বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


দিল্লিতে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে।

‘বম্বে টকিজে’র দূরদর্শী কর্ণধার হিমাংশু রায় তাঁর ‘অচ্ছুত কন্যা’র শুটিং এর সময় প্লেব্যাক সিঙ্গিং-এর প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছিলেন কারণ প্লেব্যাক না হলে নায়ক নায়িকাদের গাছের তলায় বা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে গান গাইতে এবং অভিনয় করতে হতো, তাঁরা নড়াচড়া করতে পারতেন না। অথচ তাঁর আগের বছরেই (১৯৩৫ সালে) কলকাতায় পরিচালক নীতিন বসু তাঁর ‘ভাগ্যচক্র’ ছবির ক্ষেত্রে ভারতে প্রথম প্লেব্যাক সিঙ্গিং-এর ব্যবহার করেন। হিমাংশু রায় আসলে ‘প্লে অ্যালং’-এর কথা ভেবেছিলেন। কানন দেবীর প্রথম টকি ‘জোর বরাত’-এ গানের রেকর্ডিং এর সময় এই ‘প্লে অ্যালং’ পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়েছিল।
১৯৪১ সালে নিউ থিয়েটারর্স ছাড়ার পর কানন তাঁর কবীর রোডের বাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। সেই সময় যদিও তাঁর অর্থনৈতিক সমস্যা চলছিল। ব্যক্তিগত জীবনও ক্রমশ সমস্যাদীর্ণ হচ্ছিল। মানসিক অবসাদও ঘনীভূত হয়। বিয়ের আগের অশোক ও পরের অশোককে কিছুতেই মেলাতে পারছিলেন না। মূল সমস্যাই ছিল অশোক মৈত্রের মতো পরিশীলিত, সুশিক্ষিত মানুষ কাননের মতো বড় স্টারকে তাঁর সবচেয়ে ভালোলাগার, নির্ভরতার অভিনয় জীবন থেকে সরে আসতে বলেন। অথচ দীর্ঘ সম্পর্কের পথ পেরিয়ে ব্যক্তিগত জীবনে প্রথম সদর্থক কিছু ঘটবে বলে তিনি আশা করেছিলেন। সদর্থক বলতে উচ্চমেধা মহলে তাঁর অবাধ যাতায়াত শুরু হয়, নিজের ক্ষেত্রের বাইরে নানা গুণী মানুষের সঙ্গে পরিচয় হয়। এছাড়া প্রথম বিবাহিত জীবনে তাঁর শাশুড়ি মা কুসুমকুমারীর অপার স্নেহ, ভালোবাসা পান। তাঁর মৃত্যুর সময়েও পাশে ছিলেন কানন। কিন্তু কোথায় যেন সুর কাটছিল।

যমুনা বড়ুয়ার সঙ্গে।

হাতে বিশেষ কাজ না থাকায় সেই সময় কানন মেট্রো সিনেমা হলে মাঝে মাঝে বিদেশি ছবি দেখতে যেতেন। সেখানে অনেক দিন পর অভিনেতা, পরিচালক প্রমথেশ বড়ুয়ার সঙ্গে তাঁর দেখা হয়। প্রমথেশ তাঁকে দেখে বুঝে যান, তিনি ভালো নেই। খুব ছোট থেকে যে সিনেমা কাননকে মুক্তির আস্বাদ দিয়ে এসেছে সেই সিনেমা থেকে তিনি না চাইলেও সরে যাচ্ছিলেন। বাবা চলে যাওয়ার পর দীর্ঘ পাঁচ বছর তিনি এবং তাঁর মা একবেলার বেশি খাবার পাননি। সিনেমায় অভিনয় তাঁর দুপুরের খাবার নিশ্চিত করে। সেটে পরিচালক, প্রযোজক, সুরকার, গীতিকার, সহ অভিনেতারা তাঁকে জীবনে অনেকটা এগিয়ে দেন। অভিনয় ক্রমশ তাঁর জীবনদর্শন হয়ে ওঠে। সেইসময় সহ অভিনেতা প্রমথেশ তাঁকে তাঁর বিপরীতে অভিনয়ের কথা বলেন। এমপি প্রোডাকশনের মুরলীধর চট্টোপাধ্যায়ের অধীনে দু’জনে কাজ আরম্ভ করেন।
আরও পড়ুন:

