রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


রং দিয়েই চেনা যায় মন। ছবি: সংগৃহীত

স্বাস্থ্য ও মনের ওপর রঙের প্রভাব অনেক। আকর্ষক রঙের পরিবেশে মনও থাকে আনন্দে পরিপূর্ণ। একঘেয়ে ভাব কেটে যায়। নিরাশা দূর হয়ে যায়। বিভিন্ন ধর্মীয় কর্মে সিঁদুরের লাল, হলুদের পীত, পাতার সবুজ, আটার সাদা রং ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। এগুলি সবই স্বাস্থ্য, স্ফূর্তি ও কল্যাণের জন্য।
সূর্যের রশ্মিতে সব রঙের সংমিশ্রণ থাকে। সূর্যের রশ্মি থেকে রামধনুর সাতটি রং আমাদের পরিবেশ ও মনকে প্রভাবিত করে। সূর্যের ছত্রছায়ায় নানা বনস্পতি এবং জীব যে রকম ভাবে লালিতপালিত হয়, সেরকম ভাবেই সবুজ লাল এবং নীল রং মানুষকে সুস্থ, সবল, যশস্বী ও গৌরবান্বিত তৈরি করে। লাল রং সৌভাগ্যের চিহ্ন, আর সবুজ রং ব্যক্ত করে শুভেচ্ছা।
আরও পড়ুন:

বাস্তুবিজ্ঞান, পর্ব-২১: বাস্তু মতে, বাড়ির সবার শোয়ার ঘর কোন দিকে হলে ভালো? কোন দিকেই বা থাকে ঠাকুর ঘর?

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৫২: আঁধার ঘনালো বুঝি সীতার ভুবনে…

 

লাল রং

হিন্দুধর্মের ধর্মীয় রং হল লাল। এই লাল রঙকে সবথেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। প্রায় প্রতিটি মাঙ্গলিক কাজে লাল রঙের ব্যবহার হয়ে থাকে। প্রায় সকল দেবদেবীর মূর্তিকে লাল সিঁদুরের তিলক পরানো হয়। লাল তিলক শৌর্য ও বিজয়ের প্রতীক। লাল তিলক লাগালে ব্যক্তির মধ্যে তেজস্বিতা, পরাক্রম, গৌরব ও যশের অস্তিত্ব আছে বলে মনে করা হয়। গৌরবের রং হল লাল। সুস্বাস্থ্য ও শক্তি মানুষের শরীরে গোলাপি আভা থেকে প্রকাশিত হয়।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৩: কোন কাননের ফুল ‘শ্যামলী’

বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ, মুখের রুচি চলে গিয়েছে? আয়ুর্বেদ উপায়ে অরুচি দূর করবেন কী ভাবে?

প্রাচীনকাল থেকেই লাল রঙের বিশিষ্ট স্থান রয়েছে ভারতীয় নারীর জীবন ও শৃঙ্গারে। মহিলারা মাথায় সিঁদুর বা লাল টি পরেন। নারীর গৌরব, সম্মান, সৌভাগ্য এবং স্নেহ, লাল রং থেকেই বিকশিত হয়।

লাল রং শক্তি, উৎসাহ, স্ফূর্তি ও পরাক্রমের প্রতীক। আনন্দ প্রকাশের রংও লাল। বিবাহ, জন্ম ও উৎসবে আনন্দের মনোভাব ব্যক্ত হয় লাল রং দিয়েই।

ধনোদাত্রী দেবী লক্ষ্মীও পরেন লাল বস্ত্র। লাল রং ধনসম্পদ, বিপুল সম্পত্তি সমৃদ্ধির শুভ প্রকাশ করে। মা লক্ষ্মীকে লাল পদ্ম ফুলের উপর বসানো হয়। এই লাল পদ্ম হল সমৃদ্ধির প্রতীক।
আরও পড়ুন:

দশভুজা: আমি আর কখনওই ফিরে আসার প্রত্যাশা করি না…

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬৬: ঈল মাছের এই রহস্য নিশ্চয়ই একদিন উদঘাটন হবে

 

গেরুয়া রং

গেরুয়া হল আধ্যাত্মিক প্রকাশের রং। এটি জ্ঞান, ত্যাগ, তপস্যা ও বৈরাগ্যের প্রতীকও বটে। হিন্দু যোগী, তপস্বী, সাধু, বৈরাগী সকলেই গেরুয়া বস্ত্র পরেন। মনে হয় তাঁরা যেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে, মৃত্যু থেকে অমৃতের দিকে অগ্রসর হয়ে চলেছেন।

যেমন অগ্নি থেকে জ্যোতির প্রকাশ, তেমনি গেরুয়া বস্ত্রধারী যোগীও আধ্যাত্মিক জ্যোতির মাধ্যমে প্রজ্বলিত হয়ে ওঠেন। গেরুয়া বস্ত্রধারী সাধু দেবতাদের গুণগুলিকে নিজের মধ্যে বিকশিত করতে চান। এই রং শুভ সংকল্পের সূচক।—চলবে।

* বাস্তুবিজ্ঞান (Vastu Shastra): সুরেন্দ্র কাপুর (Surendra Kapoor), বিশিষ্ট বাস্তুবিদ।

Skip to content