![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Uttam-Kumar-2.jpg)
প্রেক্ষাগৃহ: মিনার, বিজলী ও ছবিঘর
পরিচালনা: হরিদাস ভট্টাচার্য
উত্তম অভিনীত চরিত্রের নাম: শ্রীকান্ত
আগেই বলেছি, সে এক অন্য সময়। একটা গোটা বছর শেষ হল উত্তম-সুচিত্রা মোহ দিয়ে। আবার নতুন বছর বরণ করে নিল তাদের দুজনের ছবি দিয়েই। প্রেক্ষাগৃহ সেকালের বর্ধিষ্ণু, সমাজের উন্নতশির মিনার বিজলী ও ছবিঘর। আসলে এ যেন নতুন যুগের জোয়ার এসেছে। আজ থেকে দশ বছর আগে যে উত্তমকে লোকে চিনত না পাত্তা দিত না এই কয়েক বছরে তাঁকে ছাড়া বাংলা ছবির জগত যেন অন্ধকার।
পাশাপাশি অনেক নায়কের আগমন, প্রস্থান উত্থান পতন চলেছে। মানুষ সেগুলো দেখছে কিন্তু ভুলতে পারছে না এই জুটির জনপ্রিয়তাকে। আর কিছু বছর পরেই রাজেশ খান্না নামক একজন নায়ক এসে সারা ভারত তোলপাড় করে দেবেন এবং টানা পনেরোটা ছবি সুপার ডুপার হিট দিয়ে হিন্দি ছবির জগতে তথা সর্বভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে একটা নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবেন। যা কেউ কোনওদিন ভাঙতে পারবেন না।
উত্তম কুমারের এবং সুচিত্রা সেনের যুগ্ম অংশগ্রহণে বাংলা ছবির জগতে যেন সে ইতিহাসের প্রারম্ভিক অংশটা লেখা হয়ে গিয়েছিল। যে সময় স্বাধীনতার দশ বছর যেতে না যেতেই মানুষ বিদেশি ছবি এবং হিন্দি ভাষায় সর্বভারতীয় ছবিতে মন দিয়েছেন সে সময়েই উত্তম সুচিত্রার এই নবযুগের সূচনা। মানুষকে অন্য রুচিতে বাঁধতে সহযোগিতা করেছে।
অনেক দিনের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী শ্রীমতি পিকচার্সের ব্যানারে উত্তম কুমারের আবার ছবি। এ বার পরিচালনায় কানন দেবীর স্বামী স্বয়ং হরিদাস ভট্টাচার্য এবং প্রত্যাশিতভাবেই কাহিনীর প্রেক্ষাপট যথারীতি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আগের বছরই কার্তিক চট্টোপাধ্যায়ের মুন্সিয়ানায় ‘চন্দ্রনাথ’ ছবিটির রূপায়ণ দর্শক মনে শরৎ কাহিনিকে অন্য রূপায়ণ দেখিয়েছে। অন্যদিকে প্রথাগতভাবে শরৎকাহিনির রূপায়ণকর্তা শ্রীমতি পিকচারস এ বার উত্তম কুমারকে নায়ক করে ছবি বানাতে এগিয়ে এলেন। যথারীতি শরৎচন্দ্রের মানস নায়ক শ্রীকান্তের ভূমিকায় উত্তম কুমার।
অনেক দিনের চিন্তাভাবনা অনুযায়ী শ্রীমতি পিকচার্সের ব্যানারে উত্তম কুমারের আবার ছবি। এ বার পরিচালনায় কানন দেবীর স্বামী স্বয়ং হরিদাস ভট্টাচার্য এবং প্রত্যাশিতভাবেই কাহিনীর প্রেক্ষাপট যথারীতি শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। আগের বছরই কার্তিক চট্টোপাধ্যায়ের মুন্সিয়ানায় ‘চন্দ্রনাথ’ ছবিটির রূপায়ণ দর্শক মনে শরৎ কাহিনিকে অন্য রূপায়ণ দেখিয়েছে। অন্যদিকে প্রথাগতভাবে শরৎকাহিনির রূপায়ণকর্তা শ্রীমতি পিকচারস এ বার উত্তম কুমারকে নায়ক করে ছবি বানাতে এগিয়ে এলেন। যথারীতি শরৎচন্দ্রের মানস নায়ক শ্রীকান্তের ভূমিকায় উত্তম কুমার।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Jeeban-Trishna.jpg)
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৯: হারিয়ে যাওয়ার ‘জীবন তৃষ্ণা’
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Samay-Updates_Sundraban-3.jpg)