দশভুজা: আমি বনফুল গো: তিনিই ছিলেন ভারতীয় ছবির প্রথম সিঙ্গিং সুপারস্টার/১

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৯: ‘মেরা কুছ সামান…’ গানে সুর দেওয়ার প্রস্তাবে গুলজারকে পত্রপাঠ বিদায় জানান পঞ্চম

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৩: হৃদয়পুরের লক্ষ্যপূরণ ‘কঙ্কাবতীর ঘাট’

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৮: রামচন্দ্রের কৈশোর, ব্রহ্মর্ষি বিশ্বামিত্র: এক অনন্য উত্তরণ

ছবির (দ্বিভাষিক) নাম ছিল ‘শেষ উত্তর’ অথবা ‘জবাব’। সেই প্রথম মাস মাইনে ছেড়ে তিনি ছবি প্রতি পারিশ্রমিক পেতে শুরু করেন। প্রযোজক মুরলীধর তাঁকে এই ছবির জন্য এককালীন পঁচিশ হাজার টাকা দেন, যাতে সেই সময় তাঁর অর্থনৈতিক সমস্যার খানিকটা সমাধান হয়। প্রমথেশের পাশাপাশি তাঁর স্ত্রী যমুনা বড়ুয়াও এই ছবিতে অভিনয় করেন। যমুনা কাননকে নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতেন। কারণ, অসামান্য স্ক্রিন প্রেসেন্স ছিল তাঁর, যা যমুনার ছিল না। অথচ বিগেস্ট হিট বলতে যা বোঝায় ‘শেষ উত্তর’ ছিল তাই। সেটে দুই নায়িকার ঠাণ্ডাযুদ্ধ ১৯৫১ সালে প্রমথেশের অকালমৃত্যুর পর প্রগাঢ় বন্ধুত্ব ও নির্ভরতায় বদলে যায়। এমনই ছিলেন কানন দেবী। সবার প্রতি নজর। সবার পাশে দাঁড়ানো। সবার জন্য চিন্তা, চেষ্টা। জীবন যে অনেক কিছু দেখিয়েছিল। সেইসময়ের প্রখ্যাত প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতা, অভিনেত্রী, সুরকারদের সঙ্গে কাজ করেছেন; সম্মোহনী সৌন্দর্যের অধিকারী হয়েও কিভাবে নিজের দেহরক্ষা করা যায় তা তিনি ছোট থেকেই জানতেন। অসামান্য ব্যক্তিত্ব, আপোষহীন চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর বৌদ্ধ ভারতের প্রেক্ষিতে গড়ে তোলা ‘বাসবদত্তা’য় (১৯৩৫) তৎকালীন মথুরার এক গণিকার চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে খোলামেলা পোশাকে অসুবিধেয় পড়েন, কিন্তু নানান পন্থা অবলম্বন করে পরিস্থিতি সামাল দেন। ‘শেষ উত্তর’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে তিনি ১৯৪২ সালে বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্ট এসোসিয়েশনের (বিএফজেএ) পক্ষ থেকে সেরা অভিনেত্রীর পুরস্কার পান।

আমৃত্যু অশোক কুমারের সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব ছিল।

