মাধুরীলতা যখন ছোট।
মেয়েদের অনেক স্বপ্ন মনের বাক্সবন্দি হয়ে থাকে। একালেও, সেকালেও। আসলে স্বপ্ন দেখার জন্য সময় আর সুযোগের বড় দরকার। একালেও সে সুযোগঘ সব মেয়ের ভাগ্যে জোটে না। উনিশ শতকে তো মেয়েরা স্বপ্নের দুয়ার বন্ধ করেই রাখত মনে হয়। তবে সে মেয়ে যদি হয় কবিগুরুর ময়ে? তাঁকেও বুঝি স্বপ্নের দোর বন্ধ করতে হয়েছিল? উনিশ বিশ শতকের মহিলা লেখকদের গল্প লিখতে বসে ঠাকুরবাড়ির কথা বার বার এসেই যায়। মস্ত পরিবার, আনাচেকানাচে ঘটনার ঘনঘটা। চলুন, আজ বলি রবিঠাকুরের বড় মেয়ে বেলিবুড়ির কথা। বেলা ওরফে মাধুরীলতা কিন্তু বাবার মতোই লেখক হতে চেয়েছিলেন। স্বপ্ন কেন পুরোপুরি সফল হল না? সেই গল্পই বলি।
সে এক সময় ছিল, যখন কাগজ কলমে ফুটে উঠতো মনের আবেগ। চিঠির পাতায় পাতায় শব্দ হয়ে ফুটে থাকতো কষ্টকুসুম। আদর, সোহাগ, স্নেহে ভরাট সে শব্দের ফুল সুগন্ধি স্মৃতির মতো ধরা থাকতো। সে চিঠি যদি হয় কবি পিতাকে লেখা তাঁর আদরের মেয়ের চিঠি, তাহলে তো কথাই নেই। মাধুরীলতা ছিলেন রবীন্দ্রনাথের বড় মেয়ে, আদরের বেলি। তাঁর জীবনকথা তো অনেকটাই জানা। মাধুরীলতার সংক্ষিপ্ত জীবন, বিক্ষিপ্ত দাম্পত্য, অপূর্ণ ইচ্ছেরা আজ আমাদের কথকতার বিষয় নয়।
আজ শব্দের আড়াল থেকে আত্মপ্রকাশ করবে এক অকপট বালিকা। বাবার উপর যার মস্ত অধিকার। আমরা তো উনিশ শতকের সেইসব মেয়েদের কথা লিখছি যাদের লেখা বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। আর যাদের লেখা প্রকাশিত হয়নি? ইচ্ছেগুলি দুই মলাটের আশ্রয় পায়নি? তাঁরা বুঝি লেখক ছিলেন না? আপনারা কী বলবেন জানি না, কিন্তু আমি বলব তাঁরাও লেখক। কত মেয়ের অপটু হাতেরলেখা গল্প কবিতায় কত যে জীবন দর্শন জেগে আছে, খোঁজ নিলে তার হদিশ পাওয়া যাবে। মাধুরীলতার পত্র আজ তাঁর লেখক সত্তার গল্প বলুক। বাবা ও মেয়ের লেখা এই পত্রগুলিও নিশ্চয়ই সাহিত্য।
সে এক সময় ছিল, যখন কাগজ কলমে ফুটে উঠতো মনের আবেগ। চিঠির পাতায় পাতায় শব্দ হয়ে ফুটে থাকতো কষ্টকুসুম। আদর, সোহাগ, স্নেহে ভরাট সে শব্দের ফুল সুগন্ধি স্মৃতির মতো ধরা থাকতো। সে চিঠি যদি হয় কবি পিতাকে লেখা তাঁর আদরের মেয়ের চিঠি, তাহলে তো কথাই নেই। মাধুরীলতা ছিলেন রবীন্দ্রনাথের বড় মেয়ে, আদরের বেলি। তাঁর জীবনকথা তো অনেকটাই জানা। মাধুরীলতার সংক্ষিপ্ত জীবন, বিক্ষিপ্ত দাম্পত্য, অপূর্ণ ইচ্ছেরা আজ আমাদের কথকতার বিষয় নয়।
