বৃহস্পতিবার ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪


চিল্পিঘাটিকে সকাল সকাল ছেড়ে একটু কুয়াশা মাখা হালকা রোদের মধ্যে বেরিয়ে পড়লাম রতনপুর বিলাসপুর হয়ে কোরবা জেলার উদ্দেশ্যে। যত সহজে কথাগুলো বললাম তত সহজ এ যাত্রাপথ নয়। দীর্ঘ ২১৩ কিলোমিটার পথ পার করতে হবে। আগেও বলেছি আবারও বলছি রাস্তা ভীষণ ভালো, কিন্তু সেই রাস্তায় আপনি কোথায় চায়ের দোকান, জলের দোকান প্রয়োজন মতো পাবেন কিনা সন্দেহ। এবং বেশ কিছু জায়গা মাঝে মাঝে ঘাট এলাকার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, ছোট পাহাড়ি এলাকা অতিক্রম করে আপনি যেতে থাকবেন। একটু বেলা বাড়লেই রোদের উত্তাপ যথেষ্ট, রাস্তার দু’ পাশে প্রচুর গাছ, কিন্তু রোদের তীব্রতা শীতকালেও ছত্রিশগড়ে গরমকে মনে করিয়ে দেয়।
পথ চলতে চলতে আপনার কাছে এসে পড়বে আরেকটি পাহাড়ি এলাকা রতনপুর। রতনপুর অনেক জিনিসের জন্য বিখ্যাত কিন্তু আমাদের যাত্রাপথে আজ আমরা কেবলমাত্র মহামায়া মন্দির দর্শন করে কোরবার উদ্দেশ্যে, যাবো এমনটাই পরিকল্পনা। দিনটা ছিল অষ্টমী, তাই মহামায়া মন্দিরের ভক্ত জনগণের প্রচণ্ড ভিড়। এমনিতেই উত্তর ভারতীয় বা মধ্য ভারতের লোকেরা নবরাত্রি সময় প্রচণ্ড নিষ্ঠা সহকারে নবরাত্রি পালন করেন, নিরামিষাসী তারা থাকেন। প্রত্যেকদিন উপোস করেন, রাত্রিবেলা ফলাহার করেন এসব কষ্ট তারা সাধন করেন।
আরও পড়ুন:

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৫: সারদা দাদার থেকে চিল্পিঘাটি

দশভুজা: আমি বনফুল গো: তিনিই ছিলেন ভারতীয় ছবির প্রথম সিঙ্গিং সুপারস্টার/১

চলো যাই ঘুরে আসি: অযোধ্যা—প্রাচীন ভারতীয় ধর্ম-সংস্কৃতি সমন্বয়ের প্রাণকেন্দ্র/১

মূল গেট থেকে মন্দির চত্বর পর্যন্ত কার্পেট পাতা যাতে যাত্রীদের কোন অসুবিধা না হয়। রাস্তার দু’ধারে অসংখ্য দোকান। ইম্প্রেসিভ বা মনোগ্রাহী আকৃতির মন্দির নয়। মায়ের শিলাখণ্ডের মূর্তি। অসম্ভব ভিড় ঠেলে যখন গেলাম মন্দির চত্বরের কাছাকাছি দেখলাম জুতো খুলে যেতে হবে। জুতো খুলে যে জায়গায় রাখতে যাব তার যে পাহারাদার বয়স্ক ভদ্রলোক আমায় জিজ্ঞাসা করলেন: “কোথা থেকে এসেছেন?”
বললাম: “কলকাতা থেকে।”
বলল: “মা কি বহেন কি ঘর সে আয়ে হো।”
আমি জিজ্ঞাসা করলাম: “কেন এটা বলছে?”
কালীঘাটে কালী মায়ের মূর্তি আছে অতএব মা কালীর এই মায়ের সঙ্গে বোনের সম্পর্ক তিনি পাতিয়ে ফেলেছেন। আমি বললাম: “হ্যাঁ।”
বললেন তিনিঃ “তুমি জুতো উপরে রেখো না। পয়সা দিয়ে রাখি না তো হারিয়ে যেতে পারে। আমার কাছে রাখো।”
আরও পড়ুন:

পর্ব-৫২: প্রাকৃতিক উপায়ে মাছের ফলন বাড়াতে পুকুরে উদ্ভিদকণা ও প্রাণীকণার ভারসাম্য ঠিক রাখা জরুরি

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৩৭: অবশেষে অগ্রজের দেখা মিলল বুঝি!