অথচ তাঁর ব্যক্তিগত জীবন এই সময়ে দীর্ণ হচ্ছিল। ১৯৪৫ সালে কানন বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন জানান। ‘শেষ উত্তরে’র সুরকার কমল দাশগুপ্তের সুর এবং পণ্ডিত মধুরের অনবদ্য কথা ছবির সাফল্যকে তরান্বিত করে। প্রখ্যাত গায়িকা ফিরোজা বেগমের স্বামী কমল দাশগুপ্তকে আজ দেশ ভুলে গেলেও প্রায় আট হাজার নানা ভাষার গানের স্রষ্টা ছিলেন তিনি। তাঁর মতো উদার মনের মানুষ কানন কম দেখেছিলেন। গানের ক্ষেত্রে তিনি অনেক সময় কাননের পরামর্শ নিতেন। এই ‘শেষ উত্তরে’র হিন্দি ভার্সন ‘জবাবে’ তাঁর গাওয়া ‘এ্যায় চাঁদ ছুপ না জানা’, ‘দুনিয়া ইয়ে দুনিয়া তুফান মেইল’, ‘দূর দেশ কা রহনেওয়ালা’, ‘কুছ ইয়াদ রহে তো সুনকর যা’ এরং বাংলায় ‘লাগুক দোলা’, ‘আমি বনফুল গো’, ‘যদি আপনার মনে মাধুরী’ অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়। সাউথ ইস্টার্ন রেলওয়ে তাঁর ‘দুনিয়া ইয়ে দুনিয়া তুফান মেইল’ গানটিকে দশ বছরের জন্য তাদের ‘থিম সং’ হিসেবে বেছে নেয়। তিন লাখ টাকায় তৈরি এই ছবি সাতাশ লাখের ব্যবসা করে। কানন প্রযোজকের প্রতিশ্রুতি মতো ছবির লভ্যাংশ পান। এরপর তিনি সঠিক বিনিয়োগের দিকে ঝোঁকেন। ছবির প্রযোজক মুরলীধর কৃতজ্ঞতাবশত কাননের জন্য সুসজ্জিত সাজঘর এবং বিশ্রামের ঘর তৈরি করে দেন।
আরও পড়ুন:

পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৩: যার কাছে টাকা-পয়সা থাকে এ জগতে সেই হল পণ্ডিত

গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-১: জলের তলায় তার শরীরের কোনও অস্তিত্ব নেই!

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৭: কোরবা হয়ে সাতরেঙ্গা

‘শেষ উত্তর’ মুক্তির আগের পাঁচ বছর তিনি নিউ থিয়েটারর্সের অধীনে ‘বিদ্যাপতি’, ‘মুক্তি’, সাথি, ‘সাপুড়ে’, ‘পরাজয়’, ‘হারজিত’, ‘পরিচয়ে’ অভিনয় করেন। প্রত্যেকটি ছবি ছিল দ্বিভাষিক। দেবকী বসু, প্রমথেশ চন্দ্র বড়ুয়া, ফণি মজুমদার, হেম চন্দ্র, অমর মল্লিক, নীতিন বসুর মতো পরিচালকদের সঙ্গে এইসময় কাজ করেন। এরপর স্বাধীনভাবে অর্থাৎ ছবি পিছু পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে ‘শেষ উত্তর’, ‘যোগাযোগ’, ‘রাজলক্ষ্মী’, ‘তুমি আর আমি’, ‘অ্যারেবিয়ান নাইটস’, ‘চন্দ্রশেখর’ প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য ছবিতে ১৯৪৮ সাল পর্যন্ত অভিনয় করেন। ১৯৪৬ এর দাঙ্গা এবং ১৯৪৭ এর বাংলা বিভাজনের কারণে সেই সময় বাংলা ছবির কাজ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। পূর্ব পাকিস্তানে কলকাতাকেন্দ্রিক বাংলা ছবির বাজার শেষ হয়ে যায়। বিভিন্ন স্টুডিওর বদলে একক প্রযোজনা সংস্থা এবং ডিস্ট্রিবিউটররা ছবির ভাগ্য নির্ধারণ করতে শুরু করেন।

১৯৪৭ সালের গ্রীষ্মে তিনি ইউরোপ ও আমেরিকা ভ্রমণে যান। সেই বছর প্রথম দেশের স্বাধীনতা উদযাপন উপলক্ষ্যে ইন্ডিয়ান হাই কমিশন, ইংল্যান্ড থেকে তাঁকে গান গাইতে বলা হলে তিনি সঠিক ভাবে গেয়েছিলেন বিশ্ব কবির ‘আমাদের যাত্রা হলো শুরু’। সেই সময় লন্ডনের গ্রামাফোন কোম্পানি লিমিটেড তাঁদের ‘দ্য কুইন অফ মেলডি ফ্রম ইন্ডিয়া’র জন্য কেক, চকোলেট এবং ফটোসেসনের ব্যবস্থা করে। ওই সময়ে আমেরিকায় তাঁর ভিভিয়ান লেইহ, ক্লার্ক গ্যাবেল, স্পেনসর ট্রেসির মতো হলিউডের বিখ্যাত অভিনেতাদের সঙ্গে দেখা ও কথা হয়।

