রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

 

অভ্যন্তরীণ পরীক্ষা-নিরীক্ষা

এতক্ষণ জমির গুণাবলির ব্যাপারে যা বলা হল, তা একান্তই বাহ্যিক অর্থাৎ জমির উপরিভাগের নিরীক্ষণ বা পরীক্ষা৷ এবার জমির অভ্যন্তরীণ বা জমির অন্তর্ভাগের মাটির পরীক্ষার সম্বন্ধে সাধারণভাবে জানানো হচ্ছে৷
জমির কেন্দ্রস্থল নির্ধারণ করে সেই স্থানে ১৮ x ১৮ মাপের গর্ত ১৮” গভীরতায় করতে হবে৷ এরপর সেই গর্তটি জল দিয়ে সম্পূর্ণ ভরতি করে দিতে হবে৷ এবার জলপূর্ণ গর্ত থেকে ১০০ ফুট দূরে হেঁটে গিয়ে ফিরে আসা বা পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করার পর গর্তে জলের পরিমা—ণ পরীক্ষা করে দেখতে হবে৷ যদি দেখা যায় জলের পরিমাণকে আছে তবে জমিটি উত্তম, যদি অল্প কমে গিয়ে থাকে তবে মধ্যম এবং যদি অনেকটা কমে যায় তবে জমিটি অনুপযুক্ত বলে মনে করতে হবে৷

উপরের পরীক্ষায় যদি দেখা যায় যে, জলস্তর এক চতুর্থাংশের কম, তবে জমিটি উত্তম৷ যদি ৫০ শতাংশের কম হয় তবে জমিটি মধ্যম এবং যদি ২৫ শতাংশেরও কম হয় তবে জমিটি অধম৷ এই পরীক্ষাটির সাহায্যে জমির জল শোষণ ক্ষমতা, অবিরলতা ও মাটির নীচের জলস্তরের পরিমা—ণ সম্বন্ধে ধারণা করা যায়৷ আবার যদি জমির জল খুব কম শোষণ করে তবে সর্বোত্তম৷ এ জিমিতে বাড়ি তৈরির সময় সাধারণ বনিয়াদই যথেষ্ট৷ অর্ধেক জল শোষিত হলে বনিয়াদের গভীরতা বেশি করতে হবে এবং জলস্তর ২৫ শতাংশ বা তার চেয়ে নীচে চলে গেলে বনিয়াদের গভীরতা আরও অনেক বেশি বাড়াতে হবে যা বর্তমানকালে খুবই ব্যয়সাপেক্ষ৷

এ ছাড়া আরও একটি পরীক্ষা সাধারণভাবে করা যেতে পারে৷ যেমন, জমির যে কোনও জায়গায় একটি গর্ত করে তার তেকে যে মায়ি বার হবে সেই মাটি আলতো করে অর্থাৎ বেশি জোর না দিয়ে আবার গর্তে ঢেলে দিতে হবে৷ এতে যদি দেখা যায় যে কিছু মাটি বেশি রয়ে গিয়েছে তবে মনে করতে হবে জমিটি উত্তম৷ যদি গর্তটি সম্পূর্ণভাবে ভরে যায় তাহলে জমিটি মধ্যম মানের এবং গর্তটি যদি নিষ্কাষিত মাটিতে না ভরে তবে জমিটি নিকৃষ্ট অর্থাৎ পরিত্যাজ্য৷

আধুনিক বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গিতে আগের পরীক্ষার ফলে মাটির ঘনত্ব ও তার ভারবহনের ক্ষমতা সম্বন্ধে ধারণা করা যায়৷ নিষ্কাষিত মাটি গর্ত ভরাটের পর বেশি থাকলে তা মাটির ঘনত্ব ও ভারবহনের ক্ষমতার উৎকৃষ্টতা সম্বন্ধে নির্দেশ করে৷ যদি সমান হয় তবে ঘনত্ব ও ভারবাহী ক্ষমতা মধ্যম মানের এবং যদি গর্তটি ভরাট না বয় তবে মাটির ধারণ ক্ষমতা ও ঘনত্ব নিকৃষ্ট মানের পরিচায়ক৷ এটি আধুনিক ‘সয়েল মেকানিক্স’ তত্ত্বের অন্যতম অঙ্গ বলে প্রমাণিত৷ কিন্তু এই বিধিটি বাস্তবিকভাবে পৌরাণিককাল থেকেই চলে আসছে৷ এর ফলে আমরা আমাদের শাস্ত্রাদির উপর আস্থা রাখতে পারি৷