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩২: ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোয় গঙ্গাসাগর মেলা
ছবির কাহিনি এরকম, যৌবনে পা দিয়েও শ্রীকান্তর বোহেমিয়ান জীবন কাটেনি। লোকে বলে ভবঘুরে, বাউন্ডুলে। অমাবস্যার রাত্রে সাক্ষাৎ মহাদেবী ভৈরবীর দর্শনলাভের আশায় শ্মশান যাত্রায় আগের মুহূর্তে তাঁর সামনে এসে দাঁড়ায় পিয়ারী বাঈ। এই পিয়ারী হচ্ছে শ্রীকান্তর ছেলেবেলার নিত্যসঙ্গিনী রাজলক্ষ্মী। মনসা পন্ডিতের পাঠশালার শান্ত মেয়েটি। শ্রীকান্তর শ্মশানে যাওয়া হয়নি। অনেক পরে শ্রীকান্ত যখন গেরুয়াধারী সন্ন্যাসী, মহামারির সেবা করতে গিয়ে সে নিজেই অসুস্থ হয়ে পড়ে। সবাই তাকে ছেড়ে দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে ছুটে আসে রাজলক্ষ্মী। সুস্থ হয়ে শ্রীকান্ত ফিরে আসে পুরনো আস্তানায়। একদিন শ্রীকান্তকে ছুটে যেতে হয় রাজলক্ষ্মীর কাছে। গিয়ে দেখে রাজলক্ষ্মীর গানের আসরে জাঁকিয়ে বসেছেন এক জমিদার। অভিমানে শ্রীকান্ত তাঁকে জানায় সে বার্মা দেশে চলে যাচ্ছে। জীবনে আর দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Uttam-Kumar-3.jpg)
এমন সুন্দর কাহিনীর বাঁধন, হরিদাসবাবুর চিত্রনাট্যের বয়নে এবং ক্যামেরার মুন্সিয়ানায় উত্তম সুচিত্রা কালজয়ী হয়ে উঠেছিলেন এই ছবিতে। সম্পাদনায় ছিলেন সর্বজন শ্রদ্ধেয় সন্তোষ গঙ্গোপাধ্যায়। সংগীত পরিচালনার দায়িত্ব স্বেচ্ছায় তুলে নিয়েছিলেন ওস্তাদ জ্ঞান প্রকাশ ঘোষ মহাশয়।
ছবিটির প্রতিটি আঙ্গিক যদি আমরা ফ্রেম টু ফ্রেম আলোচনা করি সেখানে সবার আগে দেখতে পাবো হলিউডের ঘরানায় বাঙালিয়ানা কিভাবে প্রাণ পেয়েছে। ধুতি পাঞ্জাবি পরা উত্তম, চোখের চাউনি দিয়ে কিভাবে পিটার সেলারস-কে অনুকরণ করে এ ছবিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যদি ছবিটি নির্বাক আর হলিউডে নির্মিত হতো তাহলে সাগর পারেও শরৎকাহিনীর একটা আবেদন থেকে যেত। শ্রীকান্তকে আদ্যন্ত আত্মস্থ করে উত্তম কুমার যখন ক্যামেরার দিকে তাকাচ্ছেন অতি সচেতন শরৎ অনুরাগীও কোথাও যেন তফাৎ করতে বেগ পাচ্ছেন। অর্থাৎ বইয়ের পাতায় হেঁটে চলা শ্রীকান্ত আর পর্দার বুকে হেঁটে চলা শ্রীকান্ত কোথায় যেন মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছেন।
ছবিটির প্রতিটি আঙ্গিক যদি আমরা ফ্রেম টু ফ্রেম আলোচনা করি সেখানে সবার আগে দেখতে পাবো হলিউডের ঘরানায় বাঙালিয়ানা কিভাবে প্রাণ পেয়েছে। ধুতি পাঞ্জাবি পরা উত্তম, চোখের চাউনি দিয়ে কিভাবে পিটার সেলারস-কে অনুকরণ করে এ ছবিতে প্রাণ প্রতিষ্ঠা করেছেন। যদি ছবিটি নির্বাক আর হলিউডে নির্মিত হতো তাহলে সাগর পারেও শরৎকাহিনীর একটা আবেদন থেকে যেত। শ্রীকান্তকে আদ্যন্ত আত্মস্থ করে উত্তম কুমার যখন ক্যামেরার দিকে তাকাচ্ছেন অতি সচেতন শরৎ অনুরাগীও কোথাও যেন তফাৎ করতে বেগ পাচ্ছেন। অর্থাৎ বইয়ের পাতায় হেঁটে চলা শ্রীকান্ত আর পর্দার বুকে হেঁটে চলা শ্রীকান্ত কোথায় যেন মিলেমিশে এক হয়ে গিয়েছেন।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Shanta-Devi.jpg)
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-৮: শান্তা দেবী— এক মহীয়সী!
