বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

আপাত নিরীহ একটি সব্জি। অথচ তাকে আমরা খাদ্য তালিকায় প্রায় ভিলেন বানিয়ে ফেলেছি। হ্যাঁ, আমি আলুর কথাই বলছি। আলু খেলে মোটা হবে। অকালে ব্লাড সুগার ধরবে। বাতের ব্যথা বাড়বে। আর ব্লাড সুগার হলে তো আলু খাওয়া দূরে থাক, আলুর দিকে তাকানোই না কি নিষেধ! অথচ পুষ্টিবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, আলুর গুণপনার শেষ নেই।

আলু কার্বোহাইড্রেট প্রধান খাদ্য। দেহের প্রয়োজনীয় শক্তির ৬০-৭০% আসে এই কার্বোহাইড্রেট থেকেই। ১০০ গ্রাম আলুতে থাকে প্রায় ২০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, যার অধিকাংশই স্টার্চ বা শ্বেতসার, যা প্রায় ১৭.৫%। এছাড়া ০.৩ শতাংশ থাকে গ্লুকোজ–ফ্রুকটোজ, ০.৫ গ্রাম সুক্রোজ বা জাইলোজ এবং ০.৭১ গ্রাম সেলুলোজ বা ফাইবার। কার্বোহাইড্রেট ছাড়াও ১০০ গ্রাম আলুতে ফ্যাট থাকে মাত্র ১০০ মিলিগ্রাম, প্রোটিন ২ গ্রাম, লোহা ০.৭ মিলিগ্রাম, ক্যালশিয়াম ১০ মিলিগ্রাম। এ ছাড়া ভিটামিন বি১, বি ২, বি ৩, ভিটামিন সি ইত্যাদি। টোটাল নাইট্রোজেন থাকে ৫৪.৭ শতাংশ।
এ ছাড়া আ্যশ, জৈব অ্যাসিড, গ্লাইকো আলকালয়েডস, সামান্য পরিমাণ ফেনোলিক কম্পাউন্ড, সোডিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদিও থাকে। ১০০ গ্রাম আলু থেকে ক্যালরি মেলে মাত্র ৮০। তালিকা পড়েই বোঝা যাচ্ছে যে আলু ভীষণ পুষ্টিকর খাদ্য। কার্বোহাইড্রেট প্রধান খাদ্য হলেও চাল গম সুজি থেকে আলু পুষ্টি মূল্যের বিচারে কয়েক কদম এগিয়ে আছে। কারণ এর টোটাল নাইট্রোজেনে রয়েছে শরীরের পক্ষে অপরিহার্য নানা ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড, গ্লাইকো অ্যালকালয়েডসে রয়েছে নানা ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আ্যশে রয়েছে সোডিয়াম পটাশিয়াম-সহ নানা ধরনের খনিজ লবণ।

এবার একটু জেনে নিই, কাকে বলে ডায়াবেটিস বা হাই ব্লাড সুগার। আমাদের দেহের অগ্ন্যাশয় বা প্যানক্রিয়াস গ্রন্থির এন্ডোক্রিন বা অন্তক্ষরা অংশ থেকে ইনসুলিন নামক এক ধরনের হরমোন ক্ষরিত হয়। এর কাজ হল আমাদের রক্ত স্রোতে বয়ে চলা গ্লুকোজের হারটাকে একটা নির্দিষ্ট সীমার মধ্যে রাখা, যা কমবেশি একশো মিলি লিটার রক্তে ৮০ থেকে ১২০ মিলি গ্রামের মধ্যে। যদি কোনও কারণে দেহে ইনসুলিনের ঘাটতি পরে অর্থাৎ প্যানক্রিয়াস থেকে কম ইনসুলিন ক্ষরণ হয় বা একেবারেই হয় না বা ক্ষরণ হবার পর তা নিষ্ক্রিয় থাকে, তখন রক্তে গ্লুকোজের হার অনেকটা বেড়ে যায়। দেখা দেয় নানা জটিলতা। এই অবস্থাটির নামই হল ডায়াবেটিস।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৮: সাইনাস নাকি কখনওই সারে না?