খাত পরীক্ষা করে শল্যদের সম্বন্ধে জানা যায়৷ জমির খননকালে যদি মাটিতে মানুষ, জীবজন্তু, সরীসপ ওও পাখিদের অস্থি বা হাড় পাওয়া যায় তবে সেই জমিতে শল্যদোষ আছে বলে জানতে হবে৷ এ ছাড়া বৃক্ষাংশ অথবা আগুনে পোড়া গাছের অংশ, কয়লা, ইট, লোহার অংশ, সীসা ইত্যাদি থাকলেও সেই জনিতে শল্যদোষ আছে৷ শল্যদোষ কাটিয়েই তবে এই জমিতে বাড়ি করা উচিত৷

শল্যদোষ আছে কি না জানার আরও তিনটি প্রণালী আছে৷ যথা: সূত্র, প্রশ্ন ও পদছায়া৷ বাড়ি তৈরি করার জন্য প্রথমেই জমি কিনতে হবে৷ জমি কেনার আগে বাছাইয়ের কাজটিসত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে করতে হবে৷
বসত বাড়ির জন্য অথবা অন্য প্রয়োজনে ভবন নির্মাণে জীবিত জমি বেছে নিতে হবে৷ যে জমিতে গাছপালা আছে অথবা যে জমিতে ভালো ফসল ফলে সেই জমিকেই জীবিত জমি বলা হয়৷ এর বাইরের জমি মৃত৷ ঊষর বা অনেকদিন ধরে পড়ে আছে এমন পরিত্যক্ত জমি বাড়ি তৈরির জন্য নেওয়া উচিত নয়৷ ফুটিফাটা, হাড়গোড় পড়ে থাকা, উই-ধরা উঁচু-নিচু জমি বাড়ির পক্ষে কখনও ভালো হয় না৷ এই ধরনের জমি কিনলে অর্থনাশ হবে৷ ফুটিফাটা জমি প্রাণনাশকারী হয়৷ ঊষর জমি ধনসম্পদ নাশকারী, হাড়গোড়যুক্ত জমি সর্বদা ক্লেশযুক্ত সৃষ্টিকারী ও উঁচু-নিচু জমি শত্রুবৃদ্ধিকারী হয়৷ বৃহৎসংহিতায় এ সব কথা বলা হয়েছে৷
 

ভূমির শ্রেণিবিভাগ

ভূমিকে চারটি শ্রেণিতে বিভাজিত করা হয়েছেষ যথা: গজপৃষ্ঠ, কূর্মপৃষ্ঠ, দৈত্যপৃষ্ঠ ও নাগপৃষ্ঠ (জ্যেতিষ নিবন্ধ)৷
গজপৃষ্ঠ : দক্ষিণ, পশ্চিম, নৈর্ঋত ও বায়ব্য কোণের দিকের উঁচু জমি হল গজপৃষ্ঠ৷ এরকম জমিতে বাড়িঘর করে বসবাস করলে মানুষ ধনসম্পদ-ঐশ্বর্যে পরিপূর্ণ থাকে এবং তার আয়ু বাড়ে৷
 

কূর্মপৃষ্ঠ

মাঝখানে উঁচু এবং চারদিকে নিচু জমিকে কূর্মপৃষ্ঠ বলা হয়৷ কূর্মপৃষ্ঠ জমিতে বাড়ি করে বসবাস করলে প্রতিদিন উৎসাহ বৃদ্ধি হয়৷ প্রচুর পরিমাণে ধনধান্য বৃদ্ধি ও প্রতিষ্ঠা লাভ হয়৷
 

দৈত্যপৃষ্ঠ

পূর্ব, অগ্নি, ঈশান কোণে উঁচু ও পশ্চিম দিকে নিচু জমিকে দৈত্যপৃষ্ঠ ভূমি বলা হয়৷ দৈত্যপৃষ্ঠ ধরনের জমিতে বাড়ি করলে ধন, পুত্র ও পশু ইত্যাদির হানি ঘটে৷
 

নাগপৃষ্ঠ

পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে লম্বা ও উত্তর এবং দক্ষিণ দিকে উঁচু ও মাঝখানে কিছুটা নিচু জমিকে নাগপৃষ্ঠ জমি বলা হয়৷ এরকম জমিতে বসবাসকারীর মৃত্যুভয়, স্ত্রী-পুত্রাদি হানি এবং পদে পদে শত্রুবৃদ্ধি ঘটে থাকে৷—চলবে

* বাস্তুবিজ্ঞান (Vastu Shastra): সুরেন্দ্র কাপুর (Surendra Kapoor), বিশিষ্ট বাস্তুবিদ।

Skip to content