ছবি: প্রতীকী।
।। দ্বিখণ্ডিত সত্তা।।
— ম্যাডাম যার নামে কমপ্লেন করব থানায় ডায়েরি করব সেই ডাক্তার অর্কপ্রভ দাশগুপ্ত তো আপনার স্বামী?
—তো। স্বামী তো কি হয়েছে? অন্যায়টা অন্যায় নয়? একজন ডাক্তারবাবু হিসেবে তিনি যে অন্যায়টা করেছেন তার শাস্তি তাকে পেতে হবে না? শুনুন নিলয়বাবু এবারের অপারেশনের জন্য খরচাপাতি যাতে কম হয় সে চেষ্টা আমি করব। আপনার আগের অপারেশনে হসপিটালের থাকার যা খরচ হয়েছে এ বারের অপারেশনের জন্য যা খরচ হয়েছে তার সমস্ত টাকা আগের ডাক্তারবাবুর কাছ থেকে দাবি করতে হবে। আপনার স্ত্রীর এই অপারেশনের জন্য আমি কোন প্রফেশনাল চার্জ নেব না। কিন্তু আমি যা যা আপনাকে বললাম সেগুলো করতে হবে ওটাই আমার ভিজিট।
সমাজের ওপর মহলে জানাশোনা, পুলিশ ও রাজনৈতিক যোগাযোগ কিছুতেই রোখা গেল না ডাক্তার সানন্দা দাশগুপ্তকে। লোকাল থানা ডায়রি নিতে গড়িমষি করলেও শেষপর্যন্ত বাধ্য হল। নিলয়বাবুর স্ত্রী মণিকা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরল। পুলিশ এফ আই আর এর রেফারেন্স উল্লেখ করে মেডিকেল কাউন্সিলে কমপ্লেন করলেন নিলয় সরকার। প্রথম বার নার্সিংহোমে রাখা এবং অপারেশনের খরচা, দ্বিতীয়বার হাসপাতালে থাকা এবং দ্বিতীয়বার অপারেশনের যাবতীয় খরচার কাগজপত্র নিয়ে ক্ষতিপূরণ দাবি করা হল। মেডিকেল কাউন্সিলের প্রথম সারির কর্তাব্যক্তিরা অর্ক এবং সানন্দাকে খুব ভালো করে চিনতেন। টেলিফোনে না বলে শহরের সেই সব নামী ডাক্তারবাবুরা সানন্দার বাড়িতে এসে তাকে বোঝাবার চেষ্টা করলেন। সানন্দা যথাবিহিত আতিথেয়তা করে তাঁদের বললেন।
—আমার স্বামী বিপদে পড়লে স্ত্রী হিসেবে তার পাশে দাঁড়াবার চেষ্টা করব। যদি তিনি আমার কথা শোনেন তাহলে তাঁকে বলার চেষ্টা করব যে তাঁর এই মুহূর্তে ঠিক কি করা উচিত। আচমকা আর্থিক দায়ের থেকে বাঁচতে তাঁকে সাহায্যও করতে পারি। কিন্তু আমার তো দুটো সত্তা। হিপোক্রেটিক ওথ নেওয়া একজন ডাক্তার যে এখনও অর্থের জন্য মেরুদণ্ড এবং মনুষ্যত্ব বিক্রি করে দেয়নি। সে লড়াই করছে আরও অনেক এরকম হতভাগ্য নিলয় সরকার মণিকা সরকারের জন্যে, তার জেহাদ তাদের পক্ষে আর অর্ক দাশগুপ্তের মতো আরও যেসব অসৎ অর্থলোভী দায়িত্বজ্ঞানহীন ডাক্তার রয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে। এই ধরণের অমানুষিক অপরাধ করার আগে চিকিৎসাধীন রোগীকে ঠকাবার আগে তারা দশবার ভাববেন।
খুব স্বাভাবিকভাবেই বিয়ের পর থেকে যে দ্বন্দ্বটা মনের মধ্যে ছিল সেটা সংসারের মধ্যে দেওয়াল হয়ে দাঁড়ালো। মেডিকেল কাউন্সিলের ঝামেলা যে রাত্তিরে মিটলো সেই রাতেই অর্ক দাশগুপ্তের একটা কথায় বাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন সানন্দা। না বসুন্ধরা ভিলায় কিন্তু ফেরেননি কোন বন্ধুর কাছে যাননি। নিজের বাড়ির কাছে একটি হোটেলে গিয়ে উঠেছেন। পরদিন সকালে বাড়িতে এসে জরুরি কাগজপত্র ব্যবহার্য জিনিসপত্র সুটকেসে ভরে আবার হোটেলে ফিরেছেন। জিনিসপত্র হোটেলে রেখে ফ্ল্যাটের খোঁজ করার জন্য এজেন্সিতে খবর দিয়েছেন।