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Samay-Updates_Cartoon-1.jpg)
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-২৭: তার লাগি পথ চেয়ে আছি পথেই যে জন ভাসায়
আমরা যদি মনের স্বাধীনতাকে প্রশ্রয় দিই দেখতে পাবো শরৎচন্দ্র নিজেই যেন ক্যামেরার পিছনে দাঁড়িয়ে অদৃশ্য ভাবে শ্রীকান্ত নির্মাণ করে গিয়েছেন। অন্যদিকে রাজলক্ষ্মী চরিত্রে সুচিত্রা সেন। যে সুচিত্রা সেন আগের বছর। সরযূর চরিত্র করে দর্শককে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন ।কানন দেবীর পর সুচিত্রা সেনের উত্তরসূরী আর কেউ থাকবেন না কারণ শরৎকাহিনীতে এতদিন প্রান প্রতিষ্ঠার দায়িত্ব যেভাবে কানন দেবী পালন করে গিয়েছেন ঠিক তার বিপরীত মেরুতে দাঁড়িয়ে হলিউডের ঘরানায় শরৎচন্দ্রের রাজলক্ষ্মীকে ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা, সুচিত্রা সেনকে অমর করে দিয়েছে, বিশেষত ক্যামেরাকে ব্যবহার করার একটা দুরন্ত কৌশল সুচিত্রা যেন অর্জন করেছিলেন এই ছবি থেকে। যে ফ্রেমে যেদিকেই দাঁড়াচ্ছেন সে দিক থেকেই তাঁকে পূর্ণ রাজলক্ষ্মী হয়ে উঠতে দেখছেন দর্শকরা। পরের পর সিকোয়েন্সে অবাক হয়ে গেছেন তাঁরা একজন নারী চরিত্র কিভাবে এত বর্ণময় হতে পারে তা দেখে।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/07/maa-sarada.jpg)
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৯: আবার পুরী ভ্রমণ
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Ramachandra.jpg)
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৬: যুগান্তরেও সম্মানিতা হন সীতা, তাঁর বনবাস গমনের সিদ্ধান্তে কী তার কোনও প্রভাব আছে?
এ যেন শরৎচন্দ্রের নিজের হাতের বুননে দুই শিল্পী দর্শকদের পূজার আসনে বসিয়ে পুজো করছেন। সঙ্গে ছিল সহশিল্পীদের অনবদ্য সংগত। অনিল চট্টোপাধ্যায়, হরিধন মুখোপাধ্যায়, তুলসী চক্রবর্তী, কমল মিত্র, প্রভৃতিদের হার না মানা মনোভাব। আজকের দিনে বসে ভাবতে গায়ে কাঁটা দেয়।এমন তো নয় তাঁরা শুধু ‘রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত’ ছবিটাই সারা জীবনে করেছেন। সে বছরে আর কোন ছবি করেননি।
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2024/01/Uttam-Kumar-1.jpg)
ছবিটির পরিচালক হরিদাস ভট্টাচার্যের এক অনবদ্য রূপায়ণ এ ছবির প্রতিটি অংশ। ওস্তাদ জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের সুরে সেই মাদকতা ছিল যা শরৎকাহিনীতে দেখতে পাওয়া যায়। প্রতিটি পর্বে ফুটে উঠেছে পরেরটিকে ছাপিয়ে এগিয়ে যাবার চেষ্টা। এককথায় বলতে গেলে শরৎচন্দ্রের এই কাহিনিকে কেন্দ্র করে সে সময়ে একটা ছবি নির্মাণের প্রতিটা অংশই যেন সারস্বত মর্যাদায় পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।—চলবে।
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar – Mahanayak – Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।