শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

পরিবারের ছোট সদস্যের শরীরের যত্ন আমরা সব রকম ভাবেই নেওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু তার মাঝেও বেশ কিছু ফাঁক থেকে যায়। সঠিক ভাবে শিশুর শরীরের যত্ন নিতে হলে ওর রোজকার খাওয়া দাওয়ার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এমন কিছু খাবার রাখতে হবে যা অদের বিকাশ দ্রুত করে। এখন স্কুলে পড়াশোনার চাপের পাশাপাশি এক্সট্রা-কারিকুলার অ্যাক্টিভিটি থাকে। সব মিলিয়ে শিশুরা বাড়তি চাপে জর্জরিত। তাই তারা সহজেই ক্লান্ত না হয়ে পড়ে এবং যথেষ্ট এনার্জি ধরে রাখতে পারে সেই দিকেই আমাদের নজর দেওয়া জরুরি।
 

ক্লান্তির সম্ভাব্য কারণ

 

রক্তাল্পতা

বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্লান্তির অন্যতম কারণ হল রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া। রক্তাল্পতার কারণে যে কেবলমাত্র ক্লান্তি ভাবী দেখা যায় তা নয়, অনেক সময় ঘনঘন ঠান্ডা লাগা, মাথার যন্ত্রণা, দুর্বলতা-সহ একাধিক রকমের সমস্যা দেখা যায়। তাই এ ধরনের উপসর্গ দেখা দিলে প্রথমে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজন হলে রক্তাল্পতার পরীক্ষা করাও জরুরি।
 

ডায়াবেটিস

বর্তমানে প্রত্যেক শিশুরই পছন্দের খাবার হল চকোলেট, আইসক্রিম, বাইরের ভাজাভুজি। আর ঠিক সেই কারণেই বাচ্চাদের ডায়াবেটিস একটা সাধারণ সমস্যা। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেশি থাকলে কোষগুলো যথেষ্ট পরিমাণ অক্সিজেন পায় না। এ কারণে শিশুরা ক্লান্তি অনুভব করে।
 

থাইরয়েড সমস্যা

থাইরয়েডের সমস্যায় ক্লান্তি অনুভব একটা সাধারণ সমস্যা। এক্ষেত্রে ক্লান্তির পাশাপাশি ত্বকেরও নানান সমস্যা দেখা যায়। এ ছাড়াও হরমোনের ভারসাম্যহীনতা দেখা যায়। তাই শিশুর ক্লান্তি ভাব সহজেই দূর করতে। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এই খাবারগুলি রাখা ভীষণভাবে প্রয়োজনীয়।

আরও পড়ুন:

হেলদি ডায়েট: শুধু শরীরের জন্য নয়, ত্বকের যত্নেও সমান উপকারী আখের রস

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৩৫: বাঘের কাছ থেকে চাবি আনতে গিয়ে বাঘা রুপী রবি ঘোষের অবস্থা কী হয়েছিল সহজেই অনুমেয়

 

সমস্যার সমাধানে ওদের পাতে রাখুন

 

ডিম

একজন শিশুকে প্রাণোচ্ছল রাখতে প্রোটিনের কোনও বিকল্প হয় না। সেই প্রোটিনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হল ডিম। প্রতিদিন একটি করে ডিম শিশুর শরীরের প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ লবণ ইত্যাদি সমস্ত কিছুর চাহিদায় সমানভাবে পূরণ করতে পারে। ডিমের কুসুমে থাকা ফ্যাট শরীরকে তাৎক্ষণিক এনার্জি দেয়। পাশাপাশি এই ফ্যাট বিভিন্ন ভিটামিনের শোষণেও সাহায্য করে।
 

দুধ

একজন শিশুর অন্যতম সেরা খাবার হল দুধ। দুধ ভিটামিন ডি এবং ক্যালশিয়ামের গুরুত্বপূর্ণ উৎস। এছাড়াও এতে রয়ছে বেশ কিছু প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট, ওমেগা থ্রি ও ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড প্রভৃতি। দুধে উপস্থিত লেকটোস শিশুর দৈহিক গঠন এবং মেধার বিকাশে বিশেষভাবে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় এক গ্লাস দুধ শিশু থেকে বয়স্ক সবারই রাখা উচিত।