স্বামী হরিদাস ভট্টাচার্য ও পুত্র সিদ্ধার্থের সঙ্গে।

দেশে ফিরে নানা সরকারী অনুষ্ঠানে কানন দেবীর উপস্থিতি বজায় ছিল। এমনই এক অনুষ্ঠানে ১৯৪৯ সালে তাঁর পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন রাজ্যপাল ড. কেএন কাটজুর এডিসি, নৌসেনা অফিসার হরিদাস ভট্টাচার্যের সঙ্গে দেখা হয়। হরিদাস অত্যন্ত সুদর্শন, বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার হাসিখুশি মানুষ ছিলেন। সেই প্রথম দেখাতেই তাঁরা একে অপরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। মুগ্ধতা থেকে রোজের কথাবার্তা থেকে বিয়ের প্রস্তাব কানন মেনে নেন। এবার আর জীবন তাঁকে নিরাশ করেনি। এই দ্বিতীয় বিবাহের মাধ্যমে কাননের সামাজিক প্রতিষ্ঠা আরও সুদৃঢ় হয়। যথার্থ সঙ্গী বলতে যা বোঝায় হরিদাস ভট্টাচার্য ছিলেন কানন দেবীর জীবনে তাই। সব অর্থেই তিনি নায়িকার জীবন বদলে দেন। দূরদর্শী ও সুশিক্ষিত এই মানুষটি তাঁকে সহায়তা করতে গিয়ে নিজেই বাংলা ছবির সফল পরিচালকে পরিবর্তিত হন। যে বিবাহিত জীবন পাঁচ বছরও স্থায়ী হবে না বলে নানা মুনি মতামত দেন, সেই জীবন তাঁদের দত্তক পুত্র সিদ্ধার্থকে নিয়ে প্রায় তিরিশ বছর স্থায়ী হয়। কানন দেবীর স্বামী হয়ে জীবনযাপন হরিদাসের পক্ষে কোনও সহজ কাজ ছিল না, কলকাতা থেকে বম্বে হয়ে লাহোর পর্যন্ত তাঁর স্ত্রীর অনুরাগী, ভক্তদের অবস্থান ছিল। কিন্তু নিজের দৃঢ় চরিত্রের কারণে তিনি নায়িকাকে সুস্থ সংসার জীবন দিতে পেরেছিলেন।
আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১২: সকালবেলার আগন্তুক

হাঁসফাঁস গরমে মুখে রুচি নেই, কোন কোন টক জাতীয় খাবারে স্বাদ ফিরে পাবেন?

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬১: চাষাবাদ নিয়েও রবীন্দ্রনাথ ভেবেছেন

সফল প্রযোজক হিসেবে ১৯৪৯ থেকে ১৯৬৫ পর্যন্ত কানন দেবী কাজ করে যান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ‘মেজ দিদি’, ‘দর্পচূর্ণ’, ‘দেবত্র’, ‘আঁধারে আলো’, ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’, ‘অভয় ও শ্রীকান্ত’। কিন্তু ক্রমশ সিনেমা তৈরির ক্ষেত্রে অভিনেতা, অভিনেত্রীদের স্টার ইমেজ, চিত্রনাট্যে তাঁদের খবরদারি ও নতুন প্রজন্মের সফল নায়ক নায়িকারা এসে পড়ায় তিনি ধীরে ধীরে নিজেকে তাঁর পারিবারিক পরিসরে গুটিয়ে নেন। কিন্তু সমাজ সেবামূলক কাজ তিনি করে যেতে থাকেন। এরমধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ছিল ১৯৬৯ সালে মহিলা শিল্পী মহলের প্রতিষ্ঠা। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বিগত দিনের অভিনেতা, অভিনেত্রীদের থাকা, খাওয়া এবং অর্থনৈতিক সাহায্য করতে থাকেন। কেউ তাঁর বাড়ি থেকে সাহায্য চেয়ে খালি হাতে ফেরত যেত না। সুচিত্রা সেন থেকে মাধবী মুখোপাধ্যায় সকলে তাঁকে নিজেদের মেন্টর, বড় দিদির মতো দেখতেন।

