শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: সংগৃহীত।

মুক্তির তারিখ: ১৯/০৪/১৯৫৭
প্রেক্ষাগৃহ: উত্তরা, পূরবী ও উজ্জ্বলা
পরিচালনা: সন্তোষ গঙ্গোপাধ্যায়

আগেই বলেছি, ১৯৫৭ সাল এমন এক বছর যা, উত্তমের সারা জীবনকে চিরকালের মতো বদলে দিয়েছিল। সন্তোষ গঙ্গোপাধ্যায় যিনি ‘ব্রতচারিণী’ ছবি করে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলেন এবং তার স্টাফ আর্টিস্ট বা নায়িকা ছিলেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায়। উত্তম-সাবিত্রীকে মূলধন করে শুরু হল ‘যাত্রা হলো শুরু’ ছবির মূল প্রস্তুতি।
আসলে সে ছিল একটা সময় বাংলা সিনেমার সোনার দিন বলা যায় তাকে। সেদিন আর বোধহয় ফিরবেও না। তখন ছবির গুণগতমান মাঝে মাঝে কিছু বাছাই নায়ক-নায়িকাদের রাখতে হতো যেখানে দর্শকরা নিজেদের হাসি কান্না আনন্দ-বেদনা খুঁজে পেত। একটা মুহূর্ত এসেছিল যখন বাংলা সিনেমার অন্ধকার যুগে কোন ভরসাযোগ্য নায়ককে খুঁজে পাওয়া যায়নি আবার আরেকটা যুগ গেল যখন বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি উত্তম সুচিত্রা নির্ভর হয়ে উঠল পুরোপুরি।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৯: অনেক যতনে ‘বড়দিদি’-র পর্ব রাখিনু সেথা

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১৯: সত্য কাজে কেউ নয় রাজি সবই দেখি তা না না না?

উত্তম সুচিত্রা নির্ভর হয়ে উঠল কথাটা অত্যন্ত স্পষ্টবাদীর মতো শোনালেও বাস্তবটা ছিল সেরকমই। আমরা সালতামামি নিরিখে যদি বাস্তবকে অনুসরণ করি সেখানে দেখব ‘অগ্নিপরীক্ষা’ আর ‘পথের পাঁচালী’ পরপর মুক্তি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাংলা সিনেমার দুটো ভিন্নমাত্রার স্বর্ণযুগ শুরু হয়েছিল।

ছবি: সংগৃহীত।

উত্তমকুমার সুচিত্রা সেন দু’জনেই বাংলা সিনেমায় ‘অগ্নিপরীক্ষা’ উত্তর যে ১০টি বছর সোনার ফসলে ভরে রেখেছিলেন সত্যজিৎ বাবুর ‘পথের পাঁচালী’-র পর ৩৫ টা বছর লেগেছিল সেই সোনার ফসল তৈরি করতে। অন্যদিকে উত্তম সুচিত্রা শুধুমাত্রই নিজেদের ছবিতেই অভিনয় করেননি। তাঁরা অন্যান্য নায়ক বা নায়িকার সঙ্গে অভিনয় করেছেন এবং সেখানে সাফল্যের হার সুচিত্রা সেন অপেক্ষা উত্তম কুমার-এর বেশি।
আরও পড়ুন:

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১০: কী উপহার সাজিয়ে দিলে…

যত মত, তত পথ, পর্ব-৭: ঈশ্বরে মনে রেখে সংসার ধর্ম—শ্রীরামকৃষ্ণ ও রবীন্দ্রনাথ

‘পথের পাঁচালী’, ‘অগ্নিপরীক্ষা’ দুটো বিপরীত মেরুর ছবি হলেও বাংলা চলচ্চিত্রে এদের আলোচনা সম্পূর্ণ ভিন্ন কারণ ও ভিন্ন ক্ষেত্রে। এ দুটি ছবিকেই স্বর্ণযুগের সূচনা চিহ্ন হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। তখনকার দিনে কিন্তু বাংলা ছবির দর্শকরাই ছিলেন সংখ্যায় গরিষ্ঠ। এখন যেমন হিন্দি ছবির দর্শকরা কখনও কখনও বাংলা ছবি দেখতে হলে ঢুকে পড়েন তেমনটি সেদিন ছিল না।
আরও পড়ুন:

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৫: বলবয় থেকে বিশ্বসেরা

বাংলা ছবির সেই নিয়মিত দর্শকরা যখন হতাশ হয়ে পড়লেন এমনই সময় এলেন উত্তম কুমার ও সুচিত্রা সেন। প্রশ্ন হল যে উত্তমবাবু শুধু সুচিত্রা সেনের সঙ্গে ছবি করেননি, প্রত্যেক বছর প্রত্যেক মাসে অন্যান্য নায়িকাদের সঙ্গে তাঁর ছবি মুক্তি পেয়েছে।

এ ভাবেই চলে এল উত্তম সাবিত্রী অভিনীত ‘যাত্রা হলো শুরু’। ছবিটির সাফল্যের হার সেবছরের মুক্তিপ্রাপ্ত ছবিগুলোর তুলনায় একটু কম। কিন্তু কাহিনির বুনন এবং এমপি প্রোডাকশনের ছবি হওয়ায় চিত্রনাট্যের দম ছিল দেখার মতো। উত্তম কুমার ও সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় তাঁদের অভিনয় দিয়ে ছবিটিকে দাঁড় করিয়ে দিয়েছিলেন।
ছবিটি সেই সময় কদর না পেলেও ছবিটিতে সাবিত্রীর অভিনয় শুধু দেখার মত। পাহাড়ি সান্যালের বলিষ্ঠ অভিনয়ের সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে উত্তম কুমার অপেক্ষা যেন সাবিত্রী চট্টোপাধ্যায় সবাইকে ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। নায়ক হিসাবে উত্তম কুমার তো ভালো করবেনই এ ধরনের একটা প্রত্যাশা দর্শক মনে তৈরি ছিলই কিন্তু সাবিত্রী যে মানে অভিনয় ক্ষমতার পরিচয় এই ছবিতে দিয়েছেন তা সকলকে মুগ্ধ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট।

আসলে উত্তম কুমারের সমগ্র জীবনকে যদি কয়েকটি পর্বে ভাগ করতে পারি এই সময়টায় এসে সেই পর্বের বিভাজনটা যেন জটিল হয়ে যায়। যেন মনে হয় ১৯৫৭ সালটাকে কোন বছরের সঙ্গেই তার ক্যারিয়ারে তুলনা করা যায় না। প্রত্যেকটা ছবি এ বলে আমায় দেখ তো, ও বলে আমায় দেখ। কোনটা বাণিজ্যিকভাবে সফল, কোনটা আর্ট ফিল্ম হিসেবে সফল।

রবীন চট্টোপাধ্যায়ের সংগীত পরিচালনায় ছবিটির গান এবং ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও সে সময় মানুষের মনে দাগ কেটেছিল।—চলবে।
* উত্তম কথাচিত্র (Uttam Kumar – Mahanayak – Actor) : ড. সুশান্তকুমার বাগ (Sushanta Kumar Bag), অধ্যাপক, সংস্কৃত বিভাগ, মহারানি কাশীশ্বরী কলেজ, কলকাতা।

Skip to content