এ সব নিয়ে না বাড়ির কাউকে কিছু জানিয়েছেন না অভিন্ন হৃদয়ের বন্ধু দিগন্তকে। এক কামরার একটা ফার্নিশড ফ্লাটে মালপত্র রেখে নিশ্চিন্ত হয়ে তারপর গিয়েছেন বসুন্ধরা ভিলায় সবকিছু জানাতে। সুবর্ণ ভাবছিল এরকম শক্তিশালী লড়াকু চরিত্রের বর্ণনা করার সময় কোন আবেগ থাকে না। থাকা উচিতও নয়। সে চরিত্র আপনজন হলে, তাকে সফল হতে দেখলে, মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু যখন সেই আপন জনের জীবনটা টুকরো হয়ে যায় দ্বিখণ্ডিত হয়ে যায় এক আদর্শবাদী ডাক্তার এবং এক সংসারী স্ত্রীর মধ্যে তখন বড় কষ্ট হয়।
কিন্তু কাহিনিকারকে থামলে চলবে না। সময়ের গতিতে কাহিনির পাল বেয়ে নানান চরিত্রের জল বেয়ে এগোতে হবে।
২য় খণ্ড, পর্ব-২৩: বিছানার পাশেই ফোন আছে, অসুবিধা হলে যত রাতই হোক আমাকে ফোন করবেন
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৫: আমার পায়ে ঝিঁ ঝিঁ, আমি জ্ঞান হারিয়েছি
যাইহোক ইন্দ্র নামের এই অ্যাসিস্ট্যান্ট ছেলেটি স্টুডিও থেকে হোটেলে ফোন করে ড্যান্স ডিরেক্টরকে শিবানীর কথা বলল। ফটো স্টুডিওতে পরিপাটি সেজেগুজে যত্ন করে আলো ফেলে নায়িকার ভূমিকালাভের আশায় তোলা ছবি। এমন একটা শিয়রে-সংক্রান্তি অবস্থায় শিবানীর চটকদারি চেহারা দেখে ডান্স ডিরেক্টরের যে পছন্দ হবেই সে নিয়ে ইন্দ্রর সন্দেহ ছিল না। মেয়েটি দেখতে ভাল, নাচ জানে- ফোনে এটা শুনে ডান্সডিরেক্টর আরও খুশি। তখন মোবাইল বা হোয়াটস অ্যাপ আর কোথায়। বম্বের নর্তকীর জন্য নানা রকমের কস্টিউম বানানো ছিল তারই কয়েকটা সঙ্গে নিয়ে মেয়েটিকে সরাসরি সদর স্ট্রিটের হোটেলে উপস্থিত করতে বললেন।
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪০: সে এক স্বর্গপুরীর ‘চিরকুমার সভা’
বইয়ের দেশে: আট থেকে আশির সুস্থ্য থাকার হ্যান্ডবুক ‘খাবার নিয়ে ভাবনা’
—অ্যাসিস্ট্যান্ট ডান্স ডিরেক্টার ইন্দ্রদা, ওই যে নাচের শুটিং। তোমার কথা বলল। খুঁজছিল। খুব জরুরি দরকার।
—আমাকে?
—হ্যাঁ। বললেন কোনভাবে দেখা হলে এক্ষুনি ওদের প্রোডাকশনের অফিসঘরে পাঠাতে।
অনিচ্ছা সত্ত্বেও শিবানী ভাবল দেখা একবার করা দরকার। কিন্তু ওনাকে তো সেবার শিবানী বলেছে যে দঙ্গলে সে নাচবে না।
ইন্দ্র তাকে যা বলল সেটা শোনার মতো অবস্থা শিবানীর ছিল না। সে শুধু বিশ্বাস করতে পারছে না এমন নয়। মনে হচ্ছে সত্যি সত্যি বাড়ি ফিরে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। ঘোরটা কাটলো- হোটেলের মাঝারি সাইজের একটা ঘরে পৌঁছে। টালিগঞ্জ থেকে সদর স্ট্রিট পর্যন্ত ট্যাক্সিতে শিবানী একটাও কথা বলেনি। কথা বলেছে ইন্দ্র। ইন্দ্র খুবই ভদ্র ছেলে। মেয়েদের এই অতিরিক্ত আন্দাজ ক্ষমতাটা ঈশ্বর বোনাস দেন।
বাস্তুবিজ্ঞান: পর্ব-২১: বাস্তু মতে, বাড়ির সবার শোয়ার ঘর কোন দিকে হলে ভালো? কোন দিকেই বা থাকে ঠাকুর ঘর?
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩: সুন্দরবনে মানুষের আদি বসতি
জানলার বাইরের দিকে তাকিয়ে কথাগুলো শুনতে শুনতে শিবানী বুঝতে পারছিল ইন্দ্র তাকে আগামী পরিবেশ পরিস্থিতির জন্য মানসিকভাবে প্রস্তুত করার চেষ্টা করছে।—চলবে।
ছবি সৌজন্য: সত্রাগ্নি।
বসুন্ধরা এবং… ২য় খণ্ড/পর্ব-২৫
গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com