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৯: প্লেগে কন্যার মৃত্যু, সেই শোক অবনীন্দ্রনাথের ছবিতে পায় ভিন্নতর মাত্রা

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৭: ভারতের উত্তরাধিকার, কৌরব ও পাণ্ডবগণ

একবার মনে হল উনি যদি উঠে যান জুতোটা হারিয়ে গেলে, তারপর ভাবলাম না হয় ঠিক আছে খালি পায়েই যাব রতনপুর। রতনপুর বড় শহর একটি জুতো কিনে নেব। যে পরিসর দিয়ে মায়ের দর্শন করতে যেতে হয় সে পরিসরে ঢুকে দেখলাম বিশাল লাইন। বদ্ধ জায়গা কি রকম দম বন্ধ দম বন্ধ লাগছিল। ভাবলাম কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবো কখন মায়ের দর্শন পাবো।
আরও পড়ুন:

কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে আসছে না? নিয়মিত শরীরচর্চায় জব্দ হবে ডায়াবিটিস

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৩: মেডিকেল কলেজ থেকে বিশ্বকাপ

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩২: কি ‘উপহার’ সাজিয়ে দেব

হঠাৎ মনে হল ওই দিকটায় ভিড় কম কেন? চট করে লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসলাম। বেরিয়ে এসে দেখি, ওই দিক দিয়ে মন্দিরে ঢোকা যাচ্ছে। খুব চট করে এগিয়ে গেলাম, আমাকে কেউ বাধা দিল না। তারপর বুঝলাম ওখান দিয়ে ভিআইপি লাইন এবং ওদের কোন মন্ত্রিসান্ত্রীর সেদিন আসার কথা। আমি না জেনেই ওই গেট দিয়ে ঢুকে পড়েছিলাম। অতএব মন্দিরের রক্ষাকর্তারা, পুলিশরা তারা ভেবেছিল আমি ওই মন্ত্রীদেরই একজন কেউ হবো হয়তো। সেই সুযোগে ঢুকে গেলাম, সবাই যখন বিশাল লাইন দিয়ে মায়ের দর্শনের অপেক্ষা করছে আমি
মাকে দর্শন করে বেরিয়ে এলাম। এসে দেখি সেই বৃদ্ধ ভদ্রলোক জুতো আগলে বসে আছেন। তার অসীম আগ্রহ আমাকে মায়ের প্রসাদ খাওয়াবেন। আমি বললাম: “আজ নয়, অন্য আরেকদিন আসবো।”
বলল: “তুমি কথা দিচ্ছ তো।”
আমি বললাম: “হ্যাঁ।”
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৭: পঞ্চমের কথা মতো ড্রাম ছেড়ে অমরুতের পিঠের উপর স্যাম্পল রিদম বাজাতে শুরু করলেন ফ্রাঙ্কো!

ডায়েট ফটাফট: ডাবের জলের এই গুণগুলির কথা জানতেন?

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৬: গরমে কক্ষনও ডিম খেতে নেই?

অনাড়ম্বর মাতৃমূর্তি, মন্দিরের কারুকার্য অসাধারণ নয় কিন্তু একটা মনে শান্তি, মনে তৃপ্তি মেলে। রতনপুর একটু পাহাড়ি এলাকা। পাহাড়ের উঁচুতে উঁচুতে দু একটি মন্দির আছে হনুমান মন্দির অনেকটা হেঁটে উপরে উঠতে হয়। বিশাল বড় বড় দীর্ঘ হনুমানের মূর্তি। ভারতবর্ষ পরিভ্রমণ করতে গেলে এখন আপনি যে অঞ্চলেই যান না কেন লক্ষ্য করে দেখবেন মূর্তির উচ্চতা অনেক বেশি এই একটা রীতি হয়ে গিয়েছে। তা কিসের ইঙ্গিত বহন করে কে জানে। যদিও এই ভারতভূমি বৃহৎ এর সাধনাই করেছে, কিন্তু এ বিরাটত্ব তার কাছে কণামাত্র।—চলবে

ছবি: লেখিকা
* চেনা দেশ অচেনা পথ (Travel Offbeat): লেখক— অর্পিতা ভট্টাচার্য (Arpita Bhattacharya), অধ্যাপিকা, বাংলা বিভাগ, লেডি ব্রেবোর্ন কলেজ। শৈলীবিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেছেন। বর্তমান আগ্রহ ও কাজ ভ্রমণ-সাহিত্য, ইকো-ট্যুরিজম, কালচার ট্যুরিজম, স্মৃতিকথা নিয়ে। এছাড়াও মুক্তগদ্য চর্চা ভালো লাগার জায়গা। এখন পর্যন্ত প্রকাশিত ৫টি গ্রন্থ এবং ৫০ টিরও বেশি প্রবন্ধ। সম্পাদনা করেছেন একটি বই এবং ধারাবাহিক সম্পাদনা করেন রবীন্দ্রনাথ টেগোর অ্যাডভান্সড রিসার্চ সেন্টারের জার্নাল।
 

বাইরে দূরে

লেখা পাঠানোর নিয়ম: এই বিভাগে পাঠকদের সঙ্গে আপনার সেরা ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কাহিনি ভাগ করে নিতে পারেন। ভ্রমণ কাহিনি লিখতে হবে ১০০০ শব্দের মধ্যে ইউনিকোড ফরম্যাটে। লেখার সঙ্গে বেশ কিছু ছবি পাঠাতে হবে। চাইলে ভিডিও ক্লিপও পাঠাতে পারেন। ছবি ও ভিডিও ক্লিপ লেখকেরই তোলা হতে হবে। ওয়াটারমার্ক থাকা চলবে না। ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content