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩: আত্মারামে কুটো বাঁধা আছে

 

সত্যিই কি আলু খেলে ডায়াবেটিস বেড়ে যায়?

এবার আসল কথায় আসি। আলু খেলে কি সত্যিই ডায়াবেটিস বাড়ে? না বাড়ে না, কখনওই বাড়ে না, যদি প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে আলু খাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম আলুতে তো মাত্র ২০ গ্রাম কার্বোহাইডেট থাকে, যার অধিকাংশই স্টার্চ বা শ্বেতসার। গ্লুকোজ থাকে নামমাত্র। শুধু আলু কেন, আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান জানাচ্ছে, ডায়াবেটিসে সবই খাওয়া যায়, তবে একটু সমঝে এবং অবশ্যই আপনার ডাক্তারবাবুর পরামর্শে। আলু কার্বোহাইড্রেট প্রধান খাদ্য হলেও নানা পুষ্টিগুণে ভরা।

কাজেই ডায়েট থেকে আলুকে পুরোপুরি ছেঁটে ফেলবেন কেন! আপনার সুগার লেভেল, বয়স, ওজন, উচ্চতা, লাইফস্টাইল ইত্যাদি নানা বিষয়ে মাথায় রেখে আপনার ডাক্তারবাবুই ঠিক করে দেবেন যে প্রতিদিন আপনি কতটা আলু খেতে পারবেন। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স অর্থাৎ কত দ্রুত রক্তের সুগার লেভেল বাড়ছে, সেটা দেখে নিলে আরও সুবিধা হবে। বেশি তেল ঝাল ব্যবহার করে আলু রাধবেন না। ডায়াবেটিক রোগীরা রোজ ২-১ টুকরো করে আলু খাবেন সেদ্ধ করে, ঝোলে বা তরকারিতে, কিংবা ভাপিয়ে— ঝালে ঝোলে অম্বলে নয়।

আরও পড়ুন:

রিভিউ: ‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’—মনোজ বাজপেয়ী একাই একশো

লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৭: গোদারের ব্রেথলেস ও প্যারিসের শঁসেলিজে

ইদানিং ডায়াবেটিসে রাঙালু খাবার সুপারিশ করছেন পুষ্টিবিজ্ঞানীরা। এটাও কিন্তু এক ধরনের আলু এবং সাধারন আলু থেকে অনেক বেশি পুষ্টিকর। এতে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ভিটামিন, মিনারেলস বেশি পরিমাণে থাকে। কোলেস্টেরল থাকে না, ফ্যাটও থাকে নামমাত্র। ডায়াবেটিক রোগীদের রাঙালু বেটার চয়েস দেন সাধারণ আলু। কারণ রাঙালু হল কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট। গ্লাইসেমিক ইনডেক্স সাধারণ আলুর চেয়ে কম হও
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৬: মজল আঁখি মজেছে মন, ইমোজি তোদের ডাকল যখন

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২৩: গোবিন্দর হেঁয়ালি

রাঙালু টাইপ টু ডায়াবেটিকদের অ্যাডিপোনেকটিন নামক এক ধরনের প্রোটিন জাতীয় হরমোনের ক্ষরণ বাড়িয়ে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। এছাড়া রাঙালুর অ্যামাইলোজ জাতীয় স্টার্চ এবং ম্যাগনেসিয়াম লবণ সুগার কমাতে সাহায্য করে। আলুর মতো রাঙালুও প্রেসার কমাতে, অন্ত্রনালীর প্রদাহে, অ্যানিমিয়া ও ক্যানসার এবং হার্টের অসুখ প্রতিরোধে, এনার্জি লেভেল বাড়াতে, ডিপ্রেশন কাটাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করে।

কাজেই ব্লাড সুগারের রোগীরা এখন থেকে রোজই দু-এক টুকরো করে আলু খেতে পারেন। বেশি খেয়ে ফেললে সেদিন অন্য কার্বোহাইডেট কম পরিমাণে খাবেন। তাহলেই ব্যালেন্স হয়ে যাবে।
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।

Skip to content