তেঁতুলের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট গুণ মস্তিষ্কের কোষকে সচল রাখতে সাহায্য করে। ছবি: সংগৃহীত
আমাদের বাঙালিদের ঘরে ঘরে খাওয়া-দাওয়ার শেষ পাতে চাটনি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি পদ। টোম্যাটোর চাটনি বা কাঁচা আমের টক তো সারা বছর রয়েছে। তবে তেঁতুলের টক কিন্তু বর্ষা ঋতুতে এদেরকে টেক্কা দেয়ার ক্ষমতা রাখে। বর্ষার রানি ইলিশের সঙ্গে তেঁতুলের টক, মৌরোলা-তেঁতুল টক, চিংড়ি- তেঁতুল টক অথবা সব্জির সঙ্গে তেঁতুলের টক যেন ভজন রসিক বাঙালির শেষ পাতের অমৃত।
অন্ধ্রপ্রদেশ ও তামিলনাড়ু-সহ দক্ষিণের নানা রাজ্যের রান্নায় (যেমন: সাম্বার, রাসাম) তেঁতুলের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। শুধু ভারতের কথাই বা কেন বলব? সিঙ্গাপুর, মায়ানমার, তাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া-সহ এশিয়ার প্রায় অনেক দেশেই তেঁতুল এবং চিনির মাধ্যমে টক-মিষ্টি স্বাদের বিভিন্ন মাছের পদ রান্নার প্রচলন রয়েছে। আর খাবারের কথা যখন উঠলই তখন ফুচকার তেঁতুল জল কি আর ভোলা যায়?
পৌরাণিক কাহিনি
বৃন্দাবনে পবিত্রস্থান তেঁতুলতলাকে নিয়ে একটি গল্পকথা আছে। একদিন যখন শ্রীরাধা শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে মিলনের উদ্দেশ্যে বেরোচ্ছিলেন তখন হঠাৎই একটা পাকা তেঁতুলের ওপর পা পড়ে পড়ার ফলে শক্ত খোলার তাঁর পা কেটে যায়। তখন রাগান্বিত শ্রীরাধিকা তেতুল গাছকে অভিশাপ দেন যে, কোনদিনও তেতুলের ফল পাকবে না এবং অপক্ক অবস্থাতেই ফল গাছ থেকে ঝরে পড়বে। উত্তর ভারতের মানুষের বিশ্বাস যে তেঁতুল তলায় শ্রীকৃষ্ণের মিলন সম্পন্ন হয়েছিল এবং এই কারণবশতই অঘ্রান মাসে তেঁতুল তলায় আনন্দ উৎসবের ব্যবস্থা করেন উত্তর প্রদেশের লোকজন। তেঁতুল গাছকে কেন্দ্র করে শ্রীরামচন্দ্রকে নিয়ে একটি লোককথা আছে। কৈকেয়ীর ইচ্ছানুসারে রাজা দশরথের আদেশ কে পালন করতে শ্রীরামচন্দ্র পত্নী সীতা ও ভাই লক্ষণকে নিয়ে যখন বনবাসে যান তখন তিনি একটি তেতুল গাছের তলায় কুঁড়ে ঘর বানিয়ে থাকতে শুরু করেন।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, সেই যুগের তেতুল পাতা আকারে অনেক বড় বড় ছিল। সেই সকল তেঁতুল গাছের বড় বড় পাতা শ্রীরামের কুঁড়েঘরকে ছায়া প্রদান করত এবং রোদ বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করত। একদিন রামচন্দ্র ভাই লক্ষণকে কথায় কথায় বলেছিলেন যে, “আমাদের পিতা আমাদেরকে বনবাসে পাঠিয়েছিলেন এই ভেবে যে আমরা প্রকৃতির প্রতিকূলতার সঙ্গে কীভাবে লড়াই করে নিজেদের টিকিয়ে রেখেছি। কিন্তু এই সুন্দর মনোরম পরিবেশের বড় বড় গাছের ছায়ায় আমরা দিন অতিবাহিত করি এটা তিনি কল্পনাতেও ভাবতে পারবেন না।”
অল্পতে উত্তেজিত লক্ষণ, দাদার কথা ফুরোনোর আগেই তীরের ফলা দিয়ে তেঁতুল গাছের ছায়া প্রদানকারী বড় পাতাগুলোকে ছিন্নভিন্ন করে দিলেন। এর ফলে তেঁতুল গাছের পাতাগুলো ঝিরিঝিরি (ছোট ছোট) পাতায় পরিণত হল। সেই থেকে আজও তেঁতুল পাতা একই রকম রয়েছে। বোটানির ভাষায় অবশ্যই এই ধরনের পাতাকে পক্ষল যৌগিক পত্র বলা হয়। দক্ষিণ ভারতে অবশ্য তেঁতুলকে নিয়ে মানুষের মনে এক খারাপ বিশ্বাস আছে। দাক্ষিণাত্যের মানুষদের ধারণা রাত্রে এই তেঁতুল গাছে প্রেতাত্মা বসবাস করে, তাই তাঁরা মন্দিদের পাশে তেঁতুল গাছ রোপন করে যাতে প্রেতাত্মার হাত থেকে সেখানকার মানুষ রক্ষা পায়।
হাত বাড়ালেই বনৌষধি: একাধিক সমস্যার অব্যর্থ দাওয়াই, বাজিমাত হবে এই ‘অমৃত’ ফলে
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১: রাজবাড়ির ইতিকথা—ইতিহাসের অন্তরে ইতিহাস
এক নজরে
দশভুজা: আমি আর কখনওই ফিরে আসার প্রত্যাশা করি না…
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪২: আশা-ভরসার ‘শঙ্কর নারায়ণ ব্যাঙ্ক’
কী কী উপাদানে ভরপুর?
তেঁতুলে উপস্থিত শর্করার পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ, প্রোটিনো ফ্যাট থাকে ৩ শতাংশ। এগুলি ছাড়াও ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সিলেনিয়াম, কপার, ম্যাগনেশিয়াম ইত্যাদি খনিজ লবণ উপস্থিত থাকে তেঁতুলে।
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২: মেয়েটি যেন গৃহলক্ষ্মী
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৮: সাইনাস নাকি কখনওই সারে না?
চিকিৎসাশাস্ত্রে তেঁতুলের ব্যবহার
পৌষ্টিকতন্ত্রের কার্যক্ষমতা বাড়াতে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবে
কোলন ক্যানসার প্রতিরোধে
শরীরে ভিটামিনের চাহিদা পূরণে
সর্দি কাশিতে
পেটের অসুখে
ক্ষুধামান্দ্য কমাতে
হার্ট ঠিক রাখতে
বিষক্রিয়া কমাতে
আয়ুর্বেদ শাস্ত্রমতে
আমাদের অনেকেরই হয়তো জানা ছিল না যে তেঁতুল আমাদের শরীরে পক্ষে কতটা উপকারী, তাই এটিকে আমাদের প্রাত্যহিক খাদ্য তালিকায় খুব একটা খুঁজে পাই না। তবে বছর দুইয়েকের শিশু এবং বাতের পেসেন্ট ছাড়া সকলেই সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন নিজেদের খাবারের বিভিন্ন পদে তেঁতুলকে রাখতেই পারেন।