শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

চুম্বকত্বের শক্তি এমনিতে দেখা যায় না৷ কিন্তু চুম্বক যখন কোনও ধাতুর টুকরোকে নিজের শক্তির দ্বারা টেনে আনে বা আকর্ষণ করে সেটা কিন্তু সকলেই পরিষ্কারভাবে দেখতে পায়৷ একটি পদার্থ যা লোহা-সহ অন্য কয়েকটি ধাতুকে আকর্ষণ করে তাকে বলে চুম্বক৷ প্রতিটি চুম্বকে দুটি দণ্ড থাকে যাতে চৌম্বকীয় তত্ত্ব থাকে৷ যে এলাকায় চৌম্বকীয় শক্তি প্রভাব বিস্তার করে তাকে চৌম্বকীয় ক্ষেত্র বা ‘ম্যাগনেটিক ফিল্ড’ বলা হয়৷ এই পৃথিবীটাই একটা বিশাল চুম্বক৷ এ চৌম্বকীয় দণ্ড দুটি হল ভৌগোলিক উত্তর মেরু
ও দক্ষিণ মেরু৷ একটি চৌম্বকীয় দণ্ড পৃথিবীর উত্তর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রকে আকর্ষণ করে, অপর দণ্ডটি দক্ষিণের চৌম্বকীয় ক্ষেত্রকে আকর্ষণ করে৷

ভৌগোলিক উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু পৃথিবীর অক্ষরেখায় অবস্থান করে এবং এই অক্ষরেখাকে কেন্দ্র করেই পৃথিবী ঘুরছে৷ এই রেখা অবস্থানই পৃথিবীর চৌম্বকীয় ক্ষেত্রকে বোঝাচ্ছে৷ যে স্থানগুলি এই রেখাগুলির কাছাকাছি এসেছে সেই স্থানটি সব চেয়ে বেশি শক্তিশালী৷
 

দিকনির্ণয় যন্ত্র বা কম্পাস

কম্পাস বিভিন্ন দিক নির্ণয় করে৷ প্রায় এক হাজার বছর আগে চিনারাই প্রথম কম্পাস বা ম্যাগনেটিক কম্পাসের ব্যবহার শুরু করেছিল৷ এই ম্যাগনেটিক কম্পাসের ভিতরে একটি কাঁটা থাকে৷ এটি অনায়াসে এক দিক থেকে আর এক দিকে ঘোরে৷
 

কম্পাস ব্যবহারের নিয়ম

অন্ততপক্ষে ২ ইঞ্চি ব্যাসের উন্নতমানের কম্পাস হাতে নিয়ে ৩৬০ ডিগ্রি চক্রাকারে স্কেলটি দেখতে হবে৷ কম্পাসে ইংরেজি ‘N’ বোঝায় নর্থ অথবা উত্তর, ‘S’ বোঝাচ্ছে সাউথ বা দক্ষিণ৷ অনুরূপে ‘E’ বোঝাচ্ছে ইস্ট বা পূর্ব, ‘W’ বোঝাচ্ছে ওয়েস্ট বা পশ্চিম, ‘SE’ বোঝাচ্ছে সাউথ-ইস্ট বা দক্ষিণ-পূর্ব, ‘NE’ বোঝাচ্ছে নর্থ-ইস্ট বা উত্তর-পূর্ব, ‘SW’ বোঝাচ্ছে সাউথ-ওয়েস্ট বা দক্ষিণ-পূর্ব এবং ‘NW’ বোঝাচ্ছে নর্থ-ওয়েস্ট বা উত্তর-পশ্চিম৷ এইভাবে কেন্দ্রবিন্দু থেকে ৮টি দিকে রেখা চলে গিয়েছে৷ এর যে কোনও দুটি মধ্যস্থ কোণ হবে ৪৫ ডিগ্রি৷

 

উত্তর দিক নির্ণয়ে কম্পাস ব্যবহার বিধি

কম্পাস ব্যবহার করে জমির উত্তর দিক খুঁজে বের করার আগে জমির মোটামুটি মাঝখানে ৮ ইঞ্চি x ৮ ইঞ্চি স্থানটি পরিষ্কারের পরে সমতল করে নিয়ে তাতে কম্পাসটি রাখতে হবে৷ দেখা যাবে কম্পাসের মধ্যস্থলে অবস্থিত কাঁটাটি এ দিক ও দিকে ঘুরতে ঘুরতে কাঁটার মাথায় অবস্থিত লাল চিহ্নিত একটি বিশেষ স্থানে এসে থমকে যাবে৷ তখন আস্তে আস্তে কম্পাসটা এরকমভাবে ঘোরাতে হবে যাতে ‘N’ লেখা অক্ষরটা লালচিহ্নের তলায় চলে যায়৷ এতে দেখা যাবে কাঁটা উত্তর-দক্ষিণ দিকে অক্ষাংশ চলে গিয়েছে এবং লাল চিহ্নযুক্ত দিকটিও চৌম্বকীয় উত্তরের দিকে চলে গিয়েছে৷

যদি জমির ধারে ইতিমধ্যেই রাস্তা হয়ে গিয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে দেখতে হবে জমির সীমানাগুলো যেন চৌম্বকীয় অক্ষের লাইনে থাকে৷ এখন কম্পাসটি এক দিক থেকে আর এক দিকে ঘোরালে কাঁটাটি থেমে যাবে এবং চৌম্বকীয় উত্তর দিকটি নির্দিষ্ট করবে, যেমনটি এখানে বর্ণনা করা হয়েছে৷ এখন দেখতে হবে জমির সীমানাগুলি অক্ষরেখার লাইনে পড়েছে কি না৷ যদি না পড়ে থাকে তা হলে কম্পাসটিকে আস্তে আস্তে ঘোরাতে হবে যাতে জমির সমদ্বিখণ্ডক রেখা ‘N’-এ গিয়ে পড়ে৷

এ ক্ষেত্রে লাল চিহ্নিত কাঁটা ও অক্ষরের মধ্যে ডিগ্রির তফাত বুঝিয়ে দেবে জমিটি কতটা প্রতিকূল দিকে সরে আছে৷ যদি এই সরে আসা ১০ ডিগ্রি হয় তা হলে জমিটি ভালোই বলে গণ্য করতে হবে৷ এই প্রতিকূল দিক যদি বেশি হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে বাস্তুবিদদের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন৷

 

কম্পাসের সাহায্যে জমির দিক, অঞ্চল ও কোণ নির্ণয়

আধুনিক কম্পাসের সাহায্যে প্রচলিত চারটি প্রধান দিক: উত্তর, দক্ষিণ, পূর্ব ও পশ্চিম শুধু নির্ণয় করা যায় তাই নয়, এই চারটি প্রধান দিকের বাইরেও যে কোনও কোণই নির্ণয় করা সম্ভব৷ প্রথমে জমির ব্রহ্মস্থান নির্ণয় করতে হবে৷ তারপর আধুনিক এই কম্পাসের সাহায্যে যে কোনও কোণই অতি সহজে নির্ণয় করা সম্ভব৷ নীচের চিত্রের সাহায্যে তা দেখানো হল৷

* বাস্তুবিজ্ঞান (Vastu Shastra): সুরেন্দ্র কাপুর (Surendra Kapoor), বিশিষ্ট বাস্তুবিদ।

Skip to content