আজ শব্দের আড়াল থেকে আত্মপ্রকাশ করবে এক অকপট বালিকা। বাবার উপর যার মস্ত অধিকার। আমরা তো উনিশ শতকের সেইসব মেয়েদের কথা লিখছি যাদের লেখা বই আকারে প্রকাশিত হয়েছে। আর যাদের লেখা প্রকাশিত হয়নি? ইচ্ছেগুলি দুই মলাটের আশ্রয় পায়নি? তাঁরা বুঝি লেখক ছিলেন না? আপনারা কী বলবেন জানি না, কিন্তু আমি বলব তাঁরাও লেখক। কত মেয়ের অপটু হাতেরলেখা গল্প কবিতায় কত যে জীবন দর্শন জেগে আছে, খোঁজ নিলে তার হদিশ পাওয়া যাবে। মাধুরীলতার পত্র আজ তাঁর লেখক সত্তার গল্প বলুক। বাবা ও মেয়ের লেখা এই পত্রগুলিও নিশ্চয়ই সাহিত্য।
মাধুরীলতা সাহিত্যরচনাও করেছিলেন। বাংলা ভাষার উপর আশ্চর্য দখল ছিল তাঁর। চিঠি লেখার সময় মাধুরীলতার সাহিত্যিক প্রতিভা আর রসবোধ একসঙ্গে লক্ষ করা যায়। মাধুরীলতার চিঠি ব্যক্তি রবীন্দ্রনাথের এক বিশেষ সত্তা, একটি বিশেষ সময়ের দিকে ইঙ্গিত করে। সেই দিক থেকে চিঠিগুলি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। ১৮৯৫ থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত কিছু চিঠির সংগ্রহ করে প্রকাশ করেছেন পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়। জোড়াসাঁকো, ভবানীপুর, শিলাইদহ, মজঃফরপুর ইত্যাদি বিভিন্ন জায়গায় বসে এক সরল বালিকা তার বাবাকে চিঠি লিখছে,তার দৈনন্দিন জীবনযাপন প্রাণবন্ত হয়ে উঠছে চিঠির পাতায়। বিখ্যাত বাবার কাছে এ প্রাপ্তি কিছু কম নয়।
চিঠির বয়ান জীবনের গল্প তৈরি করেছে আনমনে। মনের ক্যানভাসে জীবন্ত হয়ে ওঠে জীবনের জলছবি। ছোট্ট বেলা চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছে, মা সমস্তদিন বই পড়েছেন বলে চিঠি লিখতে পারেননি। তাই ছোট্ট বেলা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। চিন্তামগ্ন বাবার জন্য ‘হামি’ পাঠিয়েছে অগুনতি। অঙ্কের আতঙ্ক, মাঝির গান, বাদলা দিন—এইসব সহজিয়া প্রসঙ্গ যেমন চিঠির বয়ান হয়েছে, তেমনি চুপি চুপি পত্রলেখক মেয়েটি জানিয়েছে তার ইচ্ছের কথা—‘আমি মনে মনে এই বিবেচনা করিয়াছি যে সিলাইদায় গিয়া তোমার মতো রোগা হইব।’ মাঝে মাঝে চিঠিতে উঁকি দিয়েছে অভিমান—‘বলুদাদাকে বল আমাকে আগে চিঠি লিখতে নাহলে আমিও তাঁকে লিখিব না।’
রবিঠাকুরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বাবার চিঠি নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যেত। ছোট ভাই রথীর অভিমানের খবরও দিদি মাধুরীলতা পৌঁছে দিতো পত্রের হরফে হরফে। কখনও আবার মেয়ের চিঠির সঙ্গে দুইকলম চিঠি লিখে দিতেন মৃণালিনীও। সে চিঠির মাত্রা ও গুরুত্ব হতো অন্যরকম। বেশ কয়েকটি চিঠিতে এসেছে মিস্টার লরেন্সের প্রসঙ্গ। এই প্রবল আবেগপ্রবণ সাহেব রবীন্দ্রনাথের সন্তানদের গৃহশিক্ষক ছিলেন একসময়। সাহেবের দরিদ্র মানুষদের কথায় কথায় অশিক্ষিত, অসভ্য বলার প্রবণতা মেনে নিতে পারে নি কিশোরী বেলা। উল্টে বাবাকে চিঠিতে জানিয়েছে, তার মনে হয়, শিক্ষিত, সভ্য মানুষদের থেকে এরা অনেক বিশ্বাসী ও সরল।
চিঠির বয়ান জীবনের গল্প তৈরি করেছে আনমনে। মনের ক্যানভাসে জীবন্ত হয়ে ওঠে জীবনের জলছবি। ছোট্ট বেলা চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছে, মা সমস্তদিন বই পড়েছেন বলে চিঠি লিখতে পারেননি। তাই ছোট্ট বেলা এই দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। চিন্তামগ্ন বাবার জন্য ‘হামি’ পাঠিয়েছে অগুনতি। অঙ্কের আতঙ্ক, মাঝির গান, বাদলা দিন—এইসব সহজিয়া প্রসঙ্গ যেমন চিঠির বয়ান হয়েছে, তেমনি চুপি চুপি পত্রলেখক মেয়েটি জানিয়েছে তার ইচ্ছের কথা—‘আমি মনে মনে এই বিবেচনা করিয়াছি যে সিলাইদায় গিয়া তোমার মতো রোগা হইব।’ মাঝে মাঝে চিঠিতে উঁকি দিয়েছে অভিমান—‘বলুদাদাকে বল আমাকে আগে চিঠি লিখতে নাহলে আমিও তাঁকে লিখিব না।’
রবিঠাকুরের ছেলেমেয়েদের মধ্যে বাবার চিঠি নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি পড়ে যেত। ছোট ভাই রথীর অভিমানের খবরও দিদি মাধুরীলতা পৌঁছে দিতো পত্রের হরফে হরফে। কখনও আবার মেয়ের চিঠির সঙ্গে দুইকলম চিঠি লিখে দিতেন মৃণালিনীও। সে চিঠির মাত্রা ও গুরুত্ব হতো অন্যরকম। বেশ কয়েকটি চিঠিতে এসেছে মিস্টার লরেন্সের প্রসঙ্গ। এই প্রবল আবেগপ্রবণ সাহেব রবীন্দ্রনাথের সন্তানদের গৃহশিক্ষক ছিলেন একসময়। সাহেবের দরিদ্র মানুষদের কথায় কথায় অশিক্ষিত, অসভ্য বলার প্রবণতা মেনে নিতে পারে নি কিশোরী বেলা। উল্টে বাবাকে চিঠিতে জানিয়েছে, তার মনে হয়, শিক্ষিত, সভ্য মানুষদের থেকে এরা অনেক বিশ্বাসী ও সরল।
আরও পড়ুন:
সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৪: শোভনাসুন্দরী—ঠাকুরবাড়ির এক সরস্বতী!
