রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

বাস্তুশাস্ত্র বাড়ির কোন অংশ কোন দিকে থাকলে ভালো হয়, তা নির্দিষ্ট করে বলে দেয়। এটিই মূলত বাস্তুশাস্ত্রের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এই নির্দেশ মেনেই বাড়ি তৈরি হলে তার পর সেই অন্য বাস্তুনির্দেশ উপস্থিত হয়। এই ক্রম অনুসরণ করে চললে প্রথমেই জেনে নেওয়া দরকার বাড়ির কোন অংশে শোয়ার ঘর থাকা উচিত!

মানসিকতা, রুচি এবং অর্থ অনুযায়ী শোয়ার ঘরও ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে। বাস্তুশাস্ত্র মতে, শোওয়ার ঘরটা সুন্দর নির্জন ও শান্ত পরিবেশ হতে পারলে ভালো।
কর্তার শোয়ার ঘর করা উচিত বাড়ির দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। তাঁর শোয়ার খাট থাকবে দেওয়াল থেকে অন্তত ৩ ইঞ্চি দূরে। দক্ষিণ দিকে মাথা করে শোবেন। পা থাকবে উত্তর দিকে। কোনও মতেই মাথা যেন উত্তর দিকে না থাকে। তার বিজ্ঞানসম্মত কারণ হচ্ছে মানুষের মাথা দেহের অন্যান্য অংশের চেয়ে ভারী। উত্তর দিকে মাথা রেখে ঘুমোলে নানান রকম রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। কারণ, উত্তর মেরু এবং দক্ষিণ মেরু শরীরের উপর প্রভাব বিস্তার করে।
 

ছেলের শোয়ার ঘর

ছেলে যদি বিবাহিত হয় তার শোয়ার ঘরের অবস্থান হবে বাড়ির দক্ষিণ পূর্বে। এটা যেহেতু আগ্নেয় কোণ সেহেতু বিবাহিত জীবন যাপনের পক্ষে সুখকর। ছেলে যদি অবিবাহিত হয় বা ছাত্র অবস্থায় থাকে তাহলে তাকে পূর্বে অথবা উত্তরের ঘরে শোয়ার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। বিদ্যার্থীরা মাথা পূর্ব দিকে রেখে ঘুমোলে ভালো।

আরও পড়ুন:

বাস্তুবিজ্ঞান, পর্ব-২০: বাড়িতে ঠাকুর প্রতিষ্ঠা করতে চান? কোন দিকে দেবদেবীদের রাখা শাস্ত্রসম্মত?

আপনার নামের প্রথম অক্ষর কি ‘এ’? তাহলে জ্যোতিষশাস্ত্র মতে আপনি কিন্তু এই সব গুণের অধিকারী

 

কন্যার শোয়ার ঘর

কন্যার শোয়ার ঘর হবে উত্তর-পশ্চিম দিকে। কারণ জ্যোতিষ মতে, এটি চন্দ্র স্থান এবং সঙ্গীত ও কলার পক্ষে শুভ।
 

কিশোরের শোয়ার ঘর

কিশোরদের শোয়ার ঘর হবে, পশ্চিম দিকে। শোয়ার খাটকে ঘরের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে রাখতে হবে। কিশোরদের মাথা পূর্ব দিকে রেখে শোয়া চলে। শোয়ার খাট যেন দেয়ালকে স্পর্শ না করে।

আরও পড়ুন:

পর্দার আড়ালে, পর্ব-৩৫: বাঘের কাছ থেকে চাবি আনতে গিয়ে বাঘা রুপী রবি ঘোষের অবস্থা কী হয়েছিল সহজেই অনুমেয়

লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৩: চলচ্চিত্রের চিওরুসকিউরো: গ্রিফিথ ও রবার্ট ওয়াইন

 

ঠাকুর ঘর

ঠাকুর ঘরের অবস্থান বাড়ির উত্তর-পূর্ব দিকে হওয়া অবশ্যই বাঞ্ছনীয়। এটি জ্যোতিষ মতে বৃহস্পতি স্থান এবং বৈজ্ঞানিক মতে এই দিক ধনাত্মক শক্তির প্রাচুর্যে ভরা। এই কারণে দেবস্থানের জন্য এই দিক উৎকৃষ্ট স্থান। বিদ্যার্থীরা এই দিককার ঘর ব্যবহার করতে পারে এবং যোগব্যায়াম বা সাধনা করার পক্ষে এই দিক উৎকৃষ্ট। মালিকানা যুক্ত ফ্লাট বাড়িতে উত্তর পূর্ব দিকে ঠাকুর ঘর নির্মাণ করার উপায় না থাকলে পরিবর্তে ব্রহ্মস্থানে ছোট করে ঠাকুর ঘর নির্মাণ করা যেতে পারে ।

ঠাকুর ঘরের মাথা পিরামিডের আকারে করা বাঞ্ছনীয়। ধ্যান করার সময় পিরামিড আকৃতির এই ঠাকুর ঘর মনসংযোগ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। দেবতার বিগ্রহ অবশ্যই পশ্চিম দিকে থাকা বাঞ্ছনীয় আর পূজারীর মুখ যেন থাকে পূর্ব দিকে। দেবতার মুখ পূর্ব বা উত্তর দিকেও করা যেতে পারে কিন্তু মা কালী ছাড়া অন্য দেবদেবীর মুখ দক্ষিণ দিকে রাখা স্বাস্থ্যসম্মত নয়।

আরও পড়ুন:

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১৯: কেস জন্ডিস

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১: সুন্দরবনের শেকড়ের খোঁজে

 

আলমারি ও শৌচাগার

ঘরের সংলগ্ন শৌচাগার উত্তর-পশ্চিম অথবা দক্ষিণ-পূর্বে করতে হবে। ওই ঘরের দরজা উত্তর বা পূর্বে রাখা উচিত। প্রধান আলমারি ঘরের দক্ষিণ পশ্চিমে খাটের পাশে এমনভাবে রাখতে হবে যার মুখ থাকবে উত্তর দিকে। ওই আলমারিতে গৃহকর্তা তাঁর মূল্যবান কাগজ, দলিলপত্র এবং টাকা পয়সা রাখবেন। কারণ ওই উত্তর দিকই হচ্ছে কুবেরের দিক। দক্ষিণ-পশ্চিমে ভারী আলমারি রাখা সম্ভব না হলে কর্তার ঘরের উত্তরে ছোট আলমারিতে টাকা পয়সা রাখা যেতে পারে।

* * বাস্তুবিজ্ঞান (Vastu Shastra): সুরেন্দ্র কাপুর (Surendra Kapoor), বিশিষ্ট বাস্তুবিদ।

Skip to content