আরও পড়ুন:

বাস্তুবিজ্ঞান, পর্ব-২১: বাস্তু মতে, বাড়ির সবার শোয়ার ঘর কোন দিকে হলে ভালো? কোন দিকেই বা থাকে ঠাকুর ঘর?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৯: পথের প্রান্তে রয়ে গিয়েছে সে হাজার তারার ‘লক্ষহীরা’

 

মুরগির মাংস

প্রোটিনের আর একটা গুরুত্বপূর্ণ উৎস মুরগির মাংস, যা শিশুদের পেশী গঠনে ও মজবুতিতে সাহায্য করে। তাই সপ্তাহে তিন থেকে চার দিন বিভিন্ন সব্জি দিয়ে তৈরি চিকেন স্টু ছোটদের খাওয়ানো যেতে পারে। তবে প্রতিদিন মুরগির মাংস খাওয়ানো উচিত নয়। কারণ রোজ দিন মুরগির মাংস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দেখা যেতে পারে, যা শিশুদের জন্য ভীষণই কষ্টকর।
 

কলা

তাৎক্ষণিক শক্তির জন্য কলার জুড়ি মেলা ভার। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কলা রাখা জরুরি। এতে আছে ফাইবার, পটাশিয়াম, কার্বোহাইড্রেট যা শরীরকে শক্তি প্রদান করে। দ্রুত ক্লান্তি কাটিয়ে দেয়।
 

আমন্ড

কমবেশি সমস্ত বাদাম তাৎক্ষণিক পুষ্টি প্রদান করে। তবে আমন্ড বাদাম বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এই বাদামে আছে ফ্যাট, ফাইবার, প্রোটিন যা একদিকে যেমন দীর্ঘ ক্ষণ পেটকে ভর্তি রাখে, তেমনি শরীরকে শক্তিও যোগায়। এছাড়াও এতে বেশ কিছু পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা আমাদের ত্বককে ভালো রাখে।

আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১: সুন্দরবনের শেকড়ের খোঁজে

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৫: আমাদের নাকি রোজই চুল পড়ে!

 

আলু

অল্প বয়সীরা কমবেশি আলু খেতে ভালোবাসে। আলু কার্বোহাইড্রেটের খুব ভালো একটা উৎস। এছাড়াও এতে অ্যামিনো অ্যাসিড আছে, যা শরীরকে সহজে চাঙ্গা করে। সিদ্ধ করা আলু সামান্য মাখন দিয়ে খেলে তা যেমন তাৎক্ষণিক শক্তি দেবে, তেমন অনেকক্ষণ পেটকেও ভর্তি রাখবে।
 

তরমুজ

এই প্রচণ্ড গরমে ডিহাইড্রেশন দূর করতে পানীয়র কোনও বিকল্প নেই। আর সেই পানীয় যদি তরমুজের হয়, তাহলে তো কোনও কথাই নেই। তরমুজে আছে ভিটামিন সি, ভিটামিন এ-সহ নানান পুষ্টিকর উপাদান। এতে সহজেই ক্লান্তি দূর করবে। পাশাপাশি এই প্যাচপ্যাচে গরমে তরমুজ শরীরের জলের ঘাটতিও দূর করবে। এতে শরীর থাকবে তরতাজা।
 

পালংশাক

পালংশাকে ভিটামিন কে, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন-সহ একাধিক পুষ্টিকর উপাদান। পালংশাক দিয়ে তৈরি খাবার খেলে ওদের ক্লান্তি সহজেই দূর হবে। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় পালংশাক রাখতে হবে। পালংশাককে স্যালাড হিসেবে, সবজি হিসেবে আবার কখনও কখনও রুটি বা পরোটার স্টাফিং হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।

যোগাযোগ: ৯৮৩০৭৬৮১৫২

* হেলদি ডায়েট (Healthy Diet): সুতনুকা পাল (Sutanuka Paul), পুষ্টিবিদ, ডায়েট-টু-ফাইট।

Skip to content