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৩৪: নারী দিবস ও শিবরাত্রি
একটি চিঠিতে রবীন্দ্রনাথের বাড়ি ফেরা নিয়ে তাঁর স্ত্রী সন্তানরা বাজি রেখেছিলেন— এমন কথা জানা যায়। পরে জানা গিয়েছিল, রাতে মৃণালিনী দেবীর কাছে রবীন্দ্রনাথের টেলিগ্রাফ এসেছিলো। ঘটনাটি বাস্তবে যাই হোক না কেন, পরিবার যে রবীন্দ্রনাথের জন্য প্রতীক্ষা করতো, সেই প্রতীক্ষার আকুতি ধরা পড়েছে।
মাধুরীলতা স্নেহের অধিকারে বাবার সঙ্গে বিবাদও করেছে চিঠিতে। লিখেছে, ‘তোমার একলা মনে হয় না কেন না তুমি ঢের বড় বিষয় ভাবতে, আলোচনা করতে, সেগুলোকে নিয়ে একরকম বেশ কাটাও। আমরা সামান্য মানুষ আমাদের একটু গল্পগুজব মানুষজন নিয়ে থাকতে এক একসময় একটু ইচ্ছে করে। আর যদি তুমি এখানে এসে আর নড়তে না চাও, তাহলে তুমি যে যে মহৎ বিষয় নিয়ে থাকো তাই সব আমাদের একটু দাও।’
মাধুরীলতা স্নেহের অধিকারে বাবার সঙ্গে বিবাদও করেছে চিঠিতে। লিখেছে, ‘তোমার একলা মনে হয় না কেন না তুমি ঢের বড় বিষয় ভাবতে, আলোচনা করতে, সেগুলোকে নিয়ে একরকম বেশ কাটাও। আমরা সামান্য মানুষ আমাদের একটু গল্পগুজব মানুষজন নিয়ে থাকতে এক একসময় একটু ইচ্ছে করে। আর যদি তুমি এখানে এসে আর নড়তে না চাও, তাহলে তুমি যে যে মহৎ বিষয় নিয়ে থাকো তাই সব আমাদের একটু দাও।’
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, ত্রিপুরা: আজ কাল পরশুর গল্প, পর্ব-২: রাজমালা অনুসারে রত্ন মাণিক্যের পিতা হলেন ডাঙ্গর ফা, তিনিই ধর্ম মাণিক্য
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৬: সারদা মায়ের ছোটকাকা ও পুত্রপ্রতিম স্বামীজির জীবনাবসান
চিঠির পাতায় গল্প বুনে চলে ছোট্ট মেয়ে বেলা ওরফে মাধুরীলতা। সেখানে বাগানের ফুলের ছবি ভেসে ওঠে। বাঘের থাবা, বড় গোলাপ, সাহিত্যপাঠ —এই সব প্রসঙ্গ শব্দের গাছ হয়ে ঝাঁকড়া মাথা দুলিয়ে যেন বসে। ছোটো ভাই রথীন্দ্রনাথকে ক্ষীর আর বম্বাই রস, পোনা মাছের মুড়ো, ভাত খাইয়ে মোটাসোটা করার প্রবল প্রয়াসের কথা আছে। সারাদিন ধরে চলছে বাবার লেখা পড়ে বোঝার আন্তরিক চেষ্টা। ‘বাল্মিকী প্রতিভা’, ‘মায়ার খেলা’, ‘বিসর্জন’ পড়ার কথাও আছে একটি চিঠিতে। কখনও শব্দরা বিস্ময় আর মনখারাপের কথা বলে, ‘তুমি কবে আসবে? তুমি কেমন আছো? পুকুরে, বৃষ্টিতে জল দাঁড়িয়েছে। তুমি যে এককালে আমাদের মতো এমন কি আমাদের চেয়েও ছোট ছিলে তা মনে কর্ত্তে বড্ড অদ্ভুত মনে হয়।’
মেয়ের চিঠি বাবাকে জানিয়ে দেয়, ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ গান হচ্ছে বাড়িতে। তাস খেলা জমে উঠেছে, দুই ভাই রথী আর শমী জব্বর লাঠি খেলা শিখেছে, এইসব! বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর তো মাধুরীলতার বলুদাদা। তাঁর অসুস্থতার খবর নেয় মাধুরীলতার চিঠি!জানায়,‘বলুদাদা কেমন আছেন? মা দিন চার পাঁচ থেকে কেঁদে কেটে অস্থির।’ আবার রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে ঝগড়ার কথাও মাধুরীলতা জানায় তার বাবাকে লেখা চিঠিতে। রথীন্দ্রনাথ মাধুরীলতাকে কাগজ দেয় না। বকে আর বলে, ‘বাবা আমাকে কিনে দিয়েছেন আমি কাউকে দেব না।’ ফলে জোর করে কাগজ বের করতে হয়। চিঠিতে রয়ে যায় সহজ স্বীকারোক্তি।
