বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর, ২০২৪


পঞ্চদেবের আরাধনা করলেই সতত ভাগ্যবান হওয়া যায়। আমাদের শরীর পাঞ্চভৌতিক তত্ত্বকে অনুসরণ করে থাকে। এই পাঁচটির মধ্যে প্রত্যেকটির বিশেষ বিশেষ স্থান আছে। পরস্পরের সহযোগিতায় শরীরে গতি আসে। মানব শরীরকে পূর্ণব্রহ্ম বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আবার পঞ্চ ভৌতিক তত্ত্বের অধিষ্ঠাতা পঞ্চদেব। এই পঞ্চদেবের পুজো করা অবশ্য কর্তব্য। পঞ্চদেবের পুজো করলেই বাস্তু পুরুষ সহ ৩৩ কোটি দেব দেবীর পুজো করা হয়। কারণ সমস্ত দেবদেবীর উৎপত্তি পঞ্চ ভৌতিক তথ্য থেকেই।

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ উদ্ভবকে ৮ প্রকার বিগ্রহের কথা বলেছেন। যেমন পাথর, কাঠ, লোহা ও সোনা ইত্যাদি ধাতু দিয়ে নির্মিত ভিত্তি ইত্যাদির উপরে উৎকীর্ণ ফলক অথবা চিত্রপটে চিত্রিত বালুকণা নির্মিত মানসী ও মনি ইত্যাদি রত্ন নির্মিত বিগ্রহ হয়ে থাকে।
 

বিগ্রহ

বাড়িঘরে বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে। এই বিগ্রহের আকার প্রমাণ অঙ্গুষ্ঠ থেকে বিতস্তি অর্থাৎ এক বিঘত পর্যন্ত বলা হয়েছে।
এরকম ভাবে মন্দিরও বাড়িঘরে স্থাপিত-বিগ্রহের মধ্যে পার্থক্য থাকে। বাড়িঘরের ছবিতে ঠাকুরের আকার কী হবে এবং বিদ্রোহের আকারই বা কী হবে তার কোনও বাধা ধরা নিয়ম নেই। তবে ছবিতে ঠাকুরের একটি নির্দিষ্ট আকার থাকা উচিত। ঘরে বসে যারা পুজো করেন সেই নিষ্ঠাবানদের বিগ্রহের মূর্তির সংখ্যা প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন।

আরও পড়ুন:

বাস্তুবিজ্ঞান, পর্ব-১৮: বাস্তু মতে আপনার বাড়ির প্রধান প্রবেশদ্বার কোন দিকে হওয়া উচিত?

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ: হার্টের অসুস্থতায় বুকের ব্যথায় ভুগছেন? আয়ুর্বেদ মতে কীভাবে মোকাবিলা করবেন? রইল সমাধান

এ সম্পর্কে বিগ্রহ বা সংখ্যাগুলির বিষয়ে কিছু বাধা-নিষেধের কথা বলা হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে একই ঘরে দুটি শিবলিঙ্গ দুটি সালগ্রাম শিলা দুটি গৌতমী চক্র দুটি সূর্য তিনটি দুর্গার বিদ্রোহ তিনটি গনেশ ও দুটি শঙ্খ রাখা ঠিক নয়। এ নিয়ম মেনে না চললে অনিষ্ট হয়।

এরকম ভাবেই যে অগ্নিদগ্ধ এবং যার অঙ্গ খণ্ড-বিখণ্ড হয়ে গিয়েছে এমন সব বিগ্রহ পুজো না করার বিধান আছে।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৮: চলতে চলতে ‘সাহেব বিবি ও গোলাম’

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৯: হ্যাচারিকে কাজে লাগিয়ে বছরভর মাছ চাষ করে আয় সুনিশ্চিত করা সম্ভব

 

পঞ্চদেব

উপাসনাকারীদের অভষ্ট সিদ্ধি প্রদান করার জন্য পরমব্রম্ভীর বহুবিধ রূপের কল্পনা করা হয়েছে আমাদের নানা শাস্ত্রে সেগুলির মধ্যে শ্রীনারায়ণ পঞ্চতত্ত্ব গুলির অধিষ্ঠাতার রূপে পঞ্চবিধ বর্ণনা দেখতে পাওয়া যায়।

অর্থাৎ আকাশ তথ্যের অধিষ্ঠাতা বিষ্ণু, অগ্নির অধিষ্ঠাত্রী দেবী দুর্গা বায়ু তত্ত্বের অধিষ্ঠাতা সূর্য, পৃথিবী তত্ত্বের অধিষ্ঠাতা শিব এবং জল তত্ত্বের অধিষ্ঠাতা গণেশ এ থেকে এটাই বোঝা যায় যে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য নৃত্যকর্ম ও নিত্য পূজোয় পাঁচটি তত্ত্বের সমাবেশ ঘটেছে এই পাঁচটি তথ্যই হল সাক্ষাৎ পরমেশ্বমের স্বরূপ।

আরও পড়ুন:

তুষারপাতের সেই দিনগুলি, পর্ব-৮: প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মোড়া উইসকনসিনে মন খারাপের কোনও অবকাশই নেই

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৪৯: রাবণ-মারীচ সংবাদ এগোল কোন পথে?

সনাতন ধর্মে নিম্নলিখিত স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। শৈব, শাক্ত, বৈষ্ণব, সৌর, গাণপত্য — সেই দেবতাকে কেন্দ্রে রেখে এবং অন্য দেব দেবীকে দিক অনুসারে প্রতিষ্ঠিত করে পুজো করতে হবে। প্রকৃতপক্ষে পাঁচজনেরই পুজো করা হয়, নামই বিভিন্ন হলেও তত্ত্বের দিক থেকে এই পাঁচজনই কিন্তু এক।
পঞ্চায়তন দেবতাদের স্থানের নিয়ম আছে। এই অনুসারে এদের স্থাপন করতে হবে। এই নিয়ম অমান্য করলে ক্ষতি হয়। বিভিন্ন দেবতার পঞ্চায়তোর নাম মন্ত্রের সঙ্গে দেওয়া হচ্ছে। গৃহস্থরা ঘরের পুজোয় ঠিকভাবে গ্রহ দেবতাদের স্থাপন করে পুজো করতে পারেন এবং এরকম ভাবে তারা যদি শাস্ত্রসম্মত পুজো করেন তাহলে লাভবান হতে পারেন দেবদেবী প্রতিষ্ঠা করলে সংসারের কল্যাণের পথ হয়ে ওঠে প্রশস্ত।—চলবে
* বাস্তুবিজ্ঞান (Vastu Shastra): সুরেন্দ্র কাপুর (Surendra Kapoor), বিশিষ্ট বাস্তুবিদ।

Skip to content