন আকুতি তো কোনও এক সময় সেটিকে বিগলিত করবেই। হলও তাই। মীরাদেবী সম্মতি দিলেন পঞ্চমকে। তার ফলস্বরূপ বিবাহসুত্রে আবদ্ধ হলেন পঞ্চম-আশা। বিয়ের দিন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চলচ্চিত্র এবং সঙ্গীত জগতের তৎকালীন তারকারা। নবদম্পতির শুরু হল বৈবাহিক জীবনের দ্বিতীয় অধ্যায়। তবু শোনা যায়, মৌখিকভাবে সম্মতি দিলেও কোথাও যেন মীরাদেবী একমাত্র পুত্রের এই বিয়ে মন থেকে পুরোপুরি মেনে নিতে পারেননি। কোথাও যেন এক টুকরো আপত্তি-অভিমান জমাট বেধে রয়ে গিয়েছিল তাঁর মনের অন্তরালে। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত।—চলবে।
* পঞ্চমে মেলোডি (R D Burman): সৌম্য ভৌমিক, (Shoummo Bhoumik) সঙ্গীত শিল্পী।

Skip to content