মেয়ের চিঠি বাবাকে জানিয়ে দেয়, ‘মাঝে মাঝে তব দেখা পাই’ গান হচ্ছে বাড়িতে। তাস খেলা জমে উঠেছে, দুই ভাই রথী আর শমী জব্বর লাঠি খেলা শিখেছে, এইসব! বলেন্দ্রনাথ ঠাকুর তো মাধুরীলতার বলুদাদা। তাঁর অসুস্থতার খবর নেয় মাধুরীলতার চিঠি!জানায়,‘বলুদাদা কেমন আছেন? মা দিন চার পাঁচ থেকে কেঁদে কেটে অস্থির।’ আবার রথীন্দ্রনাথের সঙ্গে ঝগড়ার কথাও মাধুরীলতা জানায় তার বাবাকে লেখা চিঠিতে। রথীন্দ্রনাথ মাধুরীলতাকে কাগজ দেয় না। বকে আর বলে, ‘বাবা আমাকে কিনে দিয়েছেন আমি কাউকে দেব না।’ ফলে জোর করে কাগজ বের করতে হয়। চিঠিতে রয়ে যায় সহজ স্বীকারোক্তি।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮২: রবীন্দ্রনাথ সাহেব-শিক্ষকদের কাছেও পড়েছেন
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪২: অ্যান্টিবায়োটিক খেলেই গন্ডগোল?
চিঠিরও কি বয়স বাড়ে? কী জানি! মাধুরীলতার চিঠির শব্দরাও পরিণতি পায় একসময়। ছোট্ট বেলা বাবাকে হামি পাঠাতো, তারপর প্রণাম! যে মেয়েটা বাবাকে মনের কথা চিঠি জুড়ে দেয়ালার মতো লিখে রাখতো, সেই হঠাৎ বিবাহের প্রস্তাবে কেমন সংযত, ধীর স্থির হয়ে যায়। চিঠির শব্দরা বলে, ‘তুমি আমাকে যা যা উপদেশ দিয়েছ আমিা তা প্রাণপণে পালন কর্ত্তে চেষ্টা করব। আমার স্বামী যে আমার চেয়ে সকল বিষয়ে শ্রেষ্ঠ এবং আমি তাঁর সমান নই এটা বরাবর মনে রাখব। তাঁর ঘরের শ্রী যাতে বৃদ্ধি পায় যথাসাধ্য তাই রব। এ বাড়ির মেয়ে বলে উনি আমাতে অনেক সদগুণ আশা করেন তাতে যাতে না নিরাশ হন আমি তাই চেষ্টা করব।’
এই শব্দগুলিতে যত না বাধ্য মেয়ে স্বর শুনতে পেলাম, তার চেয়েও বেশি পেলাম অভিমানী মেয়ের কন্ঠ। যে মেয়েটি এতদিন ধরে গান, সাহিত্য এইসব নিয়েই থেকেছে, মনে মনে লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে, সে স্বামীর সমকক্ষ নয়—এটা মেনে নিতেই হবে? তারপর চিঠিতে আসবে কাটতে না চাওয়া দুপুরের প্রসঙ্গ—‘আজকাল আমি দুপুরবেলা কিছু মিষ্টি তৈরি করি। তাতে খানিকটা সময় যায়।’ এইভাবে একদিন মাধুরীলতার চিঠি হারিয়ে যায় ব্যস্ততার আতিশয্যে আর মাধুরীলতার কথা হারিয়ে যাবে পরপারে। কিন্তু বাবা ও মেয়ের মধ্যে ভালোবাসার সেতু হয়ে রয়ে যাবে মাধুরীলতার বাবাকে লেখা চিঠির মায়াবী শব্দগুলি।
অমলকান্তির যেমন রোদ্দুর হওয়া হয় নি, মাধুরীলতারও স্বনামধন্য লেখক হওয়া হল না কখনও। তবে মৃণালিনী দেবীর অসমাপ্ত কাজ রামায়ণের অনুবাদ করেছিলেন তিনি। মেয়েদের লেখাপড়াও শেখাতেন। তবে ক্ষোভ জন্মায় তাঁর লেখক পিতার প্রতি। মাধুরীলতার মধ্যে সত্যিই লেখক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তাঁর স্বনামধন্য লেখক পিতা তাঁকে বিহারীলাল চক্রবর্তীর পুত্রবধূ হিসেবেই দেখতে চেয়েছিলেন। সাংসারিক অশান্তি আর অকালমৃত্যু— এই মাত্র সম্বল করে গড়িয়ে গেল এক সম্ভাবনাময় মহিলা লেখকের জীবন। তাঁর কাছেও কিন্তু সরস্বতীর লীলাকমল ছিল!