সুচিত্রা সেনের সঙ্গে।

যিনি ছোটবেলা থেকে প্রায় কিছুই পাননি, শৈশব কি জানতেন না, খেলাধুলা কি জানতেন না, জানতেন শুধু বিবিধ চরিত্রের সঠিক রূপায়ণ ও অভিনয়, সিনেমা এবং বাস্তব যাঁর জীবনে এক হয়েছিল, সেই কানন দেবীর (১৯৭৭ সালে জানুয়ারি মাসের এক বিকেলে) দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার পাওয়ার দিন দিল্লির বিজ্ঞান ভবনে উপস্থিত বিশিষ্ট অতিথিদের করতালি থামছিল না। তিনি পেয়েছিলেন স্বর্ণকমল, কুড়ি হাজার টাকার ক্যাশ প্রাইজ এবং একটি শাল। ভারতের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট তাঁকে বলেন, ‘ম্যাডাম আপনাকে সম্মানিত করতে পেরে আমরা খুশি। অনেক আগেই আপনার এই পুরস্কার পাওয়া উচিত ছিল’। তিনি এই পুরস্কার তাঁর অতি প্রিয় ভারতীয় চলচ্চিত্র জগতকে উৎসর্গ করেন। এছাড়া সারা জীবনের কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯৯১ সালে তাঁকে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডি লিট দেওয়া হয়। এই মহীয়সী তাঁর শেষ জীবন পুত্র, পুত্রবধূ ও নাতিদের নিয়ে নিতান্ত সাধারণভাবে কাটানোর পর ১৯৯২ সালের ১৭ জুলাই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন, আর রেখে যান ভারতীয় অভিনেত্রীদের সেই ধারা যাতে অনেকেই পরবর্তীতে মহানায়িকা হিসেবে পরিচিত হন।—শেষ

ঋণ: মেখলা সেনগুপ্ত, সোমা ভট্টাচার্য, বিক্রমাদিত্য মোতওয়ানে।
* লেখিকা পরিচিতি: ড. বিদিশা মিশ্র বিগত চৌদ্দ বছর ধরে সরকারি কলেজে, বর্তমানে কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত। তাঁর বিষয়— সংস্কৃত ভাষা ও সাহিত্য। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতি ছাত্রী বিদিশা স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম শ্রেণিতে তৃতীয় হন। তাঁর গবেষণার বিষয় ছিল —বাঙালি নৈয়ায়িক চিরঞ্জীব ভট্টাচার্যের গ্রন্থ কাব্যবিলাস। তাঁর এই গবেষণা ২০২১ সালে কর্ণাটকের আইএনএসসি পাবলিশিং হাউস থেকে ‘দ্য কাব্যবিলাস অফ চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য — এ ক্রিটিক্যাল স্টাডি’ শিরোণামে প্রকাশিত হয়। দেশের বিভিন্ন প্রদেশের পত্রিকায় তাঁর শোধপত্র প্রকাশিত হয়েছে। বর্তমানে তাঁর তত্ত্বাবধানে একাধিক স্কলার গবেষণারত। বিভিন্ন সরকারি কাজকর্ম ও অধ্যাপনার পাশাপাশি তিনি গুরুজি বিপ্লব মুখোপাধ্যায়ের কাছে হিন্দুস্থানী ক্লাসিক্যাল শিক্ষারতা। ভ্রমণপিপাসু বিদিশা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন স্থান ঘুরেছেন, সেইসব অভিজ্ঞতা তাঁকে সমৃদ্ধ করেছে বলে তিনি মনে করেন।

Skip to content