সোমবার ৭ অক্টোবর, ২০২৪


ভিপি রাধা

একবিংশ শতাব্দীর দ্রুতগতির ইন্টারনেটের সহায়তায় চলছে মানবজাতির ফেসবুক, ইউটিউব, ইনস্টাগ্রাম-সহ বিভিন্ন জনপ্রিয় ভার্চুয়াল মাধ্যমে সমানতালে বিচরণ। তাই চাইলেই এক নিমেষে দুনিয়া এখন হাতের মুঠোয়। এখন অনেকেরই পাতা উল্টে বই পড়ার অভ্যাস কমে গিয়েছে। কারণ, তাঁরা মনে করেন, ইন্টারনেটে সার্চ করে অতি সহজেই তৎক্ষণাৎ সব কিছুর উত্তর পাওয়া সম্ভব। আসলে, ভার্চুয়াল মাধ্যমের কাছে আমরা নিতান্তই অসহায়। এখন বাড়ির গৃহিণীদেরও সঙ্গী টিভি, মোবাইল ফোন ইত্যাদি।
এরকম এক পরিস্থিতিতে বইকে সঙ্গী করার উদ্দেশ্য নিয়ে কাঁধে বইয়ের বড় ঝোলা ঝুলিয়ে গ্রামের আলপথ দিয়ে বাড়ি-বাড়ি বই পৌঁছে দিচ্ছেন এক প্রৌঢ়া। তিনি ভিপি রাধা। ৫৭ বছর বয়সি এই মহিলার পরনে সাদা শাড়ি। এক হাতে ফাইল, পিঠে একটা বড় ঝোলা। তাতে সব রকমারি বই।
ভাবছেন কে এই রাধা? এই রাধাকে কেরলের পায়ান্নু এলাকার সবাই একডাকে ‘চলন্ত পাঠাগার’ নামে চেনেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গৃহিণীদের মধ্যে বইয়ের নেশা বাড়াতে বিশেষ উদ্যোগী হয় কেরলের পায়ান্নুর পুরসভা। পুরসভার তরফে সেই কাজের দায়িত্বে রয়েছেন রাধা।
রাধা প্রথমে একটা সংস্থায় কাজ করতেন। কিন্তু তাতে তাঁর সংসার চালানো দুষ্কর হয়ে পড়ছিল। ওই রোজগারে ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ চালাতে অসুবিধায় পড়েন তিনি। তাই অন্যকোনও কাজের সন্ধান করছিলেন তিনি। ২০০২ সালে কেরলের পায়ান্নুর পুরসভায় ‘চলমান পাঠাগার’-এর কাজে পায়ান্নুর পুরসভা তাঁকে নিয়োজিত করে।
স্থানীয় গ্রন্থাগার থেকে বই নিয়ে বাড়ি-বাড়ি গৃহবধুদের বই পৌঁছে দেওয়ার কাজে তেমন কেউ আগ্রহ দেখাননি। কিন্তু এগিয়ে এসেছিলেন ওই প্রৌঢ়া।
দু’দশক ধরে গ্রামের আঁকাবাঁকা রাস্তা দিয়ে ঝোলাভর্তি বই নিয়ে ঘুরে বেড়ান তিনি। গৃহিণীদের চাহিদা মতো বই পৌঁছে দেন তাঁদের দ্বারে দ্বারে। আবার, কেউ তাঁর পছন্দের বইয়ের নাম বললে সেগুলো লিখে নিয়ে গ্রন্থাগার থেকে সংগ্রহ করে পরের দিন সেই বই তাঁর হাতে পৌঁছে দেওয়াই রাধার কাজ। পুরসভা প্রথম যখন এই উদ্যোগ নিয়েছিল তখন গ্রামবাসীদের মধ্যে খুব একটা আগ্রহ দেখা যায়নি। যত দিন গিয়েছে রাধা তাঁদের বই পড়ার নেশা জাগিয়ে তুলতে পেরেছেন। এখন তাঁর কাছ থেকে বই নিয়ে কয়েকশো গৃহিণী নিয়মিত পড়ছেন। রাধা নিজে একজন বইয়ের পোকা সেই জন্যই হয়তো তিনি এই কাজে সফল হয়েছেন।
এই কাজ করেই রাধার সংসার এখন সচ্ছল। রাধা তাঁর মেয়ে রঞ্জিনীর বিয়ে দিতে পেরেছেন। ছেলে সাজনও পড়াশোনা শেষ করে সরকারি পেয়েছেন। পরিবারে অর্থাভাব না থাকলেও রাধা অবসর চান না। কারণ, বইয়ের গন্ধ তাঁর যে বড্ড প্রিয়। রাধার কথায়, বইয়ের গন্ধ, বইপড়া, নানা বই নিয়ে আলোচনা, পাঠকদের কাছে বই পৌঁছে দেওয়া এবং সংগ্রহ করা, সর্বোপরি তাঁদের বইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়ানো — এই কাজ আমাকে সারাক্ষণ আনন্দ দিয়ে যায়। নানা প্রতিকুলতা কাটিয়েও এই কাজ মধ্য দিয়ে আমি অনেক শক্তি পেয়ে থাকি।

Skip to content