তথ্যসূত্র
● মাধুরীলতার চিঠি, পূর্ণানন্দ চট্টোপাধ্যায়
এই শব্দগুলিতে যত না বাধ্য মেয়ে স্বর শুনতে পেলাম, তার চেয়েও বেশি পেলাম অভিমানী মেয়ের কন্ঠ। যে মেয়েটি এতদিন ধরে গান, সাহিত্য এইসব নিয়েই থেকেছে, মনে মনে লেখক হওয়ার স্বপ্ন দেখেছে, সে স্বামীর সমকক্ষ নয়—এটা মেনে নিতেই হবে? তারপর চিঠিতে আসবে কাটতে না চাওয়া দুপুরের প্রসঙ্গ—‘আজকাল আমি দুপুরবেলা কিছু মিষ্টি তৈরি করি। তাতে খানিকটা সময় যায়।’ এইভাবে একদিন মাধুরীলতার চিঠি হারিয়ে যায় ব্যস্ততার আতিশয্যে আর মাধুরীলতার কথা হারিয়ে যাবে পরপারে। কিন্তু বাবা ও মেয়ের মধ্যে ভালোবাসার সেতু হয়ে রয়ে যাবে মাধুরীলতার বাবাকে লেখা চিঠির মায়াবী শব্দগুলি।
অমলকান্তির যেমন রোদ্দুর হওয়া হয় নি, মাধুরীলতারও স্বনামধন্য লেখক হওয়া হল না কখনও। তবে মৃণালিনী দেবীর অসমাপ্ত কাজ রামায়ণের অনুবাদ করেছিলেন তিনি। মেয়েদের লেখাপড়াও শেখাতেন। তবে ক্ষোভ জন্মায় তাঁর লেখক পিতার প্রতি। মাধুরীলতার মধ্যে সত্যিই লেখক হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তাঁর স্বনামধন্য লেখক পিতা তাঁকে বিহারীলাল চক্রবর্তীর পুত্রবধূ হিসেবেই দেখতে চেয়েছিলেন। সাংসারিক অশান্তি আর অকালমৃত্যু— এই মাত্র সম্বল করে গড়িয়ে গেল এক সম্ভাবনাময় মহিলা লেখকের জীবন। তাঁর কাছেও কিন্তু সরস্বতীর লীলাকমল ছিল!
তথ্যসূত্র
* ড. মহুয়া দাশগুপ্ত, শিক্ষক এবং লেখক। রবীন্দ্রনাথের দেবলোক, জোড়াসাঁকোর জার্নাল, আমি নারী আমি মহীয়সী, কথানদীর কূলে, লেডিজ স্পেশাল, পথে পুরুষ বিবর্জিত, পরীক্ষায় আসবে না এবং ভুবনডাঙার বাউল তাঁর লেখা একক বই। বাংলা কথকতা নিয়ে একক ভাবে কাজ করছেন।